দুর্গত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
- আপডেট সময় : ০৮:১১:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪
- / ৫০৪২ বার পড়া হয়েছে
দোকানি শাহ আলম বলেন, ফাজিলপুর স্টেশন আর মুহুরি ব্রিজের কাছে দুইটা টিউবয়েল। এই দুই টিউবয়েলই পুরো এলাকার একমাত্র সুপেয় পানির ভরসা।
ত্রাণ প্রচুর, অভাব সুপেয় পানির
বানভাসিদের জন্য সুপেয় পানি নিয়ে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
উত্তম সেনগুপ্ত. ফেনী থেকে ফিরে
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীর সদর উপজেলা থেকে শুরু করে ছয়টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি। প্রতিদিনই খাবার আর পানি নিয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে বানভাসিদের সহায়তায় ছুটে যাচ্ছেন মানুষ।
কিন্তু চারদিকে থৈ থৈ পানি ভাসলেও এ জেলায় এখন সবচেয়ে বেশি অভাব সুপেয় পানির। ত্রাণ হিসেবে যে শুকনো খাবার ও পানি জেলায় পৌঁছাচ্ছে তাতে সুপেয় পানির চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না।
ফেনী সদরের ফাজিলপুর এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন চাকরিসূত্রে থাকেন রাঙামাটিতে। বানের পানিতে পুরো গ্রাম তলিয়ে যাওয়ায় নিজের পরিবারকে রেখেছেন চট্টগ্রাম শহরে আত্মীয়ের বাসায়।
দুর্যোগের এই সময়ে কয়েকজন সহযোগী নিয়ে তিনিও নেমেছেন ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে। প্রতিদিনই তিনি ছুটছেন দুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে, বানভাসিদের উদ্ধারে।
বানভাসিদের জন্য ত্রাণের সঙ্গে যে পরিমাণ সুপেয় পানি পৌঁছানো হচ্ছে, তা মানষের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।
বানভাসিদের জন্য ত্রাণের সঙ্গে যে পরিমাণ সুপেয় পানি পৌঁছানো হচ্ছে, তা মানষের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।
রোববার সকালে বাসে ফেনী যাওয়ার পথে দেখা শাহাদাতের সাথে। তার মোবাইলে বিভিন্ন জনের ফোন আসছে, কেউ ত্রাণের জন্য, কেউ উদ্ধার করে আনার জন্য সহায়তা চাইছিলেন।
তার সহায়তা কার্যক্রম ও ফেনীর বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে এক কথায় উত্তর, “অনেক ত্রাণ যাচ্ছে। প্রতিদিনই ত্রাণ আসছে। কিন্তু বানবাসী মানুষগুলোর সবচেয়ে বেশি দরকার সুপেয় পানির।
“অনেকেই সরাসরি বলছে আমাদের পানি দেন, ত্রাণের দরকার নাই। তাই আমরাও চেষ্টা করছি সবার কাছে অন্তত খাবার পানি আর স্যালাইনসহ প্রাথমিক ওষুধগুলো পৌঁছে দিতে।”
শাহাদাত আরও জানান, বানের পানিতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন নারীরা। তাদের নানা সমস্যার কথা তারা কাউকে বলতে পারেন না। স্যানিটারি ন্যাকপিনসহ তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো তারা কারো কাছে বলতেও পারছেন না।
বানভাসিদের জন্য ত্রাণের সঙ্গে যে পরিমাণ সুপেয় পানি পৌঁছানো হচ্ছে, তা মানষের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।
বানভাসিদের জন্য ত্রাণের সঙ্গে যে পরিমাণ সুপেয় পানি পৌঁছানো হচ্ছে, তা মানষের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।
ফাজিলপুর স্টেশনের দোকানী শাহ আলম। বেলা দুইটার দিকে তার দোকানে গিয়ে দেখা যায়, কিছু যুবক আর পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি বসে গল্প করছেন।
দোকানে পানি কিনতে চাইলে শাহ আলম জানালেন, নেই। আশপাশেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
শাহ আলম বলেন, “ফাজিলপুর স্টেশন আর মুহুরি ব্রিজের কাছে দুইটা টিউবয়েল। এই দুই টিউবয়েলই পুরো এলাকার একমাত্র সুপেয় পানির ভরসা। সব এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। টিউবয়েলগুলোতো পানির নিচে, এ দুইটি টিউবয়েল উঁচু জায়গায় হওয়ায় সেগুলোর পানি ব্যবহার করছে সবাই।”
শাহ আলমের দোকানে বসে থাকা লোকজন বলছেন, এখানে প্রচুর সুপেয় পানি দরকার।
ফাজিলপুর রেলক্রসিং এলাকায় দেখা হয় আব্দুল খালেক ও আবু তাহের নামের দুই ব্যক্তির সাথে। তারা সেখানে গিয়েছেন ত্রাণ নিতে।
বন্যার কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে ফাজিলপুর স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসিরা।
বন্যার কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে ফাজিলপুর স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসিরা।
খালেকের বাড়ি ফাজিলপুর ইউনিয়নের সূর্যছায়া এলাকায়। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে ঘর। পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় কাদেরিয়া স্কুল ভবনে।
তিনি বলেন, “গত দুই দিন শুকনো খাবার পেয়েছি। সড়ক থেকে পানি কমে যাওয়ায় সেখানে এখন নৌকা নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। তাই আজ কোনো ত্রাণ পাইনি। ত্রাণ পেলেও আমাদের বেশি দরকার পানি। ক্ষুধা চেপে রাখলেতো তৃষ্ণা চেপে রাখা কষ্ট। আমাদের পানি দরকার, খাবার পানি।”
ফাজিলপুর স্টেশনে ঠাঁই নিয়েছেন কয়েকশ বানভাসি মানুষ। রোববার দুপুরে স্টেশনের প্লাট ফর্মে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই ইট দিয়ে চুলা তৈরি করে রান্না করছিলেন। তাদের দুই জন ঠাকুর চাঁন ও শিউলি দাশ দম্পতি।
তারা জানালেন, বৃহস্পতিবার থেকে তারা শুকনো খাবার খেয়ে ছিলেন। রোববার বানের পানি থেকে কিছু মাছ ধরে আর কিছু তরকারি আর চাল জোগাড় করে রান্না বসিয়েছেন। স্টেশনের টিউবয়েল থেকে আনা পানিতে রান্না করছেন।
ফাজিলপুর স্টেশনে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিরা রান্না করছেন স্টেশনের টিউবওয়েলের পানিতে।
ফাজিলপুর স্টেশনে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিরা রান্না করছেন স্টেশনের টিউবওয়েলের পানিতে।
“অনেক শুকনো খাবার আছে। গতকাল (শনিবার) এখানে রিলিফ ট্রেন আসছিল। সেখান থেকে অনেক খাবার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পানির দরকার সবচেয়ে বেশি।”
ঢলের পানি ও অতিবৃষ্টিতে গত বুধবার থেকে তলিয়ে গেছে ফেনী। সদর থেকে শুরু করে ছয়টি উপজেলায় তলিয়ে গেছে পানির নিচে। এসব উপজেলার অনেক আবাসিক ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এখন পানির নিচে।
তবে শনিবার বিকাল থেকে কমতে শুরু করেছে পানি। স্থানীয়রা জানান, আগের দিনের চেয়ে অন্তত চার ফুট পানি কমেছে।