ঢাকা ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
নবাবগঞ্জের প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের সুযোগ্য কন্যা মেহেনাজ মান্নান ইলিশ ধরায় খরচ ৮৩০ টাকা, ভোক্তার গুনতে হয় অন্তত ২ হাজার নির্বাচন কে সামনে রেখে উত্তাল ঢাকা-১ দোহার-নবাবগঞ্জ আসন আটপাড়ায় কালী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর কেন্দুয়ায় মানবপাচার মামলার আসামীরা রিমান্ডে মাস্টারমাইন্ডের নাম প্রকাশ করেছে ‎ ‎কেন্দুয়ায় মানবপাচারের মামলায় চীনা নাগরিকসহ দুই আসামীকে কারাগারে প্রেরণ কেন্দুয়া থেকে তিন নারীকে চীনে পাচারের চেষ্টা; চীনা নাগরিকসহ আটক দুইজন কেন্দুয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ৫ ‎কেন্দুয়ায় প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তের সময় হাতাহাতি: ইউএনও আহত কেন্দুয়ায় প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ জাল ধ্বংস ওসমান হাদী দাবিতে ঘনিষ্ঠ ভিডিও প্রচার, সামনে এলো আসল সত্য ব্লাড মুন দেখা যাবে রোববার, চাঁদ লাল হওয়ার কারণ কী? তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড়

পাবনায় ঝুট কাপড়ে হোসিয়ারিশিল্পের দিনবদল

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ১১:৪৭:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪
  • / 249
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঝুট থেকে গেঞ্জির পাশাপাশি তৈরি  হচ্ছে শার্ট, প্যান্টসহ বিভিন্ন পোশাক। নতুন করে গড়ে উঠেছে প্রায় এক হাজার কারখানা।

কারখানায় গেঞ্জির মাপে কাটা হচ্ছে ঝুট কাপড়। গেঞ্জির পাশাপাশি অন্যান্য পোশাকও বানানো হয়। পাবনার হোসিয়ারিশিল্পে এসব পোশাকের সহস্রাধিক কারখানা আছে। গতকালের ছবিহাসান মাহমুদ

পাবনায় হোসিয়ারিশিল্পের গোড়াপত্তন প্রায় দুই শ বছর আগে। গড়ে উঠেছিল বড় বড় কারখানা। এখানকার সুতায় তৈরি গেঞ্জির কদর ছড়িয়েছিল দেশ-বিদেশে; কিন্তু দেশভাগের পর এই শিল্পে ভাটা পড়তে থাকে। স্বাধীনতার পর একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়ে হোসিয়ারি শিল্প। বেকার হয়ে পড়েন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। বর্তমানে শিল্পটি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

তবে সুতার তৈরি গেঞ্জি দিয়ে নয়, সময়ের বিবর্তনে রূপ পরিবর্তন হয়েছে এই শিল্পে। সুতার তৈরি গেঞ্জির পরিবর্তে এখন গার্মেন্টের ফেলে দেওয়া কাপড়ে (ঝুট) তৈরি গেঞ্জি বদলে দিয়েছে এই শিল্পের গতিপথ। গেঞ্জির পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে শার্ট–প্যান্টসহ বিভিন্ন পোশাক। নতুন করে গড়ে উঠেছে প্রায় এক হাজার কারখানা। কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষের। এখানকার তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। প্রতি বছর এই শিল্পে বাণিজ্য হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার।

হোসিয়ারি শিল্প পাবনার ঐতিহ্য। এই শিল্প দিয়েই জেলার পরিচিতি ঘটেছিল। ধরন পরিবর্তন হলেও ধীরে ধীরে শিল্পটি প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।

সাইফুল আলম চৌধুরী, সভাপতি, পাবনা চেম্বার

পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, হোসিয়ারিশিল্প পাবনার ঐতিহ্য। এই শিল্প দিয়েই জেলার পরিচিতি ঘটেছিল। ধরন পরিবর্তন হলেও ধীরে ধীরে শিল্পটি প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। শিল্পটির প্রসারে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

