যথাযথ কোনও ফোরামে আলোচনা না করেই জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি করেন রওশন এরশাদ। পাশাপাশি পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী চেয়ারম্যান না হওয়া পর্যন্ত জি এম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্বপালনকালে জি এম কাদের জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র ধারা ২০ (২) এর খ-এ দেওয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। মনোনীত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রেসিডিয়ামের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবেন।
চেয়ারম্যানের অবর্তমানে ধারা ২০ (২) এর ক-কে উপেক্ষা করা যাবে না। বিবৃতিতে রওশন এরশাদকে সমর্থন জানিয়েছেন সাত জন সংসদ সদস্যসহ দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর গত ১৮ জুলাই, জাপা মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা এক সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদেরকে দলের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন।
এর আগে গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির নতুন চেয়ারম্যান হলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাই জি এম কাদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীতে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। পরে জি এম কাদের জানান, কোনো বিভেদ নেই, জাতীয় পার্টি এখন ঐক্যবদ্ধ। তবে সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়নি দলের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে।
জানুয়ারিতে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আগে জি এম কাদেরকে দলের ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তবে দেশে ফেরার পর সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেন মার্চে। তবে মৃত্যুর আগে তাকেই আবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন এরশাদ।
বনানীর সংবাদ সম্মেলনেও মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা জানালেন, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এরশাদ মৃত্যুর আগে বলে গেছেন তার অবর্তমানে দলের চেয়ারম্যান হবেন জি এম কাদের।
এরশাদের মৃত্যুর পরই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় ছিল কে ধরছেন জাতীয় পার্টির হাল, দল পরিচালিত হবে কীভাবে। এ অবস্থায় দায়িত্ব নিয়ে দল ঐক্যবদ্ধ রাখাই হবে জি এম কাদেরের চ্যালেঞ্জ।
এছাড়া গঠনতন্ত্র অনুযায় দলীয় ফোরামে আলোচনা করেই এরশাদের শূন্য আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন নতুন চেয়ারম্যান।
এদিকে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে একই নীতি বজায় রেখে চলবে দলটি- এমনটাই জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদার। তারা বলছেন, জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আগের মতই গঠনমূলক অবস্থানে থাকবেন তারা। এরশাদের মৃত্যুতে দলে নেতৃত্ব নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না বলেও দাবি করেছেন এই দুই নেতা।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলের ভেতরে-বাইরে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। দলের নেতৃত্ব ও সরকারের প্রতি সমর্থনের বিষয়টি ঘুরে ফিরে আসছে আলোচনায়।
জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে। দলে বিভেদ নেই দাবি কোরে তারা জানান, জি এম কাদেরই হচ্ছেন দলের পরবর্তী চেয়ারম্যান। এরশাদের লিখিত নির্দেশ অনুযায়ী পরের প্রেসিডিয়াম বৈঠকেই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
এরশাদ-পরবর্তী জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের বিষয়ে তারা জানান, সংসদের ভেতরে ও বাইরে দুটি দলের একসঙ্গে চলার যে নীতি আছে তা বজায় থাকবে।
আগামীতে জাতীয় পার্টিকে আরও সংগঠিত করতে, যারা চলে গিয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি প্রেসিডিয়ামের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো এবং দল পরিচালনায় ১১ সদস্যের নীতি নির্ধারণী কমিটি গঠনের কথাও জানান মহাসচিব।