ঢাকা ০২:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
বাবরের জীবন থেকে ১৭ বছর কেড়ে নেয় ‘প্রথম আলো’ সোমবার থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চাপমুক্ত প্রশাসন এবং ড. ইউনূসের দর্শন ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ পালনের ঘোষণা আনিসুল হকের মুক্তি চেয়ে পোস্টার দিল্লিতে গৃহবন্দী শেখ হাসিনা? গ্যাস-বিদ্যুতে ভয়াবহ ভোগান্তির আশঙ্কা ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ মোদি-হাসিনা মাইনাস: ট্রাম্পের আস্থায় এখন ড. ইউনূস! মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ডের বাংলাদেশ নিয়ে ভাইরাল ভিডিওর আসল ঘটনা আমি ফিরব, আমাদের শহিদদের প্রতিশোধ নেব’: শেখ হাসিনা অপরাধী হাসিনাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপে ভারত ইন্টারপোলের জালে বেনজীর হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জোরদার হচ্ছে ভারতে! এটুআই ছিল মিলেমিশে লুটপাটের প্রকল্প আওয়ামী লুটপাটে পঙ্গু ইডিসিএল বিদেশেও বিচার সম্ভব শেখ হাসিনার ‘দুঃখিত, আপা! এটাই শেষ!!’ : হাসিনার উদ্দেশ্য প্রেস সচিব জাতীয় সংসদ ভোটের পর পুলিশে পদকের মচ্ছব

‘চাহিবামাত্র বাহককে টাকা দিতে বাধ্য’ থাকার অর্থ কী?

মৌসুমী ইসলাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৮:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২
  • / 86
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে, ১০ টাকা বা এর বেশি মূল্যমানের টাকার গায়ে কেন লেখা থাকে: ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’। এই বাক্যটির অর্থ নিহীত আছে মুদ্রার ইতিহাসের মধ্যে।

টাকা বিনিয়ম মাধ্যম। কিন্তু এই টাকা কেউ চাইলেই কি তাকে দিতে হবে? বা দিতে কি বাধ্য?

এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ টাকার মধ্যে লেখা ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’।

কেন টাকায় লেখা থাকে এমন কথা? এর অর্থ কী?

‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকা’ কথাটার অর্থ কিছুটা জটিল। ব্যবহারকারী বা বিনিময়ের সঙ্গে এটির কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের সরকারি মুদ্রা হলো দুটি। এক ও দুই টাকার নোট কিংবা কয়েন হলো সরকারি মুদ্রা। আর বাকিগুলো হলো সমপরিমাণ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ছাপানো ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ’।

ধরুন, আপনি কোনো কারণে ব্যাংক নোটের উপরে আস্থা রাখতে পারছেন না। তাই আপনি ২০০ টাকার একটি নোট বাংলাদেশ ব্যাংক কাউন্টারে জমা দিয়ে বিনিময় চাইলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক চাহিবামাত্র এর বাহককে অর্থাৎ আপনাকে সমপরিমাণ এক ও দুই টাকা দিয়ে দেবে। অর্থাৎ চাওয়ামাত্রই বাহককে টাকা দিয়ে দায়মুক্ত হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এটিই হচ্ছে বাধ্য থাকার মূল বিষয়।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে বলা হলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিদেশি আমল থেকে লেখা হয়েছে বলে সেই ধারাবাহিতা এখনও বজায় রাখা হয়েছে। এটা লেখার আসলে কোনো কারণ নেই। ডলারে কিন্তু ‍এটা লেখা থাকে না। যখন স্বর্ণের মূল্যমানের সমপরিমাণ টাকা ছাপানো হতো, তখন এটা লেখা হতো। কারণ তখন টাকা দিয়ে সমপরিমাণ স্বর্ণ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন গোল্ড স্ট্যান্ড্যার্ডে টাকা ছাপানো হয় না। অন্যভাবে হিসেব-নিকেশ করা হয়। এ জন্য বর্তমানে এটা লেখা থাকার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। যেহেতু আগে থেকে লেখা ছিল, সে জন্য ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এখনও লেখা হয়। তবে এখন অনেক দেশ এটা পরিবর্তন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আগে প্রত্যেকটা ব্যাংকের নোট ইস্যু করা হতো স্বর্ণ মুদ্রার বিপরিতে। যত টাকা নোট ইস্যু করা হবে, ঠিক তত স্বর্ণ বা অন্যান্য আর্থিক সম্পদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষণ করা থাকবে।

