ঢাকা ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
ড: মুহাম্মদ ইউনুস ইন্ডিয়ার জায়গামত আঘাত করেছে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাজনৈতিক দলের ঐক্য ভারত আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরে বাধ্য: ড. ইউনূস মুন্নী সাহা সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে বেতনের বাইরে জমা হয় ১৩৪ কোটি জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে আ. লীগের দৃষ্টিতে দেখা বন্ধ করতে হবে : ভারতকে নাহিদ ইসলাম “ছাত্রদের ভূমিকা ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা” অশান্তির জন্য মহম্মদ ইউনূসকেই দায়ী করলেন শেখ হাসিনা৷ ফেরত চাওয়া হবে শেখ হাসিনাকে, মানতে বাধ্য ভারত: ড. ইউনূস আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার: শ্বেতপত্রে উন্মোচিত সাংবাদিক মুন্নী সাহা গ্রেপ্তার অচিরেই কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা: উপদেষ্টা আসিফ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত কেন তথ্যযুদ্ধে নেমেছে? ভারতের দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর: আসিফ নজরুল কোটি টাকার বাস ৯০ লাখে বানাবে বিআরটিসি ভয়েস অব আমেরিকার জরিপ: সংখ্যালঘুরা ‘আগের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছে’ বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধের খবর ভুয়া ধানমন্ডি লেকে হবে ‘বিদ্রোহী চত্বর’ সারজি এবং হাসনাতের গাড়ি চাপা দেয়া ট্রাক ও ট্রাকের ড্রাইভার আটক রাষ্ট্রের যেসব বিষয়ে বড়সড় পরিবর্তনের কথা ভাবছে সংস্কার কমিশনগুলো

‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ সম্পর্কিত অজানা তথ্য

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০১:০৭:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ৩৪ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

স্ট্যাচু অব লিবার্টি যেভাবে আমেরিকার হলো

‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ নামে বিশ্ববাসী এই মূর্তিটিকে চিনলেও এর প্রকৃত নাম ‘লিবার্টি এনলাইটেনিং দ্য ওয়ার্ল্ড’। বহু লোকের নিরলস পরিশ্রম ও ধৈর্যের ফসল এই ভাস্কর্য আজ মার্কিনীদের জাতীয়তাবোধের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। একদম শূন্য থেকে একটি মূর্তি কীভাবে একটি জাতির আত্মপরিচয়ের অংশ হয়ে উঠলো?

নিউ ইয়র্ক হারবারে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি; Image source: Take Walks

স্ট্যাচু অব লিবার্টি আসলে ছিল ফ্রান্সের জনগণের পক্ষ থেকে মার্কিনীদের জন্য একটি উপহার। ১৭৬৫ সাল থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত চলা আমেরিকান বিপ্লবের সময়টিতে ব্রিটেনের কাছ থেকে আমেরিকার স্বাধীনতার সংগ্রামে সাহায্য করেছিল ফ্রান্স। সেই সহযোগিতার স্মৃতি হিসেবে আমেরিকার স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে এটি নির্মাণ করা হয়।

সেই সময়টিতে ফ্রান্স বা আমেরিকার কেউই অর্থনৈতিকভাবে অতটা স্থিতিশীল ছিল না। সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কেনই বা হঠাৎ ১০০ বছর পরে এসে স্মৃতি রক্ষার কথা মাথায় এলো? বা কীভাবেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলো?

ফ্রান্সের ফ্রেডরিক অগাস্ট বার্থোল্ডি ছিলেন স্ট্যাচু অব লিবার্টির মূল নকশাকার। তিনি কিন্তু মোটেও আমেরিকায় স্থাপনের কথা ভেবে নকশাটি করেননি। তার ভাবনায় ছিল অন্য কিছু। ১৮৫৫ সালে ২০ বছর বয়সের টগবগে তরুণ বার্থোল্ডি গিয়েছিলেন মিশর ভ্রমণে। সেখানকার পরিবেশ এবং চারপাশের চোখ ধাঁধানো সব শিল্প তার এতই নজর কাড়ে যে, ঠিক করে ফেলেন এখানে তার একটি কাজের নমুনা অবশ্যই রেখে যাবেন। সুযোগও পেয়ে যান একটি।

বার্থোল্ডি জানতে পারলেন, খুব দ্রুতই ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগরের মাঝে সংযোগ সৃষ্টিকারী একটি খাল তৈরি করা হবে, যা বয়ে যাবে মিশরের মাঝ দিয়ে। এই খাল তৈরির ফলে ইউরোপ এবং এশিয়ার মাঝে চলাচলকারী জাহাজগুলোকে আর গোটা আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে আসতে হবে না। এর ফলে বেঁচে যাবে সময় এবং বেড়ে যাবে যোগাযোগ ব্যস্ততা। বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই খালটির নাম হবে সুয়েজ খাল।

বার্থোল্ডি সিদ্ধান্ত নিলেন, সুয়েজ খালের পাড়েই বাস্তব রূপ দেবেন তার কাঙ্ক্ষিত নির্মাণশৈলীকে। সরকারি লোকজন এবং সুয়েজ খালের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে ঠিক করে ফেললেন মূর্তির নকশা- এক মধ্যবয়সী নারী প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে খালের প্রবেশ মুখে।

