দূর থেকে দাঁড়িয়ে যখন বিএম ডিপোতে লাগা আগুনের ভিডিও ধারণ করছিলেন অলিউর রহমান নয়ন তখনও জানতেন না মাত্র মিনিটের ব্যবধানে এই আগুনের এই লেলিহান শিখায় প্রাণ যাবে তার। তার ফেসবুক লাইভ থেকেই প্রথম আগুনের ছবি দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
লাইভের শেষ পর্যায়ে হঠাৎ বিস্ফোরণে অন্ধকার হয়ে যায় সবকিছু। এর পরও বেশ কয়েক মিনিট আর্তনাদ শোনা যায় মানুষের। তারপর বন্ধ হয়ে যায় ফেসবুকের সেই লাইভ।
রোববার সকালে সেই ফেসবুক লাইভকারী অলিউর রহমানের লাশ মেলে মর্গে। অথচ ভিডিও ধারণ করার সময় মানুষগুলো ভাবছিলো নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছেন তারা।
অথচ কন্টেইনারের ভেতরে থাকা রাসায়নিক পদার্থে আগুন পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। মুহূর্তেই নিরাপদ দূরত্বের মানুষগুলোও ছিটকে পড়েন বিস্ফোরণের কারণে।
গতকাল রাত সাড়ে নয়টা লাগা বিএম ডিপোর আগুনে প্রথম বিস্ফোরণটি হয় রাত ১১টার কিছু আগে। আশের পাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা প্রকম্পিত হয় বিস্ফোরণের শব্দে। বাড়ি ঘরের কাঁচ ভেঙে যায়। ডিপো থেকে বেশ দূর থাকা কাশেম জুট মিলসেও আগুনের লেলিহান শিখা পৌঁছে যায় বিস্ফোরণের সাথে। মোট তিন দফা বিকট শব্দে বিস্ফোরণের কথা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। কিন্তু কেন এমন বিস্ফোরণ!
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বিএম ডিপোতে স্তূপ করে রাখা কন্টেইনারের ভেতরে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণেই আগুনের এই ভয়াবহ রূপ।
বিশেষ করে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, যা দাহ্য পদার্থ। এখন পর্যন্ত ১৬টি কন্টেইনার বোঝাই হাইড্রোজেন পার অক্সাইড পাওয়া গেছে বিএম ডিপোতে। যা একসাথে রাখা ছিলো ডিপোতে।
হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মূলত বড় বড় কারখানায় বিভিন্ন পণ্যের উজ্জ্বলতা বাড়ানো বা ব্লিচিং এর জন্য ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে তৈরি পোশাক কারখানা, কাগজের কারখানা এবং প্রসাধনী উৎপাদনের কারখানায় এই রাসায়নিক পদার্থটির চাহিদা রয়েছে।
এছাড়া হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কাঁচামাল হিসেবে শিল্পকারখানায় বিক্রির জন্যেও আমদানি-রপ্তানি করা হয়। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে এই পদার্থটির চাহিদা বেশি থাকায় এই অঞ্চলে এর উৎপাদনও বেশি। স্বাভাবিক তাপামাত্রায় কোন বিক্রিয়া না থাকলেও কোনভাবে উত্তপ্ত হয়ে গেলে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরক হয়ে উঠতে পারে এই হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।
কেউ কেউ বলছে নিজেদের কারখানায় উৎপাদিত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড পাকিস্তান ও ভিয়েতনামে রপ্তানি করার জন্য কন্টেইনারে রাখা হয়েছিলো। আবার আরেকটি সূত্র বলছে নিজেদের গার্মেন্টস কারখানায় ব্যবহারের জন্য এই কন্টেইনার বোঝাই আমদানি করেছে ডিপো কর্তৃপক্ষ। বিএম ডিপোটি মূলত স্মার্ট গ্রুপ অফ কোম্পানিজের আওতাধীন। ডিপো ছাড়াও পাঁচটি তৈরি পোশাক কারখানাসহ মোট এগারটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই স্মার্ট কোম্পানির।
প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিস ধারণা করছে, কন্টেইনারে থাকা হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কারণেই এমন বিস্ফোরণ। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সম্পূর্ণ তদন্ত না করে এখনই নিশ্চিত হতে পারছেন না তারা।
সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে সাড়ে সাত হাজার কন্টেইনার সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। ঘটনার সময় প্রায় সাড়ে চার হাজার কন্টেইনার ছিলো ডিপোটিতে যার মধ্যে ১৬টি কন্টেইনারে ছিলো হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। বিস্ফোরণে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের ড্রাম বিস্ফোরিত হবার প্রমাণও মিলেছে এরমধ্যে।