‘কিন্তু এখন আমাদের কারেন্সি কত লাগবে, এটা নির্ভর করে মানুষের স্পেন্ডিং বিহেভিয়ারের (ব্যয়ের প্রবণতা) উপর। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষ নগদ টাকা পছন্দ করে। চেক বা কার্ডে লেনদেন অনেকে করতে চায় না। এ জন্য আমাদের কারেন্সি বেশি প্রয়োজন হয়।’

বাহককে দিতে বাধ্যবাধকতা

বাংলাদেশের মুদ্রা ছাপার একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি মুদ্রা হলো তিনটি। এক, দুই ও পাঁচ টাকার নোট কিংবা কয়েন হলো সরকারি মুদ্রা আর বাকিগুলো হলো সমপরিমাণ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ছাপানো ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ’।

বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার বিপরীতে নোট ছাপে। তাই এটা বাংলাদেশের জনগণের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন কোনো নোট বাজারে ছাড়ে, তখনই সমপরিমাণ এক, দুই ও পাঁচ টাকার নোট বা কয়েন সরকারি অ্যাকাউন্ট থেকে নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়ে নেয়। আবার যখন এক, দুই ও পাঁচ টাকা বাজারে ছাড়ে, তখনই সমপরিমাণ নোট সরকারি অ্যাকাউন্টে জমা দেয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের নিকট থেকে টাকা নিয়ে টাকা ছাড়ে। সে হিসেবে বাজারে যত টাকার নোট (বিল অফ এক্সচেঞ্জ) আছে, ঠিক সমপরিমাণ টাকা (এক, দুই ও পাঁচ টাকা) বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত আছে। সুতরাং সব নোট ব্যাংকে জমা করলেও এক, দুই, পাঁচ টাকার কয়েন বা নোট দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এক, দুই, পাঁচ টাকা হলো টাকা। বাকিগুলো বিল অব এক্সচেঞ্জ। আর এ জন্য টাকায় লেখা থাকে না ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’। অথচ বাকি নোটগুলোয় (বিল অফ এক্সচেঞ্জ) ঠিকই লেখা থাকে।

মুদ্রা দুই প্রকার: ঐচ্ছিক ও বিহিত মুদ্রা

ঐচ্ছিক মুদ্রা বিনিময়ের এমন এক মাধ্যম যা চাইলে অপরপক্ষ গ্রহণ করতেও পারে, নাও করতে পারে। যেমন ব্যাংক চেক। কোনো কিছু কিনে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যাংক চেক প্রদান করা হলে গ্রহিতা চাইলে ব্যাংক চেকটি গ্রহণ করতে পারেন অথবা বলতে পারেন নগদ টাকায় পরিশোধ করতে হব। এটা পুরোপুরি ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।

বিহিত মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে নিতে অপরপক্ষ বাধ্য থাকে এবং বাহক দিতে বাধ্য থাকে। যেমন ব্যাংক নোট। কোনো কিছুর বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যাংক নোট দেয়া হলে গ্রহিতা সেটি গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবেন। তাই এই ধরনের মুদ্রাকে বিহিত মুদ্রা বলা হয়ে থাকে। তাই টাকার গায়ে লেখা থাকে ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে (বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে) দিতে বাধ্য থাকিবে।’

ব্যাংক নোট বাংলাদেশ ব্যাংক বের করে বলে এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সই থাকে। কিন্ত সরকারি নোট বের করে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ-মন্ত্রণালয়। এ জন্য এতে থাকে অর্থসচিবের সই।