সুয়েজ খালের পাড়ে বার্থোল্ডি যে মূর্তি তৈরি করতে চেয়েছিলেন; Image source: Racing Ellie Bly

নামও ঠিক হলো এর জন্য, ‘ইজিপ্ট ব্রিঙিং লাইট টু এশিয়া’। ভেবেছিলেন, মিশরকে পুরো বিশ্বে অসাধারণ মর্যাদা এনে দেবে এই শৈল্পিক মূর্তি। কিন্তু বার্থোল্ডির কপালই বটে! রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্মাণ-সংক্রান্ত নানা জটিলতা, জনবলের অভাব এবং সেই সময়ে কলেরার মহামারী- সব মিলিয়ে খালের নির্মাণকাজ শেষ হতেই লেগে গেল পুরো ১৫ বছর। ১৮৬৯ এর নভেম্বরে জাহাজ যাতায়াত এবং ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সুয়েজ খাল।

সুয়েজ খাল; Image source: National Geographic Society

এরপর বার্থোল্ডি যখন তার নকশা নিয়ে যান তখন বাধে আরেক বিপত্তি। তার নকশা অনুযায়ী ৬ লক্ষ মার্কিন ডলারের বাজেট দিতে মিশর কোনোভাবেই সক্ষম না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই সেখান থেকে সরে আসতে হয় সদ্য ৩৫-এ পা দেওয়া বার্থোল্ডিকে।

মিশর ফিরিয়ে দিলেও নিয়তিতে অন্য কিছু লেখা ছিল। ১৮৭১ সালে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে এসেই তিনি ওয়াশিংটন ডিসি থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসের সর্বত্র চষে বেড়াতে শুরু করলেন তার প্রকল্পের প্রচারণার জন্য। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে বিশিষ্ট জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে লাগলেন। কিন্তু কোথাও মিলছিল না ইতিবাচক সাড়া।

এদিকে ১৮৬৫ সালে ফরাসি রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী এডওয়ার্ড ডে ল্যাবুলে বলেন, “যদি আমেরিকার স্বাধীনতা সম্পর্কিত কোনো স্মৃতিফলক তৈরি করা হয়, তাহলে তা হওয়া উচিত আমেরিকা এবং ফ্রান্সের একটি সম্মিলিত প্রকল্প।” এই কথার জের ধরে সোজা তার কাছে চলে গেলেন বার্থোল্ডি। তিনি জানতেন, একমাত্র ল্যাবুলে উদ্যোগ নিলেই আশার আলো দেখতে পারে তার প্রকল্প।

ল্যাবুলে এক কথায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধভক্ত ছিলেন। দেশটিকে তিনি দেখতেন ভালো এবং উৎকৃষ্ট কিছুর উদাহরণ হিসেবে। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের ফলাফল, দাসপ্রথার বিলুপ্তি এবং ৪ মিলিয়ন ক্রীতদাসের মুক্তির ব্যাপারে তিনি ছিলেন অনেক উচ্ছ্বসিত। স্বাভাবিকভাবেই তিনি দেশটির জন্য কিছু করবার তাগিদ অনুভব করছিলেন। সেখানটায় বার্থোল্ডি নিয়ে এলেন ভাস্কর্য নির্মাণের এক দারুণ আহ্বান। দুয়ে দুয়ে মিলে যায় চার।

১৮৭৫ সালে ল্যাবুলে ‘ফ্রাঙ্কো-আমেরিকান ইউনিয়ন’ গঠনের মাধ্যমে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার বার্থোল্ডির হাতে তুলে দেন ভাস্কর্যের কাজ শুরু করার জন্য। বার্থোল্ডি তখন গুস্তাভে আইফেলের সাথে পরামর্শ করে এর গঠন ও আকার ঠিক করেন।

পত্রিকায় স্ট্যাচু অব লিবার্টি তৈরির দৃশ্য, ১৮৮৩; Image source: 12/UIG/Getty Images

তবে এই ২ লক্ষ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার কিন্তু এত সহজে আসেনি। ফ্রাঙ্কো-আমেরিকান ইউনিয়ন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, মূর্তির ভিত গঠনের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, তা তোলা হবে মার্কিনীদের কাছ থেকেই এবং জনবল সরবরাহ করবে ফ্রান্স। কিন্তু মার্কিন নাগরিকদের থেকে আশানুরূপ সাড়া মিলছিল না। বিশেষ করে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দাদের এ ব্যাপারে যেন কোনো আগ্রহই ছিল না।

আমেরিকানদের আগ্রহী করে তোলার জন্য বার্থোল্ডি ১৮৭৬ সালে মূর্তিটির হাত এবং মশাল পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় একটি প্রদর্শনীতে উন্মোচন করেন। সেখানকার লোকেরা এর ব্যাপারে বেশ আগ্রহ দেখান। তারা জানতে চান, মূর্তিটির বাকি অংশ কবে শেষ হবে। তাদেরই আগ্রহের কারণে পেনসিলভেনিয়ার মেডিসন স্কয়ারে হাত এবং মশালের আরেকটি প্রদর্শনী করেন। সেখানকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া পেয়ে তিনি বরং ভাবতে লাগলেন,  স্বপ্নের ভাস্কর্যটি নিউ ইয়র্কের বদলে পেনসিলভেনিয়াতেই স্থাপন করা যায় কিনা।

