ঢাকা ১১:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠন আমি স্যামসাং ব্যবহার করি, স্ক্রিনশট গেছে আইফোনের : জনপ্রশাসন সচিব উন্নয়নের ভ্রান্ত ধারণা: ঋণে ডুবে থাকা দেশ টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় নাহিদ ইসলাম আমার টাকা-পয়সার প্রতি লোভ নেই, ৫ কোটি হলেই চলবে এক দিনেই হাওয়া ৮ হাজার কোটি টাকার বাজার মূলধন অবশেষে দেখা মিলল আসাদুজ্জামান কামালের ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ কারাগারে কেমন আছেন ‘ভিআইপি’ বন্দীরা একটি ফোনকল যেভাবে বদলে দিয়েছে ড. ইউনূসের জীবনের গতিপথ ড. ইউনুসের Three Zeros থিয়োরি বর্তমান উপদেষ্টাদের সঙ্গে নতুন চার-পাঁচজন মুখ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকটি জাতীয় দিবস বাতিল করতে পারে সরকার সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ গায়েব: উপদেষ্টা “প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস: বাংলার গর্ব, বৈশ্বিক সম্প্রীতির প্রতীক” খেলোয়াড় সাকিবের নিরাপত্তা আছে, ফ্যাসিস্ট সাকিবের ক্ষেত্রে অবান্তর: ক্রীড়া উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সম্মেলন থেকে কী অর্জন করলেন? জাতিসংঘে তিন-শুন্যের ধারণা দিলেন ড. ইউনুস যন্ত্রণার নাম ব্যাটারি রিকশা তরুণ সমাজের অফুরান শক্তি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে— ড. ইউনূস

ওভারিয়ান সিস্ট কী, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা

ডা. আফরোজা খানম রুনো
  • আপডেট সময় : ০৫:২৬:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪২ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

নারীরা ওভারিয়ান সিস্ট বা ডিম্বাশয়ের সিস্ট জটিলতায় ভুগতে পারেন। ওভারি বা ডিম্বাশয়ে পানিপূর্ণ থলেকে সিস্ট বলা হয়। যে কোনো বয়সী নারী এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

নারীরা অনেক ধরনের সিস্টে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। যেমন– ফাংশনাল সিস্ট, পলিসিস্টিক (পিসিওএস) সিস্ট, অ্যান্ডমেট্রিওটিক সিস্ট, ডারময়েড সিস্ট এবং সিস্ট এডোনোমা। তবে একাধিক সিস্টকে একত্রে পলিসিস্ট বলা হয়। ওভারি বা ডিম্বাশয় ফিমেল রিপ্রোডাক্টিভ অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ছোট ছোট সিস্ট পুঁতির মালার মতো ওভারি বা ডিম্বাশয়কে ঘিরে রাখে। এই সিস্টের জন্য ওভারির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

ওভারিয়ান সিস্ট রোগের কারণ

অনিয়মিত সেক্স লাইফ, হরমোনের সমস্যা, অল্পবয়সে ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার কারণে সিস্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে এ সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া দেরিতে বিয়ে, দেরিতে সন্তান নেওয়ার কারণেও এ সমস্যা হতে পারে।

কিছু সিস্ট আছে, যা ক্যান্সারিয়াস (ম্যালিগন্যান্ট) হয়। সাধারণ কিছু লক্ষণের মাধ্যমে এ রোগ প্রকাশ পায়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে যদি এ রোগের চিকিৎসা শুরু করা যায়, তবে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব। তবে তার আগে আমাদের সিস্ট হওয়ার লক্ষণগুলো জানতে হবে।

এই রোগের লক্ষণ-

এই রোগের কিছু লক্ষণ রয়েছে। অনিয়মিত ঋতুস্রাব, মাসিকের সময় মারাত্মক ব্যথা, তলপেট ফুলে যাওয়া, ব্যথা প্রস্রাবে সমস্যা, বমিভাব, সিস্টের ইনফেকশন, তলপেটে ব্যথার সঙ্গে হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি পায়। তবে যদি ক্যান্সার দেখা দেয় তা হলে ওজন কমে যাবে।

ওভারিতে সিস্ট দেখা দিলে ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া ওভারিয়ান সিস্ট হলে পেট ফাঁপা, বুক জ্বালাপোড়াও হয়ে থাকে। এই রোগ হলে পিঠে চাপ পড়ে এবং তা থেকে ব্যথা সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ এ কারণে থাইয়ে ব্যথা অনুভব করে থাকেন।

ওভারিয়ান সিস্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার ৭টি ঘরোয়া উপায়!

ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের সিস্ট হল ক্যানসার বিহীন পিণ্ড যা ডিম্বাশয়ে বৃদ্ধি পায়। অনেক সিস্টে কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না, তবে অন্যগুলি বেদনাদায়ক হতে পারে বা একজন মহিলার পিরিয়ডকে ভারী করে তুলতে পারে। কিন্তু ভয়ের কিছু নেই! ওভারিয়ান সিস্ট থেকে মুক্তি পেতে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনই হচ্ছে সর্বোত্তম উপায়।

সময় যতোটা এগিয়ে যাচ্ছে ততোই মানুষের নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে নতুন নতুন রোগ। “সিস্ট” এমনই একাটি রোগের নাম। একবিংশ শতাব্দিতে সিস্ট রোগটির সাথে কম বেশি সবারই পরিচিতি রয়েছে। সিস্টের নাম শুনলেই অধিকাংশের মনে ভয় দানা বাঁধে। তবে সিস্ট মানেই যে খারাপ কিছু কিংবা অত্যাধিক ভয়ের তা কিন্তু নয়।

সিস্ট  বলতে মূলত পানি ভর্তি থলিকে বোঝায়। এই থলিতে পরিষ্কার পানি, ঘোলা পানি, নোংরা বা সংক্রমিত পানি, রক্ত বা হলদে রঙের পানি থাকতে পারে। আবার পুরনো রক্ত বা খয়েরি রঙের পদার্থও থাকতে পারে । সাধারণ পানি থাকলে ঐ সিস্ট গুলিকে সিম্পল সিস্ট বলা হয়। অন্যদিকে রক্ত থাকলে সে ধরণের সিস্টকে হেমারেজিক সিস্ট বলে।

সহজ ভাবে বলতে গেলে, সিস্ট হলো ক্যাপসুল বা থলির মতো অস্থায়ী অঙ্গানু। সেবেসিয়াস গ্রন্থির বাঁধার কারণেই মূলত সিস্টের জন্ম। তাছাড়া শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে গেলেও সিস্ট হয়। সিস্ট বিভিন্ন স্থানে ও বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। কিডনি, লিভার, অগ্নাশয় সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিস্ট হয়ে থাকে।

বর্তমান সময়ে সিস্ট জাতীয় রোগের মধ্যে ওভারিয়ান সিস্ট তথা ডিম্বাশয়ের সিস্টে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। ডিম্বাশয় সিস্ট বলায় বোঝাই যাচ্ছে এটা মূলত নারীদের হয়ে থাকে। আসুন ওভারিয়ান সিস্ট থেকে মুক্তির উপায় জানার সাগে আমরা ওভারিয়ান সিস্ট নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নেই।

ওভারিয়ান সিস্ট কি?

ওভারিয়ান সিস্ট হলো ওভারিতে থাকা পানি পূর্ণ থলে যা ওভারিতে সৃষ্টি হয়। ওভারিয়ান সিস্টকে অনেকে ক্যানসারের কারণ হিসেবে মনে করেন। ওভ্যুলেশনে তৈরী হওয়া এ সকল সিস্ট কোনো ক্রমেই ক্যান্সার নয়। এই সিস্ট গুলোকে ফাংশনাল সিস্ট বলা হয়ে থাকে।

নারীর ওভারি কিংবা ডিম্বাশয় সিস্ট সাধারণত জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি যে কোনো সময় হতে পারে। সাধারণত ৫০ বছরের মধ্যেই বেশি হয়ে থাকে ওভারিয়ান সিস্ট। ওভারিয়ান সিস্ট সৃষ্টি হওয়ার তিন থেকে দশ মাসের মধ্যেই নিজ থেকে ছোট হয়ে যায়।

ওভারিয়ান সিস্ট কেন হয়?

ওভারি বা ডিম্বাশয়ের প্রধাণ কাজ হলো ডিম্বাণু তৈরী করা। প্রতিমাসেই ওভারিতে ডিম্বানু তৈরী হয়। ওভ্যুলেশনের সময় ওভারির ভেতর সিস্টের মতো দেখতে ফলিকলের সৃষ্টি হয়। ডিম্বাণু নিঃসরণের পর পরিণত ফলিকল গুলো নষ্ট হয়ে যায়। ওভারিতে এই প্রক্রিয়াটি ঠিকঠাক ভাবে না চললে ওভারিয়ান সিস্ট দেখা দেয়।

যদিও এ ধরণের সিস্ট নন ফাংশনাল তবে সন্তান ধারণে সক্ষম এমন চার থেকে দশ শতাংশ মহিলা একটু জটিল প্রকৃতির সমস্যা “পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিস্ট” এ ভোগেন।

ওভারিয়ান সিস্টের প্রকারভেদ

ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ে বিভিন্ন ধরণের সিস্ট হয়ে থাকে। সেগুলো হলো-

১) পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম 

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম বা পিসিওস হলো ওভারিতে একাধিক সিস্ট থাকাকে বোঝায়। ওভারিতে যে ছোট ফলিকল থাকে সেগুলো পূর্ণাঙ্গ না হলে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিস্ট হতে পারে।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম এর প্রথম সমস্যা হলো মাসিক অনিয়মিত হওয়া। বিশেষ করে অবিবাহিত মেয়েদের এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অনিয়মিত বলতে তিন-চার মাস পর পর হওয়াকে বোঝায়। কিংবা মাসিক অনেক কম হয় কিংবা কয়েক মাস পর অনেক বেশি পরিমাণে হয়।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিস্ট হলে শরীরে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন-

  • চিকন থেকে মোটা কিংবা হঠাৎ মোটা থেকে শুকিয়ে যাওয়া
  • কিংবা হঠাৎ দেহের রং পরিবর্তন হওয়া এই সিন্ড্রোমের উল্লেখযোগ্য সমস্যা
  • তাছাড়া পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম হলে শরীরে অবাঞ্ছিত লোমের দেখা মেলে

২) ফাংশনাল সিস্ট

সাধারণত বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রে ফাংশনাল সিস্ট হয়ে থাকে। ওভারি থেকে ডিম না ফুটলে অথবা ডিম ফোটার পরও ফলিকল গুলো চুপসে না গেলে ফাংশনাল সিস্ট সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরণের সিস্টে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।

৩) এন্ডিওমেট্রিওটিক বা চকলেট সিস্ট

ওভারিতে থাকা টিস্যুগুলো যদি জরায়ু ছাড়া পেটের অন্য কোথাও হয়ে থাকে তখন এন্ডিওমেট্রিওটিক সিস্ট সৃস্টি হয়। এ ধরণের ওভারিয়ান সিস্ট হলে মাসিক অনিয়মিত হয় এবং বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। এই সিস্টকে চকলেট সিস্টও বলা হয়ে থাকে।

৪) ডার্ময়েট সিস্ট কি?

ওভারির ডার্ময়েট সিস্টের ভেতর চামড়া, চুল, দাঁত থাকতে পারে। এই সিস্ট ভয়ের জন্ম দেয়। কারণ এই ধরণের সিস্ট হলে ক্যান্সার হতে পারে।

ডার্ময়েট সিস্ট হলে ওভারিতে তীব্র ব্যথা হয়। ওভারি পেচিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। এ ধরণের সিস্ট হলে বিনাইন ক্যন্সার হতে পারে।

৫) সিস্ট এডোনোমা

ওভারিতে  এক ধরণের তরল জাতীয় পদার্থ জমাা বেঁধে এ ধরণের ওভারিয়ান সিস্ট সৃষ্টি হয়। এই সিস্টে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।

ওভারিয়ান সিস্টের চিকিৎসা

ওভারিয়ান সিস্ট শনাক্ত করতে ডাক্তাররা সাধারণত আল্ট্রাস্নোগ্রাফি করিয়ে থাকেন। ওভারিয়ান সিস্টের প্রকারভেদের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পদ্ধতিতেও ভিন্নতা রয়েছে ।

কিছু কিছু ওভারিয়ান সিস্ট ওষুধের মাধ্যমেই নিরাময় করা যায়। তবে কিছু কিছু সিস্টের ক্ষেত্রে টিউমার মার্কার দেখে ফেলে দিতে হয় কিংবা ওভারি সহ ফেলে দিতে হয়।

বর্তমান ল্যাপ্রোসকপির মাধ্যমে খুব সহজে পেট ফুটো করে সিস্ট ফেলে দেয়া যায় এবং মাত্র সাত দিনের মধ্যেই সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আসা যায়।

কখন অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?

