ঢাকা ০৮:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
অপরাধী হাসিনাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপে ভারত ইন্টারপোলের জালে বেনজীর হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জোরদার হচ্ছে ভারতে! এটুআই ছিল মিলেমিশে লুটপাটের প্রকল্প আওয়ামী লুটপাটে পঙ্গু ইডিসিএল বিদেশেও বিচার সম্ভব শেখ হাসিনার ‘দুঃখিত, আপা! এটাই শেষ!!’ : হাসিনার উদ্দেশ্য প্রেস সচিব জাতীয় সংসদ ভোটের পর পুলিশে পদকের মচ্ছব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন প্রফেসর ইউনূস ও তার দাবার চাল। পদত্যাগ করছেন উপদেষ্টা নাহিদ, আসছে নতুন দল ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতাবান ইলন মাস্কের সঙ্গে যে আলোচনা হলো ড. ইউনূসের শ্যামল দত্তের অ্যাকাউন্টে ১০৪২ কোটি টাকার লেনদেন কিভাবে পারে এত পাষণ্ড হতে, হাসিনাকে বললেন আসিফ নজরুল জাতিসংঘের রিপোর্ট ‘শেখ হাসিনার নির্দেশেই গুলি’! তসলিমার ‘চুম্বন’ প্রকাশকের জয় বাংলা স্লোগান, মব জাস্টিস উস্কে দেয়ার ভারতীয় প্ল্যান? জরুরি ওষুধেও ব্যবসার ফাঁদ:ওষুধের বাজারে অরাজকতা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ড. ইউনূস-মোদি বৈঠকের সম্ভাবনা ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ৬ ডিসেম্বর ধানমন্ডি ৩২: প্রতিশোধের ক্রোধে উন্মাদ প্রায় শেখ হাসিনা

‘আরাফার দিনের রোজা’ কবে রাখব?

আহমাদুল্লাহ আল জামি
  • আপডেট সময় : ০১:২২:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জুলাই ২০২২
  • / 57
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জিলহজের প্রথম দশ দিন অতি বরকতপূর্ণ। আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মুমিনদের জন্য বিশেষ উপহার।

এই দশ দিনের আমল ও ইবাদত আল্লাহর কাছে বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি প্রিয়। কোরআন ও হাদিসের অসংখ্য বর্ণনায় জিলহজের দশ দিনের আমল-ইবাদতের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

এই দশ দিনের পুরো সময়টাই তো আমলের। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম সব ধরনের আমলই এ সময়ে করতেন। রোজা রাখাও এ সময়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।

হাদিসে ইয়াওমে আরাফা বা ‘আরাফার দিনের রোজা’ রাখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘আরাফার’ দিনে সিয়াম পালনের ফজিলতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন- আমি মনে করি, আরাফার দিনে সিয়াম পালনে আল্লাহতায়ালা বিগত বছরের গুনাহ ও আগামী বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। (সহীহ মুসলিম: হাদিস ১১৬২)

হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিলহজের নবম দিন সিয়াম পালন করতেন এবং সিয়াম পালন করতেন আশুরার দিনে৷  (সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী, মুসনাদে আহমাদ)

বিখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা মুবারকপুরী রহ. বলেছেন- হাফসা (রা.)-এর এ বর্ণনায় নবীজি জিলহজের নবম দিন রোজা রাখতেন; এটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে এবং এই দিনটিই ‘ইয়াওমে আরাফা’ বা আরাফার দিন।  (মিন্নাতুল মুনইম শরহু সহীহ মুসলিম ২/২১১)

উপরোক্ত উভয় হাদিসের বর্ণনায় বিষয়টি স্পষ্ট যে, ‘ইয়াওমে আরাফা’ বা আরাফার দিন হল সব জনপদের নিজ নিজ হিজরি তারিখ হিসেবে ৯ জিলহজ, ৮ জিলহজ নয়! কারণ এই রোজা আরাফা বা আরাফায় অবস্থান সংক্রান্ত আমল নয়।

বরং ৯ তারিখের বিশেষ আমল।  কাজেই আমাদের দেশের হিসেবে ৮ জিলহজ সৌদি আরবে হাজীদের আরাফায় অবস্থান হলেও আমরা রোজা রাখব ৯ তারিখেই।

দুই.

