ঢাকা ১০:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
ক্রিকেটার বিজয়ের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আওয়ামী লীগে বিভক্তি, চ্যালেঞ্জের মুখে হাসিনা হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়তেই কে ফোন করে ইউনূসের কাছে! শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে যা বললেন ড. ইউনূস বাংলাদেশের যে সিদ্ধান্তের কারণে মাথায় হাত ভারতের ১০ হাজার আওয়ামী কর্মী মাঠে নামলেই তো সরকার পরে যাবে সরকার উৎখাতে চক্রান্ত! কারাগারে বসেই চলছে নানা তৎপরতা আওয়ামী লীগে বিভক্তি, চ্যালেঞ্জের মুখে হাসিনা মহার্ঘ ভাতা নিয়ে যা বললেন অর্থ উপদেষ্টা কানাডার নাগরিক হয়েও বাংলাদেশে সব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত পুতুল দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা চেয়ারম্যান-মেয়র হতে লাগবে স্নাতক ডিগ্রি, হবে না সরাসরি ভোট চাল-মুরগির দাম চড়া, অন্য সব আগের মতো দেশের স্বার্থে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের সমালোচনা করে যা বললেন নাহিদ ইসলাম কিভাবে বাড়ছে বাংলাদেশের আয়তন? পাল্টে যাচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব, আনসারের পোশাক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে পদত্যাগ করছেন পুতুল? চারটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত হবে নতুন বাংলাদেশ! সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক : প্রেসসচিব

বই নেবেগো বই !

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৭:১০:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অক্টোবর ২০২২
  • / 97
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

১৯৯২ সালে ডায়াবেটিকস ধরা পড়লে ডাক্তার নিয়মিত ৩-৪ কিলোমিটার হাঁটার পরামর্শ দিলেন। তিনি হাঁটতে শুরু করলেন। সাথে সাথে গ্রামে গ্রামে বই দিতে থাকলেন মানুষের ঘরে ঘরে।

এক সাক্ষাৎকার নেবার সময় তিনি বলেন,
“আমি ভেবে দেখলাম, যারা আমার বাড়ি থেকে বই নিয়ে যায়, আমি নিজেই তো হেঁটে হেঁটে তাদের বাড়িতে গিয়ে বই পৌঁছে দিয়ে আসতে পারি। সেই থেকে শুরু। এক বাড়িতে বই দিতে গেলে তার দেখাদেখি আরেক বাড়ির লোকেরাও বই চায়। বই নিয়ে হাঁটা আস্তে আস্তে আমার নেশায় পরিণত হলো।”

নিজের টাকায় বই কিনে পায়ে হেঁটে তা ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি দিয়ে আসতেন ।নি​র্দিষ্ট সময়ের পর নিয়েও আসতেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা মানুষটি।

তিনি হারেজ উদ্দিন সরকার । জন্মের পর থেকেই মা আদর করে “পলান” নামে ডাকতেন। আজকে ‘পলান সরকার’ নামেই তিনি বহুল আলোচিত একটি ভালোবাসার নাম।

১৯২১ সালের ১ আগস্ট অবিভক্ত বাংলার নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ মাস বয়সে তাঁর বাবা হায়াতউল্লাহ সরকার মারা গেলে তিনি একই এলাকায় দাদুর বাড়িতে বেড়ে ওঠেন।

তিনি যাত্রাদলে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে সংলাপ পড়তে গিয়ে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মায় । বেশি বেশি লেখাপড়া না করতে পারলেও বইয়ের প্রতি, শিক্ষার জন্যে ছিল অদম্য ভালোবাসা ও আকর্ষণ।
১৯৬৫ সালে নিজ গ্রাম বাউসায়
“হারুন অর রসিদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়” স্থাপনের জন্য নিজের জমি দান করেন।

১৯৯০ সালের পর নিজে হয়ে ওঠেন
‘ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার’ । গ্রামের যেসব ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে প্রথম থেকে দশম স্থান অধিকার করত, তাদের বাড়ি গিয়ে বই ধার দিয়ে আসতেন তিনি। পড়া শেষ হলে নিজেই আবার ফেরত নিয়ে আসতেন।
তারপর ডায়াবেটিকস ধরা পড়লে …..!

বাকি ছাত্র ছাত্রীদেরও বই পড়ার উৎসাহ দেখে সবাইকে বই দিয়ে নিজেই ফেরত নিবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। বাউশা গ্রামে নিজের চাল কলে যারা যথা সময়ে দেনা পরিশোধ করতো – তাদের তিনি বই উপহার দিতেন।
বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে বই উপহার দিতেন।
বই প্রেমী মানুষটিকে এলাকার অনেকেই পাগল বলত।

হাঁটতে হাঁটতে একদিন বয়স বাড়ল। মোটা কাঁচের ঘোলাটে চশমা, গায়ে সাদামাটা পাঞ্জাবী। দেখা যেত কাঁধে ঝোলাভর্তি বই নিয়ে এক বৃদ্ধ হাঁটছেন গাঁয়ের মেঠো রাস্তা ধরে। পাশের ধানক্ষেত থেকে ডাক উঠতো – “বইওয়ালা দুলাভাই, কই যান?”।
গ্রামের সকলের কাছে মানুষটি তখন বইওয়ালা দুলাভাই নামে পরিচিত।

২০০৬ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে তাঁর সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রচার হয়। সারাদেশ তাঁর নাম জানতে পারে।

২০০৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোর ‘ছুটির দিনে’ সাময়িকীতে পলান সরকারকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপা হয়, যার নাম ছিলো
‘বিনি পয়সায় বই বিলাই’।
সেইথেকে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ উপাধিতে পরিচিত হন সারাদেশে।

২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে বিশ্বের ভিন্ন ভাষার প্রধান প্রধান দৈনিকে একযোগে পলান সরকারের বই পড়ার এই আন্দোলনের গল্প ছাপা হয়।

সেই গল্প পড়ার পর মনে হলো-
আলোর ফেরিওয়ালার তুলনায় আমরা কতো ক্ষুদ্র

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বই নেবেগো বই !

