জমা খারিজ ও নামজারি (mutation)
- আপডেট সময় : ১২:৫৮:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ৩৮ বার পড়া হয়েছে
✅’নামজারি (mutation)’ বলতে-কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বৈধ পন্থায় ভূমি/জমির মালিকানা অর্জন করলে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে তার নামে রেকর্ড আপটুডেট (হালনাগাদ) করাকেই নামজারি বলা হয়।
✅ ‘জমা খারিজ’: যৌথ জমা বিভক্ত করে আলাদা করে নতুন সৃষ্টি করাকে জমা খারিজ বলে। অন্য কথায় মূল থেকে কিছু জমির অংশ নিয়ে নতুন জোত সৃষ্টি করাকে জমা খারিজ বলে।
✅এছাড়াও কোন রেকর্ডীয় মালিকের মৃত্যুতে তার নামের পরিবর্তে ঐখতিয়ানেই তার নাম কর্তন দিয়ে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশদের নাম বসিয়ে রেকর্ড হালনাগাদ করাকে নামজারি /mutation বলা হয়। এছাড়াও রেকর্ডীয় মালিকের জমি বিক্রি বা অন্যকোন কারনে হস্তান্তর হলে হস্তান্তরগ্রহীতার নামে রেকর্ড হালকরণ করাও নামজারি।
✅কোন ব্যক্তির নামজারি সম্পন্ন হলে তাকে একটি নামজারি খতিয়ান দেয়া হয়, যেখানে তার অর্জিত জমির একখানি সংক্ষিপ্ত হিসাব বিবরণী উল্লেখ থাকে। উক্ত হিসাব বিবরণী অর্থাৎ খতিয়ানে মালিকের নাম, কোন মৌজা, মৌজার নম্বর (জে এল নম্বর), জরিপের দাগ নম্বর, দাগে জমির পরিমান, একাধিক মালিক হলে তাদের নির্ধারিত হিস্যা ও প্রতি বছরের ধার্যকৃত খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে।
✅STATE ACQUISITION AND TENANCY ACT, 1950 অনুসারে নামজারিকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি যা ১১৬,১১৭ এবং ১৪৩ ধারায় আলোকপাত করা হয়েছে।
✅নিম্নে নামজারি এর প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছেঃ-
১। নামজারি
২। জমা খারিজ ও নামজারি
৩। জমা একত্রীকরণ
৪। নামজারির গুরুত্ব
✅১। শুধুমাত্র কোন দলিলের মাধ্যমে অর্জিত মালিকানার ভিত্তিতে অথবা ওয়ারিশ হিসেবে পিতা-মাতার জমিতে দখলসূত্রে থাকলেই সরকারি রেকর্ডে উক্ত ভূমিতে তাঁর মালিকানা নিশ্চিত হয় না। কোন ভূমিতে বৈধ ওয়ারিশ বা ক্রয়সূত্রে মালিক হবার পর পূর্বের মালিকের নাম হতে নাম কেটে বর্তমান মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়, তাহলেই তার মালিকানা সরকার কর্তৃক নিশ্চিত হয়। আর এটিই হল নামজারি পদ্ধতি। এটি না করলে নতুন দলিল তৈরি করে যে-কেউ নামজারি করে নিতে পারে।
✅২। আপনি যদি ওয়ারিশ হিসাবে বা ক্রয়সূত্রে কোন জমির মালিক হন কিন্তু নামজারি না করান, তবে আপনার অজান্তে কোনভাবে এক/একাধিক দলিল সম্পাদন করে কোন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি আপনার আগে নামজারি করে ফেলতে পারে। তাতে আপনি পরবর্তীতে নামজারি করতে গেলে। স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায় পড়বেন। বাস্তবক্ষেত্রে জটিলতা আরো বাড়তে দেখা গেছে যখন উক্ত স্বার্থানেষী ব্যক্তি অপর এক বা একাধিক ব্যক্তির নিকট ঐ জমি ইতোমধ্যে বিক্রয় করে ফেলেছে। বর্তমানে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে নানারকম মামলা মোকদ্দমার সৃষ্টি হয়ে থাকে যা দীর্ঘদিন যাবৎ অর্থ, সময় ও মানুষে-মানুষে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।
✅৩। সাধারণভাবে ক্রেতাদের ধারণা, দলিল সম্পাদন হলেই কাজ শেষ। নামজারির দরকার কী? এটি অত্যন্ত ভুল ধারণা। দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে শুধুমাত্র মালিকানা হস্তান্তর হয়, সরকারের খাতায় মালিক হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় না।
