আশুলিয়ায় ভ্যানে হাত ঝুলে থাকা নিথর দেহের স্তূপঃ বীভৎস, লোমহর্ষক গণহত্যার হোতা যারা
- আপডেট সময় : ০৫:৫২:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪ ১০৭ বার পড়া হয়েছে
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর আশুলিয়ায় বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। গোপনে ধারণ করা ওই ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন, ভিডিওতে দেয়ালে থাকা পোস্টারে যাকে দেখা গেছে, তিনি আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী আবুল হোসেন ভূঁইয়া। সাব্বির আহমেদ নামে আশুলিয়ার একজন সাংবাদিক জানান, ভিডিওচিত্রটি আশুলিয়া থানার সামনে থেকে করা হয়েছে। গণহত্যাকাণ্ডের পারিপার্শ্বিক প্রমাণ মুছে ফেলতে রহস্যজনকভাবে রাতারাতি থানার পাশের সামনের দেয়ালের রং মুছে তা পরিবর্তন করা হয়েছে। পরে এসব মরদেহ একটি ভ্যানে তুলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
* গণহত্যার নির্দেশ দেন কুখ্যাত ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম
জুলাই বিপ্লবের সময় ঢাকা রেঞ্জে (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ ১৩ জেলা) গণহত্যার নির্দেশদাতা কুখ্যাত ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম। লোমহর্ষক ভিডিওটির কেন্দ্র আশুলিয়া থানা তার আয়ত্তাধীন।
ঢাবির এএফ রহমান হলের প্রাক্তন ছাত্রলীগ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ পাঠাগার সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলাম ৫ই মে হেফাজত গণহত্যায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বিপিএম ও ২০১৮ সালের রাতের ইলেকশন বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ পদক পিপিএম পদক লাভ করেন। (জবানবন্দি কমেন্টে)
এসপি থাকা অবস্থায় প্রকাশ্যেই চাঁপাই নবাবগঞ্জ আওয়ামীলীগের একটি উপদল তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করায় এসপিলীগ বলে কুখ্যাতি পান। নির্বাচনের আগে (অক্টোবর’২২) তাকে পুরস্কারস্বরূপ ডিআইজি পদোন্নতি দিয়ে ঢাকা রেঞ্জের (মেট্রোপলিটন বাদে ঢাকা বিভাগ) দায়িত্ব দেওয়া হয়।
৬ আগস্ট সরকার পতনের পর ডিআইজি নুরুল ইসলামকে বরখাস্ত করে সম্প্রতি আবার রাজশাহী পুলিশ একাডেমিতে ডিআইজি পদে সংযুক্ত করা হয়েছে।
* নেতৃত্বপ্রদান করেন এসপি কাফি
সেদিন কার নির্দেশে ডিবির টিম আশুলিয়ায় দায়িত্বে ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা উত্তর (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বিপ্লব বলেন, ‘ঢাকা জেলা পুলিশের এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহিল কাফী স্যারের নির্দেশে সেদিন আমরা আশুলিয়ায় ছিলাম।’ উল্লেখ্য জনাব মোঃ আব্দুল্লাহিল কাফী, পিপিএম (বার), বিপি-৮৫১১১৪২৫২১ আওয়ামীলীগে আমলে ২৯ তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশে যোগদান করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন সময়ে ছাত্রলীগের হল পর্যায়ের নেতা ছিলো আব্দুল্লাহিল কাফি। আব্দুল্লাহিল কাফি চলতেন শেখ হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নাম ভাঙিয়ে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে শাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতি ছিলো আব্দুল্লাহিল কাফির বন্ধু ছিলেন। সে প্রায়ই আব্দুল্লাহিল কাফির সঙ্গে আড্ডা দিতে সাভার আসতেন।
কাফিকে সহযোগিতা করেছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম। শাহিদুল ইসলাম এমআইএসটির মেধাবী শিক্ষার্থী শহীদ শাঈখ আসাবুল ইয়ামিনকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যার নির্দেশে অভিযুক্ত।
* গণহত্যা বাস্তবায়নকারীঃ
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে নির্বিচার গুলিতে গণহত্যার পর ভ্যানে তোলা কয়েকটি মরদেহের স্তূপের পাশে পুলিশকে হাঁটাহাঁটি করতেও দেখা গেছে। তাদের একজনকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনিসহ ভিডিওচিত্রে থাকা পুলিশের সদস্যরা।
অধস্তন কর্মকর্তার ছবির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ঢাকা উত্তর (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বিপ্লব ছবিটি আরাফাতের বলে নিশ্চিত করেন। আরাফাতের গ্ৰামের বাড়ি বরিশালে। প্রায় দুই বছর আগে তিনি ঢাকা জেলার গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেন।
রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বিপ্লব বলেন, ‘এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর আরাফাত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।’ হত্যাকাণ্ডে বা গণহত্যায় অংশ নিতে তাদের অন্তর কাঁপেনি, ভিডিও প্রকাশের পর তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
অবিলম্বে গণহত্যা পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও অংশগ্রহণকারীদেরকে আইনগত প্রক্রিয়ায় কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।