জেলার প্রবীণ কয়েকজন হোসিয়ারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলায় হোসিয়ারি শিল্পের গোড়াপত্তন করেছিলেন তৎকালীন ধনাঢ্য হিন্দু ও মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বিদেশ থেকে উন্নত মানের সুতা আমদানি ও নিজেদের তৈরি সুতা দিয়ে গেঞ্জি তৈরি করতেন, যা খুব আরামদায়ক ছিল। তখন জেলা শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদী দিয়ে নৌকাযোগে হোসিয়ারি পণ্য আমদানি-রপ্তানি হতো। ফলে এই গেঞ্জির কদর খুব দ্রুত দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরাও গড়ে তোলেন বড় বড় কারখানা। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ওই ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই ভারতে চলে যান। এরপর থেকেই ভাটা পড়তে থাকে হোসিয়ারি শিল্পের। দিনে দিনে এই শিল্পের নিয়ন্ত্রণ আসে মুসলমান ব্যবসায়ীদের হাতে। তাঁরা শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন; কিন্তু স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে হোসিয়ারিশিল্প পুরোই মুখ থুবড়ে পড়ে।

রঙিন ঝুট কাপড় রোদে শুকানো হচ্ছে। পাবনা সদর উপজেলার দ্বীপচর এলাকায়
রঙিন ঝুট কাপড় রোদে শুকানো হচ্ছে। পাবনা সদর উপজেলার দ্বীপচর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

জেলা হোসিয়ারি ম্যানুফ্যাকচারার্স গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘ লোকসানের পরও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিকল্পভাবে শিল্পটিকে রক্ষার চেষ্টা শুরু করেন। ১৯৯০ সালের দিকে তাঁরা তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট কাপড় কিনে এনে গেঞ্জি তৈরি করতে থাকেন। গার্মেন্টের কাপড় রপ্তানিযোগ্য (এক্সপোর্ট কোয়ালিটি) হওয়ার কারণে এ কাপড়ে তৈরি গেঞ্জি, শার্ট ও প্যান্টের চাহিদা বাড়তে থাকে। ফলে দিন দিন বাড়তে থাকে শিল্পের পরিধি। বর্তমানে জেলা শহরে হোসিয়ারি ম্যানুফ্যাকচারার্স গ্রুপের তালিকাভুক্ত প্রায় এক হাজার ঝুটপণ্য তৈরির কারখানা হয়েছে। এসব কারখায় কাজ করছেন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার নারী-পুরুষ। প্রতিবছর কারখানাগুলোতে তৈরি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ কোটি গেঞ্জিসহ বিভিন্ন তৈরি পোশাক। উৎপাদিত পোশাক দেশের বাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে ভারত, মালয়েশিয়া ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে। বাণিজ্য হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা।

গত রোববার সরেজমিনে কয়েকটি হোসিয়ারি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, কাপড় কাটা, সেলাই, লন্ড্রিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। খণ্ড খণ্ড ঝুটকাপড় থেকে তৈরি হচ্ছে সুন্দর সুন্দর পোশাক। পাশাপাশি চলছে রঙের কাজ। বিভিন্ন ধরনের নকশার ছাপ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে পোশাকে। এরপর সেগুলো মোড়কজাত করে সাজানো হচ্ছে। একই সঙ্গে চলছে কেনাবেচা।

হোসিয়ারি ব্যবসা আমাগের রুটিরুজির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। আমরা কিছু করে খাবের পরতেছি।

মজিবুর রহমান, হোসিয়ার কারখানার শ্রমিক

ঝুট কাপড় থেকে তৈরি গেঞ্জি বস্তাবন্দী করে তোলা হচ্ছে ট্রাকে। পাবনা শহরের এআর কর্নার মুরগির গলি এলাকায়
ঝুট কাপড় থেকে তৈরি গেঞ্জি বস্তাবন্দী করে তোলা হচ্ছে ট্রাকে। পাবনা শহরের এআর কর্নার মুরগির গলি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুরসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের তৈরি পোশাক কারখানায় বড় কাপড় কাটার পর প্রচুর ছোট কাপড় জমা হয়। এগুলোই ঝুট কাপড় নামে পরিচিত। বিভিন্ন কারখানা এসব সংগ্রহ করা হয়। পরে সেগুলো থেকেই গেঞ্জিসহ বিভিন্ন পোশাক বানানো হয়। শহরের সাধুপাড়া মহল্লার আলাল উদ্দিন প্রামাণিক নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে ঝুট কাপড়ে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করছেন। তাঁর কারখানায় বর্তমানে ৭০ জন শ্রমিক কাজ করেন। ভালো আয় হচ্ছে।

