ঢাকা ০৩:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড় ড. ইউনূসকে ঈদগাহের মুসল্লিরাঃ আপনি ৫ বছর দায়িত্বে থাকুন, এটাই দেশের মানুষের চাওয়া বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লবের সূচনা! খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঈদের দাওয়াত দিলেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান পররাষ্ট্র নীতিতে ড. ইউনূসের কাছে হেরে গেছেন নরেন্দ্র মোদী! ৩ এপ্রিলও ছুটির প্রস্তাব, মিলতে পারে ৯ দিনের ছুটি বউয়ের টিকটকেই ধরা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ, ‘ক্লু’ ছিল গাড়িতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিনের পরিচয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের পরিচয় শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব প্রমাণ সরকারের কাছে আছে জেলায় জেলায় সরকারি অর্থে ‘আওয়ামী পল্লি’

গণমানুষের আজম খান, ক্রিকেটার আজম খান…

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৭:৫২:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০২২
  • / 69
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

বিশ্বাসঘাতক স্মৃতি হয়তো আমাদের ভুলিয়ে দিয়েছে, জীবনকে তীব্রভাবে যাপন করা ক্রিকেটার আজম খান’কে। বাংলাদেশে (সম্ভবত) তিনিই ছিলেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা সব’চে বেশী বয়সী ক্রিকেটার। ৪১ থেকে ৫০ বছর (১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল) বয়েস পর্যন্ত গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে তিনি প্রথম বিভাগে ক্রিকেট খেলেছেন। মাঝে মাঝে আফসোস করে বলতেন,‘ইস একটা বিশ্বকাপ যদি খেলতে পারতাম’।

আজ গণমানুষের আজম খানের চলে যাবার এগারো বছর।

আজম খান, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অবিস্মরণীয় অধ্যায় 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবী জুড়ে প্রচলিত চর্চার বিপরীতে জোয়ার এসেছিল। শুরু হয়েছিল পশ্চিমে, জের পড়েছিল বাংলাতেও। প্রথা না মানা এরকমই একদল দ্রোহী তরুণ বিদ্রোহ করেছিল রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে। পপ গানের উন্মাতাল অর্গল খুলে দিয়েছিলেন তাঁরা। নেতৃত্বে ছিলেন আজম খানসহ অতি সীমিত কিছু অগ্রজ। দ্রোহী আজম খান সামাজিক প্রথা ভেঙেছেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগটা ছিল সবসময়ই অক্ষুন্ন। আমৃত্যু তাঁর দুটো পা মাটিতেই ছিল।

একাত্তর যদি আমাদের বিশুদ্ধতম ভালোবাসা হয়, সেই ভালোবাসার রূপকারদের একজন হলেন আজম খান। বাংলা পপ সংগীতের অবিসংবাদিত সম্রাট আজম খান। দেশীয় সঙ্গীতের আকাশে যিনি ঘটিয়েছিলেন নূতন সূর্যোদয়।

পপ সম্রাট আজম খান ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসংগীত প্রচার করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন সক্রিয়ভাবে।

অপরাজেয় এই যোদ্ধা অস্ত্র হাতে লড়াই করেছিলেন দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য। জীবন বাজি রেখে ছিনিয়ে এনেছিলেন বিজয়। যুদ্ধোত্তর দেশে সূচনা করেছিলেন আরেক সংগ্রামের। সে সংগ্রাম নতুন ধারার সংগীত সৃষ্টির। সংস্কৃতির অচলায়তনে তুমুল আলোড়ন তুলে স্বাধীন দেশে পাশ্চাত্য সংগীতের ধারায় সংগীত রচনা ও পরিবেশনের মধ্য দিয়ে তারুণ্যের দুর্দমনীয় বাঁধভাঙা স্পন্দন বইয়ে দিয়েছিলেন তিনি, বাংলাদেশে পপ সংগীতের পথিকৃৎ হিসেবে।

