ঢাকা ০৩:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড় ড. ইউনূসকে ঈদগাহের মুসল্লিরাঃ আপনি ৫ বছর দায়িত্বে থাকুন, এটাই দেশের মানুষের চাওয়া বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লবের সূচনা! খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঈদের দাওয়াত দিলেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান পররাষ্ট্র নীতিতে ড. ইউনূসের কাছে হেরে গেছেন নরেন্দ্র মোদী! ৩ এপ্রিলও ছুটির প্রস্তাব, মিলতে পারে ৯ দিনের ছুটি বউয়ের টিকটকেই ধরা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ, ‘ক্লু’ ছিল গাড়িতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিনের পরিচয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের পরিচয় শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব প্রমাণ সরকারের কাছে আছে জেলায় জেলায় সরকারি অর্থে ‘আওয়ামী পল্লি’

একজন কোটা শহীদ মারুফের গল্প

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৭:২৮:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
  • / 173
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে ঢাকার মেরুল বাড্ডা ব্রাক ইউনিভার্সিটির পাশে ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ছয়টায় পুলিশের গুলিতে মারুফ হোসাইন নিহত হন। তার গ্রামের বাড়ি মেহেন্দিগঞ্জের কাজিরহাট থানার ভাসানচর ইউনিয়নের হেসামদ্দি গ্রামে। মারুফ হোসাইন কাজিরহাট একতা কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। একটি দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে মারুফ জীবন দিয়েছে। মারুফ প্রকৃত দেশপ্রেমিক।

‘আমার ছেলের ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে চাকরি করবে। দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে। আমার এখন আশা-ভরসা কোনো কিছু নেই। আমার বুকটা হাহাকার, আমার ছেলে নাই, এ কথা আমি কখনোই ভাবতেই পারছি না।

আমার কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। আমার অনেক সাধনার ছেলে ছিল। মারুফকে যারা হত্যা করেছে তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।’ছেলেকে হারিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ মারুফ মিয়ার (১৫) মা মোর্শেদা।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মারুফের মা এখন পাগলপ্রায়।

শহীদ মারুফের মা মোর্শেদা বলেন, গত ৪ আগস্ট বিকেল ৩টায় মারুফ মিছিল থেকে বাড়িতে আসে। তখন মারুফকে বলছি বাবা আর তুমি মিছিলে যেও না। পরের দিন ৫ আগস্ট বেলা ৩টায় একসাথে বসে খাওয়ার সময় শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে এ খবর আসা মাত্রই বিজয় মিছিলের উদ্দেশ্যে তাড়াহুড়ো করে কাপড় পড়ে আমার ছেলে বের হয়ে যায়।

আমি পিছনে পিছনে গেট পর্যন্ত যাই। প্রথমে মারুফকে না করেছি, মিছিলে না যেতে।  তখন ওর বন্ধুরা ও মারুফ বলে আজকে কিছু হবে না। কোনো ভয় নেই আজ বিজয় মিছিল। পরে বিজয় মিছিলে যেতে দেই।
তখন আমি মারুফকে বলি বাবা তাড়াতাড়ি চলে এসো। পরে মারুফ যাওয়ার সময় শুধু বলে বিজয় মিছিল শেষ করেই আমি চলে আসব মা। বিজয় মিছিল শেষে মারুফ ফিরে এলো ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে। মারুফ ছিল আমাদের ভবিষ্যত। বড় হয়ে চাকরি করবে পরিবারের হাল ধরবে সে আশা ছিল। ছেলে-মেয়ের জন্য ওর বাবা বিদেশ গেছে তিন মাস হলো। ছেলে পড়াশোনা করবে, চাকরি করবে, ওর বাবার পাশে দাঁড়াবে। সেই আশাই ছিল আমাদের। কিন্তু এখন সব আশা ও স্বপ্ন ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। কাকে নিয়ে আমি বাঁচবো। কাকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখবো। 

জানা গেছে, টাঙ্গাইল পৌর শহরের সাবালিয়া স্টেশন রোড এলাকার মনজু মিয়া ও মোর্শেদার একমাত্র ছেলে মারুফ মিয়া (১৫)। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পৌর শহরের আমঘাট মোড় এলাকায় শিক্ষার্থী মারুফ মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

তাদের রয়েছে ছোট একটি টিনসেড ঘর। এক কক্ষে তার মা ও বোন থাকতো, আরেকটি কক্ষে মারুফ। বাড়িতে এখন তার মা ও বোন বসবাস করেন।

পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মারুফের বাবা মনজু মিয়া ওয়ালটন কম্পানিতে চাকরি করতেন। সে টাকা দিয়ে দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালাতো। তারপর যে টাকা বাঁচতো, তা জমা করে রাখতো। সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ওয়ালটনের চাকরি ছেড়ে গত জুন মাসে প্রবাসে পাড়ি জমান মনজু মিয়া। মাথায় ঋণের বোঝা থাকায় এই সঙ্কটময় মুহূর্তে দেশেও আসতে পারছেন না শহিদ মারুফের বাবা। মারুফকে মানুষের মতো মানুষ করতে তার বাবা-মা শহরে আসেন। ১১ বছর আগে জেলার বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের জশিহাটি গ্রাম থেকে টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়া স্টেশন রোড এলাকায় জমি কিনে ঘর তোলেন। এরপর থেকেই তারা এখানেই বসবাস করে আসছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরে সাবালিয়া স্টেশন রোড এলাকায় মারুফের বাড়ি। তারা এক ভাই ও এক বোন। মারুফ বড় ছিল। ছোট বোন সানজিদা ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। মারুফ শহরের রেজিস্ট্রি পাড়া শাহীন স্কুলে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তারপর শহরের সৃষ্টি স্কুলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর নবম শ্রেণিতে আবার শাহীন স্কুলে ভর্তি হন। মারুফ ওই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

মারুফের সহপাঠী শিক্ষার্থী তামান্না ইসলাম তরি বলেন, মারুফ অনেক মেধাবী ছাত্র ও ভালো ছেলে ছিল। মারুফকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে আমরা তা মেনে নিতে পারছি না। মারুফ মারা যাওয়াতে তার পরিবারের সবাই ভেঙে পড়েছে। সরকারের কাছে দাবি ওর বাবা-মা ও বোন যেন সুন্দরভাবে চলতে পারে সে জন্য পরিবারের কাউকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া হোক। মারুফকে যারা হত্যা করেছে সঠিক তদন্ত করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তাওহীদা ইসলাম স্বপ্নীল জানিয়েছেন, মারুফ আমার এলাকার ছেলে। খুবই সাহসী ছিল। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে খুবই কষ্টের মধ্যে আছে তার পরিবার। সরকারের প্রতি অনুরোধ মারুফের পরিবারের দিকে একটু নজর দেওয়ার জন্য।

মারুফের মা আরো বলেন, সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায়, আমরা মেয়েকে মিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে পারবো। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। আমার ছেলে দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। মারুফকে যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়। সকল মানুষের মুখে যেন আমার মারুফের নাম থাকে। মারুফের স্মৃতি ধরতে রাখতে আমাদের বাড়ির দিকে যে রাস্তা এসেছে সে রাস্তা যেন শহীদ মারুফ রোড নামকরণ করা হয় এটা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে অংশ নেয় মারুফ। এ সময় টাঙ্গাইল পৌর শহরের আমঘাট মোড় এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ৬ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে শহরের কেন্দ্রীয় ঈদ গাঁ মাঠে জানাজা শেষে তাকে গ্রামের বাড়ি বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের জশিহাটি গ্রামে দাফন করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

একজন কোটা শহীদ মারুফের গল্প

আপডেট সময় : ০৭:২৮:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

 বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে ঢাকার মেরুল বাড্ডা ব্রাক ইউনিভার্সিটির পাশে ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ছয়টায় পুলিশের গুলিতে মারুফ হোসাইন নিহত হন। তার গ্রামের বাড়ি মেহেন্দিগঞ্জের কাজিরহাট থানার ভাসানচর ইউনিয়নের হেসামদ্দি গ্রামে। মারুফ হোসাইন কাজিরহাট একতা কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। একটি দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে মারুফ জীবন দিয়েছে। মারুফ প্রকৃত দেশপ্রেমিক।

‘আমার ছেলের ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে চাকরি করবে। দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে। আমার এখন আশা-ভরসা কোনো কিছু নেই। আমার বুকটা হাহাকার, আমার ছেলে নাই, এ কথা আমি কখনোই ভাবতেই পারছি না।

আমার কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। আমার অনেক সাধনার ছেলে ছিল। মারুফকে যারা হত্যা করেছে তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।’ছেলেকে হারিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ মারুফ মিয়ার (১৫) মা মোর্শেদা।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মারুফের মা এখন পাগলপ্রায়।

শহীদ মারুফের মা মোর্শেদা বলেন, গত ৪ আগস্ট বিকেল ৩টায় মারুফ মিছিল থেকে বাড়িতে আসে। তখন মারুফকে বলছি বাবা আর তুমি মিছিলে যেও না। পরের দিন ৫ আগস্ট বেলা ৩টায় একসাথে বসে খাওয়ার সময় শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে এ খবর আসা মাত্রই বিজয় মিছিলের উদ্দেশ্যে তাড়াহুড়ো করে কাপড় পড়ে আমার ছেলে বের হয়ে যায়।