ঝুট কারখানার শ্রমিকেরা বলছেন হোসিয়ারি শিল্পের নতুন যাত্রা তাঁদের জীবনকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। মজিবুর রহমান নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘হোসিয়ারি ব্যবসা আমাগের রুটিরুজির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। আমরা কিছু করে খাবের পরতেছি।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পাবনায় ঝুট কাপড়ে হোসিয়ারিশিল্পের দিনবদল

আপডেট সময় : ১১:৪৭:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

ঝুট থেকে গেঞ্জির পাশাপাশি তৈরি  হচ্ছে শার্ট, প্যান্টসহ বিভিন্ন পোশাক। নতুন করে গড়ে উঠেছে প্রায় এক হাজার কারখানা।

কারখানায় গেঞ্জির মাপে কাটা হচ্ছে ঝুট কাপড়। গেঞ্জির পাশাপাশি অন্যান্য পোশাকও বানানো হয়। পাবনার হোসিয়ারিশিল্পে এসব পোশাকের সহস্রাধিক কারখানা আছে। গতকালের ছবিহাসান মাহমুদ

পাবনায় হোসিয়ারিশিল্পের গোড়াপত্তন প্রায় দুই শ বছর আগে। গড়ে উঠেছিল বড় বড় কারখানা। এখানকার সুতায় তৈরি গেঞ্জির কদর ছড়িয়েছিল দেশ-বিদেশে; কিন্তু দেশভাগের পর এই শিল্পে ভাটা পড়তে থাকে। স্বাধীনতার পর একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়ে হোসিয়ারি শিল্প। বেকার হয়ে পড়েন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। বর্তমানে শিল্পটি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

তবে সুতার তৈরি গেঞ্জি দিয়ে নয়, সময়ের বিবর্তনে রূপ পরিবর্তন হয়েছে এই শিল্পে। সুতার তৈরি গেঞ্জির পরিবর্তে এখন গার্মেন্টের ফেলে দেওয়া কাপড়ে (ঝুট) তৈরি গেঞ্জি বদলে দিয়েছে এই শিল্পের গতিপথ। গেঞ্জির পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে শার্ট–প্যান্টসহ বিভিন্ন পোশাক। নতুন করে গড়ে উঠেছে প্রায় এক হাজার কারখানা। কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষের। এখানকার তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। প্রতি বছর এই শিল্পে বাণিজ্য হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার।

হোসিয়ারি শিল্প পাবনার ঐতিহ্য। এই শিল্প দিয়েই জেলার পরিচিতি ঘটেছিল। ধরন পরিবর্তন হলেও ধীরে ধীরে শিল্পটি প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।

সাইফুল আলম চৌধুরী, সভাপতি, পাবনা চেম্বার

পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, হোসিয়ারিশিল্প পাবনার ঐতিহ্য। এই শিল্প দিয়েই জেলার পরিচিতি ঘটেছিল। ধরন পরিবর্তন হলেও ধীরে ধীরে শিল্পটি প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। শিল্পটির প্রসারে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

জেলার প্রবীণ কয়েকজন হোসিয়ারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলায় হোসিয়ারি শিল্পের গোড়াপত্তন করেছিলেন তৎকালীন ধনাঢ্য হিন্দু ও মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বিদেশ থেকে উন্নত মানের সুতা আমদানি ও নিজেদের তৈরি সুতা দিয়ে গেঞ্জি তৈরি করতেন, যা খুব আরামদায়ক ছিল। তখন জেলা শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদী দিয়ে নৌকাযোগে হোসিয়ারি পণ্য আমদানি-রপ্তানি হতো। ফলে এই গেঞ্জির কদর খুব দ্রুত দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরাও গড়ে তোলেন বড় বড় কারখানা। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ওই ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই ভারতে চলে যান। এরপর থেকেই ভাটা পড়তে থাকে হোসিয়ারি শিল্পের। দিনে দিনে এই শিল্পের নিয়ন্ত্রণ আসে মুসলমান ব্যবসায়ীদের হাতে। তাঁরা শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন; কিন্তু স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে হোসিয়ারিশিল্প পুরোই মুখ থুবড়ে পড়ে।

