ঢাকা ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
ত্রাণের টাকা কেন ব্যাংকে রেখেছেন সমন্বয়করা? পুলিশ ও বিশেষজ্ঞদের ঢাকার যানজট নিরসনের উপায় খুঁজতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা শাহরিয়ার কবির গ্রেফতার তিতাস গ্যাস পরিচালনা পর্ষদ থেকে মতিউর রহমান চৌধুরীর নাম প্রত্যাহার ভারতের কাছে প্রায় ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন: ১০০ কোটির স্থলে খরচ হবে ১ কোটিরও কম! ‘শেখ হাসিনা আরেকটি দেশের মুখ্যমন্ত্রীও হতে চেয়েছিলেন’ ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিল সরকার স্বার্থ হাসিলে ভোলায় গ্যাস পাওয়ার কথা চেপে যান বিপু অভিজ্ঞতা নেই তবু বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার তিতাস গ্যাসের পরিচালক হলেন মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী যেভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নিলো ‘চৌধুরী পরিবার’ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়াদের তালিকা হচ্ছে: ফারুক-ই-আজম অন্তর্বর্তী সরকারকে ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের ‘ট্রমা’ কাটবে কী করে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনেক কিছুরই অদৃশ্য নীতিনির্ধারক ছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয় বৃষ্টি ও তাপমাত্রা নিয়ে নতুন বার্তা আবহাওয়া অফিসের ড. ইউনূসের কূটনীতিতে বিস্মিত ভারত কেমন ছিল বাফুফেতে কাজী সালাহউদ্দিনের ১৬ বছর? অর্থ লোপাটে বাপ-বেটার মহারেকর্ড

মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়েও যিনি বানিয়েছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয় সফটওয়্যার “অভ্র” !

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৭:০১:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২
  • / ৫০১১ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

২০০৩ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে রোগাটে ধরণের একটা ছেলে ভর্তি হল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। চোখে চারকোণা চশমা। মাথা ভর্তি চুলে চিরুনি চলে না সেভাবে। প্রাণোচ্ছল। আড্ডাবাজ। গভীর বুদ্ধিদীপ্ত দৃষ্টি। ১৮ বছর বয়সের ছেলেরা যেরকম হয় আর কি!!!

সহজ ভাষায় এই হচ্ছে মেহদী। মেহদী হাসান খান।
মেডিকেল কলেজ চিকিৎসক তৈরী করবে, সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু মেডিকেল কলেজ যদি সফটওয়্যার ডেভলোপার সৃষ্টি করে, তাহলে তা আশ্চর্যের বই কি!!! কিন্তু তাই ঘটেছিল ২০০৩ সালে। কিভাবে? তাহলে শোনাই যাক গল্পটা।

১৭ বছরের ছেলেটা মেডিসিন ক্লাবের প্রত্যেকটা কাজে সরব, উপস্থিতিও সেরকম প্রানোচ্ছল। হঠাৎ করে ছেলেটা হয়ে গেলো চুপচাপ। মাথা নিচু করে হাঁটছে, জিজ্ঞাসা করলে কথা বলছে না হয় বলছে না যা মেহদীর চরিত্রের সাথে যায় না।

এর মাঝে জানা গেলো বাংলা লেখার জন্য ওর নিজের বানানো একটা সফটওয়্যার আছে। বিজয় থাকতে কেনো আরেকটা সফটওয়্যার লাগবে তা আমার অজানা। খুব করে চেপে ধরতেই জানা গেলো ঘটনা। ইংরেজি অক্ষর চেপে কীবোর্ড এ বাংলা লেখা যায়। এই হচ্ছে মেহেদীর বানানো সফটওয়্যার এর বৈশিষ্ট্য। রোমান টাইপ করে বাংলা লেখার প্রথম সফটওয়্যার।

কত করে নিবি? জানতে পেরে বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করে মেহেদী কে!
কিসের কত করে নিবো?

এরপরে মেহদী যা বললো তাতে আক্কেলগুড়ুম হয়ে গেলো সবাই। ১৮ বছরের একটা ছেলে বলছে, ফ্রি। ভাষার জন্য টাকা নেবো কেন?
হ্যাঁ, এ ধরনের বৈপ্লবিক কথাবার্তা এই বয়সেই মানায়। কারণ এই সফটওয়্যার তৈরীর কাজটাও যে লেখনী জগতে এক বিপ্লবেরই সামিল। এরপরের সময়টা মেহদীর আত্মনিবেদন। বিপ্লবকে সফল করার প্রতিজ্ঞা। দুর্ধর্ষ ১৮ বছর বয়েসটাকে দরজার ওপাশে আটকে, হোস্টেলের একটা রুমে নিজের পৃথিবী বেঁধে ফেলে মেহদী তখন গোটা পৃথিবীর জন্য বাংলা ভাষাকে উন্মুক্ত করে দেয়ার যুদ্ধে নেমে গেছে।