নির্মাণের টাকা তোলার জন্য বিক্রি হওয়া মূর্তির মডেল; Image source: Etsy

কিন্তু নিউ ইয়র্ক থেকে আর সরে আসতে হয়নি বার্থোল্ডিকে। প্রচার-প্রচারণার মধ্য দিয়ে ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছিল তার কাজ। ১৮৮০ সালে স্ট্যাচু অব লিবার্টির আমেরিকান কমিটি মূল নকশার অনুকরণে ছোট ছোট মডেল আকৃতি তৈরি করে বিক্রি করতে থাকে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। একদম ছোট ৬ ইঞ্চির মডেলগুলো বিক্রি হতো ১ ডলারে এবং সবচেয়ে বড় ১ ফুট আকারের মডেলগুলো বিক্রি হতো ৫ ডলারে।

এর পাশাপাশি আরো অনেক দাতা সংস্থা কাজ করছিলেন মূর্তিটি নির্মাণের অর্থ তোলার জন্য। ইতোমধ্যে মার্কিন কবি এমা ল্যাজারাসের লেখা ‘The New Colossus’ কবিতাটি ব্যাপক সাড়া ফেলে আমেরিকানদের মাঝে। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মূর্তিটি নির্মাণের ব্যাপারে তারাও ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে উঠতে শুরু করেন।

স্ট্যাচু অব লিবার্টি নির্মাণকালের দৃশ্য, ১৮৮৩; Image source: Getty Image

এত চেষ্টার পরেও কীসের যেন একটা কমতি থেকেই যাচ্ছিল। এই সময়েই ‘নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড’-এর সম্পাদক জোসেফ পুলিৎজার শেষ চেষ্টায় এগিয়ে আসেন। তার পত্রিকায় প্রতিটি সংখ্যায় ছাপানো স্ট্যাচু অব লিবার্টি নিয়ে বিশেষ লেখা প্রতিটি আমেরিকানকে আগ্রহী করে তুলতে থাকে এর ব্যাপারে। তারা উৎসাহ পাচ্ছিলেন মূর্তিটির তৈরির পেছনে তাদের মূল্যবান অর্থ খরচ করতে।

এটিই কাজের অগ্রগতি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। পত্রিকার প্রচারণার থেকেই উঠে আসে ১ লক্ষ মার্কিন ডলার। এভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে শেষ হয় বার্থোল্ডির স্বপ্নের ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’।

১৮৮৫ সালে ফ্রান্স ও আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে বসে তৈরি করা স্ট্যাচু অব লিবার্টির ৩৫০টি অংশ নিউ ইয়র্কে এসে পৌঁছায়। সবকটি অংশ জোড়া দিতে সময় লাগে পুরো ১ বছর। অবশেষে ২৮ অক্টোবর, ১৮৮৬ তারিখে মূর্তিটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধসহ নানা পটপরিবর্তন ও ক্রান্তিকাল দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু আমেরিকানদের আত্মপরিচয়ের একটি গৌরবময় নিদর্শন হিসেবে স্ট্যাচু অব লিবার্টি তার ভূমিকায় সৃষ্টিলগ্ন থেকে আজও অপরিবর্তিত। বার্থোল্ডির সৃজনশীলতা, শ্রম আর ল্যাবুলের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে মার্কিনীরা। ১৯৩৩ সাল থেকে এই মূর্তিটির দেখাশোনা করে আসছে আমেরিকার ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস।

‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ সম্পর্কিত অজানা তথ্য

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক হারবারের একটি দৃশ্য সকলেরই অতি পরিচিত। বিশাল এক মশাল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রোমান দেবী লিবার্তাস, যে ভাস্কর্যটি স্ট্যাচু অব লিবার্টি নামেই পরিচিত। কয়েক দশক আগ পর্যন্তও এটি এলিস আইল্যান্ড হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী অভিবাসীদের জন্য আশার একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও এখন তা মার্কিন মুলুকের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই দৈত্যাকার ভাস্কর্যটি ঘিরে রয়েছে দারুণ এক ইতিহাস, সঙ্গে রয়েছে অজানা অনেক তথ্য যা হয়তো অনেকেরই অজানা। আসুন জেনে নেই সেগুলোর কয়েকটি সম্পর্কে-

১। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির মোট ওজন ২২৫ টন বা ৪৫ হাজার পাউন্ড!

২। দেবী লিবার্তাস এর ভাস্কর্যটি আকারে এতই বড় যে, তার পায়ের মাপে জুতা কিনতে হলে তার সাইজ লাগবে ৮৭৯!

৩। স্ট্যাচু অফ লিবার্টিকে লাইট হাউজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো প্রায় ১৬ বছরের মতো। ২৪ মাইল দূর থেকেও সেই লাইট হাউজের আলো দেখা যেত!

