জেমি সিডন্স জ্যোতিষী না হয়েও মঙ্গলবার বলেছিলেন, চতুর্থ দিন সাত উইকেটে দুইশ রান করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ দল করতে পারল ১৪৭ রান। অলআউট হলো ৪৬৫ রানে। ৬৮ রানের লিড প্রথম ইনিংসে।
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে দুই উইকেটে ৩৯ রান করলেও লিডে আছে বাংলাদেশ। সিডন্সকে কাছে পেলে চট্টগ্রাম টেস্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা প্রশ্ন করাই যেত। আপাতদৃষ্টিতে যেটা মনে হচ্ছে, চট্টগ্রাম টেস্টে ফল হবে। সেটা বাংলাদেশের পক্ষে আসার সম্ভাবনাও বেশি। এ জন্য বোলিং, ব্যাটিং ও ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে মুমিনুলদের। তবে পরিকল্পনা নিখুঁত না হলে ভয়ংকর রূপ নিতে পারে অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কা। সে ক্ষেত্রে টেস্টের বাঁকবদল হতে পারে নাটকীয়তায়।
চট্টগ্রামের উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো, কোনো সন্দেহ নেই। সে কারণেই দুই দলের প্রথম ইনিংসের মিলিত রান ৮৬২। অবশ্য গত চার দিনে উইকেটের চরিত্র কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। গতকাল শেষ সেশনে স্পিনাররা ভালোই সুবিধা পাচ্ছিলেন। যে কারণে শেষ সেশনে দুই দলের সাতটি উইকেট পড়েছে। উইকেট কিছুটা ভাঙায় ধুলো উড়তে দেখা গেছে। তাই আজ সকালের সেশনটা উভয় দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশকে এই টেস্ট জিততে হলে শ্রীলঙ্কাকে ১২০ থেকে ১৫০ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলতে হবে। ১০০ রানের নিচে লক্ষ্য রাখতে পারলে সাহস নিয়ে মোকাবিলা করতে পারবেন মুমিনুলরা। সেদিক থেকে বলতে গেলে ম্যাচে গতিপ্রকৃতি বোঝা যাবে পঞ্চম দিন প্রথম সেশনে। লঙ্কানরা একাধিক জুটি করতে পারলে ড্রয়ের দিকে এগোবে ম্যাচ।
বাংলাদেশ চতুর্থ দিনের শুরুটাও ভালো করে। মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস অপরাজিত থাকেন প্রথম সেশনে। সকালের বৃষ্টির কারণে মাঠ কিছুটা ভেজা থাকলেও বোলাররা হুমকি হতে পারেননি। সাড়ে ১০টায় খেলা শুরু হলে প্রখর রোদ জল শুষে নেয়। দলীয় পরিকল্পনা অনুসরণ করে স্কোরবোর্ডে রান জমা করতে থাকেন দুই ব্যাটার। যদিও মুশফিকের সামনে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক থাকায় একটু বেশিই স্লো ছিলেন। ১৫ রান করতে এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিটে ৪৮টি বল খেলতে হয় তাঁকে। মাইলফলক হয়ে গেলেও স্ট্রাইকরেট বাড়েনি। প্রথম সেশনে বিনা উইকেটে ৬৭ রান যোগ হয় তৃতীয় দিনের ৩১৮ রানের সঙ্গে। মধ্যাহ্ন বিরতির পরই ঘটে বিপত্তি। সেট ব্যাটার লিটন কুমার দাস প্রথম বলেই ক্যাচ তোলেন। ১২ রানের আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হয় উইকেটরক্ষক এই ব্যাটারকে। সাড়ে চার ঘণ্টা ব্যাট করে ১৮৯ বলে ৮৮ রান লিটনের। মুশফিক-লিটনের জুটি ১৬৫ রানের। তামিম-জয়ের ১৬২ রানের ওপেনিং জুটিকে ছাপিয়ে গেছেন তাঁরা। লিটনকে আউটের পরের বলেই তামিমকে বোল্ড আউট করেন কাসুন রাজিথা। বিশ্ব ফার্নান্দোর কনকাশন সাব নেমেই বাজিমাত করেন লঙ্কান এই পেসার। দুই দিনে চার উইকেট নেন তিনি।
সাকিব আল হাসান বোলিংয়ের মতো ব্যাটিংয়ে স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। প্রথম থেকেই সংগ্রাম করেন তিনি। আউট হতে হতেও বেঁচে গেছেন একবার। জীবন পেলেও জুটি হয়নি মুশফিকের সঙ্গে। ৪৪ বলে ৪৬ রান করে কট বিহাইন্ড তিনি। সাকিবের আউটের সময় সেঞ্চুরি থেকে ৭ রান দূরে ছিলেন মুশফিক। স্পিনার নাঈম হাসানকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত অষ্টম সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। ফাইন লেগ দিয়ে রাজিথার বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শতক ছাড়ান। ২৮২ বলে ১০৫ রানে এম্বুলদেনিয়ার বলে বোল্ড আউট হন মুশফিক। নাঈম ৯ রান করলেও সময়-বল ডট করেন টেস্টের মেজাজে। ৭৬ মিনিটে ৫৩টি বল খেলেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলও ভালো ব্যাট করেন। ২০ রানের জোগান দেন ৪৫ বলে। শরিফুল ইসলামের হাতে চোট লাগায় দুই পেসারের মধ্যে জুটি গড়ে ওঠেনি। শরিফুল রিটায়ার্ড হার্ট হলে বাংলাদেশকে অলআউট ঘোষণা করা হয়।
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ৬৮ রানে পিছিয়ে থেকে। নতুন বলে স্পিন ধরায় প্রতিপক্ষের ওপর সহজেই চাপ সৃষ্টি করতে পারে বাংলাদেশ। নিয়মিত ওপেনার ওশাদা ফার্নান্দোকে রানআউট করার পর নাইটওয়াচম্যান এম্বুলদেনিয়াকে বোল্ড আউট করেন তাইজুল। শেষদিকে আলো কমে যাওয়ায় দ্রুত খেলা শেষ হয়। দিনভর রোদে পুড়ে শেষ বিকেলে ব্যাট করা সত্যিই কঠিন ছিল। কারণ, এতটাই গরমের ভেতরে খেলতে হচ্ছে যে আম্পায়ার রিচার্ড ক্যাটেলব্রোকে মাঠ থেকে উঠে যেতে হয়েছে। শেষ দিন গরমের সঙ্গে মানসিক চাপ নিয়ে খেলতে হবে উভয় দলকে। জয়-পরাজয়ের পরিস্থিতি তৈরি হলে চাপের পারদ নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে।