ঢাকা ১২:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড় ড. ইউনূসকে ঈদগাহের মুসল্লিরাঃ আপনি ৫ বছর দায়িত্বে থাকুন, এটাই দেশের মানুষের চাওয়া বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লবের সূচনা! খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঈদের দাওয়াত দিলেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান পররাষ্ট্র নীতিতে ড. ইউনূসের কাছে হেরে গেছেন নরেন্দ্র মোদী! ৩ এপ্রিলও ছুটির প্রস্তাব, মিলতে পারে ৯ দিনের ছুটি বউয়ের টিকটকেই ধরা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ, ‘ক্লু’ ছিল গাড়িতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিনের পরিচয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের পরিচয় শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব প্রমাণ সরকারের কাছে আছে জেলায় জেলায় সরকারি অর্থে ‘আওয়ামী পল্লি’

ইতিহাসের সাক্ষী: সাদ্দাম হোসেনের বিচার

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৯:১৩:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪
  • / 110
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে ন’মাসব্যাপি বিচারের পর মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়েছিলেন ইরাকের ক্ষমতাচ্যুত শাসক সাদ্দাম হোসেন।

ইরাকে ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানের সময় ক্ষমতাচুত হন সাদ্দাম হোসেন, আর তিনি মার্কিন সৈন্যদের হাতে ধরা পড়েছিলেন তারও প্রায় আট মাস পর।

বাগদাদের এক আদালতে অনুষ্ঠিত হয় তার বিচার । এই বিচারের সাদ্দাম হোসেনকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য যে আইনী দল দেয়া হয়েছিল – তার অংশ ছিলেন আমেরিকান র‍্যামজি ক্লার্ক।

র‍্যামজি ক্লার্ক বলতেন, তিনি সাদ্দাম হোসেনের মধ্যে কোন মৃত্যুভয় দেখতে পান নি। সাদ্দাম হোসেন মনে করতেন, এই বিচারের একটাই মাত্র পরিণতি হতে পারে – আর তা হলো, তিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন এবং তার মৃত্যুদন্ড হবে।

র‍্যামজি ক্লার্কের সাথে সাদ্দাম হোসেনএর প্রথম পরিচয় হয়োছিল ইরাকে ১৯৯০ সালে।

সেটা ছিল ইরাকের কুয়েত দখলকে কেন্দ্র করে যে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ হয়েছিল – তার ঠিক আগে। তার পর থেকেই দুজনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এর পর ২০০৩ সাল্রে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানের পর সে বছর ডিসেম্বর মাসে যখন সাদ্দাম হোসেন মার্কিন বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেন এবং তার বিচার শুরু হলো – তখন সাবেক মার্কিন এটর্নি জেনারেল মি. ক্লার্ককে অনুরোধ করা হলো আসামীপক্ষের আইনজীবী হতে।

সাদ্দাম হোসেন: ধরা পড়ার পর
ছবির ক্যাপশান,সাদ্দাম হোসেন: ধরা পড়ার পর

সাদ্দামের আইনজীবী হবার ঝুঁকি কম ছিল না। তাদের বেশ কয়বার হুমকি দেয়া হয়েছিল এবং দুজনকে হত্যাও করা হয়।

এই মামলা শোনার জন্য একজন নিরপেক্ষ বিচারক পাওয়াটাও ছিল কঠিন ব্যাপার।

সাদ্দাম হোসেনের বিচার হয় শিয়া-প্রধান শহর দুজাইলের এক হত্যাকান্ডের জন্য – যাতে নিহত হয়েছিলেন ১৪৮ জন লোক। ১৯৮২ সালে সাদ্দাম হোসেনকে হত্যার এক ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর এই ঘটনা ঘটেছিল।

এই মামলা চলার সময় প্রায়ই আদালতকক্ষে গোলমাল হতো। সাদ্দাম হোসেন অনেক সময় শুনানী চলার সময় ক্রুদ্ধভাবে বিভিন্ন মন্তব্য করে বাধার সৃষ্টি করতেন।

তবে সা্ক্ষ্যপ্রমাণ শোনা সম্পন্ন হয়েছিল, এবং এই নয় মাসের বিচার প্রক্রিয়ার সময় র‍্যামজি ক্লার্ক তার মক্কেলকে ভালোভাবেই জানার ও বোঝার সুযোগ পেয়েছিলেন।

ক্লার্ক বলছিলেন, “সাদ্দাম হোসেনের আচার আচরণ সবসময়ই ছিল মার্জিত। তিনি আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন লোক ছিলেন। একজন চিন্তাশীল ব্যক্তি ছিলেন। তার সময়কার পৃথিবী এবং ইতিহাস সম্পর্কে তার মূল্যায়ন ছিল এই রকম যে – শক্তি প্রয়োগের মধ্যে দিয়েই চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হওয়া যায়। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলেও শক্তি প্রয়োগ করতে হয়।”

র‍্যামজি ক্লাকের আরো মনে আছে, সাদ্দাম হোসেন সব সময়ই একটি জিনিস তার সাথে রাখতেন, সেটা হচ্ছে একটি কোরান।

যখন তিনি আদালতকক্ষে ঢুকতেন তখন তা তার সঙ্গে থাকতো, আর মামলা চলার সময় থাকতো তার সামনে ডেস্কের ওপর। আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাবার সময় তিনি আবার তা সাথে করে নিয়ে যেতেন।

পুরো বিচারের সময়টা জুড়ে র‍্যামজি ক্লার্ক যখন যেভাবে চেয়েছেন – সাদ্দাম হোসেনের সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। দন্ডাদেশ ঘোষণার আগে পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই তাদের দেখা হতো।

saddam
ছবির ক্যাপশান,দুই ছেলে উদে আর কুসে-র সাথে সাদ্দাম

তবে দন্ডাদেশ ঘোষণার সময় তাকে আদালতে থাকতে দেয়া হয় নি। অবশ্য দন্ডাদেশ নিয়ে বিস্মিত হবার কিছু ছিল না। ২০০৬ সালের ৫ই নভেম্বর সাদ্দাম হোসেনকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, এবং ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

তাকে আপীলের অধিকার দেয়া হয়েছিল কিন্তু সে আপীল প্রত্যাখ্যাত হয়, মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে। মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয় ২০০৬ সালের ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ।

পিছন ফিরে এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখন র‍্যামজি ক্লার্কের মনে হয়, যেসব স্বৈরশাসক বা রাষ্ট্রনায়ক তাদের দেশকে হিংসার পথে নিয়ে গেছেন, তাদের ক্ষেত্রে এরকমটাই হয়েছে।

তবে তিনি মনে করেন, এখানে বিচার প্রক্রিয়ার অপব্যবহার হয়েছিল।

“তখনকার ক্ষমতাসীনদের কাছে এটি ছাড়া আর কোন পরিণামই গ্রহণযোগ্য হতো না। গোটা ব্যাপারটাকেই এমন একটা চেহারা দেবার চেষ্টা ছিল – যেন মনে হয় যে সবকিছু ন্যায়সংগতভাবেই হয়েছে, অথচ আসলে তা হবার উপায় ছিল না।”

র‍্যামজি ক্লার্কের সাথে কথা বলেছেন বিবিসির ফারহানা হায়দার। সেই সাক্ষাৎকার অবলম্বনে এবারের ইতিহাসের সাক্ষী পরিবেশন করেছেন পুলক গুপ্ত।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ইতিহাসের সাক্ষী: সাদ্দাম হোসেনের বিচার

আপডেট সময় : ০৯:১৩:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪

২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে ন’মাসব্যাপি বিচারের পর মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়েছিলেন ইরাকের ক্ষমতাচ্যুত শাসক সাদ্দাম হোসেন।

ইরাকে ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানের সময় ক্ষমতাচুত হন সাদ্দাম হোসেন, আর তিনি মার্কিন সৈন্যদের হাতে ধরা পড়েছিলেন তারও প্রায় আট মাস পর।

বাগদাদের এক আদালতে অনুষ্ঠিত হয় তার বিচার । এই বিচারের সাদ্দাম হোসেনকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য যে আইনী দল দেয়া হয়েছিল – তার অংশ ছিলেন আমেরিকান র‍্যামজি ক্লার্ক।

র‍্যামজি ক্লার্ক বলতেন, তিনি সাদ্দাম হোসেনের মধ্যে কোন মৃত্যুভয় দেখতে পান নি। সাদ্দাম হোসেন মনে করতেন, এই বিচারের একটাই মাত্র পরিণতি হতে পারে – আর তা হলো, তিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন এবং তার মৃত্যুদন্ড হবে।

র‍্যামজি ক্লার্কের সাথে সাদ্দাম হোসেনএর প্রথম পরিচয় হয়োছিল ইরাকে ১৯৯০ সালে।

সেটা ছিল ইরাকের কুয়েত দখলকে কেন্দ্র করে যে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ হয়েছিল – তার ঠিক আগে। তার পর থেকেই দুজনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এর পর ২০০৩ সাল্রে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানের পর সে বছর ডিসেম্বর মাসে যখন সাদ্দাম হোসেন মার্কিন বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেন এবং তার বিচার শুরু হলো – তখন সাবেক মার্কিন এটর্নি জেনারেল মি. ক্লার্ককে অনুরোধ করা হলো আসামীপক্ষের আইনজীবী হতে।