‘ইয়াওমে আরাফা’ হচ্ছে ওই তারিখের (৯ জিলহজের) পারিভাষিক নাম।

যেহেতু হজের প্রধান রোকন ‘আরাফায় অবস্থান’ তারিখ হিসাবে ৯ জিলহজে আদায় করা হয়, তাই এ তারিখেরই নাম পড়ে গেছে ‘ইয়াওমে আরাফা’ বা আরাফার দিন।

এ কারণে যেসব আমল আরাফা বা আরাফায় অবস্থানের সঙ্গে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট নয়; বরং জিলহজের ৯ তারিখের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেগুলোকেও ‘ইয়াওমে আরাফা’ বা আরাফার দিনের আমল হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

তাই ৯ জিলহজের রোজাকে আরাফার দিনের রোজা হিসেবে অভিহিত করা হয়।

তিন.

ইয়াওমে আরাফা বা আরাফার দিন যে ৯ জিলহজ এর আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো- ‘তাকবিরে তাশরিক’ সংক্রান্ত হাদিস।

এটি আরাফা বা হাজীদের আরাফায় অবস্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো বিশেষ আমল নয়। এটি শুরু হয় ৯ জিলহজ ফজর থেকে।

অথচ যে দলিল দ্বারা ৯ তারিখ থেকে তাকবিরে তাশরিক শুরু হওয়া প্রমাণিত তাতেও ‘ইয়াওমে আরাফা’ আরাফার দিন শব্দই আছে।

আলী রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন- নবীজি ইয়াওমে আরাফা বা আরাফার দিন (৯ জিলহজ) ফজরের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক পাঠ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস: ৫৬৭৭)

এখানেও ‘ইয়াওমে আরাফা’ অর্থ ৯ জিলহজ। আর ৮ জিলহজ আরাফার দিনের রোজার প্রবক্তাদের কাছেও তাকবিরে তাশরিক ৯ জিলহজ থেকে শুরু হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত এবং এর স্বপক্ষে দলিলও উপরোক্ত এই হাদিস!

চার.

গোটা মুসলিম উম্মাহর ইজমা আছে যে, ইয়াওমে আরাফার পরের দিনটিই ইয়াওমুন নাহর। হাদিসেও এ ধারাবাহিকতা প্রমাণিত ‌রয়েছে।

এটি প্রমাণ করে, ‘ইয়াওমে আরাফা’ একটি তারিখের নাম। আর তা হচ্ছে ৯ জিলহজ আর ‘ইয়াওমুন নাহর’ও একটি তারিখের নাম। আর তা হচ্ছে ১০ জিলহজ ঈদের দিন।

কারণ আমাদের দেশের হিসেবে ৮ জিলহজকে ইয়াওমে আরাফা মেনে নিলে ইয়াওমে আরাফা ও ইয়াওমুন নাহরের মাঝে আরেকটি দিন স্বীকার করে নেয়া জরুরি। অথচ এটা ইজমার সরাসরি বিরোধী।

সুতরাং বোঝা গেল, এ জাতীয় বিচ্ছিন্ন চিন্তা ও বক্তব্য আরো কিছু ক্ষেত্রেও বিচ্ছিন্নতাকে অনিবার্য করে তুলবে।

কাজেই আমরা বিচ্ছিন্ন কথাকে না মেনে উম্মাহর ঐকমত্য সিদ্ধান্ত মেনে আগামী শুক্রবার ৯ জিলহজের এই ফজিলত পূর্ণ রোজা রাখার নিয়ত করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার এবং আমলের তাওফিক দান করুন আমিন।

লেখক: তরুণ আলেম ও গবেষক

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

‘আরাফার দিনের রোজা’ কবে রাখব?

আপডেট সময় : ০১:২২:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জুলাই ২০২২

জিলহজের প্রথম দশ দিন অতি বরকতপূর্ণ। আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মুমিনদের জন্য বিশেষ উপহার।

এই দশ দিনের আমল ও ইবাদত আল্লাহর কাছে বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি প্রিয়। কোরআন ও হাদিসের অসংখ্য বর্ণনায় জিলহজের দশ দিনের আমল-ইবাদতের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

এই দশ দিনের পুরো সময়টাই তো আমলের। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম সব ধরনের আমলই এ সময়ে করতেন। রোজা রাখাও এ সময়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।

হাদিসে ইয়াওমে আরাফা বা ‘আরাফার দিনের রোজা’ রাখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘আরাফার’ দিনে সিয়াম পালনের ফজিলতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন- আমি মনে করি, আরাফার দিনে সিয়াম পালনে আল্লাহতায়ালা বিগত বছরের গুনাহ ও আগামী বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। (সহীহ মুসলিম: হাদিস ১১৬২)

হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিলহজের নবম দিন সিয়াম পালন করতেন এবং সিয়াম পালন করতেন আশুরার দিনে৷  (সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী, মুসনাদে আহমাদ)

বিখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা মুবারকপুরী রহ. বলেছেন- হাফসা (রা.)-এর এ বর্ণনায় নবীজি জিলহজের নবম দিন রোজা রাখতেন; এটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে এবং এই দিনটিই ‘ইয়াওমে আরাফা’ বা আরাফার দিন।  (মিন্নাতুল মুনইম শরহু সহীহ মুসলিম ২/২১১)

উপরোক্ত উভয় হাদিসের বর্ণনায় বিষয়টি স্পষ্ট যে, ‘ইয়াওমে আরাফা’ বা আরাফার দিন হল সব জনপদের নিজ নিজ হিজরি তারিখ হিসেবে ৯ জিলহজ, ৮ জিলহজ নয়! কারণ এই রোজা আরাফা বা আরাফায় অবস্থান সংক্রান্ত আমল নয়।

বরং ৯ তারিখের বিশেষ আমল।  কাজেই আমাদের দেশের হিসেবে ৮ জিলহজ সৌদি আরবে হাজীদের আরাফায় অবস্থান হলেও আমরা রোজা রাখব ৯ তারিখেই।

দুই.

‘ইয়াওমে আরাফা’ হচ্ছে ওই তারিখের (৯ জিলহজের) পারিভাষিক নাম।

যেহেতু হজের প্রধান রোকন ‘আরাফায় অবস্থান’ তারিখ হিসাবে ৯ জিলহজে আদায় করা হয়, তাই এ তারিখেরই নাম পড়ে গেছে ‘ইয়াওমে আরাফা’ বা আরাফার দিন।

এ কারণে যেসব আমল আরাফা বা আরাফায় অবস্থানের সঙ্গে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট নয়; বরং জিলহজের ৯ তারিখের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেগুলোকেও ‘ইয়াওমে আরাফা’ বা আরাফার দিনের আমল হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

তাই ৯ জিলহজের রোজাকে আরাফার দিনের রোজা হিসেবে অভিহিত করা হয়।

তিন.

ইয়াওমে আরাফা বা আরাফার দিন যে ৯ জিলহজ এর আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো- ‘তাকবিরে তাশরিক’ সংক্রান্ত হাদিস।

এটি আরাফা বা হাজীদের আরাফায় অবস্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো বিশেষ আমল নয়। এটি শুরু হয় ৯ জিলহজ ফজর থেকে।

অথচ যে দলিল দ্বারা ৯ তারিখ থেকে তাকবিরে তাশরিক শুরু হওয়া প্রমাণিত তাতেও ‘ইয়াওমে আরাফা’ আরাফার দিন শব্দই আছে।

আলী রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন- নবীজি ইয়াওমে আরাফা বা আরাফার দিন (৯ জিলহজ) ফজরের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক পাঠ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস: ৫৬৭৭)

এখানেও ‘ইয়াওমে আরাফা’ অর্থ ৯ জিলহজ। আর ৮ জিলহজ আরাফার দিনের রোজার প্রবক্তাদের কাছেও তাকবিরে তাশরিক ৯ জিলহজ থেকে শুরু হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত এবং এর স্বপক্ষে দলিলও উপরোক্ত এই হাদিস!

চার.

গোটা মুসলিম উম্মাহর ইজমা আছে যে, ইয়াওমে আরাফার পরের দিনটিই ইয়াওমুন নাহর। হাদিসেও এ ধারাবাহিকতা প্রমাণিত ‌রয়েছে।

এটি প্রমাণ করে, ‘ইয়াওমে আরাফা’ একটি তারিখের নাম। আর তা হচ্ছে ৯ জিলহজ আর ‘ইয়াওমুন নাহর’ও একটি তারিখের নাম। আর তা হচ্ছে ১০ জিলহজ ঈদের দিন।

কারণ আমাদের দেশের হিসেবে ৮ জিলহজকে ইয়াওমে আরাফা মেনে নিলে ইয়াওমে আরাফা ও ইয়াওমুন নাহরের মাঝে আরেকটি দিন স্বীকার করে নেয়া জরুরি। অথচ এটা ইজমার সরাসরি বিরোধী।

সুতরাং বোঝা গেল, এ জাতীয় বিচ্ছিন্ন চিন্তা ও বক্তব্য আরো কিছু ক্ষেত্রেও বিচ্ছিন্নতাকে অনিবার্য করে তুলবে।

কাজেই আমরা বিচ্ছিন্ন কথাকে না মেনে উম্মাহর ঐকমত্য সিদ্ধান্ত মেনে আগামী শুক্রবার ৯ জিলহজের এই ফজিলত পূর্ণ রোজা রাখার নিয়ত করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার এবং আমলের তাওফিক দান করুন আমিন।

লেখক: তরুণ আলেম ও গবেষক