৪। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির উচ্চতা ৩০৫ ফুট ১ ইঞ্চি, এটি উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় ভাস্কর্যের গৌরব দখল করে আছে।

৫। বাতাসের বেগ বেশি হলে এ স্ট্যাচুটি ৩ ইঞ্চি ও এর মশালটি ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত দুলতে পারে।

৬। এই বিশাল ভাস্কর্যটির ডিজাইন করা হয়েছে রোমান সভ্যতার ভাস্কর্যসমূহের আদলে।

৭। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির মাথায় উঠতে আপনাকে ৩৫৪ টি সিঁড়ির ধাপ অতিক্রম করতে হবে। একেবারে উপরে দেবীর মুকুটে পৌঁছে পাওয়া যাবে এক এক করে ২৫ টি জানালা, যা দিয়ে চারপাশটা খুব ভালোভাবে দেখে নিতে পারবেন।

৭। ১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্ট্যাচুটি উপহার হিসেবে গ্রহণ করেন। তাই প্রতি বছর ২৮শে অক্টোবর স্ট্যাচু অফ লিবার্টির জন্মদিন পালন করা হয়।

৮। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির দেবীর মুকুটে রয়েছে মোট সাতটি স্পাইক, যা দিয়ে সাত মহাদেশকে নির্দেশ করা হয়েছে।

৯। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির কাঠামোর প্রধান উপকরণ হলো তামা। তাই বর্তমানে অতিরিক্ত জারণের কারণে স্ট্যাচুটি সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে। এর চারপাশ ঘিরে থাকা সামুদ্রিক জলীয় বাষ্পের কারণে এ রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

 

 

স্ট্যাচু অব লিবার্টির মডেলের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

সম্প্রতি, স্ট্যাচু অব লিবার্টির নারী মডেলের ছবি শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে।

 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্ট্যাচু অব লিবার্টির নারী মডেলের ছবি দাবি করা ছবিটি বাস্তব নয় বরং বাস ইউটারবেইক নামের একজন ডাচ শিল্পী আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ছবিটি তৈরি করেছেন।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০২০ সালের ২ জুলাই প্রকাশিত উক্ত ছবিযুক্ত দ্যা সানের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও, একই দিনে প্রকাশিত ডেইলি মেইলের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়, বাস ইউটারবেইক নামের একজন ডাচ শিল্পী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিখ্যাত স্ট্যাচু এবং পেইন্টিং থেকে মানুষের মুখের প্রতিকৃতি তৈরি করেছেন।

পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান করে Bas Uterwijk এর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। তার ইন্সটাগ্রামে ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর তিনি প্রচারিত ছবিটি পোস্ট করেন। উক্ত পোস্ট এবং তার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত অংশ বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বাস ইউটারবেইক সিন্থেটিক ইমেজ জেনারেটিং অ্যালগরিদম অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বিভিন্ন বিখ্যাত স্ট্যাচু ও পেইন্টিং থেকে মানুষের মুখের প্রতিকৃতি তৈরি করেন।

Screenshot collage: Rumor Scanner

উল্লেখ্য, প্রচারিত দাবিতে উক্ত নারীর নাম ইসাবেল বোয়ার ও তার জাতীয়তা ফরাসি দাবি করা হলেও স্ট্যাচু অব লিবার্টি মূলত মিশরীয় এক নারীর আদলে তৈরি করা হয়েছিল। ফরাসি ভাস্কর ফ্রেডরিক অগাস্ট বারথোল্ডি প্রথমে উক্ত ভাস্কর্যটি তৈরি করেন এবং পরবর্তীতে তার তৈরি ভাস্কর্যের আদলে স্ট্যাচু অব লিবার্টি তৈরি করা হয়।

মূলত, স্ট্যাচু অব লিবার্টির মডেলের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ছবিটি বাস্তব নয়। বাস ইউটারবেইক নামের ডাচ একজন শিল্পীর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি এই ছবি উক্ত দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

সুতরাং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি স্ট্যাচু অব লিবার্টির মডেলের ছবি বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

ইসাবেলা বোয়ার্স প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে তার বাবা ছিলেন একজন আফ্রিকান প্যাস্ট্রি শেফ এবং মা ছিলেন একজন ইংরেজ। ইসাবেলা ছিলেন বিশেষ সুন্দরী, এবং মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি বিখ্যাত সেলাই মেশিন প্রস্তুতকারী আইজাক সিঙ্গারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি তখন ৫০ বছর বয়সী ছিলেন।
সিঙ্গারের মৃত্যুর পর, ইসাবেলা দেশের সবচেয়ে ধনী নারী হয়ে ওঠেন। এটি কোনো বিস্ময়ের বিষয় নয় যে তাকে স্ট্যাচু অফ লিবার্টির মডেল হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল, কারণ তিনি আমেরিকান স্বপ্নের প্রতীক ছিলেন। বিধবা হয়ে ইসাবেলা পৃথিবী ভ্রমণ করেন এবং ডাচ বেহালাবাদক ভিক্টর রোবস্টেটকে বিয়ে করেন, যার মাধ্যমে তিনি কাউন্টেস উপাধি লাভ করেন।