বাংলাদেশ ব্যাংক যে সকল নোট ছাপায়, তা সরাসরি টাকা না। সেগুলো হলো সমপরিমাণ সরকারি মুদ্রার বিনিময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাপানো ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ’।

ব্যাংক নোটগুলো যেহেতু বাংলাদেশ সরকারের টাকা নয়, বরং বিল অফ এক্সচেঞ্জ, আর এগুলো ছাপাচ্ছে স্বয়ং বাংলাদেশ ব্যাংক, সেহেতু এটা বাংলাদেশের জনগণের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা দায়।

যেহেতু এটা ব্যাংকের দায়, তাই তারা সমপরিমাণ বিনিময়মূল্য দিতে বাধ্য। এই কারণেই সকল প্রকার ব্যাংক নোটের উপর তারা লিখে দেয়, ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে।’

টাকার জন্মের ইতিহাস

স্বর্ণ মুদ্রার প্রচলন থাকার যুগে ধাতুর তৈরি টাকা ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এ ধরনের টাকা ক্ষয় হয়ে যেত এবং এর পরিমাণ কমে যেত, অন্য দিকে বেশি পরিমাণে স্বর্ণমুদ্রা পরিবহন করা ঝুঁকিপূর্ণ এবং কষ্টসাধ্য কাজ ছিল।

এরপর মানুষ স্বর্ণকারের কাছে স্বর্ণ রেখে একটা স্লিপ বা রশিদ নিয়ে আসতো। এই রশিদ অনেকটা চেকের মত কাজ করতো। লেনদেনের সময় রশিদ ধরিয়ে দিত এবং সেই রশিদ সেই স্বর্ণকারের কাছে জমা দিলে স্বর্ণকার তাকে ধাতব মুদ্রা দিতে বাধ্য থাকত। সেই রশিদে এই কথাটা লেখা থাকতো: ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে মুদ্রা দিতে বাধ্য থাকিবে।’

এরপর এটার আধুনিকায়ন এবং জাতীয়করণের ফলে এটা কাগজের মুদ্রা কিংবা টাকায় পরিণত হয়েছে।

১৯৭১ সালের আগ পর্যন্ত টাকা স্বর্ণের মজুদের ভিত্তিতে ছাপা হত।

অর্থাৎ সরকারের রিজার্ভে যদি ১০ টন স্বর্ণ জমা থাকে, তবে বাংলাদেশ ১০ টন স্বর্ণের মূল্য মানের টাকা ছাপাতে পারবে।

১৯৭১ সালে আমেরিকা এই আন্তর্জাতিক নিয়ম অস্বীকার করে এবং ইচ্ছামতো টাকা ছাপাতে শুরু করে।

বর্তমানে মুদ্রার মূল্য স্বর্ণের উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে দেশের জিডিপি, ব্যয়ের প্যাটার্নের উপর।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

‘চাহিবামাত্র বাহককে টাকা দিতে বাধ্য’ থাকার অর্থ কী?

আপডেট সময় : ০৮:৪৮:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২

 

অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে, ১০ টাকা বা এর বেশি মূল্যমানের টাকার গায়ে কেন লেখা থাকে: ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’। এই বাক্যটির অর্থ নিহীত আছে মুদ্রার ইতিহাসের মধ্যে।

টাকা বিনিয়ম মাধ্যম। কিন্তু এই টাকা কেউ চাইলেই কি তাকে দিতে হবে? বা দিতে কি বাধ্য?

এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ টাকার মধ্যে লেখা ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’।

কেন টাকায় লেখা থাকে এমন কথা? এর অর্থ কী?

‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকা’ কথাটার অর্থ কিছুটা জটিল। ব্যবহারকারী বা বিনিময়ের সঙ্গে এটির কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের সরকারি মুদ্রা হলো দুটি। এক ও দুই টাকার নোট কিংবা কয়েন হলো সরকারি মুদ্রা। আর বাকিগুলো হলো সমপরিমাণ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ছাপানো ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ’।

ধরুন, আপনি কোনো কারণে ব্যাংক নোটের উপরে আস্থা রাখতে পারছেন না। তাই আপনি ২০০ টাকার একটি নোট বাংলাদেশ ব্যাংক কাউন্টারে জমা দিয়ে বিনিময় চাইলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক চাহিবামাত্র এর বাহককে অর্থাৎ আপনাকে সমপরিমাণ এক ও দুই টাকা দিয়ে দেবে। অর্থাৎ চাওয়ামাত্রই বাহককে টাকা দিয়ে দায়মুক্ত হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এটিই হচ্ছে বাধ্য থাকার মূল বিষয়।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে বলা হলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিদেশি আমল থেকে লেখা হয়েছে বলে সেই ধারাবাহিতা এখনও বজায় রাখা হয়েছে। এটা লেখার আসলে কোনো কারণ নেই। ডলারে কিন্তু ‍এটা লেখা থাকে না। যখন স্বর্ণের মূল্যমানের সমপরিমাণ টাকা ছাপানো হতো, তখন এটা লেখা হতো। কারণ তখন টাকা দিয়ে সমপরিমাণ স্বর্ণ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন গোল্ড স্ট্যান্ড্যার্ডে টাকা ছাপানো হয় না। অন্যভাবে হিসেব-নিকেশ করা হয়। এ জন্য বর্তমানে এটা লেখা থাকার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। যেহেতু আগে থেকে লেখা ছিল, সে জন্য ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এখনও লেখা হয়। তবে এখন অনেক দেশ এটা পরিবর্তন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আগে প্রত্যেকটা ব্যাংকের নোট ইস্যু করা হতো স্বর্ণ মুদ্রার বিপরিতে। যত টাকা নোট ইস্যু করা হবে, ঠিক তত স্বর্ণ বা অন্যান্য আর্থিক সম্পদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষণ করা থাকবে।

‘কিন্তু এখন আমাদের কারেন্সি কত লাগবে, এটা নির্ভর করে মানুষের স্পেন্ডিং বিহেভিয়ারের (ব্যয়ের প্রবণতা) উপর। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষ নগদ টাকা পছন্দ করে। চেক বা কার্ডে লেনদেন অনেকে করতে চায় না। এ জন্য আমাদের কারেন্সি বেশি প্রয়োজন হয়।’

বাহককে দিতে বাধ্যবাধকতা

বাংলাদেশের মুদ্রা ছাপার একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি মুদ্রা হলো তিনটি। এক, দুই ও পাঁচ টাকার নোট কিংবা কয়েন হলো সরকারি মুদ্রা আর বাকিগুলো হলো সমপরিমাণ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ছাপানো ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ’।

বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার বিপরীতে নোট ছাপে। তাই এটা বাংলাদেশের জনগণের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন কোনো নোট বাজারে ছাড়ে, তখনই সমপরিমাণ এক, দুই ও পাঁচ টাকার নোট বা কয়েন সরকারি অ্যাকাউন্ট থেকে নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়ে নেয়। আবার যখন এক, দুই ও পাঁচ টাকা বাজারে ছাড়ে, তখনই সমপরিমাণ নোট সরকারি অ্যাকাউন্টে জমা দেয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের নিকট থেকে টাকা নিয়ে টাকা ছাড়ে। সে হিসেবে বাজারে যত টাকার নোট (বিল অফ এক্সচেঞ্জ) আছে, ঠিক সমপরিমাণ টাকা (এক, দুই ও পাঁচ টাকা) বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত আছে। সুতরাং সব নোট ব্যাংকে জমা করলেও এক, দুই, পাঁচ টাকার কয়েন বা নোট দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এক, দুই, পাঁচ টাকা হলো টাকা। বাকিগুলো বিল অব এক্সচেঞ্জ। আর এ জন্য টাকায় লেখা থাকে না ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’। অথচ বাকি নোটগুলোয় (বিল অফ এক্সচেঞ্জ) ঠিকই লেখা থাকে।

