ঢাকা ০৭:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
নবাবগঞ্জের প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের সুযোগ্য কন্যা মেহেনাজ মান্নান ইলিশ ধরায় খরচ ৮৩০ টাকা, ভোক্তার গুনতে হয় অন্তত ২ হাজার নির্বাচন কে সামনে রেখে উত্তাল ঢাকা-১ দোহার-নবাবগঞ্জ আসন আটপাড়ায় কালী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর কেন্দুয়ায় মানবপাচার মামলার আসামীরা রিমান্ডে মাস্টারমাইন্ডের নাম প্রকাশ করেছে ‎ ‎কেন্দুয়ায় মানবপাচারের মামলায় চীনা নাগরিকসহ দুই আসামীকে কারাগারে প্রেরণ কেন্দুয়া থেকে তিন নারীকে চীনে পাচারের চেষ্টা; চীনা নাগরিকসহ আটক দুইজন কেন্দুয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ৫ ‎কেন্দুয়ায় প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তের সময় হাতাহাতি: ইউএনও আহত কেন্দুয়ায় প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ জাল ধ্বংস ওসমান হাদী দাবিতে ঘনিষ্ঠ ভিডিও প্রচার, সামনে এলো আসল সত্য ব্লাড মুন দেখা যাবে রোববার, চাঁদ লাল হওয়ার কারণ কী? তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড়

পাঠ্যপুস্তকে বড় পরিবর্তনে শিক্ষাবর্ষ শুরু

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৪:৪১:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 256
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পাঠ্যপুস্তকে বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। এবার ইতিহাস-সম্পর্কিত বইগুলোতে মুক্তিযুদ্ধসহ নানা বিষয় পরিমার্জন করা হয়েছে। যুক্ত হয়েছে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের গল্প ও গ্রাফিতি। তবে বছরের প্রথম দিনে মাধ্যমিকের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নতুন বই পায়নি। তবে শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য সব বই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এনসিটিবি জানুয়ারির মধ্যে সব বই পৌঁছানোর পরিকল্পনা করলেও বাস্তবে সেটি সম্ভব নয় বলে মনে করছেন প্রেস মালিকরা।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম রিয়াজুল হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ইতিহাস-সম্পর্কিত বিষয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে। মওলানা ভাসানী, জাতীয় চার নেতাসহ সবার ইতিহাস স্থান পেয়েছে। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার বন্দনা বাদ দেওয়া হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের শহিদদের কথা ও গ্রাফিতি যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণিতে গল্প, গদ্য, পদ্য, কবিতায় সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে।

ইতিহাস-সম্পর্কিত বিষয়ে পরিবর্তন
নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম অধ্যায়ে পূর্ববাংলার আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদের উত্থান শিরোনামে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলন, আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল, ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ও ১৯৭০-এর জাতীয় নির্বাচনের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা শিরোনামে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করা হয়েছে। এতে লেখা হয়, ‘১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের জন্য বাঙালিরা অনেক দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে… ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে শেখ মুজিবুর রহমান ২রা মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে জনগণকে মুক্তি ও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। ২৫শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র জনগণের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ চালায়। ২৬শে মার্চ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।’ এ ছাড়া ছবি স্থান পেয়েছে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, ২৫ মার্চের গণহত্যা ও মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার। আগে নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু মানবতাবাদী ধারা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা নামে একটি অধ্যায় ছিল।

এসব পরিবর্তনের মাধ্যমে দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষ ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে নিরপেক্ষ বলে কিছু থাকে না, দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষ সবকিছু যেন বইয়ে থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।’

অন্যদিকে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের গল্প। ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শীর্ষক প্রবন্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ছবিসহ শহিদদের কথা লেখা হয়েছে। এ ছাড়া একজন শহিদের নাম ভুল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। নাফিসার স্থলে নাহিয়ান লেখা হয়েছে। তবে বিষয়টি অনলাইন বইয়ে সঠিকভাবে করা হয়েছে। একই শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ শিরোনামের অধ্যায়েও পরিবর্তন এসেছে। এতে শুরুতে রয়েছে জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ছবি। পাশে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। জাতীয় চার নেতার ছবিও রয়েছে। আগের বইয়ে একই স্থানে শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ছবি ছিল। একই বইয়ে লেখা হয় ২৬ মার্চ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে তিনি আবারও স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে আমাদের চার নেতা নামে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণনা রয়েছে।

এনসিটিবির টার্গেট জানুয়ারি, প্রেস মালিকদের হিসাব ফেব্রুয়ারি
এনসিটিবি ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে চায়। কিন্তু প্রেস মালিকদের হিসাব অনুযায়ী, সব বই পেতে ফেব্রুয়ারি লাগতে পারে। মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রতিদিন যদি ৫০ লাখ করেও বই ছাপানো হয় তাহলে দুই মাস লাগবে। তবে বর্তমানে সবার আন্তরিকতা রয়েছে। লোন পাওয়াও সহজ হয়েছে। ফলে আরেকটু কম সময় লাগতে পারে। কাগজের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে বই ছাপানোতেও গতি আসবে।

তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘১১৬টি প্রিন্টিং প্রেস রয়েছে। প্রতিদিন এক কোটি বই ছাপানো সম্ভব। তাই আমরা মনে করছি ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই পৌঁছানো যাবে। আমরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ছয় কোটি গিয়েছে। আরও চার কোটি বই ট্রাকে আছে।’

বই পায়নি মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা
প্রাথমিক স্তরের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব বই বিতরণ করা হয়েছে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব বই পায়নি। আর মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের অন্তত তিনটি বই দেওয়ার টার্গেট থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। রাজধানীর কুর্মিটোলা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিউল বলে, ‘স্কুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু বই দেওয়া হয়নি। কবে বই দেবে সেটাও বলা হয়নি।’

অনলাইনে মিলবে সব পাঠ্যবই
শিক্ষার্থীদের হাতে সব পৌঁছানো না গেলেও এনসিটিবির ওয়েবসাইটে সব বই আপলোড করা হয়েছে। গতকাল শিক্ষা উপদেস্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এর উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি নতুন বই ছাপানোতে কারা কারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে তাদের চিহ্নিত করা হবে বলে জানিয়েছেন। বই ছাপানো দেরি হওয়ার কারণ নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘সবার হাতে সব বই পৌঁছানোর জন্য যুদ্ধের মতো অবস্থা হয়েছে। প্রথম সমস্যা হলো আমরা বিদেশে বই ছা্পাব না। শিক্ষাক্রম নতুন করা হয়েছে অনিবার্য কারণে। এ ছাড়া বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। যে সময়ের মধ্যে শুরু করা হয়েছিল, তার মধ্যে সময় কম ছিল। অনেক বেশি পরিমার্জন করতে হয়েছে। যাতে দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষভাবে বইয়ে যেন সবকিছু থাকে। গণিত ও বিজ্ঞানের কিছু ভুল ছিল, সেগুলো সংশোধন করা হয়েছে। উন্নত মানের ছাপা, কাগজ ও মলাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরেকটা বিষয় হলো, এখানে (এনসিটিবি) অনেক দিন যারা ছিলেন, অনিবার্য কারণেই তাদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অভিজ্ঞদের দায়িত্বে বসানো হয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে মুদ্রণশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়া করতে হয়, এটা তো তাদের অভিজ্ঞতা নেই। সেটা করতে গিয়েই ব্যক্তিগতভাবে আমাকেও যুক্ত হতে হয়েছে। আমি এখানে কাউকে দোষারোপ করছি না।’ এ সময় নিজ মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি হলে দুদককে অনুসন্ধানের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘আড়াই মাসের মধ্যে প্রায় ৪৪১টি বই পরিমার্জন করেছি। বছরের পর বছর বই উৎসবের নামে অপচয় হয়েছে। সেটি লক্ষ করে উৎসবের বাহুল্য বাদ দিয়ে গুণগত মানের বই পৌঁছে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য।’

অনুষ্ঠানে মাউশির মহাপরিচালক এ বি এম রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী) প্রফেসর আমিনুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সিদ্দিক জোবায়ের প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পাঠ্যপুস্তকে বড় পরিবর্তনে শিক্ষাবর্ষ শুরু

আপডেট সময় : ০৪:৪১:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫

পাঠ্যপুস্তকে বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। এবার ইতিহাস-সম্পর্কিত বইগুলোতে মুক্তিযুদ্ধসহ নানা বিষয় পরিমার্জন করা হয়েছে। যুক্ত হয়েছে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের গল্প ও গ্রাফিতি। তবে বছরের প্রথম দিনে মাধ্যমিকের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নতুন বই পায়নি। তবে শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য সব বই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এনসিটিবি জানুয়ারির মধ্যে সব বই পৌঁছানোর পরিকল্পনা করলেও বাস্তবে সেটি সম্ভব নয় বলে মনে করছেন প্রেস মালিকরা।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম রিয়াজুল হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ইতিহাস-সম্পর্কিত বিষয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে। মওলানা ভাসানী, জাতীয় চার নেতাসহ সবার ইতিহাস স্থান পেয়েছে। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার বন্দনা বাদ দেওয়া হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের শহিদদের কথা ও গ্রাফিতি যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণিতে গল্প, গদ্য, পদ্য, কবিতায় সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে।

ইতিহাস-সম্পর্কিত বিষয়ে পরিবর্তন
নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম অধ্যায়ে পূর্ববাংলার আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদের উত্থান শিরোনামে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলন, আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল, ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ও ১৯৭০-এর জাতীয় নির্বাচনের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা শিরোনামে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করা হয়েছে। এতে লেখা হয়, ‘১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের জন্য বাঙালিরা অনেক দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে… ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে শেখ মুজিবুর রহমান ২রা মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে জনগণকে মুক্তি ও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। ২৫শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র জনগণের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ চালায়। ২৬শে মার্চ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।’ এ ছাড়া ছবি স্থান পেয়েছে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, ২৫ মার্চের গণহত্যা ও মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার। আগে নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু মানবতাবাদী ধারা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা নামে একটি অধ্যায় ছিল।

