ঢাকা ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
কিভাবে বাড়ছে বাংলাদেশের আয়তন? পাল্টে যাচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব, আনসারের পোশাক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে পদত্যাগ করছেন পুতুল? চারটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত হবে নতুন বাংলাদেশ! সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক : প্রেসসচিব অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন: সাংবাদিকদের নামে মামলা নতুন অডিও ফাঁস : কাঁদতে কাঁদতে যা বললেন শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব শেখ হাসিনার বিচার করা: শফিকুল আলম পুতুলকে ডব্লিউএইচও থেকে অপসারণে অনলাইনে স্বাক্ষর জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে জনসাধারণের অভিমত চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শাপলা চত্বরে হেফাজত দমন : অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট বেগম জিয়াকে হিংসা করতেন হাসিনা ভারতের নাগরিকত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনা? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাত্রদের ঘোষণাপত্র দিতে বারণের কারণ জানালেন ড. ইউনূস  ঐক্যবদ্ধভাবে দিতে না পারলে জুলাই ঘোষণাপত্রের দরকারই নাই রেস্তোরাঁ, ওষুধ ও মোবাইল রিচার্জে বাড়ছে না ভ্যাট ধর্মনিরপেক্ষতাসহ রাষ্ট্র পরিচালনার ৩ মূলনীতি বাদ পদত্যাগপত্রে যা বললেন টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক আমার মেয়ের খুনি কে, আমি কি বিচার পাব না: প্রশ্ন তিন্নির বাবার

এ বছর শীত কম হবে, নাকি বেশি হবে?

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৮:০২:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 63
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

“আজই প্রথম মনে হলো যে শীতকাল আসছে, জ্যাকেট পরে বাসা থেকে বের হইছি,” বলছিলেন ফারিহা জাহান, যিনি বর্তমানে ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তার মতে, ডিসেম্বরের প্রায় দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষ হতে চললেও এতদিন ঢাকায় সেভাবে শীতের প্রকোপ টের পাওয়া যায়নি।

শুধু মিজ জাহান নয়, আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার অফিসগামী মানুষদের পোশাকের দিকে লক্ষ্য করলেও বোঝা যাচ্ছিলো যে শহরে এবার শীত নেমেছে।

তবে ঢাকার বাইরে, বিশেষ করে রংপুর বা রাজশাহী বিভাগে আরও আগে থেকে শীতের আমেজ চলছে। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি বিভাগে তাপমাত্রা ১২-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।

ঘটনাচক্রে কাজের কারণে আজই ফরিদপুরে গিয়েছেন মিজ জাহান। যাত্রাপথে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “ঢাকায় আর কী ঠান্ডা! ঢাকার বাইরে অনেক শীত, অনেক!”

বিজ্ঞাপন

আগামী তিন দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ ভোর ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল প্রায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ফরিদপুরে তা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঢাকাসহ সারাদেশেই এ বছর বেশ ভালো মাত্রার শীত পড়বে বলে মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আজকে যে তাপমাত্রা অনুভব করা হচ্ছে, সেই অনুভূতি (শীত) সামনে আরও বাড়বে।”

এখন শৈত্যপ্রবাহ না হলেও তাপমাত্রা আরও নামতে পারে এবং ডিসেম্বরের শেষ দিকে একটি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

এদিকে আজ প্রায় বেলা তিনটা অবধি ঢাকার আকাশে সূর্যের সেভাবে কোনও আনাগোনা দেখা যায়নি। এরকমটা যে এখন থেকে চলবে, তা উল্লেখ করে মিজ সুলতানা আরও বলেন, “বাতাসে এখন আর্দ্রতা বেশি থাকায় কুয়াশা কাটছে না। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা কেটে যাবে।”

আর এক্ষেত্রে এটা তো অবধারিতই যে “সূর্য না উঠলে শীত শীত অনুভূতি বেশি কাজ করবে।”

কেমন হবে এ বছরের শীতকাল?
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই তিন মাসের দীর্ঘমেয়াদি এক পূর্বাভাস দেয় আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মমিনুল ইসলামের স্বাক্ষরিত সেই পূর্বাভাসে বলা হয়, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, এই তিন মাসে মোট ১২টি শৈত্যপ্রবাহ ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