তিনি আমেরিকা এবং ইউরোপের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বে পরিণত হন এবং একটি বিশ্ব ইভেন্টে ফরাসি ভাস্কর ফ্রেডেরিক বার্থোল্ডির সাথে দেখা করেন। বার্থোল্ডি তার সৌন্দর্য ও জীবনের গল্পে মুগ্ধ হয়ে তার মুখকে #স্ট্যাচু_অফ_লিবার্টির মডেল হিসেবে ব্যবহার করেন।

ইসাবেলা তৃতীয়বার বিয়ে করেন এবং ১৯০৪ সালে প্যারিসে ৬২ বছর বয়সে মারা যান, কিন্তু তার মুখ নিউ ইয়র্কের এই আইকনিক ভাস্কর্যে বেঁচে আছে, যা স্বাধীনতা এবং আমেরিকান গৌরবের প্রতীক।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ সম্পর্কিত অজানা তথ্য

আপডেট সময় : ০১:০৭:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

স্ট্যাচু অব লিবার্টি যেভাবে আমেরিকার হলো

‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ নামে বিশ্ববাসী এই মূর্তিটিকে চিনলেও এর প্রকৃত নাম ‘লিবার্টি এনলাইটেনিং দ্য ওয়ার্ল্ড’। বহু লোকের নিরলস পরিশ্রম ও ধৈর্যের ফসল এই ভাস্কর্য আজ মার্কিনীদের জাতীয়তাবোধের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। একদম শূন্য থেকে একটি মূর্তি কীভাবে একটি জাতির আত্মপরিচয়ের অংশ হয়ে উঠলো?

নিউ ইয়র্ক হারবারে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি; Image source: Take Walks

স্ট্যাচু অব লিবার্টি আসলে ছিল ফ্রান্সের জনগণের পক্ষ থেকে মার্কিনীদের জন্য একটি উপহার। ১৭৬৫ সাল থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত চলা আমেরিকান বিপ্লবের সময়টিতে ব্রিটেনের কাছ থেকে আমেরিকার স্বাধীনতার সংগ্রামে সাহায্য করেছিল ফ্রান্স। সেই সহযোগিতার স্মৃতি হিসেবে আমেরিকার স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে এটি নির্মাণ করা হয়।

সেই সময়টিতে ফ্রান্স বা আমেরিকার কেউই অর্থনৈতিকভাবে অতটা স্থিতিশীল ছিল না। সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কেনই বা হঠাৎ ১০০ বছর পরে এসে স্মৃতি রক্ষার কথা মাথায় এলো? বা কীভাবেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলো?

ফ্রান্সের ফ্রেডরিক অগাস্ট বার্থোল্ডি ছিলেন স্ট্যাচু অব লিবার্টির মূল নকশাকার। তিনি কিন্তু মোটেও আমেরিকায় স্থাপনের কথা ভেবে নকশাটি করেননি। তার ভাবনায় ছিল অন্য কিছু। ১৮৫৫ সালে ২০ বছর বয়সের টগবগে তরুণ বার্থোল্ডি গিয়েছিলেন মিশর ভ্রমণে। সেখানকার পরিবেশ এবং চারপাশের চোখ ধাঁধানো সব শিল্প তার এতই নজর কাড়ে যে, ঠিক করে ফেলেন এখানে তার একটি কাজের নমুনা অবশ্যই রেখে যাবেন। সুযোগও পেয়ে যান একটি।

বার্থোল্ডি জানতে পারলেন, খুব দ্রুতই ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগরের মাঝে সংযোগ সৃষ্টিকারী একটি খাল তৈরি করা হবে, যা বয়ে যাবে মিশরের মাঝ দিয়ে। এই খাল তৈরির ফলে ইউরোপ এবং এশিয়ার মাঝে চলাচলকারী জাহাজগুলোকে আর গোটা আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে আসতে হবে না। এর ফলে বেঁচে যাবে সময় এবং বেড়ে যাবে যোগাযোগ ব্যস্ততা। বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই খালটির নাম হবে সুয়েজ খাল।

বার্থোল্ডি সিদ্ধান্ত নিলেন, সুয়েজ খালের পাড়েই বাস্তব রূপ দেবেন তার কাঙ্ক্ষিত নির্মাণশৈলীকে। সরকারি লোকজন এবং সুয়েজ খালের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে ঠিক করে ফেললেন মূর্তির নকশা- এক মধ্যবয়সী নারী প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে খালের প্রবেশ মুখে।

সুয়েজ খালের পাড়ে বার্থোল্ডি যে মূর্তি তৈরি করতে চেয়েছিলেন; Image source: Racing Ellie Bly

নামও ঠিক হলো এর জন্য, ‘ইজিপ্ট ব্রিঙিং লাইট টু এশিয়া’। ভেবেছিলেন, মিশরকে পুরো বিশ্বে অসাধারণ মর্যাদা এনে দেবে এই শৈল্পিক মূর্তি। কিন্তু বার্থোল্ডির কপালই বটে! রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্মাণ-সংক্রান্ত নানা জটিলতা, জনবলের অভাব এবং সেই সময়ে কলেরার মহামারী- সব মিলিয়ে খালের নির্মাণকাজ শেষ হতেই লেগে গেল পুরো ১৫ বছর। ১৮৬৯ এর নভেম্বরে জাহাজ যাতায়াত এবং ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সুয়েজ খাল।

