অভিজ্ঞতা নেই তবু বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার
- আপডেট সময় : ০৬:৪২:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৬ বার পড়া হয়েছে
চাকরি বয়স পাঁচ বছরও শেষ হয়নি, এমন কর্মকর্তাদের বৈদেশিক স্টেশনে কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে পদায়ন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। গুরুত্বপূর্ণ এ পদের জন্য দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের না দিয়ে নবীনদের পদায়নের কারণে ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে বঞ্চিতদের মাঝে। সাবেক সরকারের আমলে শফিউল আজিম বিমানের এমডি ও সিইও থাকাকালে ২০১৮ সালে নিয়োগ পাওয়া এই কর্মকর্তাদের বিদেশে কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে পদায়ন করা হয়। পদায়নকৃত কর্মকর্তারা বর্তমানে তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদান শুরু করেছেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস মার্কেটিং বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার পদে কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। বিমানে এর আগে কখনও সহকারী জেনারেল ম্যানেজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে তাদের আবার পদোন্নতি দিয়ে ডেপুটি ম্যানেজার করা হয়। মার্কেটিং বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত এই নবীন কর্মকর্তাদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক স্টেশন, যেমন- চেন্নাই (ভারত), সিঙ্গাপুর, গুয়াংজু (চীন), আবুধাবি (সংযুক্ত আরব আমিরাত), ম্যানচেস্টার (ইউকে), কাঠমান্ডুতে (নেপাল) কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে—যা বিমানের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এই কান্ট্রি ম্যানেজারদের বিমানে চাকরির অভিজ্ঞতা মাত্র ৫ বছরের কম। এর আগে ১৫ থেকে ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক স্টেশনে বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে পদায়ন করা হতো।
বিমানের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একজন কান্ট্রি ম্যানেজারকে একটি বৈদেশিক স্টেশনের প্রধান হিসেবে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার আলোকে পেশাদার কার্যক্রম করতে হয়। সেই স্টেশনের সামগ্রিক সব বিষয়ের ওপরে পর্যাপ্ত দক্ষতা এবং পেশাদারি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। তাকে স্টেশনের দৈনন্দিন ব্যবসায়িক অপারেশনাল কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য টিকিট বিক্রি, বিপণন, ফ্লাইট সার্ভিস, কাস্টমার সার্ভিস, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং, সংশ্লিষ্ট এয়ারপোর্ট অথরিটির কার্যক্রম, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমসের কার্যক্রম, ইমারজেন্সি রেসপন্স ইত্যাদি বিষয়ে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। এছাড়া তার লিডারশিপ কোয়ালিটি, রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ণয় করতে হয়। সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। সংশ্লিষ্ট দেশের আইন-কানুন অনুসরণ করার পর্যাপ্ত দক্ষতা, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিগত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এই দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার বিষয় সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। তারা নিয়োগপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ এসব বৈদেশিক স্টেশনে কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে পদায়ন করেছে। এতে মার্কেটিং বিভাগের দীর্ঘদিন কর্মরত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মাঝে হতাশা এবং ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্তরা আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বা আওয়ামী ঘরানার। যেকোনও পদে নিয়োগের আগে তারা বা তাদের পরিবার আওয়ামী লীগ অনুসারী কিনা, সে বিষয়টি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েই নিয়োগ প্রদান করা হতো। অনেকে দলীয় তদবিরেও চাকরি পেয়েছেন।
এসব কর্মকর্তাকে বিগত আওয়ামী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বিমানের এসব স্টেশনে পদায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই।
বঞ্চিতদের অভিযোগ, দেশে আজ বৈষম্যবিরোধী সরকার প্রতিষ্ঠিত। তবু বিমান বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ ও অনভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন অব্যাহত রেখেছে। এ বিষয়ে তারা চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক আশরাফুল আলম বাংলা বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না’।