ঢাকা ১২:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড় ড. ইউনূসকে ঈদগাহের মুসল্লিরাঃ আপনি ৫ বছর দায়িত্বে থাকুন, এটাই দেশের মানুষের চাওয়া বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লবের সূচনা! খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঈদের দাওয়াত দিলেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান পররাষ্ট্র নীতিতে ড. ইউনূসের কাছে হেরে গেছেন নরেন্দ্র মোদী! ৩ এপ্রিলও ছুটির প্রস্তাব, মিলতে পারে ৯ দিনের ছুটি বউয়ের টিকটকেই ধরা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ, ‘ক্লু’ ছিল গাড়িতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিনের পরিচয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের পরিচয় শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব প্রমাণ সরকারের কাছে আছে জেলায় জেলায় সরকারি অর্থে ‘আওয়ামী পল্লি’

আসুন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে চিনি?

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৬:২৩:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪
  • / 307
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে আমরা সবাই চিনি। তিনি বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ভ্রাম্যমান লাইব্রেরির উদ্যোক্তা। ১৯৯০ এর দিকে বাংলামটরে অবস্থিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের তরফে পাঠচক্রের আয়োজন হত। বই পড়া প্রতিযোগিতা হত। আমি নিজে তাতে অংশগ্রহন করেছি।

মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রথমে মাস তিনেক বেসরকারি মুন্সিগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ এবং পরে রাজশাহী সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬২ সালে। ৩০ বছর পর স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষকতা জীবনের নানা স্মৃতি নিয়ে ১৯৯৯ সালে একটি বই বের করেন। নাম ‘নিস্ফলা মাঠের কৃষক’। এই বইয়ে এক হোমড়াচোমরা কর্তৃক স্যারকে অপদস্ত করার একটি প্রচেষ্টার বর্ণনা আছে। ঘটনাটি এরকম।

স্যার তখন একটি টেকনিক্যাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। মাধ্যমিকের রেজাল্ট বের হবার পর ঐ ব্যক্তি স্যারের কলেজে এলেন তাঁর ছেলেকে ভর্তির তদবির নিয়ে। সমস্যা হলো তাঁর ছেলে কলেজ কর্তৃক ভর্তির জন্য নির্ধারিত নম্বরের চেয়ে বোর্ড পরীক্ষায় ২ নম্বর কম পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই স্যার রাজি হলেন না। কারন তাকে নিতে গেলে ওরকম আরো ৪০/৫০ জনকে নিতে হবে। অনেক অনুরোধ উপরোধ করে যখন কাজ হলো না তখন লোকটি স্যারকে শাসিয়ে গেলেন কিভাবে ভর্তি না করে থাকা যায় তিনি দেখে নিবেন।

এরপর স্যারকে একে একে ফোন করলেন শিক্ষা বিভাগের ডিপিআই শামসুল হক সাহেব এবং প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার আবদুল হামিদ চৌধুরী। ওনারা কোনোভাবে ভর্তি করানো যায় কিনা সে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু স্যারের ব্যাখ্যা শুনে নিবৃত হন।

পরে ফোন এলো সরাসরি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মফিজউদ্দীন সাহেবের কাছ হতে। এবার কোনো অনুরোধ নয় সরাসরি বলা হলো ভর্তি করানোর জন্য। জবাবে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বিনীতভাবে বলেছিলেন— ❝আপনি বললে অবশ্যই নেব। আপনি ওর দরখাস্তের উপরে আমাকে লিখিত নির্দেশ দিন।❞ শুনে মন্ত্রী মহোদয় চুপ হয়ে গিয়েছিলেন।

ব্যাপারটি ওখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু হলো না। ঐ হোমরাচোমরা আবার এসেছিলেন স্যারের কাছে ওনার পুত্রসহ। রুমে ঢুকেই ধমক দিয়ে বলেছিলেন, ❝জানেন আপনার মতো একশোটা মাষ্টারকে আমি কিনতে পারি…❞

স্যারও ছেড়ে দেননি। বলেছিলেন—❝আপনি কি জানেন আপনার মতো একশোটা অশিক্ষিতকে আমি পড়ালেখা শেখাতে পারি।❞

এরপর তিনি অনেক চেঁচামেচি বকাবকি করেছিলেন স্যারকে। সেদিন স্যার খুব তাৎপর্যপূর্ণ একটি কথা বলেছিলেন লোকটিকে। ঐ কথাটি বলার জন্যই এতো লম্বা কাহিনি বলা। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার লোকটিকে বলেছিলেন — ❝আপনি আমার মতো কতোজন শিক্ষককে কিনতে পারেন জানি না। কিন্তু যে ছেলের জন্য আপনি এতসব করতে চাচ্ছেন তাকে স্বাচ্ছন্দে বাড়িতে ফেরত নিয়ে যেতে পারেন। ওর পড়ালেখা হবে না। যে ছাত্র একবার জানতে পারে তার শিক্ষকেরা তার বাবার টাকায় কেনা চাকর। সে আর মানুষ হয় না।❞

বিষয়টি এরকমই। যে ছাত্রছাত্রীরা জেনে যায় তারা শিক্ষককে কলার ধরে পদত্যাগ করাতে পারে তারা ভবিষ্যতে আর যাই করতে পারুক পড়ালেখা করতে পারবে না। ওটা তাদের হবে না।

না। শিক্ষকদের দলীয় লেজুড়বৃত্তির সমর্থন আমি করি না। সায়ীদ স্যার তাঁর বইতে ১৯৯৯ সালেই লিখেছেন — ❝সেদিন শিক্ষকসত্তার অহংকারে গলা উঁচু করে তাঁকে কথাগুলো বলেছিলাম, কিন্তু আজ পেছনের দিকে তাকিয়ে মনে হয়; আমার নয়, সারাদেশে সবখানে তার দম্ভই আজ জয়ী হয়ে গেছে। জাতির শিক্ষকেরা আজ ছাত্রদের বাবার পয়সায় কেনা ব্যক্তিগত ভৃত্যের কাতারে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন।❞

( ইন্টারনেট থেকে নেওয়া, পরিমার্জিত, ও সংযোজিত।)

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

আসুন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে চিনি?