সুয়েজ খাল; Image source: National Geographic Society

এরপর বার্থোল্ডি যখন তার নকশা নিয়ে যান তখন বাধে আরেক বিপত্তি। তার নকশা অনুযায়ী ৬ লক্ষ মার্কিন ডলারের বাজেট দিতে মিশর কোনোভাবেই সক্ষম না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই সেখান থেকে সরে আসতে হয় সদ্য ৩৫-এ পা দেওয়া বার্থোল্ডিকে।

মিশর ফিরিয়ে দিলেও নিয়তিতে অন্য কিছু লেখা ছিল। ১৮৭১ সালে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে এসেই তিনি ওয়াশিংটন ডিসি থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসের সর্বত্র চষে বেড়াতে শুরু করলেন তার প্রকল্পের প্রচারণার জন্য। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে বিশিষ্ট জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে লাগলেন। কিন্তু কোথাও মিলছিল না ইতিবাচক সাড়া।

এদিকে ১৮৬৫ সালে ফরাসি রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী এডওয়ার্ড ডে ল্যাবুলে বলেন, “যদি আমেরিকার স্বাধীনতা সম্পর্কিত কোনো স্মৃতিফলক তৈরি করা হয়, তাহলে তা হওয়া উচিত আমেরিকা এবং ফ্রান্সের একটি সম্মিলিত প্রকল্প।” এই কথার জের ধরে সোজা তার কাছে চলে গেলেন বার্থোল্ডি। তিনি জানতেন, একমাত্র ল্যাবুলে উদ্যোগ নিলেই আশার আলো দেখতে পারে তার প্রকল্প।

ল্যাবুলে এক কথায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধভক্ত ছিলেন। দেশটিকে তিনি দেখতেন ভালো এবং উৎকৃষ্ট কিছুর উদাহরণ হিসেবে। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের ফলাফল, দাসপ্রথার বিলুপ্তি এবং ৪ মিলিয়ন ক্রীতদাসের মুক্তির ব্যাপারে তিনি ছিলেন অনেক উচ্ছ্বসিত। স্বাভাবিকভাবেই তিনি দেশটির জন্য কিছু করবার তাগিদ অনুভব করছিলেন। সেখানটায় বার্থোল্ডি নিয়ে এলেন ভাস্কর্য নির্মাণের এক দারুণ আহ্বান। দুয়ে দুয়ে মিলে যায় চার।

১৮৭৫ সালে ল্যাবুলে ‘ফ্রাঙ্কো-আমেরিকান ইউনিয়ন’ গঠনের মাধ্যমে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার বার্থোল্ডির হাতে তুলে দেন ভাস্কর্যের কাজ শুরু করার জন্য। বার্থোল্ডি তখন গুস্তাভে আইফেলের সাথে পরামর্শ করে এর গঠন ও আকার ঠিক করেন।

পত্রিকায় স্ট্যাচু অব লিবার্টি তৈরির দৃশ্য, ১৮৮৩; Image source: 12/UIG/Getty Images

তবে এই ২ লক্ষ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার কিন্তু এত সহজে আসেনি। ফ্রাঙ্কো-আমেরিকান ইউনিয়ন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, মূর্তির ভিত গঠনের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, তা তোলা হবে মার্কিনীদের কাছ থেকেই এবং জনবল সরবরাহ করবে ফ্রান্স। কিন্তু মার্কিন নাগরিকদের থেকে আশানুরূপ সাড়া মিলছিল না। বিশেষ করে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দাদের এ ব্যাপারে যেন কোনো আগ্রহই ছিল না।

আমেরিকানদের আগ্রহী করে তোলার জন্য বার্থোল্ডি ১৮৭৬ সালে মূর্তিটির হাত এবং মশাল পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় একটি প্রদর্শনীতে উন্মোচন করেন। সেখানকার লোকেরা এর ব্যাপারে বেশ আগ্রহ দেখান। তারা জানতে চান, মূর্তিটির বাকি অংশ কবে শেষ হবে। তাদেরই আগ্রহের কারণে পেনসিলভেনিয়ার মেডিসন স্কয়ারে হাত এবং মশালের আরেকটি প্রদর্শনী করেন। সেখানকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া পেয়ে তিনি বরং ভাবতে লাগলেন,  স্বপ্নের ভাস্কর্যটি নিউ ইয়র্কের বদলে পেনসিলভেনিয়াতেই স্থাপন করা যায় কিনা।

নির্মাণের টাকা তোলার জন্য বিক্রি হওয়া মূর্তির মডেল; Image source: Etsy

কিন্তু নিউ ইয়র্ক থেকে আর সরে আসতে হয়নি বার্থোল্ডিকে। প্রচার-প্রচারণার মধ্য দিয়ে ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছিল তার কাজ। ১৮৮০ সালে স্ট্যাচু অব লিবার্টির আমেরিকান কমিটি মূল নকশার অনুকরণে ছোট ছোট মডেল আকৃতি তৈরি করে বিক্রি করতে থাকে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। একদম ছোট ৬ ইঞ্চির মডেলগুলো বিক্রি হতো ১ ডলারে এবং সবচেয়ে বড় ১ ফুট আকারের মডেলগুলো বিক্রি হতো ৫ ডলারে।