এসব পরিবর্তনের মাধ্যমে দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষ ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে নিরপেক্ষ বলে কিছু থাকে না, দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষ সবকিছু যেন বইয়ে থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।’

অন্যদিকে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের গল্প। ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শীর্ষক প্রবন্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ছবিসহ শহিদদের কথা লেখা হয়েছে। এ ছাড়া একজন শহিদের নাম ভুল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। নাফিসার স্থলে নাহিয়ান লেখা হয়েছে। তবে বিষয়টি অনলাইন বইয়ে সঠিকভাবে করা হয়েছে। একই শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ শিরোনামের অধ্যায়েও পরিবর্তন এসেছে। এতে শুরুতে রয়েছে জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ছবি। পাশে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। জাতীয় চার নেতার ছবিও রয়েছে। আগের বইয়ে একই স্থানে শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ছবি ছিল। একই বইয়ে লেখা হয় ২৬ মার্চ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে তিনি আবারও স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে আমাদের চার নেতা নামে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণনা রয়েছে।

এনসিটিবির টার্গেট জানুয়ারি, প্রেস মালিকদের হিসাব ফেব্রুয়ারি
এনসিটিবি ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে চায়। কিন্তু প্রেস মালিকদের হিসাব অনুযায়ী, সব বই পেতে ফেব্রুয়ারি লাগতে পারে। মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রতিদিন যদি ৫০ লাখ করেও বই ছাপানো হয় তাহলে দুই মাস লাগবে। তবে বর্তমানে সবার আন্তরিকতা রয়েছে। লোন পাওয়াও সহজ হয়েছে। ফলে আরেকটু কম সময় লাগতে পারে। কাগজের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে বই ছাপানোতেও গতি আসবে।

তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘১১৬টি প্রিন্টিং প্রেস রয়েছে। প্রতিদিন এক কোটি বই ছাপানো সম্ভব। তাই আমরা মনে করছি ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই পৌঁছানো যাবে। আমরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ছয় কোটি গিয়েছে। আরও চার কোটি বই ট্রাকে আছে।’

বই পায়নি মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা
প্রাথমিক স্তরের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব বই বিতরণ করা হয়েছে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব বই পায়নি। আর মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের অন্তত তিনটি বই দেওয়ার টার্গেট থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। রাজধানীর কুর্মিটোলা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিউল বলে, ‘স্কুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু বই দেওয়া হয়নি। কবে বই দেবে সেটাও বলা হয়নি।’

অনলাইনে মিলবে সব পাঠ্যবই
শিক্ষার্থীদের হাতে সব পৌঁছানো না গেলেও এনসিটিবির ওয়েবসাইটে সব বই আপলোড করা হয়েছে। গতকাল শিক্ষা উপদেস্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এর উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি নতুন বই ছাপানোতে কারা কারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে তাদের চিহ্নিত করা হবে বলে জানিয়েছেন। বই ছাপানো দেরি হওয়ার কারণ নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘সবার হাতে সব বই পৌঁছানোর জন্য যুদ্ধের মতো অবস্থা হয়েছে। প্রথম সমস্যা হলো আমরা বিদেশে বই ছা্পাব না। শিক্ষাক্রম নতুন করা হয়েছে অনিবার্য কারণে। এ ছাড়া বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। যে সময়ের মধ্যে শুরু করা হয়েছিল, তার মধ্যে সময় কম ছিল। অনেক বেশি পরিমার্জন করতে হয়েছে। যাতে দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষভাবে বইয়ে যেন সবকিছু থাকে। গণিত ও বিজ্ঞানের কিছু ভুল ছিল, সেগুলো সংশোধন করা হয়েছে। উন্নত মানের ছাপা, কাগজ ও মলাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরেকটা বিষয় হলো, এখানে (এনসিটিবি) অনেক দিন যারা ছিলেন, অনিবার্য কারণেই তাদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অভিজ্ঞদের দায়িত্বে বসানো হয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে মুদ্রণশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়া করতে হয়, এটা তো তাদের অভিজ্ঞতা নেই। সেটা করতে গিয়েই ব্যক্তিগতভাবে আমাকেও যুক্ত হতে হয়েছে। আমি এখানে কাউকে দোষারোপ করছি না।’ এ সময় নিজ মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি হলে দুদককে অনুসন্ধানের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘আড়াই মাসের মধ্যে প্রায় ৪৪১টি বই পরিমার্জন করেছি। বছরের পর বছর বই উৎসবের নামে অপচয় হয়েছে। সেটি লক্ষ করে উৎসবের বাহুল্য বাদ দিয়ে গুণগত মানের বই পৌঁছে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য।’

অনুষ্ঠানে মাউশির মহাপরিচালক এ বি এম রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী) প্রফেসর আমিনুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সিদ্দিক জোবায়ের প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।