রঙিন ঝুট কাপড় রোদে শুকানো হচ্ছে। পাবনা সদর উপজেলার দ্বীপচর এলাকায়
রঙিন ঝুট কাপড় রোদে শুকানো হচ্ছে। পাবনা সদর উপজেলার দ্বীপচর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

জেলা হোসিয়ারি ম্যানুফ্যাকচারার্স গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘ লোকসানের পরও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিকল্পভাবে শিল্পটিকে রক্ষার চেষ্টা শুরু করেন। ১৯৯০ সালের দিকে তাঁরা তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট কাপড় কিনে এনে গেঞ্জি তৈরি করতে থাকেন। গার্মেন্টের কাপড় রপ্তানিযোগ্য (এক্সপোর্ট কোয়ালিটি) হওয়ার কারণে এ কাপড়ে তৈরি গেঞ্জি, শার্ট ও প্যান্টের চাহিদা বাড়তে থাকে। ফলে দিন দিন বাড়তে থাকে শিল্পের পরিধি। বর্তমানে জেলা শহরে হোসিয়ারি ম্যানুফ্যাকচারার্স গ্রুপের তালিকাভুক্ত প্রায় এক হাজার ঝুটপণ্য তৈরির কারখানা হয়েছে। এসব কারখায় কাজ করছেন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার নারী-পুরুষ। প্রতিবছর কারখানাগুলোতে তৈরি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ কোটি গেঞ্জিসহ বিভিন্ন তৈরি পোশাক। উৎপাদিত পোশাক দেশের বাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে ভারত, মালয়েশিয়া ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে। বাণিজ্য হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা।

গত রোববার সরেজমিনে কয়েকটি হোসিয়ারি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, কাপড় কাটা, সেলাই, লন্ড্রিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। খণ্ড খণ্ড ঝুটকাপড় থেকে তৈরি হচ্ছে সুন্দর সুন্দর পোশাক। পাশাপাশি চলছে রঙের কাজ। বিভিন্ন ধরনের নকশার ছাপ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে পোশাকে। এরপর সেগুলো মোড়কজাত করে সাজানো হচ্ছে। একই সঙ্গে চলছে কেনাবেচা।

হোসিয়ারি ব্যবসা আমাগের রুটিরুজির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। আমরা কিছু করে খাবের পরতেছি।

মজিবুর রহমান, হোসিয়ার কারখানার শ্রমিক

ঝুট কাপড় থেকে তৈরি গেঞ্জি বস্তাবন্দী করে তোলা হচ্ছে ট্রাকে। পাবনা শহরের এআর কর্নার মুরগির গলি এলাকায়
ঝুট কাপড় থেকে তৈরি গেঞ্জি বস্তাবন্দী করে তোলা হচ্ছে ট্রাকে। পাবনা শহরের এআর কর্নার মুরগির গলি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুরসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের তৈরি পোশাক কারখানায় বড় কাপড় কাটার পর প্রচুর ছোট কাপড় জমা হয়। এগুলোই ঝুট কাপড় নামে পরিচিত। বিভিন্ন কারখানা এসব সংগ্রহ করা হয়। পরে সেগুলো থেকেই গেঞ্জিসহ বিভিন্ন পোশাক বানানো হয়। শহরের সাধুপাড়া মহল্লার আলাল উদ্দিন প্রামাণিক নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে ঝুট কাপড়ে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করছেন। তাঁর কারখানায় বর্তমানে ৭০ জন শ্রমিক কাজ করেন। ভালো আয় হচ্ছে।

ঝুট কারখানার শ্রমিকেরা বলছেন হোসিয়ারি শিল্পের নতুন যাত্রা তাঁদের জীবনকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। মজিবুর রহমান নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘হোসিয়ারি ব্যবসা আমাগের রুটিরুজির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। আমরা কিছু করে খাবের পরতেছি।’