আপডেট সময় : ০৬:২৩:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে আমরা সবাই চিনি। তিনি বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ভ্রাম্যমান লাইব্রেরির উদ্যোক্তা। ১৯৯০ এর দিকে বাংলামটরে অবস্থিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের তরফে পাঠচক্রের আয়োজন হত। বই পড়া প্রতিযোগিতা হত। আমি নিজে তাতে অংশগ্রহন করেছি।

মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রথমে মাস তিনেক বেসরকারি মুন্সিগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ এবং পরে রাজশাহী সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬২ সালে। ৩০ বছর পর স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষকতা জীবনের নানা স্মৃতি নিয়ে ১৯৯৯ সালে একটি বই বের করেন। নাম ‘নিস্ফলা মাঠের কৃষক’। এই বইয়ে এক হোমড়াচোমরা কর্তৃক স্যারকে অপদস্ত করার একটি প্রচেষ্টার বর্ণনা আছে। ঘটনাটি এরকম।

স্যার তখন একটি টেকনিক্যাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। মাধ্যমিকের রেজাল্ট বের হবার পর ঐ ব্যক্তি স্যারের কলেজে এলেন তাঁর ছেলেকে ভর্তির তদবির নিয়ে। সমস্যা হলো তাঁর ছেলে কলেজ কর্তৃক ভর্তির জন্য নির্ধারিত নম্বরের চেয়ে বোর্ড পরীক্ষায় ২ নম্বর কম পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই স্যার রাজি হলেন না। কারন তাকে নিতে গেলে ওরকম আরো ৪০/৫০ জনকে নিতে হবে। অনেক অনুরোধ উপরোধ করে যখন কাজ হলো না তখন লোকটি স্যারকে শাসিয়ে গেলেন কিভাবে ভর্তি না করে থাকা যায় তিনি দেখে নিবেন।

এরপর স্যারকে একে একে ফোন করলেন শিক্ষা বিভাগের ডিপিআই শামসুল হক সাহেব এবং প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার আবদুল হামিদ চৌধুরী। ওনারা কোনোভাবে ভর্তি করানো যায় কিনা সে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু স্যারের ব্যাখ্যা শুনে নিবৃত হন।

পরে ফোন এলো সরাসরি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মফিজউদ্দীন সাহেবের কাছ হতে। এবার কোনো অনুরোধ নয় সরাসরি বলা হলো ভর্তি করানোর জন্য। জবাবে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বিনীতভাবে বলেছিলেন— ❝আপনি বললে অবশ্যই নেব। আপনি ওর দরখাস্তের উপরে আমাকে লিখিত নির্দেশ দিন।❞ শুনে মন্ত্রী মহোদয় চুপ হয়ে গিয়েছিলেন।

ব্যাপারটি ওখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু হলো না। ঐ হোমরাচোমরা আবার এসেছিলেন স্যারের কাছে ওনার পুত্রসহ। রুমে ঢুকেই ধমক দিয়ে বলেছিলেন, ❝জানেন আপনার মতো একশোটা মাষ্টারকে আমি কিনতে পারি…❞

স্যারও ছেড়ে দেননি। বলেছিলেন—❝আপনি কি জানেন আপনার মতো একশোটা অশিক্ষিতকে আমি পড়ালেখা শেখাতে পারি।❞

এরপর তিনি অনেক চেঁচামেচি বকাবকি করেছিলেন স্যারকে। সেদিন স্যার খুব তাৎপর্যপূর্ণ একটি কথা বলেছিলেন লোকটিকে। ঐ কথাটি বলার জন্যই এতো লম্বা কাহিনি বলা। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার লোকটিকে বলেছিলেন — ❝আপনি আমার মতো কতোজন শিক্ষককে কিনতে পারেন জানি না। কিন্তু যে ছেলের জন্য আপনি এতসব করতে চাচ্ছেন তাকে স্বাচ্ছন্দে বাড়িতে ফেরত নিয়ে যেতে পারেন। ওর পড়ালেখা হবে না। যে ছাত্র একবার জানতে পারে তার শিক্ষকেরা তার বাবার টাকায় কেনা চাকর। সে আর মানুষ হয় না।❞

বিষয়টি এরকমই। যে ছাত্রছাত্রীরা জেনে যায় তারা শিক্ষককে কলার ধরে পদত্যাগ করাতে পারে তারা ভবিষ্যতে আর যাই করতে পারুক পড়ালেখা করতে পারবে না। ওটা তাদের হবে না।

না। শিক্ষকদের দলীয় লেজুড়বৃত্তির সমর্থন আমি করি না। সায়ীদ স্যার তাঁর বইতে ১৯৯৯ সালেই লিখেছেন — ❝সেদিন শিক্ষকসত্তার অহংকারে গলা উঁচু করে তাঁকে কথাগুলো বলেছিলাম, কিন্তু আজ পেছনের দিকে তাকিয়ে মনে হয়; আমার নয়, সারাদেশে সবখানে তার দম্ভই আজ জয়ী হয়ে গেছে। জাতির শিক্ষকেরা আজ ছাত্রদের বাবার পয়সায় কেনা ব্যক্তিগত ভৃত্যের কাতারে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন।❞

( ইন্টারনেট থেকে নেওয়া, পরিমার্জিত, ও সংযোজিত।)