মাইনুল হোসেন, বাড়ি রাজশাহীর তানোরে। শিক্ষিত যুবক, বেশ কয়েক বছর ধরে চাকরির জন্য ঘুরছিলেন। একসময় জানতে পারেন বাড়ির পাশেই একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ খুলছে, নাম এসটিসি ব্যাংক। কয়েকজন এসে জানাল, স্থানীয় লোককে অগ্রাধিকার দেবেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ৫ লাখ টাকা জামানত ও ২ লাখ টাকা ঘুষ দিলে চাকরি কনফার্ম। ব্যাংকের নাম শুনে কোনো কিছু যাচাই করারও প্রয়োজনবোধ করেননি যুবক। এরিয়া ম্যানেজার আজিম উদ্দীন প্রামাণিক ও ব্রাঞ্চ ম্যানেজার রানা রহমান মৃধা পাশের বাগমারা উপজেলার বাসিন্দা। তাদের কথার ওপরই জমি বন্ধক রেখে ৭ লাখ টাকা তুলে দেন মাইনুল। বিপরীতে তাকে দেওয়া হয় নিয়োগপত্র। এক মাসের মধ্যেই তানোর বাজারে ব্যাংকের ব্রাঞ্চও উদ্বোধন হয়। ভালোভাবেই চলছিল তিন মাস। এর পরই হঠাৎ উধাও ব্রাঞ্চ ম্যানেজারসহ অন্যরা। মাইনুলের মতো আরেক ভুক্তভোগী আসমানি খাতুন। ডিগ্রি পাস করে রাজশাহী কলেজে মাস্টার্স করছিলেন। তার দেবর সোহেল রানাও এসটিসি ব্যাংকে এরই মধ্যে যোগদান করেছেন। দেবরের কথায় তিনিও জমি ও মায়ের স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে প্রায় ৯ লাখ টাকা তুলে দেন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার রানা রহমান মৃধা ও চেয়ারম্যান মির্জা আতিকুর রহমানের হাতে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই রাজধানী ঢাকার মালিবাগের লিলি প্লাজায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে চেয়ারম্যান মির্জা আতিকুর রহমানের কাছ থেকে নিয়োগপত্র নেন। আশ্বস্ত হন মাসিক বেতন ও টাকা জমা রাখার ফিক্সড ডিপোজিটের লভ্যাংশ পাওয়ার ব্যাপারে। তবে বিধিবাম! মাত্র তিন মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় ব্যাংকের কার্যক্রম। উধাও হয়ে যান ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। শুধু মাইনুল এবং আসমানি নন, ওই ব্রাঞ্চেই এমন ১০ জনের কাছ থেকে অর্ধ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয় এ চক্র। আর তানোরের মতো রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, রংপুর ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ৫০টি ব্রাঞ্চ খুলে এভাবেই সহজ-সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে এ চক্র হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত ৩০ কোটি টাকা।