ঢাকাশনিবার , ১৮ জুন ২০২২
  1. আন্তর্জাতিক
  2. ইতিহাস ঐতিয্য
  3. ইসলাম
  4. কর্পোরেট
  5. খেলার মাঠে
  6. জাতীয়
  7. জীবনযাপন
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. নারী কন্ঠ
  11. প্রেস বিজ্ঞপ্তি
  12. ফার্মাসিস্ট কর্নার
  13. ফিচার
  14. ফ্যাশন
  15. বিনোদন

যে কারনে বারবার ডোবে সিলেট

আবদুর রহিম ও মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত
জুন ১৮, ২০২২ ৭:২০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

তলিয়ে গেছে সিলেটের শতশত এলাকা। লাখ লাখ মানুষের আর্তনাদ। নারী ও শিশু নিয়ে মহাবিপদ। ঘরে খাওয়ার পানি নেই। বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ। পানিতে ভেসে যাচ্ছে কাঁচা ঘরবাড়ি। মানুষজন ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রের সন্ধানে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি। আগের দিন সন্ধ্যায় যেসব এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর পানি ছিল, শুক্রবার রাতের মধ্যে তা বেড়ে গলা সমান হয়ে গেছে। ফলে অনেক মানুষকে ঘরের চালায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। নৌকা না থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে পারছে না বানভাসি মানুষ। পানিবন্দিদের উদ্ধারে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বারবার এমন দৃশ্যপটে রয়েছে ত্রিকর্ম! সিলেট নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলতি অর্থবছরে ২০৯ কোটি টাকার কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন। আর গত ১২ বছরে এ খাতে খরচ হয়েছে ৮৬৯ কোটি টাকা। তবুও জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর হয়নি। মানুষের আমলে তা ব্যর্থ। একটু বৃষ্টি হলেই সিলেট ডুবে। সারা দুনিয়া দেখে সিলেটের আর্তনাদ। রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোক্তারাও দুর্বল। করা যায় না কাজ। সিলেটের সাতটি নদী এখনো রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীদের দখলে। পানি চলাচলের নদীতে হাজারো অবৈধ স্থাপনা তৈরি, জমছে পলি, আটকে আছে আবর্জনা। এমন অসহায়ত্ব নিয়ে নীতি-নির্ধারকের কাছে প্রশ্ন। প্রভাবশালীদের কর্ম থেকে সিলেটের মানুষ কবে রক্ষা পাবে?

গত ১৬ মে বন্যায় ডুবেছিল সিলেট। এক সপ্তাহের মধ্যে সে পানিও নেমেও যায়। এক মাসের মাঝে ফের সিলেটের বুকে বন্যার আঘাত। এবার নৌকা সংকটে ব্যাহত হচ্ছে বানভাসি লোকজনকে উদ্ধার কার্যক্রমও। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষাসহ সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা। জেলা সদরের সাথে উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুর্গত এলাকায় প্রয়োজনীয় খাদ্য ও উদ্ধার তৎপরতা না থাকায় মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকেই দুই-তিন দিন থেকে না খেয়ে থাকার কথা বলছেন।

এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংকলন হচ্ছে না। উপজেলার উঁচু বিল্ডিংগুলোতে ব্যক্তি উদ্যোগে চালু করা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। সরকারিভাবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়দের মতে, গত বন্যা ২০০৪ সালের বন্যাকে অতিক্রম করেছে। আর এবারের বন্যা ১৯৮৮ সালের বন্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। পানিবন্দিদের উদ্ধারে নৌকা ও স্পিডবোট পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘অনেকেই পানিবন্দি হয়ে আছেন। তাদের উদ্ধারে আমরা আর্মি নিয়োগ করেছি। নৌকা ও স্পিডবোট সংগ্রহ করা হচ্ছে। সবাইকে দ্রুত উদ্ধার করে আশ্রয়স্থলে নিয়ে যাওয়া হবে।’

নদীতে হাজারো অবৈধ স্থাপনা, জমছে পলি, আটকে আছে আবর্জনা : বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে ছড়া সংস্কার করা হয়েছে। ছড়ার পাড় দখল করে হাজারো ব্যক্তি স্থাপনা বানিয়েছেন। অথচ এসব স্থাপনা ঠিকমতো উচ্ছেদ না করে গার্ডওয়াল দিয়ে ছড়াকে আটকে রেখে দখলদারদেরই স্থায়ীভাবে পাকাপোক্ত করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এসব ছড়া-খালও আবর্জনায় ঠাঁসা। তাই ভারী বৃষ্টি হলেই নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। নদীর বুকে পলি জমে নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে, শহরের পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলোও অনুপযোগী। তাছাড়া শহরের যত্রতত্র বৈধ-অবৈধ স্থাপনা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, এ সব কিছুই জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী।’