আপডেট সময় : ০৭:১০:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অক্টোবর ২০২২

 

১৯৯২ সালে ডায়াবেটিকস ধরা পড়লে ডাক্তার নিয়মিত ৩-৪ কিলোমিটার হাঁটার পরামর্শ দিলেন। তিনি হাঁটতে শুরু করলেন। সাথে সাথে গ্রামে গ্রামে বই দিতে থাকলেন মানুষের ঘরে ঘরে।

এক সাক্ষাৎকার নেবার সময় তিনি বলেন,
“আমি ভেবে দেখলাম, যারা আমার বাড়ি থেকে বই নিয়ে যায়, আমি নিজেই তো হেঁটে হেঁটে তাদের বাড়িতে গিয়ে বই পৌঁছে দিয়ে আসতে পারি। সেই থেকে শুরু। এক বাড়িতে বই দিতে গেলে তার দেখাদেখি আরেক বাড়ির লোকেরাও বই চায়। বই নিয়ে হাঁটা আস্তে আস্তে আমার নেশায় পরিণত হলো।”

নিজের টাকায় বই কিনে পায়ে হেঁটে তা ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি দিয়ে আসতেন ।নি​র্দিষ্ট সময়ের পর নিয়েও আসতেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা মানুষটি।

তিনি হারেজ উদ্দিন সরকার । জন্মের পর থেকেই মা আদর করে “পলান” নামে ডাকতেন। আজকে ‘পলান সরকার’ নামেই তিনি বহুল আলোচিত একটি ভালোবাসার নাম।

১৯২১ সালের ১ আগস্ট অবিভক্ত বাংলার নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ মাস বয়সে তাঁর বাবা হায়াতউল্লাহ সরকার মারা গেলে তিনি একই এলাকায় দাদুর বাড়িতে বেড়ে ওঠেন।

তিনি যাত্রাদলে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে সংলাপ পড়তে গিয়ে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মায় । বেশি বেশি লেখাপড়া না করতে পারলেও বইয়ের প্রতি, শিক্ষার জন্যে ছিল অদম্য ভালোবাসা ও আকর্ষণ।
১৯৬৫ সালে নিজ গ্রাম বাউসায়
“হারুন অর রসিদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়” স্থাপনের জন্য নিজের জমি দান করেন।

১৯৯০ সালের পর নিজে হয়ে ওঠেন
‘ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার’ । গ্রামের যেসব ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে প্রথম থেকে দশম স্থান অধিকার করত, তাদের বাড়ি গিয়ে বই ধার দিয়ে আসতেন তিনি। পড়া শেষ হলে নিজেই আবার ফেরত নিয়ে আসতেন।
তারপর ডায়াবেটিকস ধরা পড়লে …..!

বাকি ছাত্র ছাত্রীদেরও বই পড়ার উৎসাহ দেখে সবাইকে বই দিয়ে নিজেই ফেরত নিবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। বাউশা গ্রামে নিজের চাল কলে যারা যথা সময়ে দেনা পরিশোধ করতো – তাদের তিনি বই উপহার দিতেন।
বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে বই উপহার দিতেন।
বই প্রেমী মানুষটিকে এলাকার অনেকেই পাগল বলত।

হাঁটতে হাঁটতে একদিন বয়স বাড়ল। মোটা কাঁচের ঘোলাটে চশমা, গায়ে সাদামাটা পাঞ্জাবী। দেখা যেত কাঁধে ঝোলাভর্তি বই নিয়ে এক বৃদ্ধ হাঁটছেন গাঁয়ের মেঠো রাস্তা ধরে। পাশের ধানক্ষেত থেকে ডাক উঠতো – “বইওয়ালা দুলাভাই, কই যান?”।
গ্রামের সকলের কাছে মানুষটি তখন বইওয়ালা দুলাভাই নামে পরিচিত।

২০০৬ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে তাঁর সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রচার হয়। সারাদেশ তাঁর নাম জানতে পারে।

২০০৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোর ‘ছুটির দিনে’ সাময়িকীতে পলান সরকারকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপা হয়, যার নাম ছিলো
‘বিনি পয়সায় বই বিলাই’।
সেইথেকে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ উপাধিতে পরিচিত হন সারাদেশে।

২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে বিশ্বের ভিন্ন ভাষার প্রধান প্রধান দৈনিকে একযোগে পলান সরকারের বই পড়ার এই আন্দোলনের গল্প ছাপা হয়।

সেই গল্প পড়ার পর মনে হলো-
আলোর ফেরিওয়ালার তুলনায় আমরা কতো ক্ষুদ্র