বাংলা পপ গানের কিংবদন্তী আজম খান।মানুষটিকে তরুণ সমাজ চেনে ‘পপ সম্রাট’ হিসেবে। একাত্তরে অসীম সাহসী গেরিলা যোদ্ধা তিনি, ২ নম্বর সেক্টরে খালেদ মোশাররফের অধীনে যুদ্ধ করেছিলেন। প্রশিক্ষণ শেষে আজম খান কুমিল্লা অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়া শুরু করেন। প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন সালদায়। যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার জন্য তাকে সেকশন কমান্ডার করে ঢাকা ও আশেপাশে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনার জন্য পাঠানো হয়। আজম খান ও তাঁর সহযোদ্ধারা, যাত্রাবাড়ি-গুলশান-ডেমরা এলাকার গেরিলা অপারেশনে নেতৃত্ব দেন।

মুক্তিযোদ্ধা আজম খানে’র উল্লেখযোগ্য অপারেশন হচ্ছে, অপারেশন তিতাস। তাঁর নেতৃত্বে গ্যাস সরবরাহ পাইপ লাইন ধ্বংস করে ঢাকার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেন গেরিলারা। ঢাকার অদূরে মাদারটেকের কাছে ত্রিমোহনী ও কালিগঞ্জের সম্মুখ সমরে পাকিস্তানী সেনাদের হটিয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। অবরুদ্ধ ঢাকায় গেরিলাদের যে দলগুলো বিজয়ের অনেক আগেই ঢাকা প্রবেশ করেছিল তার মধ্যে অগ্রগামী ছিল তাঁর দল। গেরিলাদের নিয়ে ২০ নভেম্বর তিনি ঢাকায় প্রবেশ করেন। গান পাগল এই মানুষটি যুদ্ধের মধ্যেও গান গাওয়া থেকে বিরত থাকেননি। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম রচিত ‘একাত্তরের দিনগুলিতে’ও সে কথা উল্লেখ আছে।

মুক্তিযুদ্ধের পর মানুষের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে যে ঘাটতি ছিল সেই বেদনা ও ক্ষোভ তিনি প্রকাশ করেছিলেন গানে। এক্ষেত্রে দেশ ও মানুষের কাছে তাঁর যে দায়বদ্ধতা, তা তিনি আপোষহীনভাবে পালন করেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।
নির্মোহ, সরল-সহজ মানুষটি কারও কাছে কিছু চাননি, যদিও আমাদের থেকে তাঁর অনেক কিছু পাওয়ার ছিল নিঃসন্দেহে। তবে এ নিয়ে কখনোই কোন ক্ষোভ ছিল না, অভিমান ছিল না। যারা তাঁকে নিকটে থেকে দেখেছেন তাঁরা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন, আজম খান ছিলেন ত্যাগী, ভদ্র, বিনয়ী এবং সহজ মানুষ। তিনি দিয়ে গেছেন অনেক, বিনিময়ে কিছু চাননি, কিছু পাননি। অত্যন্ত সরল-সহজ জীবন-যাপন করেছেন, কখনই বিত্ত-বৈভবের পিছে ছুটে যাননি।

আজকে যখন অনেকেই অতি সহজে তারকা বনে যাচ্ছেন, গাড়ি-বাড়ির মালিক হচ্ছেন, কর্পোরেট পুঁজির ক্রীতদাসে পরিণত হচ্ছে বিনা দ্বিধায়। সংবাদের পাতা জুড়ে ‘দুর্গন্ধময় শিরোনাম’ হচ্ছেন একেকজন, তখনই অনুভব করি আজম খানের মতো শিল্পীর অভাব।
একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও চিরকাল থেকে গেছেন আড়ালে। বিশ্বাস করতেন, ‘প্রত্যাখ্যাত হওয়ার চেয়ে বঞ্চিত থাকা সুখের’। হ্যাঁ, অবশেষে তাঁর মৃত্যুর ৮ বছরের মাথায় (২০১৯ সালে) তাঁকে ভূষিত করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘একুশে পদকে’।

(আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই সরকারকে, তবে একইসাথে জোরালো অনুরোধ করি, বেঁচে থাকাকালীন সময়ে ‘যোগ্য মানুষদের’ প্রাপ্য সম্মান দিন। ‘মরণোত্তর’ নামের তামাশা খোদার ওয়াস্তে বন্ধ করুন, অনেক হয়েছে।)

মহান শিল্পী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ‘আজম খানের জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করছি হৃদয়ের সব অর্গল খুলে, শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়। এমন মাটির মানুষ আমরা আর পাবো কিনা জানিনা। হৃদয় নিঙড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা বয়ে যায় তাঁর প্রতি অবিরল।