উল্লেখ করা হয়েছে, এ সময় সামগ্রিকভাবে দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকবে।

এই সময়ের মাঝে অন্তত তিনটি, সর্বোচ্চ আটটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল, উত্তরপূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে তিন-চারটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে।

তাপমাত্রা যদি আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তবে সেটাকে ধরা হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।

তাপমাত্রা এরচেয়ে কমে ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এবং, চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়।

আর, তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটি হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।

তবে শৈত্যপ্রবাহ হিসাবে ধরতে হলে এই তাপমাত্রার স্থায়িত্বকাল অন্তত তিনদিন হতে হবে। অর্থাৎ, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেও তাকে কমপক্ষে তিনদিন থাকতে হবে।

বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন।

শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা নিয়ে ‘সংশয়’
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর যদিও ১২টি শৈত্যপ্রবাহের কথা বলেছে। কিন্তু অধিদপ্তরের সাবেক আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল মান্নান এই সংখ্যাটি নিয়ে খানিকটা সংশয় প্রকাশ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১২টি শৈত্যপ্রবাহের বিষয়টি একটু বেশি বলা হলো কি না, আমি ঠিক জানি না। তবে যে কোনও শৈত্যপ্রবাহ যখন হয়, তখন সাধারণত তার স্থায়িত্ব হয় তিন থেকে পাঁচ দিন।”

কখনও কখনও এই স্থায়ীত্ব আরও বেশি হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “তিন থেকে পাঁচ দিনের হিসাবে জানুয়ারি মাসে তিন থেকে চারটি শৈত্যপ্রবাহ হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে দুইটি হয়। আর ডিসেম্বরের অর্ধেক চলে গেছে। ডিসেম্বরে যদি একটি শৈত্যপ্রবাহ হয়, তাহলেও হয় সাতটি।”

সেই হিসাবে এ বছরের শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা সর্বোচ্চ আটটি হতে পারে। “এর বেশি কিন্তু হবে না। তবে তিন দিনের হিসাব ধরলে সেটি ভিন্ন,” যোগ করেন এই আবহাওয়াবিদ।

তিনি বলছিলেন, ডিসেম্বর বা ফেব্রুয়ারির তুলনায় সাধারণত জানুয়ারির শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘসময় ধরে হয়।

তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আরেক আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশেও আগেও ওই সংখ্যক শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে। বিশেষ করে জানুয়ারিতে এটা বেশি হয়।

শিলাবৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে মি. মান্নান বলেন, “ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে বাংলাদেশে সাধারণত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। সেই কারণে পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে পূবালী বায়ু মিলে মেঘের উচ্চতা বেড়ে যায়। মেঘের উচ্চতা ১২ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে শিলাবৃষ্টির মতো বিষয় হতে পারে।”

যে কারণে এবার শীতের অনুভূতি বেশি হবে
এদিকে আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেছেন যে এবছর শীতের অনুভূতি গতবারের চেয়ে বেশি হবে। কারণ হিসাবে তিনি বলেন– কুয়াশা এবং অতি বৃষ্টি।

তিনি বলেন, “বাতাসে অনেক ধুলাবালি থাকায় কুয়াশাটা বেশি হবে এবং শীতও বেশি লাগবে।”

সেইসাথে, এ বছর অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি ছিল। বেশি শীতের এটাও কারণ।

এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, “প্রতিবছর শীত একরকমভাবে আসে না।”

“শীতের প্রথমদিকে যখন শৈত্যপ্রবাহ থাকে না, তখন আমাদের এই অঞ্চলের নিম্ন স্তরে যে জলীয়বাষ্প থাকে, তা ভোরবেলা যখন তাপমাত্রা কম থাকে, তখন ঘনীভূত হয়ে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতি তৈরি করে।”