মুদ্রা দুই প্রকার: ঐচ্ছিক ও বিহিত মুদ্রা

ঐচ্ছিক মুদ্রা বিনিময়ের এমন এক মাধ্যম যা চাইলে অপরপক্ষ গ্রহণ করতেও পারে, নাও করতে পারে। যেমন ব্যাংক চেক। কোনো কিছু কিনে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যাংক চেক প্রদান করা হলে গ্রহিতা চাইলে ব্যাংক চেকটি গ্রহণ করতে পারেন অথবা বলতে পারেন নগদ টাকায় পরিশোধ করতে হব। এটা পুরোপুরি ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।

বিহিত মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে নিতে অপরপক্ষ বাধ্য থাকে এবং বাহক দিতে বাধ্য থাকে। যেমন ব্যাংক নোট। কোনো কিছুর বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যাংক নোট দেয়া হলে গ্রহিতা সেটি গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবেন। তাই এই ধরনের মুদ্রাকে বিহিত মুদ্রা বলা হয়ে থাকে। তাই টাকার গায়ে লেখা থাকে ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে (বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে) দিতে বাধ্য থাকিবে।’

ব্যাংক নোট বাংলাদেশ ব্যাংক বের করে বলে এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সই থাকে। কিন্ত সরকারি নোট বের করে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ-মন্ত্রণালয়। এ জন্য এতে থাকে অর্থসচিবের সই।

বাংলাদেশ ব্যাংক যে সকল নোট ছাপায়, তা সরাসরি টাকা না। সেগুলো হলো সমপরিমাণ সরকারি মুদ্রার বিনিময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাপানো ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ’।

ব্যাংক নোটগুলো যেহেতু বাংলাদেশ সরকারের টাকা নয়, বরং বিল অফ এক্সচেঞ্জ, আর এগুলো ছাপাচ্ছে স্বয়ং বাংলাদেশ ব্যাংক, সেহেতু এটা বাংলাদেশের জনগণের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা দায়।

যেহেতু এটা ব্যাংকের দায়, তাই তারা সমপরিমাণ বিনিময়মূল্য দিতে বাধ্য। এই কারণেই সকল প্রকার ব্যাংক নোটের উপর তারা লিখে দেয়, ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে।’

টাকার জন্মের ইতিহাস

স্বর্ণ মুদ্রার প্রচলন থাকার যুগে ধাতুর তৈরি টাকা ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এ ধরনের টাকা ক্ষয় হয়ে যেত এবং এর পরিমাণ কমে যেত, অন্য দিকে বেশি পরিমাণে স্বর্ণমুদ্রা পরিবহন করা ঝুঁকিপূর্ণ এবং কষ্টসাধ্য কাজ ছিল।

এরপর মানুষ স্বর্ণকারের কাছে স্বর্ণ রেখে একটা স্লিপ বা রশিদ নিয়ে আসতো। এই রশিদ অনেকটা চেকের মত কাজ করতো। লেনদেনের সময় রশিদ ধরিয়ে দিত এবং সেই রশিদ সেই স্বর্ণকারের কাছে জমা দিলে স্বর্ণকার তাকে ধাতব মুদ্রা দিতে বাধ্য থাকত। সেই রশিদে এই কথাটা লেখা থাকতো: ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে মুদ্রা দিতে বাধ্য থাকিবে।’

এরপর এটার আধুনিকায়ন এবং জাতীয়করণের ফলে এটা কাগজের মুদ্রা কিংবা টাকায় পরিণত হয়েছে।

১৯৭১ সালের আগ পর্যন্ত টাকা স্বর্ণের মজুদের ভিত্তিতে ছাপা হত।

অর্থাৎ সরকারের রিজার্ভে যদি ১০ টন স্বর্ণ জমা থাকে, তবে বাংলাদেশ ১০ টন স্বর্ণের মূল্য মানের টাকা ছাপাতে পারবে।

১৯৭১ সালে আমেরিকা এই আন্তর্জাতিক নিয়ম অস্বীকার করে এবং ইচ্ছামতো টাকা ছাপাতে শুরু করে।

বর্তমানে মুদ্রার মূল্য স্বর্ণের উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে দেশের জিডিপি, ব্যয়ের প্যাটার্নের উপর।