প্রবাসী সরকার: কী বলছে আ.লীগ ও ভারত
- আপডেট সময় : ১০:২৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪ ৮১ বার পড়া হয়েছে
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় একটি সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নিতে পারেন বলে জানানো হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় নোয়াখালীতে এক অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘ওই সমাবেশ থেকে তারা একটি প্রবাসী সরকারের ঘোষণা দিতে পারে এবং শেখ হাসিনা সেখানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখতে পারেন।’ ‘প্রবাসী সরকারের’ ঘোষণা করার দাবির প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিক ও স্পষ্ট। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের মতে, এই দাবি ‘ভিত্তিহীন, অসত্য এবং প্রোপাগান্ডা।’ ভারত সরকারের কর্মকর্তাদের মন্তব্যও উল্লেখযোগ্য, যারা এই দাবিকে ‘গাঁজাখুরি ও ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের মতে, কোনো দায়িত্বপূর্ণ পদে না থাকা ব্যক্তিদের কথায় প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত নয়।
কী বলছে আওয়ামী লীগ?
আওয়ামী লীগ ভারতের মাটিতে সমাবেশ ও প্রবাসী সরকার ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন সমন্বয়ক যে দাবি করেছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই বলে বলছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘এগুলো সব ভিত্তিহীন, অসত্য এবং প্রোপাগান্ডা।’
ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকার এখন দেশ চালাতে পারছে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
‘দেশে এখন জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, অরাজকতা চলছে। মোটকথা, কোনোকিছুর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই,’ বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সিনিয়র আরেকজন নেতা।
এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা।
‘নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই তারা এখন এসব প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। কিন্তু এসব করে পার পাওয়া যাবে না। ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন অবৈধ সরকারকে নিতে হবে,’ বলেন নাছিম।
তবে, নেতাকর্মীদের অনেকে যে ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছেন এবং এখনও ছাড়ার চেষ্টা করছেন, সেটি অবশ্য স্বীকার করেছেন তিনি।
‘আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে অত্যাচার-নির্যাতন-মামলা-হামলা চালানো হচ্ছে, তাতে করে জীবন বাঁচাতে কেউ যদি দেশের বাইরে আশ্রয় নেয়, সেটা কি সে পারে না?,’ বলছিলেন নাছিম।
ভারত কী বলছে?
ভারত সরকারের কর্মকর্তারাও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবিকে সম্পূর্ণ ‘গাঁজাখুরি ও ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
ভারত অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
‘কারা বলছেন এসব কথা? তারা কি কোনো দায়িত্বপূর্ণ পদে আছেন? পাশের দেশে যে কেউ একটা আজগুবি কথা বললেই আমরা কেন জবাব দিতে যাব?’ ভারত সরকারের একটি সূত্র এভাবেই বিবিসি বাংলাকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
এ ধরনের দাবির যে কোনো ভিত্তি নেই, সেটা অবশ্য ত্রিপুরা এবং দিল্লিতে নানা মহলে খোঁজখবর নিয়েও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কারণ, প্রথমত, আওয়ামী লীগের পালিয়ে আসা নেতাকর্মীরা যদি ত্রিপুরার মাটিতে বড় মাপের কোনো সমাবেশ করতে চান, সেটা একেবারে গোপনে বা স্থানীয়দের কাউকে টের পেতে না-দিয়ে করা সম্ভব নয়।
ত্রিপুরার সরকারি ও বেসরকারি একাধিক সূত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে, রাজধানী আগরতলায় এ ধরনের কোনো তৎপরতা গত কয়েক সপ্তাহে তাদের আদৌ চোখে পড়েনি।
দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ যদি ভারতের মাটিতে কোনো প্রকাশ্য সভা করেও, সেখানে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে ভাষণ দিতে দেওয়া হবে- সে সম্ভাবনা একেবারেই নেই।
গত আড়াই মাসে ভারত বারেবারে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে, এক বিশেষ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে নিজের সুরক্ষার জন্য শেখ হাসিনাকে ভারতে চলে আসতে হয়েছে এবং তখন তাকে আতিথেয়তা দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে অংশ নিতে দেওয়া হবে, ভারত এখনও এরকম কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
ফলে প্রকাশ্য কোনো রাজনৈতিক সভায় তিনি ভাষণ দিলে, বা তার অডিও বার্তা প্রচার করা হলে দিল্লির জন্য তা কূটনৈতিকভাবে খুবই অস্বস্তিকর হবে।
ফলে শেখ হাসিনাকে আপাতত সেটা ‘অ্যালাও’ করা হবে না বলে বলছেন কর্মকর্তারা।
তৃতীয়ত, ৫ অগাস্টের পালাবদলের পর আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী পালিয়ে ভারতে চলে এসেছেন এটা ঠিকই। এদের অনেকেরই আগে থেকে ভারতের ভিসা ছিল, কেউ কেউ আবার এসেছেন ‘বিশেষ ব্যস্থায়’।
বিবিসি জানতে পেরেছে, ভারত তাদের সবাইকেই অনানুষ্ঠানিকভাবে ‘লো প্রোফাইল’ বজায় রেখে চলার নির্দেশ দিয়েছে – প্রকাশ্য কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতেও নিষেধ করা হয়েছে তাদের।
রাতারাতি সে অবস্থান পরিবর্তন করে ভারতের মাটিতে সমাবেশ করতে উৎসাহ দেওয়া হবে – এমন কোনো কারণ ঘটেনি। – বিবিসি