‘একটি মানুষের ক্ষমতার লোভ…’ ইউনূসের কীর্তির ‘পর্দাফাঁস’ শেখ হাসিনার?

- আপডেট সময় : ১১:৫০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 74
শেখ হাসিনার ভাষণের আগেই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হামলা শুরু।।।।
বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের উদ্দেশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে বক্তব্যে রাখবেন শেখ হাসিনা, আগে থেকেই প্রচার করেছিল আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লিগ। তা শুনেই পাল্টা হুঁশিয়ারিতে ছেয়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া, সেখানে হুমকি দেওয়া হয়েছিল শেখ হাসিনা ভাষণ দিলে বুধবার রাতে ধানমন্ডি-৩২ অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ করা হবে। বুধবার রাত ৯টায় শেখ হাসিনা ভাষণ দেওয়ার আগেই ধানমণ্ডিতে শেখ মুজিবর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে জমায়েত করেছে বাংলাদেশে জনতার একাংশ। শুরু হয়ে যায় ভাঙচুর। সেই সময়েই লাইভে আসেন শেখ হাসিনা। এ দিন তাঁর ভাষণে ছত্রে ছত্রে মুহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিঁধেছেন তিনি। সরাসরি আক্রমণ শানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনূসের বিরুদ্ধেও। গত বছর ৫ অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তার ৬ মাস পূর্তি উপলক্ষে ছিল এ দিনের ভাষণ। বৃহস্পতিবার আওয়ামি লিগের সোশ্যাল মিডিয়ার পেজ থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে।
শুরু হয়েছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে, তার পর কার্যত দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। হামলা হয়েছিল গণভবনেও, বোনকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পর থেকে বাংলাদেশে কার্যত লাগাতার অশান্তি, সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের ছবি সামনে এসেছে। নারী স্বাধীনতায় বেনজির হস্তক্ষেপের ছবিও সামনে এসেছে। বুধবার রাতের ভাষণে সব প্রসঙ্গই ঘুরেফিরে এসেছে শেখ হাসিনার ভাষণে।
বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার শিক্ষকদের লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠেছে। শেখ হাসিনার অভিযোগ, ‘কোটা আন্দোলনের নামে শিক্ষকদের অপমান করা শুরু হয়েছে।’ পুলিশের উপর হামলারও তীব্র নিন্দা করেছেন শেখ হাসিনা। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পরে বাংলাদেশের বাণিজ্য, কল-কারখানা, চাষ- সবকিছুর অবস্থাই কার্যত বেহাল। নিজের আমলে কী কী করেছেন, সেই উন্নয়নের ফিরিস্তিও শোনা গিয়েছে হাসিনার মুখে। বাংলাদেশে নারীদের অসম্মান নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁর তোপ, ‘মেয়েদের খেলার অধিকার নেই কেন? মায়ের পেটেই সন্তান জন্ম নেয়, সেই মায়ের জাতিকেই অপমান করা কেন?’ আর এই সব কিছুর মূলেই মুহম্মদ ইউনূসকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। সরাসরি ব্যক্তি আক্রমণের পথেও হাঁটতে দেখা গিয়েছে শেখ হাসিনাকে। বুধবার রাতের ভাষণে তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাঙ্কে ম্যানেজার ছিলেন মুহম্মদ ইউনূস। ৬০০০ টাকা বেতনের চাকরি ছিল। ৯৬ সালে আমি ক্ষমতায় এসে ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে গ্রামীণ ব্যাঙ্ককে দাঁড় করিয়ে দিই। উনি গ্রামীণ ফোনের ব্যবসার জন্যও বারেবারে আমার কাছে ধর্না দিয়েছিলেন। কথা ছিল ওই ব্যবসার লাভের টাকা গ্রামীণ ব্যাঙ্কে আসবে। সেই টাকা আসেনি।’ নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত মুহম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। সেই ব্যবসায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণ আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত ছিল না। ইউনূস সাহেবের অনুরোধে আমি সম্মেলনে উপস্থিত হই। স্পেনের রানি ছিলেন, হিলারি ক্লিন্টন উপস্থিত ছিলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উপস্থিত ছিলাম বলে ওঁরা এসেছিলেন। যে উপকার করে, তাঁর মাথায় আঘাত করেছেন।’ বাংলাদেশ এখন যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তার জন্য সরাসরি ইউনূসকে দায়ী করে হাসিনার তোপ, ‘একটি মানুষের ক্ষমতার লোভ বাংলাদেশকে জ্বালিয়ে ছাড়খাড় করে দিচ্ছে।’