রুমে না গেলে ছেলেটার সাথে দেখা হয়না। কলেজ ক্যান্টিনে নেই। মাথার চুল ছেড়ে দেয়া বাড়তে দিয়ে, থুতনির নীচে ফিনফিনে দাঁড়ি গজাচ্ছে। চোখের নীচে কালিটুকু হয়ে যাচ্ছে স্থায়ী। এর মাঝে আছে মেডিকেল নামের রোড রোলার। তাবৎ বিজ্ঞ শিক্ষকেরা ঘোষনা দিয়ে জানিয়ে দিলেন, এ ছেলে মেডিকেলের অনুপযোগী। বিজ্ঞ শিক্ষকেরা বলে দিলেন, সময় থাকতে মেডিকেল ছেড়ে দিতে মেডিকেলের অসহ্য, দমবন্ধকরা পৃথিবী মেহদীকে চেপে ধরছিলো আষ্টেপৃষ্ঠে, মরে যাওয়ার কথা ছেলেটার। একদিকে নতুন আইডিয়া, তার স্বপ্ন, আরেকদিকে মেডিকেল। অসম্ভব অস্থিরতা কাটাতে যখন রাতে একটু রাস্তায় হাঁটত মেহদী, তার একাকী পথের সঙ্গী হত হোস্টেলের সারমেয়বাহিনী।

মেহদী আটকায়নি। সৃষ্টি সুখের উল্লাস প্রথম সফল হয় ২৬/০৩/২০০৩ এ। অভ্র এর আবির্ভাব এই দিনই। মেডিকেলটাও শেষ করেছে সন্মানের সাথেই। আটকায়নি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ অনেক রথীমহারথী চিকিৎসক তৈরী করেছে, আর অন্যদিকে সব অপমানকে হেলায় তুচ্ছ করে মেহদী বরং সেই কলেজটাকে সমৃদ্ধ করেছে।

মেহদী লেগে থেকে এই পৃথিবীকে যেটা দিয়েছে, তা হচ্ছে মুক্তি, স্বাধীনতা। বাংলা লেখার স্বাধীনতা। ইংরেজি অক্ষর নিজেই রূপান্তরিত হয়ে বাংলায় মনখোলার স্বাধীনতা। সামঞ্জস্যতা রেখেই তাই মেহদীর স্লোগান,
“ভাষা হোক উন্মুক্ত”।

উন্মুক্ত এই সফটওয়্যার বাঁচিয়েছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। সরকারী দপ্তরগুলোতে অভ্র ব্যবহার হয়। নির্বাচন কমিশন ব্যবহার করে আমার আপনার পরিচয়পত্র বানাচ্ছে,পাসপোর্ট বানাচ্ছে,সরকারী ফাইলে হচ্ছে লেখা। সবকিছুর মূলে ছিলো মেহদীর সেই এক রুমের পৃথিবী, একটা ছোট্ট কম্পিউটার আর পর্বতসম স্বপ্ন। স্বপ্নের নাম “অভ্র”। অভ্র, মেহদীর ব্রেনচাইল্ড। সেই সন্তান আজ আমাদের সকলেরই আত্মজ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়েও যিনি বানিয়েছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয় সফটওয়্যার “অভ্র” !

আপডেট সময় : ০৭:০১:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২

২০০৩ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে রোগাটে ধরণের একটা ছেলে ভর্তি হল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। চোখে চারকোণা চশমা। মাথা ভর্তি চুলে চিরুনি চলে না সেভাবে। প্রাণোচ্ছল। আড্ডাবাজ। গভীর বুদ্ধিদীপ্ত দৃষ্টি। ১৮ বছর বয়সের ছেলেরা যেরকম হয় আর কি!!!

সহজ ভাষায় এই হচ্ছে মেহদী। মেহদী হাসান খান।
মেডিকেল কলেজ চিকিৎসক তৈরী করবে, সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু মেডিকেল কলেজ যদি সফটওয়্যার ডেভলোপার সৃষ্টি করে, তাহলে তা আশ্চর্যের বই কি!!! কিন্তু তাই ঘটেছিল ২০০৩ সালে। কিভাবে? তাহলে শোনাই যাক গল্পটা।

১৭ বছরের ছেলেটা মেডিসিন ক্লাবের প্রত্যেকটা কাজে সরব, উপস্থিতিও সেরকম প্রানোচ্ছল। হঠাৎ করে ছেলেটা হয়ে গেলো চুপচাপ। মাথা নিচু করে হাঁটছে, জিজ্ঞাসা করলে কথা বলছে না হয় বলছে না যা মেহদীর চরিত্রের সাথে যায় না।

এর মাঝে জানা গেলো বাংলা লেখার জন্য ওর নিজের বানানো একটা সফটওয়্যার আছে। বিজয় থাকতে কেনো আরেকটা সফটওয়্যার লাগবে তা আমার অজানা। খুব করে চেপে ধরতেই জানা গেলো ঘটনা। ইংরেজি অক্ষর চেপে কীবোর্ড এ বাংলা লেখা যায়। এই হচ্ছে মেহেদীর বানানো সফটওয়্যার এর বৈশিষ্ট্য। রোমান টাইপ করে বাংলা লেখার প্রথম সফটওয়্যার।

কত করে নিবি? জানতে পেরে বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করে মেহেদী কে!
কিসের কত করে নিবো?