এর পাশাপাশি আরো অনেক দাতা সংস্থা কাজ করছিলেন মূর্তিটি নির্মাণের অর্থ তোলার জন্য। ইতোমধ্যে মার্কিন কবি এমা ল্যাজারাসের লেখা ‘The New Colossus’ কবিতাটি ব্যাপক সাড়া ফেলে আমেরিকানদের মাঝে। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মূর্তিটি নির্মাণের ব্যাপারে তারাও ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে উঠতে শুরু করেন।

স্ট্যাচু অব লিবার্টি নির্মাণকালের দৃশ্য, ১৮৮৩; Image source: Getty Image

এত চেষ্টার পরেও কীসের যেন একটা কমতি থেকেই যাচ্ছিল। এই সময়েই ‘নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড’-এর সম্পাদক জোসেফ পুলিৎজার শেষ চেষ্টায় এগিয়ে আসেন। তার পত্রিকায় প্রতিটি সংখ্যায় ছাপানো স্ট্যাচু অব লিবার্টি নিয়ে বিশেষ লেখা প্রতিটি আমেরিকানকে আগ্রহী করে তুলতে থাকে এর ব্যাপারে। তারা উৎসাহ পাচ্ছিলেন মূর্তিটির তৈরির পেছনে তাদের মূল্যবান অর্থ খরচ করতে।

এটিই কাজের অগ্রগতি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। পত্রিকার প্রচারণার থেকেই উঠে আসে ১ লক্ষ মার্কিন ডলার। এভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে শেষ হয় বার্থোল্ডির স্বপ্নের ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’।

১৮৮৫ সালে ফ্রান্স ও আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে বসে তৈরি করা স্ট্যাচু অব লিবার্টির ৩৫০টি অংশ নিউ ইয়র্কে এসে পৌঁছায়। সবকটি অংশ জোড়া দিতে সময় লাগে পুরো ১ বছর। অবশেষে ২৮ অক্টোবর, ১৮৮৬ তারিখে মূর্তিটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধসহ নানা পটপরিবর্তন ও ক্রান্তিকাল দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু আমেরিকানদের আত্মপরিচয়ের একটি গৌরবময় নিদর্শন হিসেবে স্ট্যাচু অব লিবার্টি তার ভূমিকায় সৃষ্টিলগ্ন থেকে আজও অপরিবর্তিত। বার্থোল্ডির সৃজনশীলতা, শ্রম আর ল্যাবুলের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে মার্কিনীরা। ১৯৩৩ সাল থেকে এই মূর্তিটির দেখাশোনা করে আসছে আমেরিকার ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস।

‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ সম্পর্কিত অজানা তথ্য

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক হারবারের একটি দৃশ্য সকলেরই অতি পরিচিত। বিশাল এক মশাল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রোমান দেবী লিবার্তাস, যে ভাস্কর্যটি স্ট্যাচু অব লিবার্টি নামেই পরিচিত। কয়েক দশক আগ পর্যন্তও এটি এলিস আইল্যান্ড হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী অভিবাসীদের জন্য আশার একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও এখন তা মার্কিন মুলুকের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই দৈত্যাকার ভাস্কর্যটি ঘিরে রয়েছে দারুণ এক ইতিহাস, সঙ্গে রয়েছে অজানা অনেক তথ্য যা হয়তো অনেকেরই অজানা। আসুন জেনে নেই সেগুলোর কয়েকটি সম্পর্কে-

১। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির মোট ওজন ২২৫ টন বা ৪৫ হাজার পাউন্ড!

২। দেবী লিবার্তাস এর ভাস্কর্যটি আকারে এতই বড় যে, তার পায়ের মাপে জুতা কিনতে হলে তার সাইজ লাগবে ৮৭৯!

৩। স্ট্যাচু অফ লিবার্টিকে লাইট হাউজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো প্রায় ১৬ বছরের মতো। ২৪ মাইল দূর থেকেও সেই লাইট হাউজের আলো দেখা যেত!

৪। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির উচ্চতা ৩০৫ ফুট ১ ইঞ্চি, এটি উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় ভাস্কর্যের গৌরব দখল করে আছে।

৫। বাতাসের বেগ বেশি হলে এ স্ট্যাচুটি ৩ ইঞ্চি ও এর মশালটি ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত দুলতে পারে।

৬। এই বিশাল ভাস্কর্যটির ডিজাইন করা হয়েছে রোমান সভ্যতার ভাস্কর্যসমূহের আদলে।

৭। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির মাথায় উঠতে আপনাকে ৩৫৪ টি সিঁড়ির ধাপ অতিক্রম করতে হবে। একেবারে উপরে দেবীর মুকুটে পৌঁছে পাওয়া যাবে এক এক করে ২৫ টি জানালা, যা দিয়ে চারপাশটা খুব ভালোভাবে দেখে নিতে পারবেন।