✅৪। রেজিস্ট্রেশন দপ্তরটি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি অফিস। সকল প্রকার দলিল সম্পাদন, রেজিস্ট্রিকরণ উক্ত দপ্তরের কাজ। দলিল রেজিস্ট্রিকরণের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত যিনি বিক্রেতা তিনি আদৌ উক্ত জমির মালিক হিসাবে সরকারের রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত আছেন কী না তার কোন রেকর্ড জেলা রেজিস্টার বা সাব-রেজিস্টারের দপ্তরে নেই। ফলে ভুলবশত: একই জমির এক বা একাধিক দলিলের মাধ্যমে বিক্রয়ের ঘটনা ঘটে। অপরদিকে ভূমি অফিসগুলি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন যার কাছে সরকারের কাছে রেকর্ডভুক্ত মালিকদের নাম, পূর্ববর্তী নামজারিকৃত মালিকদের নাম, নথিসহ বিস্তর তথ্য থাকে। ফলে একবার নামজারি করাতে সক্ষম হলে একই জমির একাধিকবার বিক্রয় হলেও মূল মালিকের আর ক্ষতিগ্রস্ত বা হয়রানী হবার সম্ভাবনা কম থাকে।
✅৫। নামজারি আবেদনের (application) মাধ্যমে আবেদনকারি যে স্বত্বলিপি অর্জন করেন, যাকে প্রচলিত ভাষায় আমরা ‘খতিয়ান’ বলে থাকি, এর মাধ্যমে তার উক্ত জমিতে মালিকানা স্বত্ব প্রমাণে নিশ্চয়তা লাভ করেন যা অন্য কোন দালিলিক মাধ্যমে লাভ করেন না।
✅৬। নামজারি করা না থাকলে শুধু একাধিক বিক্রয়ের আশঙ্কাই বিদ্যমান থাকেনা, পরবর্তীতে আপনার অর্জিত সম্পত্তিতে দখলে থাকলেও পরবর্তীতে আপনার অবর্তমানে আপনার উত্তরাধিকারগণ উক্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবার আশঙ্কা থাকে।
✅৭। যে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ঋণ নিতে গেলে জমি বন্ধকের ক্ষেত্রে খতিয়ান ছাড়া আবেদন গ্রহণ করা হয় না।
✅৮। ওয়ারিশনমূলে প্রাপ্ত জমির মালিকরা যদি নামজারি না করান তাহলে তাদের মধ্যে বিশেষত: নারী অংশীদারগণ এবং ভবিষ্যতে তাদের ওয়ারিশগণদের মধ্যে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ জন্য ওয়ারিশগণ সমঝোতার মাধ্যমে প্রথমেই নামজারি সম্পন্ন করে রাখলে পরবর্তীতে অনেক জটিলতা পরিহার করা সম্ভব হয়।
✅নামজারি করতে যা যা প্রয়োজন
1. মূল দলিল বা দলিলের সার্টিফাইড কপি বা দলিলের ফটোকপি
2. আইডি কার্ড (NID), অথবা জন্মসনদ এন্ড ছবি (২ কপি)
3. জমির খতিয়ান আরএস (RS), এসএ (SA)
4. বিএস (BS) খতিয়ান লাগবে
5. আরএস (RS) খতিয়ান হতে বর্তমান মালিক পর্যন্ত বায়া অথবা রেফেরেন্স দলিলের ফটোকপি
6. পৈত্রিক সম্পত্তি নামজারির জন্য ওয়ারিশসনদ বা বণ্টননামা দলিল লাগবে
7. সব ডকুমেন্ট দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে (আপনার খরিদা সম্পত্তি / ওয়ারিশান সম্পত্তি যদি আর এস থেকে বর্তমান/ হাল রেকর্ড পর্যন্ত সকল কাগজপত্র স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক থাকে তাহলে আপনি নিজেই অনলাইন এ জমা দিয়ে হাজিরায় উপস্থিত হয়ে এই টাকার মধ্যে নিজেই করতে পারবেন। (অনলাইন খরচ, হাজিরায় উপস্থিত হতে গাড়ি ভাড়া, আনুষাঙ্গিক)
✅নামজারীর প্রয়োজনীয় ফি
১। আবেদনের সাথে কোর্ট ফি-২০ (বিশ) টাকা,
২। নোটিশ জারী ফি- ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা,
৩। রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি- ১০০০ (এক হাজার) টাকা
৪। প্রতি কপি নামজারি খতিয়ান (Khatian) সরবরাহ বাবদ- ১০০ (একশত) টাকা।
৫। মোট ১১৭০ টাকা।
(বিঃদ্রঃ আবেদন পত্রের কোর্ট ফি ছাড়া বাকিগুলো ডিসিআর এর মাধ্যমে আদায় করা হবে।)