পরম করুনাময়ের কাছে তাঁর চিরশান্তি প্রার্থনা করছি।

বড় ভালো মানুষ ছিলেন আপনি।

একজন মুখোশ ছাড়া মানুষ, সারল্যের প্রতীক হিসেবে ‘আজম খান’ আমাদের হৃদয় জুড়ে থাকবেন৷

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

গণমানুষের আজম খান, ক্রিকেটার আজম খান…

আপডেট সময় : ০৭:৫২:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০২২

 

বিশ্বাসঘাতক স্মৃতি হয়তো আমাদের ভুলিয়ে দিয়েছে, জীবনকে তীব্রভাবে যাপন করা ক্রিকেটার আজম খান’কে। বাংলাদেশে (সম্ভবত) তিনিই ছিলেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা সব’চে বেশী বয়সী ক্রিকেটার। ৪১ থেকে ৫০ বছর (১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল) বয়েস পর্যন্ত গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে তিনি প্রথম বিভাগে ক্রিকেট খেলেছেন। মাঝে মাঝে আফসোস করে বলতেন,‘ইস একটা বিশ্বকাপ যদি খেলতে পারতাম’।

আজ গণমানুষের আজম খানের চলে যাবার এগারো বছর।

আজম খান, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অবিস্মরণীয় অধ্যায় 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবী জুড়ে প্রচলিত চর্চার বিপরীতে জোয়ার এসেছিল। শুরু হয়েছিল পশ্চিমে, জের পড়েছিল বাংলাতেও। প্রথা না মানা এরকমই একদল দ্রোহী তরুণ বিদ্রোহ করেছিল রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে। পপ গানের উন্মাতাল অর্গল খুলে দিয়েছিলেন তাঁরা। নেতৃত্বে ছিলেন আজম খানসহ অতি সীমিত কিছু অগ্রজ। দ্রোহী আজম খান সামাজিক প্রথা ভেঙেছেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগটা ছিল সবসময়ই অক্ষুন্ন। আমৃত্যু তাঁর দুটো পা মাটিতেই ছিল।

একাত্তর যদি আমাদের বিশুদ্ধতম ভালোবাসা হয়, সেই ভালোবাসার রূপকারদের একজন হলেন আজম খান। বাংলা পপ সংগীতের অবিসংবাদিত সম্রাট আজম খান। দেশীয় সঙ্গীতের আকাশে যিনি ঘটিয়েছিলেন নূতন সূর্যোদয়।

পপ সম্রাট আজম খান ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসংগীত প্রচার করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন সক্রিয়ভাবে।

অপরাজেয় এই যোদ্ধা অস্ত্র হাতে লড়াই করেছিলেন দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য। জীবন বাজি রেখে ছিনিয়ে এনেছিলেন বিজয়। যুদ্ধোত্তর দেশে সূচনা করেছিলেন আরেক সংগ্রামের। সে সংগ্রাম নতুন ধারার সংগীত সৃষ্টির। সংস্কৃতির অচলায়তনে তুমুল আলোড়ন তুলে স্বাধীন দেশে পাশ্চাত্য সংগীতের ধারায় সংগীত রচনা ও পরিবেশনের মধ্য দিয়ে তারুণ্যের দুর্দমনীয় বাঁধভাঙা স্পন্দন বইয়ে দিয়েছিলেন তিনি, বাংলাদেশে পপ সংগীতের পথিকৃৎ হিসেবে।

বাংলা পপ গানের কিংবদন্তী আজম খান।মানুষটিকে তরুণ সমাজ চেনে ‘পপ সম্রাট’ হিসেবে। একাত্তরে অসীম সাহসী গেরিলা যোদ্ধা তিনি, ২ নম্বর সেক্টরে খালেদ মোশাররফের অধীনে যুদ্ধ করেছিলেন। প্রশিক্ষণ শেষে আজম খান কুমিল্লা অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়া শুরু করেন। প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন সালদায়। যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার জন্য তাকে সেকশন কমান্ডার করে ঢাকা ও আশেপাশে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনার জন্য পাঠানো হয়। আজম খান ও তাঁর সহযোদ্ধারা, যাত্রাবাড়ি-গুলশান-ডেমরা এলাকার গেরিলা অপারেশনে নেতৃত্ব দেন।