যে সমস্ত মহিলারা সন্দেহ করেন যে তাদের ডিম্বাশয়ের সিস্ট রয়েছে তাদের কোনও ঘরোয়া চিকিৎসা চেষ্টা করার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত, কারণ সিস্টের কারণ নির্ণয় করা অপরিহার্য।

একটি ডিম্বাশয়ের সিস্ট দ্বারা সৃষ্ট গুরুতর ব্যথা নির্দেশ করতে পারে যে এটি ফেটে গেছে অথবা ডিম্বাশয় বা ফ্যালোপিয়ান টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি ফেটে যাওয়া সিস্ট একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সির মোট অবস্থা হতে পারে।

ডিম্বাশয়ের সিস্ট আছে কিনা তা অনেকেই নিশ্চিত হতে পারে না। কারণ সিস্টগুলির অনেকেই কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করে না এবং চিকিৎসা ছাড়াই সেরে যেতে পারে। যাইহোক, বড় সিস্টের কারণে পেলভিক অংশে ব্যথা, পেট ভারী বা ফোলাভাব হতে পারে।

যদি নিম্নোক্ত লক্ষণগুলি অনুভত হয় তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত-

  • গুরুতর পেলভিক বা তলপেটে ব্যথা
  • পেটে হঠাৎ ব্যথা করা
  • জ্বর সহ ব্যথা
  • বমি সহকারে ব্যথা
  • যদি হঠাত করে শক বা আঘাতের লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন আঁটসাঁট ত্বক, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, হালকা মাথা ব্যথা বা দুর্বলতা

ওভারিয়ান সিস্ট মোকাবেলায় ঘরোয়া উপায়

ঘরোয়া চিকিৎসা ওভারিয়ান সিস্টকে সম্পূর্ণ অদৃশ্য করে দিতে পারে না। কিন্তু ঘরোয়া চিকিৎসার লক্ষ্য হল কোনো লক্ষণ বা উপসর্গের প্রাথমিক চিকিৎসা করা এবং ব্যথা উপশম করা। আসুন জেনে নেই সে পদ্ধতিগুলি-

১) তাপ বা সেক দিতে হবে

তাপ রক্ত প্রবাহ বাড়ায়, ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। একটি হিটিং প্যাড বা গরম পানির বোতল তোয়ালে জড়িয়ে পেটে বা পিঠের নিচের দিকে প্রায় ২০ মিনিটের জন্য লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। এটি দিনে কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করা নিরাপদ, যতক্ষণ না প্যাডটি ত্বক পোড়াতে যথেষ্ট গরম না হয়। হিটিং প্যাড নিয়ে ঘুমানো যাবে না।

২) ম্যাসেজ বা মালিশ করা

ডিম্বাশয়ের সিস্টের ব্যথা আশেপাশের পেশীগুলিকে টান দিতে পারে। পিরিয়ডের সময় এই টান বিশেষ করে অস্বস্তিকর হতে পারে। নীচের পিঠ, উরু, নিতম্ব এবং পেট ম্যাসাজ করা টানটান পেশী আলগা করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৩) ব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং

ব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং ওভারিয়ান সিস্টের সাথে যুক্ত ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। এটি পেশী টান নিরাময়েও সাহায্য করতে পারে। কিছু মহিলা দৌড়ানোর মতো তীব্র ব্যায়াম থেকে স্বস্তি পান, অন্যরা মৃদু স্ট্রেচিং এবং যোগব্যায়াম পছন্দ করেন।

৪) রিলাক্সেশন বা চিত্তবিনোদন

স্ট্রেস এবং উদ্বেগ ব্যথা আরও খারাপ করতে পারে। রিলাক্সেশন কৌশল, যেমন ধ্যান, যোগব্যায়াম, এবং গভীর শ্বাস উদ্বেগ উপশম করতে এবং ব্যথার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই কৌশলগুলি একজন ব্যক্তিকে দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা পরিচালনা করতে এবং সাধারণ স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করতে পারে।

৫) ওজন কমানো

যদি একজন মহিলার ওজন বেশি হয়, তবে ওজন হ্রাস করা তার জন্য খুবই উপকারী একটি পদ্ধতি হতে পারে। কেননা এতে তার শরীরের হরমোনগুলিকে আরও ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ হয়, সিস্টের বিকাশকে রোধ করে এবং ব্যথা ও ক্লান্তির লক্ষণগুলিকে ভালোভাবে উপশম করতে পারে।। কিন্তু পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমে ওজন কমানো কঠিন। তবে হতাশ না হওয়ার চেষ্টা করতে হবে, কারণ এতে সময় লাগতে পারে।