এরপরে মেহদী যা বললো তাতে আক্কেলগুড়ুম হয়ে গেলো সবাই। ১৮ বছরের একটা ছেলে বলছে, ফ্রি। ভাষার জন্য টাকা নেবো কেন?
হ্যাঁ, এ ধরনের বৈপ্লবিক কথাবার্তা এই বয়সেই মানায়। কারণ এই সফটওয়্যার তৈরীর কাজটাও যে লেখনী জগতে এক বিপ্লবেরই সামিল। এরপরের সময়টা মেহদীর আত্মনিবেদন। বিপ্লবকে সফল করার প্রতিজ্ঞা। দুর্ধর্ষ ১৮ বছর বয়েসটাকে দরজার ওপাশে আটকে, হোস্টেলের একটা রুমে নিজের পৃথিবী বেঁধে ফেলে মেহদী তখন গোটা পৃথিবীর জন্য বাংলা ভাষাকে উন্মুক্ত করে দেয়ার যুদ্ধে নেমে গেছে।

রুমে না গেলে ছেলেটার সাথে দেখা হয়না। কলেজ ক্যান্টিনে নেই। মাথার চুল ছেড়ে দেয়া বাড়তে দিয়ে, থুতনির নীচে ফিনফিনে দাঁড়ি গজাচ্ছে। চোখের নীচে কালিটুকু হয়ে যাচ্ছে স্থায়ী। এর মাঝে আছে মেডিকেল নামের রোড রোলার। তাবৎ বিজ্ঞ শিক্ষকেরা ঘোষনা দিয়ে জানিয়ে দিলেন, এ ছেলে মেডিকেলের অনুপযোগী। বিজ্ঞ শিক্ষকেরা বলে দিলেন, সময় থাকতে মেডিকেল ছেড়ে দিতে মেডিকেলের অসহ্য, দমবন্ধকরা পৃথিবী মেহদীকে চেপে ধরছিলো আষ্টেপৃষ্ঠে, মরে যাওয়ার কথা ছেলেটার। একদিকে নতুন আইডিয়া, তার স্বপ্ন, আরেকদিকে মেডিকেল। অসম্ভব অস্থিরতা কাটাতে যখন রাতে একটু রাস্তায় হাঁটত মেহদী, তার একাকী পথের সঙ্গী হত হোস্টেলের সারমেয়বাহিনী।

মেহদী আটকায়নি। সৃষ্টি সুখের উল্লাস প্রথম সফল হয় ২৬/০৩/২০০৩ এ। অভ্র এর আবির্ভাব এই দিনই। মেডিকেলটাও শেষ করেছে সন্মানের সাথেই। আটকায়নি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ অনেক রথীমহারথী চিকিৎসক তৈরী করেছে, আর অন্যদিকে সব অপমানকে হেলায় তুচ্ছ করে মেহদী বরং সেই কলেজটাকে সমৃদ্ধ করেছে।

মেহদী লেগে থেকে এই পৃথিবীকে যেটা দিয়েছে, তা হচ্ছে মুক্তি, স্বাধীনতা। বাংলা লেখার স্বাধীনতা। ইংরেজি অক্ষর নিজেই রূপান্তরিত হয়ে বাংলায় মনখোলার স্বাধীনতা। সামঞ্জস্যতা রেখেই তাই মেহদীর স্লোগান,
“ভাষা হোক উন্মুক্ত”।

উন্মুক্ত এই সফটওয়্যার বাঁচিয়েছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। সরকারী দপ্তরগুলোতে অভ্র ব্যবহার হয়। নির্বাচন কমিশন ব্যবহার করে আমার আপনার পরিচয়পত্র বানাচ্ছে,পাসপোর্ট বানাচ্ছে,সরকারী ফাইলে হচ্ছে লেখা। সবকিছুর মূলে ছিলো মেহদীর সেই এক রুমের পৃথিবী, একটা ছোট্ট কম্পিউটার আর পর্বতসম স্বপ্ন। স্বপ্নের নাম “অভ্র”। অভ্র, মেহদীর ব্রেনচাইল্ড। সেই সন্তান আজ আমাদের সকলেরই আত্মজ।