মুক্তিযোদ্ধা আজম খানে’র উল্লেখযোগ্য অপারেশন হচ্ছে, অপারেশন তিতাস। তাঁর নেতৃত্বে গ্যাস সরবরাহ পাইপ লাইন ধ্বংস করে ঢাকার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেন গেরিলারা। ঢাকার অদূরে মাদারটেকের কাছে ত্রিমোহনী ও কালিগঞ্জের সম্মুখ সমরে পাকিস্তানী সেনাদের হটিয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। অবরুদ্ধ ঢাকায় গেরিলাদের যে দলগুলো বিজয়ের অনেক আগেই ঢাকা প্রবেশ করেছিল তার মধ্যে অগ্রগামী ছিল তাঁর দল। গেরিলাদের নিয়ে ২০ নভেম্বর তিনি ঢাকায় প্রবেশ করেন। গান পাগল এই মানুষটি যুদ্ধের মধ্যেও গান গাওয়া থেকে বিরত থাকেননি। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম রচিত ‘একাত্তরের দিনগুলিতে’ও সে কথা উল্লেখ আছে।

মুক্তিযুদ্ধের পর মানুষের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে যে ঘাটতি ছিল সেই বেদনা ও ক্ষোভ তিনি প্রকাশ করেছিলেন গানে। এক্ষেত্রে দেশ ও মানুষের কাছে তাঁর যে দায়বদ্ধতা, তা তিনি আপোষহীনভাবে পালন করেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।
নির্মোহ, সরল-সহজ মানুষটি কারও কাছে কিছু চাননি, যদিও আমাদের থেকে তাঁর অনেক কিছু পাওয়ার ছিল নিঃসন্দেহে। তবে এ নিয়ে কখনোই কোন ক্ষোভ ছিল না, অভিমান ছিল না। যারা তাঁকে নিকটে থেকে দেখেছেন তাঁরা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন, আজম খান ছিলেন ত্যাগী, ভদ্র, বিনয়ী এবং সহজ মানুষ। তিনি দিয়ে গেছেন অনেক, বিনিময়ে কিছু চাননি, কিছু পাননি। অত্যন্ত সরল-সহজ জীবন-যাপন করেছেন, কখনই বিত্ত-বৈভবের পিছে ছুটে যাননি।

আজকে যখন অনেকেই অতি সহজে তারকা বনে যাচ্ছেন, গাড়ি-বাড়ির মালিক হচ্ছেন, কর্পোরেট পুঁজির ক্রীতদাসে পরিণত হচ্ছে বিনা দ্বিধায়। সংবাদের পাতা জুড়ে ‘দুর্গন্ধময় শিরোনাম’ হচ্ছেন একেকজন, তখনই অনুভব করি আজম খানের মতো শিল্পীর অভাব।
একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও চিরকাল থেকে গেছেন আড়ালে। বিশ্বাস করতেন, ‘প্রত্যাখ্যাত হওয়ার চেয়ে বঞ্চিত থাকা সুখের’। হ্যাঁ, অবশেষে তাঁর মৃত্যুর ৮ বছরের মাথায় (২০১৯ সালে) তাঁকে ভূষিত করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘একুশে পদকে’।

(আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই সরকারকে, তবে একইসাথে জোরালো অনুরোধ করি, বেঁচে থাকাকালীন সময়ে ‘যোগ্য মানুষদের’ প্রাপ্য সম্মান দিন। ‘মরণোত্তর’ নামের তামাশা খোদার ওয়াস্তে বন্ধ করুন, অনেক হয়েছে।)

মহান শিল্পী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ‘আজম খানের জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করছি হৃদয়ের সব অর্গল খুলে, শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়। এমন মাটির মানুষ আমরা আর পাবো কিনা জানিনা। হৃদয় নিঙড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা বয়ে যায় তাঁর প্রতি অবিরল।

পরম করুনাময়ের কাছে তাঁর চিরশান্তি প্রার্থনা করছি।

বড় ভালো মানুষ ছিলেন আপনি।

একজন মুখোশ ছাড়া মানুষ, সারল্যের প্রতীক হিসেবে ‘আজম খান’ আমাদের হৃদয় জুড়ে থাকবেন৷