‘ঘুষ খাইলে কী হয়, জেল হয়, ফাঁসি তো আর হয় না’। এ মন্তব্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এক কর্মকর্তার। এমন দৃষ্টিভঙ্গির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীতে ছেয়ে গেছে পুরো সংস্থাটি। ফলে ক্ষতি হচ্ছে সরকারের, ভুগছেন সেবাপ্রার্থীরা। তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই দুর্নীতিবাজদের। তারা দেদার চালিয়ে যাচ্ছেন অপকর্ম।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই চালকের আসনে থাকেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাদের দিকনির্দেশনাতে চলে প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিআরটিএর স্টিয়ারিং অনেক বছর ধরেই দুর্নীতিবাজদের হাতে। তাদের কব্জা থেকে বিআরটিএকে মুক্ত করতে শীর্ষ কর্মকর্তারা যারপরনাই চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছুতেই এ থেকে মুক্তি মিলছে না রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটির। কাগজপত্র জালিয়াতি, নথি গায়েব, চোরাই গাড়ি নিবন্ধন তো বটেই, সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনাও ঘটছে এ সংস্থাটিতে। এমনকি বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির জেরে আদালতে হওয়া মামলায় বিচারক যে রায় দিয়েছেন, সেটি পর্যন্ত নকল করার মতো ঘটনাও ধরা পড়েছে এক কর্মকর্তার নথি ঘাঁটতে গিয়ে। এ রকম ১৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ২০টি বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একজন কর্মকর্তা মারা গেছেন। কিছু ঘটনার তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর পুনঃতদন্ত চলছে। দুর্নীতির অভিযোগে দুয়েকজন সাময়িক বরখাস্ত হলেও অধিকাংশ দুর্নীতিবাজই আছেন বহাল তবিয়তে। একেই জনবল সংকট তদুপরি তাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা, সেগুলো বিচারাধীন আছে, এমন যুক্তির বদৌলতে কর্মরত রয়েছেন অভিযুক্তরা। বিআরটিএর নিজস্ব তদন্তেই ৫৭টি সার্কেল অফিসের মধ্যে অন্তত ১২টি অফিসে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৯টি সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ কমিটি গঠন করেছে বিআরটিএ। লক্ষ্য সেবার মান বাড়ানো এবং সংস্থাটিকে দুর্নীতিমুক্ত করা।