সাদ্দাম হোসেন: ধরা পড়ার পর
ছবির ক্যাপশান,সাদ্দাম হোসেন: ধরা পড়ার পর

সাদ্দামের আইনজীবী হবার ঝুঁকি কম ছিল না। তাদের বেশ কয়বার হুমকি দেয়া হয়েছিল এবং দুজনকে হত্যাও করা হয়।

এই মামলা শোনার জন্য একজন নিরপেক্ষ বিচারক পাওয়াটাও ছিল কঠিন ব্যাপার।

সাদ্দাম হোসেনের বিচার হয় শিয়া-প্রধান শহর দুজাইলের এক হত্যাকান্ডের জন্য – যাতে নিহত হয়েছিলেন ১৪৮ জন লোক। ১৯৮২ সালে সাদ্দাম হোসেনকে হত্যার এক ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর এই ঘটনা ঘটেছিল।

এই মামলা চলার সময় প্রায়ই আদালতকক্ষে গোলমাল হতো। সাদ্দাম হোসেন অনেক সময় শুনানী চলার সময় ক্রুদ্ধভাবে বিভিন্ন মন্তব্য করে বাধার সৃষ্টি করতেন।

তবে সা্ক্ষ্যপ্রমাণ শোনা সম্পন্ন হয়েছিল, এবং এই নয় মাসের বিচার প্রক্রিয়ার সময় র‍্যামজি ক্লার্ক তার মক্কেলকে ভালোভাবেই জানার ও বোঝার সুযোগ পেয়েছিলেন।

ক্লার্ক বলছিলেন, “সাদ্দাম হোসেনের আচার আচরণ সবসময়ই ছিল মার্জিত। তিনি আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন লোক ছিলেন। একজন চিন্তাশীল ব্যক্তি ছিলেন। তার সময়কার পৃথিবী এবং ইতিহাস সম্পর্কে তার মূল্যায়ন ছিল এই রকম যে – শক্তি প্রয়োগের মধ্যে দিয়েই চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হওয়া যায়। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলেও শক্তি প্রয়োগ করতে হয়।”

র‍্যামজি ক্লাকের আরো মনে আছে, সাদ্দাম হোসেন সব সময়ই একটি জিনিস তার সাথে রাখতেন, সেটা হচ্ছে একটি কোরান।

যখন তিনি আদালতকক্ষে ঢুকতেন তখন তা তার সঙ্গে থাকতো, আর মামলা চলার সময় থাকতো তার সামনে ডেস্কের ওপর। আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাবার সময় তিনি আবার তা সাথে করে নিয়ে যেতেন।

পুরো বিচারের সময়টা জুড়ে র‍্যামজি ক্লার্ক যখন যেভাবে চেয়েছেন – সাদ্দাম হোসেনের সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। দন্ডাদেশ ঘোষণার আগে পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই তাদের দেখা হতো।

saddam
ছবির ক্যাপশান,দুই ছেলে উদে আর কুসে-র সাথে সাদ্দাম

তবে দন্ডাদেশ ঘোষণার সময় তাকে আদালতে থাকতে দেয়া হয় নি। অবশ্য দন্ডাদেশ নিয়ে বিস্মিত হবার কিছু ছিল না। ২০০৬ সালের ৫ই নভেম্বর সাদ্দাম হোসেনকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, এবং ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

তাকে আপীলের অধিকার দেয়া হয়েছিল কিন্তু সে আপীল প্রত্যাখ্যাত হয়, মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে। মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয় ২০০৬ সালের ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ।

পিছন ফিরে এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখন র‍্যামজি ক্লার্কের মনে হয়, যেসব স্বৈরশাসক বা রাষ্ট্রনায়ক তাদের দেশকে হিংসার পথে নিয়ে গেছেন, তাদের ক্ষেত্রে এরকমটাই হয়েছে।

তবে তিনি মনে করেন, এখানে বিচার প্রক্রিয়ার অপব্যবহার হয়েছিল।

“তখনকার ক্ষমতাসীনদের কাছে এটি ছাড়া আর কোন পরিণামই গ্রহণযোগ্য হতো না। গোটা ব্যাপারটাকেই এমন একটা চেহারা দেবার চেষ্টা ছিল – যেন মনে হয় যে সবকিছু ন্যায়সংগতভাবেই হয়েছে, অথচ আসলে তা হবার উপায় ছিল না।”

র‍্যামজি ক্লার্কের সাথে কথা বলেছেন বিবিসির ফারহানা হায়দার। সেই সাক্ষাৎকার অবলম্বনে এবারের ইতিহাসের সাক্ষী পরিবেশন করেছেন পুলক গুপ্ত।