নিজের আমলের কাজের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজের তুলনাও টেনেছেন শেখ হাসিনা। তাঁর আমলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তকমা পেয়েছিল। বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ, শিক্ষা-স্বাস্থ্য এবং পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছিলেন বলে জানিয়ে হাসিনার অভিযোগ, ‘এখন তাঁর দেশে কৃষক চাষের জন্য সেচটুকুও করতে পারছে না।’ ইউনূসের সঙ্গে নিজের সম্পদের তুলনাও টানেন বাংলাদেশ থেকে উৎখাত হওয়া প্রধানমন্ত্রী। ইউনূসকে নিশানা করে হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনও দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সাহায্য করেনি। অথচ বিল ক্লিন্টনের ফাউন্ডেশনে মোটা টাকা দিয়েছে। তাঁর আরও তোপ, ‘জনগণের ভাত দিতে পারে না। পুলিশের পোশাক বদলায়, পাকিস্তানিদের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক করে। চাষি-শ্রমিক কাজ পায় না, নিজের অর্থসম্পদ ঠিকই আছে।’ হাসিনার অভিযোগ, লাশের উপর পা দিয়ে অসাংবিধানিক ভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন ইউনূস।
তিনি এ বারও ঈশ্বরের দয়ায় বেঁচে গিয়েছেন বলে আগেও বলেছিলেন শেখ হাসিনা। সেই প্রসঙ্গ ফের টেনে এনে এ দিন তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট আমরা ২ বোন বেঁচে গিয়েছিলাম। এটাই আমাদের অপরাধ। বাবা-মা-ভাই সবাইকে হারিয়েছিলাম। সেই শোক বুকে নিয়ে ফিরে এসেছিলাম বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য এসেছিলাম, সেটাই করেছি, নিজের জন্য তো কিছু করিনি। আমার-রেহানার ছেলেমেয়েরা নিজেদের যোগ্যতায় ডিগ্রি নিয়েছে। তাঁদের জন্য তো কিছু করিনি…আল্লা যখন বাঁচিয়ে রেখেছেন, নিশ্চয় কিছু করার জন্যই বাঁচিয়ে রেখেছেন।’
এ দিন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হামলার ঘটনার কথাও শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। এ দিন শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে স্মৃতিটুকু নিয়ে ২ বোন বেঁচেছিলাম। সেই স্মৃতিটুকুও ভেঙে ফেলা হচ্ছে। একটা দালান ভেঙে ফেলতে পারে, ইতিহাস মুছতে পারে না। ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে জাতির পিতা স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। এই বাড়ির উপর কেন রাগ?’
পড়ুয়াদের প্রতি বার্তা:
এ দিন তাঁর ভাষণে ঘুরে-ফিরে এসেছে পড়ুয়াদের প্রসঙ্গ। হাসিনা উৎখাতের আন্দোলন পড়ুয়াদের হাতে শুরু হলেও গোটা ঘটনায় ‘কোমলমতি’ পড়ুয়াদের দোষ দিতে চান না বলেই জানিয়েছেন তিনি। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হও, নিজের পায়ে দাঁড়াও। বাবা-মা, শিক্ষকদের সম্মান করো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জঙ্গিদের হাতে তুলে দিও না। আমাদের তরুণ সমাজ পারে পরিবর্তন আনতে। নিজের দেশকে ভালোবাসো। যাঁরা ইতিহাস মুছে ফেলতে চায় তাঁদের ধিক্কার জানাও।’
হাসিনা-বিরোধী মঞ্চ থেকে বারবার শেখ হাসিনাকে উৎখাতের ঘটনাকে বিপ্লব বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেই দাবির প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনার কটাক্ষ, ‘এই হত্যালীলা, ধ্বংসযজ্ঞ বিপ্লব? বিপ্লবের অর্থ বোঝে? অপরাধীর বিচার একদিন না একদিন হবেই।’ তাঁর বার্তা, ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।
© eisamay 2025
X
X