পরিত্যক্ত রেললাইন, ক্রিকেট ও মারুফা..

- আপডেট সময় : ০৮:০৯:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩
- / 156
কোন এক সংবাদ সম্মেলনে মারুফা বলেছিলো সে হার্দিক পান্ডিয়ার মতো অল-রাউন্ডার হতে চায়। দুজনের গল্পগুলো যে একইরকম সংগ্রামের, কষ্টের আর উত্থানের।
নীলফামারীর মেয়ে মারুফা বছর দুইয়েক আগেও বাবার সাথে কৃষি ক্ষেতে কাজ করেছে। অভাবের সংসারে মারুফা বরাবরই বাবা মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। কখনো বাবাকে গিয়ে সাহায্য করেছে মাঠে আবার প্রয়োজনে মায়ের কাজে হাত লাগিয়ে।
এর বাইরে মারুফার ধ্যানজ্ঞানে ছিলো ক্রিকেট। সুযোগ পেলে ব্যাট বল নিয়ে নেমে পড়তো মাঠে। না মাঠ ঠিক নয়, নীলফামারীর যে রেললাইনটা ছাড়িয়ে গেছে দেশের সীমানা সেটার পাশের পরিত্যক্ত মাঠে।
বাংলাদেশী প্রথাগত বাবাদের মতো মারুফার বাবাও জানিয়ে দিয়েছিলো মেয়ের ক্রিকেটের খরচ তিনি বহন করতে পারবেন না। তবে মেয়ের পথে বাঁধা হয়ে দাড়ান নি কখনো। বলেছিলেন, ” আমি টাকা দিতে পারবো না, তোরটা তুই দেখে নে।”
নিতান্ত গরীব বাবার অসহায়, নিরুপায়তা ফুটে উঠেছে যে কথায়।
মারুফার বোলিং মুগ্ধতা ছড়িয়েছে ডিপিএলে। সেটাই ওর ভাগ্য বদলছে। ১৭ বছর বয়সে ১১ ম্যাচে ২৩ উইকেট তুলে নিয়েছিলো মারুফা। এরপর দ্বার উন্মুক্ত হয়েছিলো জাতীয় দলেরও। জ্যোতিদের সাথে খেলেছে বেশ কিছু ম্যাচ।
অজানা এক সাগর পাড়ি দেওয়া মারুফা জাতীয় দলের পর এখন স্বপ্ন বুনছেন অ-১৯ বিশ্বকাপ জেতার। প্রথম ম্যাচে অজিদের বিপক্ষে ২ উইকেট নিয়েছিলো সে। আর আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়েছেন, জিতিয়েছেন।
হার্দিক পান্ডিয়া তার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলো, ক্রিকেটটা তার জীবনে না আসলে তিনি বড়জোর পেট্রোল পাম্পে কাজ করতেন। মারুফার গল্পটাও এরকমি। ক্রিকেটটা তার জীবনে না আসলে এ দেশে এ বয়সে তারও হয়তো কারো সংসার করতে হতো। আমি নিজে উত্তরবঙ্গের মানুষ বলে জানি, এ বয়স মেয়েদের বিয়ের!
মারুফা কোনদিন হার্দিক পান্ডিয়ার মতো অল-রাউন্ডার হতে পারবে কিনা জানি না। হয়তো থেকে যাবে শুধুই ফাস্ট বোলার! তবে জীবন যুদ্ধে সে যে ছাড়িয়ে গেছে পান্ডিয়াকেও..