“আজকেও সমস্র বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

“ওই জলীয়বাষ্প মাঝরাতের পর থেকে ঘনীভূত হতে থাকে এবং ভোর ৩টার পর তা সমগ্র আকাশ ঢেকে ফেলে। দিন গড়িয়ে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত থাকে সেই কুয়াশা এবং বিকাল ৩টা নাগাদ বিলীন হয়।”

মূলত, বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরের জলীয়বাষ্পর উপস্থিতির কারণেই কুয়াশার উৎপত্তি। এই ধরনের কুয়াশা বায়ুতাড়িত হয়ে স্থানান্তরিত হয় না।

“বাতাস থাকলে এই কুয়াশা অন্যদিকে চলে যেত। এটি শীতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ডিসেম্বর মাসে এ ধরনের অবস্থা আমরা দেখি। এবছরে আজই প্রথম এরকম হলো,” তিনি যোগ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

এ বছর শীত কম হবে, নাকি বেশি হবে?

আপডেট সময় : ০৮:০২:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

 

“আজই প্রথম মনে হলো যে শীতকাল আসছে, জ্যাকেট পরে বাসা থেকে বের হইছি,” বলছিলেন ফারিহা জাহান, যিনি বর্তমানে ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তার মতে, ডিসেম্বরের প্রায় দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষ হতে চললেও এতদিন ঢাকায় সেভাবে শীতের প্রকোপ টের পাওয়া যায়নি।

শুধু মিজ জাহান নয়, আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার অফিসগামী মানুষদের পোশাকের দিকে লক্ষ্য করলেও বোঝা যাচ্ছিলো যে শহরে এবার শীত নেমেছে।

তবে ঢাকার বাইরে, বিশেষ করে রংপুর বা রাজশাহী বিভাগে আরও আগে থেকে শীতের আমেজ চলছে। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি বিভাগে তাপমাত্রা ১২-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।

ঘটনাচক্রে কাজের কারণে আজই ফরিদপুরে গিয়েছেন মিজ জাহান। যাত্রাপথে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “ঢাকায় আর কী ঠান্ডা! ঢাকার বাইরে অনেক শীত, অনেক!”

বিজ্ঞাপন

আগামী তিন দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ ভোর ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল প্রায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ফরিদপুরে তা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঢাকাসহ সারাদেশেই এ বছর বেশ ভালো মাত্রার শীত পড়বে বলে মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আজকে যে তাপমাত্রা অনুভব করা হচ্ছে, সেই অনুভূতি (শীত) সামনে আরও বাড়বে।”

এখন শৈত্যপ্রবাহ না হলেও তাপমাত্রা আরও নামতে পারে এবং ডিসেম্বরের শেষ দিকে একটি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

এদিকে আজ প্রায় বেলা তিনটা অবধি ঢাকার আকাশে সূর্যের সেভাবে কোনও আনাগোনা দেখা যায়নি। এরকমটা যে এখন থেকে চলবে, তা উল্লেখ করে মিজ সুলতানা আরও বলেন, “বাতাসে এখন আর্দ্রতা বেশি থাকায় কুয়াশা কাটছে না। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা কেটে যাবে।”

আর এক্ষেত্রে এটা তো অবধারিতই যে “সূর্য না উঠলে শীত শীত অনুভূতি বেশি কাজ করবে।”

কেমন হবে এ বছরের শীতকাল?
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই তিন মাসের দীর্ঘমেয়াদি এক পূর্বাভাস দেয় আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মমিনুল ইসলামের স্বাক্ষরিত সেই পূর্বাভাসে বলা হয়, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, এই তিন মাসে মোট ১২টি শৈত্যপ্রবাহ ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

উল্লেখ করা হয়েছে, এ সময় সামগ্রিকভাবে দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকবে।

এই সময়ের মাঝে অন্তত তিনটি, সর্বোচ্চ আটটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল, উত্তরপূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে তিন-চারটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে।

তাপমাত্রা যদি আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তবে সেটাকে ধরা হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।

তাপমাত্রা এরচেয়ে কমে ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এবং, চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়।

আর, তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটি হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।

তবে শৈত্যপ্রবাহ হিসাবে ধরতে হলে এই তাপমাত্রার স্থায়িত্বকাল অন্তত তিনদিন হতে হবে। অর্থাৎ, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেও তাকে কমপক্ষে তিনদিন থাকতে হবে।

বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন।

শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা নিয়ে ‘সংশয়’
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর যদিও ১২টি শৈত্যপ্রবাহের কথা বলেছে। কিন্তু অধিদপ্তরের সাবেক আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল মান্নান এই সংখ্যাটি নিয়ে খানিকটা সংশয় প্রকাশ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১২টি শৈত্যপ্রবাহের বিষয়টি একটু বেশি বলা হলো কি না, আমি ঠিক জানি না। তবে যে কোনও শৈত্যপ্রবাহ যখন হয়, তখন সাধারণত তার স্থায়িত্ব হয় তিন থেকে পাঁচ দিন।”

কখনও কখনও এই স্থায়ীত্ব আরও বেশি হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “তিন থেকে পাঁচ দিনের হিসাবে জানুয়ারি মাসে তিন থেকে চারটি শৈত্যপ্রবাহ হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে দুইটি হয়। আর ডিসেম্বরের অর্ধেক চলে গেছে। ডিসেম্বরে যদি একটি শৈত্যপ্রবাহ হয়, তাহলেও হয় সাতটি।”

সেই হিসাবে এ বছরের শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা সর্বোচ্চ আটটি হতে পারে। “এর বেশি কিন্তু হবে না। তবে তিন দিনের হিসাব ধরলে সেটি ভিন্ন,” যোগ করেন এই আবহাওয়াবিদ।

তিনি বলছিলেন, ডিসেম্বর বা ফেব্রুয়ারির তুলনায় সাধারণত জানুয়ারির শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘসময় ধরে হয়।

তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আরেক আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশেও আগেও ওই সংখ্যক শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে। বিশেষ করে জানুয়ারিতে এটা বেশি হয়।

শিলাবৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে মি. মান্নান বলেন, “ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে বাংলাদেশে সাধারণত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। সেই কারণে পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে পূবালী বায়ু মিলে মেঘের উচ্চতা বেড়ে যায়। মেঘের উচ্চতা ১২ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে শিলাবৃষ্টির মতো বিষয় হতে পারে।”

যে কারণে এবার শীতের অনুভূতি বেশি হবে
এদিকে আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেছেন যে এবছর শীতের অনুভূতি গতবারের চেয়ে বেশি হবে। কারণ হিসাবে তিনি বলেন– কুয়াশা এবং অতি বৃষ্টি।

তিনি বলেন, “বাতাসে অনেক ধুলাবালি থাকায় কুয়াশাটা বেশি হবে এবং শীতও বেশি লাগবে।”

সেইসাথে, এ বছর অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি ছিল। বেশি শীতের এটাও কারণ।

এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, “প্রতিবছর শীত একরকমভাবে আসে না।”

“শীতের প্রথমদিকে যখন শৈত্যপ্রবাহ থাকে না, তখন আমাদের এই অঞ্চলের নিম্ন স্তরে যে জলীয়বাষ্প থাকে, তা ভোরবেলা যখন তাপমাত্রা কম থাকে, তখন ঘনীভূত হয়ে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতি তৈরি করে।”

“আজকেও সমস্র বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

“ওই জলীয়বাষ্প মাঝরাতের পর থেকে ঘনীভূত হতে থাকে এবং ভোর ৩টার পর তা সমগ্র আকাশ ঢেকে ফেলে। দিন গড়িয়ে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত থাকে সেই কুয়াশা এবং বিকাল ৩টা নাগাদ বিলীন হয়।”

মূলত, বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরের জলীয়বাষ্পর উপস্থিতির কারণেই কুয়াশার উৎপত্তি। এই ধরনের কুয়াশা বায়ুতাড়িত হয়ে স্থানান্তরিত হয় না।

“বাতাস থাকলে এই কুয়াশা অন্যদিকে চলে যেত। এটি শীতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ডিসেম্বর মাসে এ ধরনের অবস্থা আমরা দেখি। এবছরে আজই প্রথম এরকম হলো,” তিনি যোগ করেন।