আমি পিছনে পিছনে গেট পর্যন্ত যাই। প্রথমে মারুফকে না করেছি, মিছিলে না যেতে।  তখন ওর বন্ধুরা ও মারুফ বলে আজকে কিছু হবে না। কোনো ভয় নেই আজ বিজয় মিছিল। পরে বিজয় মিছিলে যেতে দেই।
তখন আমি মারুফকে বলি বাবা তাড়াতাড়ি চলে এসো। পরে মারুফ যাওয়ার সময় শুধু বলে বিজয় মিছিল শেষ করেই আমি চলে আসব মা। বিজয় মিছিল শেষে মারুফ ফিরে এলো ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে। মারুফ ছিল আমাদের ভবিষ্যত। বড় হয়ে চাকরি করবে পরিবারের হাল ধরবে সে আশা ছিল। ছেলে-মেয়ের জন্য ওর বাবা বিদেশ গেছে তিন মাস হলো। ছেলে পড়াশোনা করবে, চাকরি করবে, ওর বাবার পাশে দাঁড়াবে। সেই আশাই ছিল আমাদের। কিন্তু এখন সব আশা ও স্বপ্ন ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। কাকে নিয়ে আমি বাঁচবো। কাকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখবো। 

জানা গেছে, টাঙ্গাইল পৌর শহরের সাবালিয়া স্টেশন রোড এলাকার মনজু মিয়া ও মোর্শেদার একমাত্র ছেলে মারুফ মিয়া (১৫)। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পৌর শহরের আমঘাট মোড় এলাকায় শিক্ষার্থী মারুফ মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

তাদের রয়েছে ছোট একটি টিনসেড ঘর। এক কক্ষে তার মা ও বোন থাকতো, আরেকটি কক্ষে মারুফ। বাড়িতে এখন তার মা ও বোন বসবাস করেন।

পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মারুফের বাবা মনজু মিয়া ওয়ালটন কম্পানিতে চাকরি করতেন। সে টাকা দিয়ে দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালাতো। তারপর যে টাকা বাঁচতো, তা জমা করে রাখতো। সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ওয়ালটনের চাকরি ছেড়ে গত জুন মাসে প্রবাসে পাড়ি জমান মনজু মিয়া। মাথায় ঋণের বোঝা থাকায় এই সঙ্কটময় মুহূর্তে দেশেও আসতে পারছেন না শহিদ মারুফের বাবা। মারুফকে মানুষের মতো মানুষ করতে তার বাবা-মা শহরে আসেন। ১১ বছর আগে জেলার বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের জশিহাটি গ্রাম থেকে টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়া স্টেশন রোড এলাকায় জমি কিনে ঘর তোলেন। এরপর থেকেই তারা এখানেই বসবাস করে আসছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরে সাবালিয়া স্টেশন রোড এলাকায় মারুফের বাড়ি। তারা এক ভাই ও এক বোন। মারুফ বড় ছিল। ছোট বোন সানজিদা ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। মারুফ শহরের রেজিস্ট্রি পাড়া শাহীন স্কুলে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তারপর শহরের সৃষ্টি স্কুলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর নবম শ্রেণিতে আবার শাহীন স্কুলে ভর্তি হন। মারুফ ওই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

মারুফের সহপাঠী শিক্ষার্থী তামান্না ইসলাম তরি বলেন, মারুফ অনেক মেধাবী ছাত্র ও ভালো ছেলে ছিল। মারুফকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে আমরা তা মেনে নিতে পারছি না। মারুফ মারা যাওয়াতে তার পরিবারের সবাই ভেঙে পড়েছে। সরকারের কাছে দাবি ওর বাবা-মা ও বোন যেন সুন্দরভাবে চলতে পারে সে জন্য পরিবারের কাউকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া হোক। মারুফকে যারা হত্যা করেছে সঠিক তদন্ত করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তাওহীদা ইসলাম স্বপ্নীল জানিয়েছেন, মারুফ আমার এলাকার ছেলে। খুবই সাহসী ছিল। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে খুবই কষ্টের মধ্যে আছে তার পরিবার। সরকারের প্রতি অনুরোধ মারুফের পরিবারের দিকে একটু নজর দেওয়ার জন্য।

মারুফের মা আরো বলেন, সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায়, আমরা মেয়েকে মিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে পারবো। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। আমার ছেলে দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। মারুফকে যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়। সকল মানুষের মুখে যেন আমার মারুফের নাম থাকে। মারুফের স্মৃতি ধরতে রাখতে আমাদের বাড়ির দিকে যে রাস্তা এসেছে সে রাস্তা যেন শহীদ মারুফ রোড নামকরণ করা হয় এটা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে অংশ নেয় মারুফ। এ সময় টাঙ্গাইল পৌর শহরের আমঘাট মোড় এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ৬ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে শহরের কেন্দ্রীয় ঈদ গাঁ মাঠে জানাজা শেষে তাকে গ্রামের বাড়ি বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের জশিহাটি গ্রামে দাফন করা হয়।