৭। ১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্ট্যাচুটি উপহার হিসেবে গ্রহণ করেন। তাই প্রতি বছর ২৮শে অক্টোবর স্ট্যাচু অফ লিবার্টির জন্মদিন পালন করা হয়।

৮। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির দেবীর মুকুটে রয়েছে মোট সাতটি স্পাইক, যা দিয়ে সাত মহাদেশকে নির্দেশ করা হয়েছে।

৯। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির কাঠামোর প্রধান উপকরণ হলো তামা। তাই বর্তমানে অতিরিক্ত জারণের কারণে স্ট্যাচুটি সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে। এর চারপাশ ঘিরে থাকা সামুদ্রিক জলীয় বাষ্পের কারণে এ রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

 

 

স্ট্যাচু অব লিবার্টির মডেলের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

সম্প্রতি, স্ট্যাচু অব লিবার্টির নারী মডেলের ছবি শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে।

 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্ট্যাচু অব লিবার্টির নারী মডেলের ছবি দাবি করা ছবিটি বাস্তব নয় বরং বাস ইউটারবেইক নামের একজন ডাচ শিল্পী আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ছবিটি তৈরি করেছেন।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০২০ সালের ২ জুলাই প্রকাশিত উক্ত ছবিযুক্ত দ্যা সানের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও, একই দিনে প্রকাশিত ডেইলি মেইলের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়, বাস ইউটারবেইক নামের একজন ডাচ শিল্পী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিখ্যাত স্ট্যাচু এবং পেইন্টিং থেকে মানুষের মুখের প্রতিকৃতি তৈরি করেছেন।

পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান করে Bas Uterwijk এর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। তার ইন্সটাগ্রামে ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর তিনি প্রচারিত ছবিটি পোস্ট করেন। উক্ত পোস্ট এবং তার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত অংশ বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বাস ইউটারবেইক সিন্থেটিক ইমেজ জেনারেটিং অ্যালগরিদম অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বিভিন্ন বিখ্যাত স্ট্যাচু ও পেইন্টিং থেকে মানুষের মুখের প্রতিকৃতি তৈরি করেন।

Screenshot collage: Rumor Scanner

উল্লেখ্য, প্রচারিত দাবিতে উক্ত নারীর নাম ইসাবেল বোয়ার ও তার জাতীয়তা ফরাসি দাবি করা হলেও স্ট্যাচু অব লিবার্টি মূলত মিশরীয় এক নারীর আদলে তৈরি করা হয়েছিল। ফরাসি ভাস্কর ফ্রেডরিক অগাস্ট বারথোল্ডি প্রথমে উক্ত ভাস্কর্যটি তৈরি করেন এবং পরবর্তীতে তার তৈরি ভাস্কর্যের আদলে স্ট্যাচু অব লিবার্টি তৈরি করা হয়।

মূলত, স্ট্যাচু অব লিবার্টির মডেলের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ছবিটি বাস্তব নয়। বাস ইউটারবেইক নামের ডাচ একজন শিল্পীর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি এই ছবি উক্ত দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

সুতরাং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি স্ট্যাচু অব লিবার্টির মডেলের ছবি বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

ইসাবেলা বোয়ার্স প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে তার বাবা ছিলেন একজন আফ্রিকান প্যাস্ট্রি শেফ এবং মা ছিলেন একজন ইংরেজ। ইসাবেলা ছিলেন বিশেষ সুন্দরী, এবং মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি বিখ্যাত সেলাই মেশিন প্রস্তুতকারী আইজাক সিঙ্গারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি তখন ৫০ বছর বয়সী ছিলেন।
সিঙ্গারের মৃত্যুর পর, ইসাবেলা দেশের সবচেয়ে ধনী নারী হয়ে ওঠেন। এটি কোনো বিস্ময়ের বিষয় নয় যে তাকে স্ট্যাচু অফ লিবার্টির মডেল হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল, কারণ তিনি আমেরিকান স্বপ্নের প্রতীক ছিলেন। বিধবা হয়ে ইসাবেলা পৃথিবী ভ্রমণ করেন এবং ডাচ বেহালাবাদক ভিক্টর রোবস্টেটকে বিয়ে করেন, যার মাধ্যমে তিনি কাউন্টেস উপাধি লাভ করেন।

তিনি আমেরিকা এবং ইউরোপের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বে পরিণত হন এবং একটি বিশ্ব ইভেন্টে ফরাসি ভাস্কর ফ্রেডেরিক বার্থোল্ডির সাথে দেখা করেন। বার্থোল্ডি তার সৌন্দর্য ও জীবনের গল্পে মুগ্ধ হয়ে তার মুখকে #স্ট্যাচু_অফ_লিবার্টির মডেল হিসেবে ব্যবহার করেন।

ইসাবেলা তৃতীয়বার বিয়ে করেন এবং ১৯০৪ সালে প্যারিসে ৬২ বছর বয়সে মারা যান, কিন্তু তার মুখ নিউ ইয়র্কের এই আইকনিক ভাস্কর্যে বেঁচে আছে, যা স্বাধীনতা এবং আমেরিকান গৌরবের প্রতীক।