রাজনৈতিক নেতারা নদী দখল করে আবাসনসহ স্থাপনা তৈরি করছেন :  রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী প্রভাবশালীরা জলাধার (পানি ধারণের স্থান) ভরাট করে আবাসনসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এতে পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভরাট, দূষণ ও দখলের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সিলেটের আটটি নদ-নদী। সিলেট সিটি কর্পোরেশনসহ আট উপজেলায় ১১১ ব্যক্তির দখলে রয়েছে বেশির ভাগ নদ-নদী। নদীগুলোর তীর দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান, ফার্মেসি, বস্তি, খাবার হোটেল, গুদামঘর, রাইস মিল, বাসা, কাঠের দোকান, পোলট্রি ফার্মসহ বেশ কিছু স্থাপনা। নগরের কুশিঘাট, মাছিমপুর, কালিঘাট, তোপখানা, কাজিরবাজার, চাঁদনীঘাট ও কদমতলী এলাকায় ঘুরে সুরমা নদীর এমন চিত্র দেখা গেছে।

চলতি বছরে ২০৯ কোটি, এক দশকে ৮৬৯ কোটি টাকা কাজেই আসেনি : সিলেট নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলতি অর্থবছরে ২০৯ কোটি টাকার কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন। আর গত ১২ বছরে এ খাতে খরচ হয়েছে ৮৬৯ কোটি টাকা। তবুও জলাবদ্ধতার সমস্যা পুরোপুরি দূর হয়নি। চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে জলাবদ্ধতার সংকট আরও বেড়েছে। সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল শাখা আমার সংবাদকে জানিয়েছে, ২০০৯ সালে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে কয়েকটি ছড়া খনন করা হয়। এরপর ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৩৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য নগরের নালা-নর্দমা প্রশস্ত করা ও নির্মাণের কাজও সিটি কর্তৃপক্ষ করছে। ১২ বছরে এ খাতে কাজ হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার। চলতি বছরে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরও প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। নগরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, যদি নদী ও ছড়াগুলো পরিকল্পিতভাবে আরও সুগভীর করার পাশাপাশি অবৈধ দখলমুক্ত করে খনন করা হতো, তাহলে নগরের বন্যা পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ রূপ পেত না। নগর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া ও খালগুলো যথাযথ খননের অভাবে পানির ধারণক্ষমতা হারিয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি জটিল হয়েছে।

পানিবন্দিদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর পাঁচ মিশন : বন্যাকবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার ও সাহায্যে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। দুই জেলার আট উপজেলায় সেনাবাহিনীর ৯টি ইউনিট কাজ করছে। নৌকা দিয়ে বাড়িঘর থেকে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয় আসছে তারা। শুক্রবার দুপুর থেকে উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। সিলেট সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল হামিদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিলেটের তিন উপজেলা ও সুনামগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় সেনাবাহিনী পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারসহ পাঁচটি কাজে তৎপরতা শুরু করেছে। সিলেটের উপজেলাগুলো হচ্ছে— সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলার সদর, দিরাই, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জ।

মেজর জেনারেল হামিদুল হক আরও জানান, সিলেট কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি ওঠে বিদ্যুৎ সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি খাদ্যগুদাম হুমকিতে রয়েছে। এগুলো রক্ষায়ও সেনাসদস্যরা কাজ করছেন। জিওসি জানান, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় পাঁচটি কাজ করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে— পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা। বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। বন্যা আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান। স্পর্শকাতর স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সীমিত পরিসরে খাদ্যসামগ্রী ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা।’মেজর জেনারেল হামিদুল হক আরও জানান, “সেনাবাহিনী নিজস্ব নৌকা দিয়ে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করছে। ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে আরও ‘রেসকিউ বোট’ আনা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজনের নৌকাগুলোও উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।” বিপদের সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের কাজ করতে পারাকে সেনাবাহিনী গৌরবের মনে করে বলেও মন্তব্য করেন এই সেনা কর্মকর্তা।

রানওয়েতে পানি, ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ : সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে চলে এসেছে পানি। ফলে ওসমানী বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ গতকাল বিকেলে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বন্যার পানি বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। এছাড়া বিমানবন্দরের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। তাই বিমানবন্দরের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিষয়টি জানানো হবে।’

পুরো সিলেট বিদ্যুৎহীন হওয়ার শঙ্কা, গ্রিড উপকেন্দ্র বন্ধ : ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। তাতে চার লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ এখন বন্ধ আছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুনামগঞ্জে তিন লাখ ৮০ হাজার মানুষ এখন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে আরও এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মনিটরিং টিম গঠন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অনাকাঙ্ক্ষিত এই অসুবিধার জন্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, সিলেট সিটি কর্পোরেশন, দমকল বাহিনী ও বিদ্যুৎ বিভাগ। এ ছাড়া সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাকার মেশিন দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঢুকে পড়া পানি শুকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে কুমারগাঁও সাব-স্টেশন তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এটি তলিয়ে গেলে পুরো সিলেট বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়বে। এতে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। আর বিদ্যুৎ না থাকলে উদ্ধার কাজসহ স্বাভাবিক কাজকর্মও ব্যাহত হবে। তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।’

আরইবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সুনামগঞ্জের। সেখানে প্রায় তিন লাখ ৮০ হাজারটি লাইন বন্ধ আছে। এ ছাড়া সিলেট-১ এবং সিলেট-২ সমিতির অধীনেও প্রায় সব লাইন বন্ধ। সব মিলিয়ে এখন প্রায় চার লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ লাইনের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। স্থানীয় সমিতিগুলো জানায়, পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দুই দিনে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তাহলে আরও এলাকায় নিরাপত্তার জন্য আমাদের লাইন বন্ধ রাখতেই হবে। এদিকে পানি কমতে শুরু করার সময়টাই মারাত্মক। সেই সময় দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আরইবির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে ওইসব এলাকায়। বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সিলেটের কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের সুইচইয়ার্ড প্লাবিত হওয়ায় সিলেট অঞ্চলও বিদ্যুৎ বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে।

শাবির ক্যাম্পাস প্লাবিত, শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে বিজিবি :  শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্লাবিত হওয়ায় হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে কাজ করছেন বিজিবি সদস্যরা। শুক্রবার দুপুর থেকেই তারা শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কাজ করছেন। বর্তমানে ক্যাম্পাসে কোমর পানি বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ছাত্রী হলে গতকাল থেকেই পানি উঠেছে। সকাল থেকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে পুরো ক্যাম্পাস। নিরাপদ পানির সংকটে পড়েছেন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি এক সিন্ডিকেট সভায় আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্ভূত বন্যা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার কাজে নিয়োজিত এক বিজিবি কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষার্থীরা যতক্ষণ আছেন, ততক্ষণ আমরা তাদের সহযোগিতায় কাজ করে যাব। তাদের যেকোনো সহায়তায় আমরা পাশে থাকব। সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল বলেন, বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের নিরাপদে পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সিলেট কদমতলী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিরাপদে পৌঁছে দিতে বাসের ব্যবস্থা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা থাকবে, ততক্ষণ আমরা তাদের নিরাপদে রাখতে কাজ করে যাব। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন বিজিবি সদস্যরা। আমরা এক সাথে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাব।’

বিচ্ছিন্ন সুনামগঞ্জ, পানি-বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ : সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে সারা দেশের সাথে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যার্তদের উদ্ধারে কাজ শুরু করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বন্যাকবলিত এলাকার স্থানীয়রা জানিয়েছে, বন্যায় জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এই মুহূর্তে সুনামগঞ্জের সবার ঘরে খাওয়ার পানি নেই। বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলাই কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ ঘরেই হাঁটু থেকে গলা সমান পানি। নৌকার অভাবে অনেকে ঘর ছেড়ে নিরাপদেও যেতে পারছেন না। এমন অবস্থায় পানিতে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারে জেলার তিন উপজেলায় সেনাবাহিনী নেমেছে। সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ বলেন, ‘সুনামগঞ্জ জেলা সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে সেনাবাহিনী।’
শুক্রবার দুপুর থেকে এ উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। বুধবার থেকে উজান থেকে বন্যাকবলিত হয়ে অসংখ্য রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদরের সাথে পাঁচটি উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। সুনামগঞ্জ শহরের প্রায় প্রতিটি বাসাতেই পানি ঢুকেছে। উকিলপাড়া এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, সুনামগঞ্জে এর আগে এত ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। জেলা শহরে সড়কে চলছে নৌকা, সড়ক যোগাযোগ হয়ে পড়েছে বিচ্ছিন্ন, সেই সাথে গত তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগ সুনামগঞ্জের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পুরোপুরি বিপর্যস্ত সুনামগঞ্জ জেলা। সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, ‘পৌর শহরের সব রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। মানুষ উঁচু এলাকা খুঁজে খুঁজে আশ্রয় নিচ্ছে। এক ভয়াবহ দুর্যোগে পড়েছে জেলা শহরের বাসিন্দারা।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি, এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত :সিলেট জেলাজুড়ে ভয়াবহ বন্যার কারণে ১৯ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আগামী ১৯ জুন অনুষ্ঠিতব্য সব শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি জেনারেল, এসএসসি ভোকেশনাল এবং দাখিল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি পরে জানানো হবে। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সচিব মো. কবীর আহমদ বলেন, ‘সিলেটের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যাকবলিত। শহরের বিভিন্ন স্থানেও পানি উঠা অব্যাহত রয়েছে। সুনামগঞ্জের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এর আগে শ্রেণিকক্ষ তলিয়ে যাওয়ায় সিলেটে ২৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাকবলিত। এ অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়। ১১টি উপজেলায় ২২-২৩টি কেন্দ্রে বন্যার পানি উঠেছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জানিয়ে দিয়েছেন, পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হবে না। সার্বিক পরিস্থিতিতে  জেলার ৩৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশেদ বলেন, জেলায় এক হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২৩০টি বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইরে যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে, সেগুলোতেও পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো । বিডিসারাদিন২৪'এ প্রকাশিত নারীকন্ঠ,মতামত লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত বিডিসারাদিন২৪ 'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় বিডিসারাদিন২৪ কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। বিডিসারাদিন২৪ 'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।