৬) খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমে আক্রান্ত অনেক মহিলা ইনসুলিন প্রতিরোধী। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে, গর্ভাবস্থাকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।

খাদ্যতালিকায় ব্যাপক পরিবর্তন এতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু গবেষণা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমে এর জন্য একটি নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা নির্দেশ করে না। বরং একজন মহিলাকে তার জন্য সবচেয়ে ভাল খাদ্যতালিকাটি খুঁজে বের করার জন্য ট্রায়াল এবং এরর (Trial & Error) প্রক্রিয়া  ব্যবহার করতে হতে পারে।

  • পিসিওসএসে আক্রান্ত মহিলাদের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকতে পারে। ফলস্বরূপ, ইনসুলিন প্রতিরোধে অবদান রাখে এমন খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট এবং অত্যন্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন:
    • সাদা রুটি
    • সাদা আলু
    • সাদা ময়দা দিয়ে তৈরি কিছু
    • পেস্ট্রি, ডেজার্ট, মাফিন এবং অন্যান্য চিনিযুক্ত খাবার
  • বেশি সিদ্ধ সবজি এড়িয়ে চলা ভালো।
  • ওভারিয়ান সিস্ট দূর করতে প্রচুর পানি পরিমাণের বিকল্প নেই।
  • আদা খেলেও ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যা অনেকটা কমে যায়।
  • শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি দূর করার মধ্য দিয়ে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার সিস্ট কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত পান করলে সিস্ট কমে যেতে পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া শ্রেয়।
  • কাজুবাদাম খেলে ওভারিয়ান সিস্টের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কারণ কাজুবাদাম হরমনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ভালো ফল দেয়। কাজুবাদামে থাকা ফ্যাটি এসিড সিস্টের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
  • ওভারিয়ান সিস্টের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করতে কিছু কিছু খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের মধ্যে রয়েছে অ্যালোভেরা জুস, হারবাল টি এবং আমলা জুস।
  • ডাব বা নারকেলের পানিও ওভারিয়ান সিস্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী।
  • প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেটগুলি পূরণ করার পরিবর্তে, এমন খাবার খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে যা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের সাথে লড়াই করতে সহায়তা করে। এমন স্বাস্থ্যকর খাদ্যগুলির মধ্যে রয়েছে:
  • ব্রকলি
  • সবুজ শাক, বাদাম, বেরি এবং স্কোয়াশ সহ উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার
  • মাছ এবং মুরগি সহ চর্বিহীন প্রোটিন
  • টমেটো, হলুদ, কেল, জলপাই তেল এবং বাদাম সহ প্রদাহ বিরোধী খাবার এবং মশলা

৭) জীবনযাপনে পরিবর্তন

ওভারিয়ান সিস্ট থেকে পরিত্রাণ পেতে জীবনযাপনে পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরী। জীবনযাপনে পরিবর্তন রাখতে ওজন কম রাখাকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। কিছু কিছু সিস্ট নিরব ঘাতকের মতো কাজ করে তাই নিজ উদ্যোগে নিয়মিত চেক-আপের জুরি নেই।

ওভারিয়ান সিস্ট যদি বংশীয় হয়ে থাকে তবে এর ঝুঁকি অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে সন্তান গ্রহণের পর ডিম্বাশয় কেটে ফেলে দেয়া নিরাপদ। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামরশে।

পরিশেষে

বাড়িতে বিভিন্ন ধরণের ব্যবস্থা ওভারিয়ান সিস্টের যে কোনো অস্বস্তি কমাতে কিংবা হরমোন নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদে সাহায্য করতে পারে। তবে, ভবিষ্যতে আবার সিস্ট গঠন থেকে প্রতিরোধ করার মত প্রমাণিত কোন উপায় নেই। তাই ওভারিয়ান সিস্ট নিয়ে দুশ্চিন্তায় না থেকে বরং এটি নিয়ে সচেতনতা জরুরী। নিয়মিত চেক আপ ও সচেতনতাই পারে ওভারিয়ান সিস্টের মতো সমস্যা থেকে একজন নারীকে দূরে রাখতে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ওভারিয়ান সিস্ট কী, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা

আপডেট সময় : ০৫:২৬:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

নারীরা ওভারিয়ান সিস্ট বা ডিম্বাশয়ের সিস্ট জটিলতায় ভুগতে পারেন। ওভারি বা ডিম্বাশয়ে পানিপূর্ণ থলেকে সিস্ট বলা হয়। যে কোনো বয়সী নারী এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

নারীরা অনেক ধরনের সিস্টে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। যেমন– ফাংশনাল সিস্ট, পলিসিস্টিক (পিসিওএস) সিস্ট, অ্যান্ডমেট্রিওটিক সিস্ট, ডারময়েড সিস্ট এবং সিস্ট এডোনোমা। তবে একাধিক সিস্টকে একত্রে পলিসিস্ট বলা হয়। ওভারি বা ডিম্বাশয় ফিমেল রিপ্রোডাক্টিভ অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ছোট ছোট সিস্ট পুঁতির মালার মতো ওভারি বা ডিম্বাশয়কে ঘিরে রাখে। এই সিস্টের জন্য ওভারির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

ওভারিয়ান সিস্ট রোগের কারণ

অনিয়মিত সেক্স লাইফ, হরমোনের সমস্যা, অল্পবয়সে ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার কারণে সিস্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে এ সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া দেরিতে বিয়ে, দেরিতে সন্তান নেওয়ার কারণেও এ সমস্যা হতে পারে।

কিছু সিস্ট আছে, যা ক্যান্সারিয়াস (ম্যালিগন্যান্ট) হয়। সাধারণ কিছু লক্ষণের মাধ্যমে এ রোগ প্রকাশ পায়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে যদি এ রোগের চিকিৎসা শুরু করা যায়, তবে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব। তবে তার আগে আমাদের সিস্ট হওয়ার লক্ষণগুলো জানতে হবে।

এই রোগের লক্ষণ-

এই রোগের কিছু লক্ষণ রয়েছে। অনিয়মিত ঋতুস্রাব, মাসিকের সময় মারাত্মক ব্যথা, তলপেট ফুলে যাওয়া, ব্যথা প্রস্রাবে সমস্যা, বমিভাব, সিস্টের ইনফেকশন, তলপেটে ব্যথার সঙ্গে হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি পায়। তবে যদি ক্যান্সার দেখা দেয় তা হলে ওজন কমে যাবে।

ওভারিতে সিস্ট দেখা দিলে ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া ওভারিয়ান সিস্ট হলে পেট ফাঁপা, বুক জ্বালাপোড়াও হয়ে থাকে। এই রোগ হলে পিঠে চাপ পড়ে এবং তা থেকে ব্যথা সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ এ কারণে থাইয়ে ব্যথা অনুভব করে থাকেন।

ওভারিয়ান সিস্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার ৭টি ঘরোয়া উপায়!

ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের সিস্ট হল ক্যানসার বিহীন পিণ্ড যা ডিম্বাশয়ে বৃদ্ধি পায়। অনেক সিস্টে কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না, তবে অন্যগুলি বেদনাদায়ক হতে পারে বা একজন মহিলার পিরিয়ডকে ভারী করে তুলতে পারে। কিন্তু ভয়ের কিছু নেই! ওভারিয়ান সিস্ট থেকে মুক্তি পেতে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনই হচ্ছে সর্বোত্তম উপায়।

সময় যতোটা এগিয়ে যাচ্ছে ততোই মানুষের নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে নতুন নতুন রোগ। “সিস্ট” এমনই একাটি রোগের নাম। একবিংশ শতাব্দিতে সিস্ট রোগটির সাথে কম বেশি সবারই পরিচিতি রয়েছে। সিস্টের নাম শুনলেই অধিকাংশের মনে ভয় দানা বাঁধে। তবে সিস্ট মানেই যে খারাপ কিছু কিংবা অত্যাধিক ভয়ের তা কিন্তু নয়।

সিস্ট  বলতে মূলত পানি ভর্তি থলিকে বোঝায়। এই থলিতে পরিষ্কার পানি, ঘোলা পানি, নোংরা বা সংক্রমিত পানি, রক্ত বা হলদে রঙের পানি থাকতে পারে। আবার পুরনো রক্ত বা খয়েরি রঙের পদার্থও থাকতে পারে । সাধারণ পানি থাকলে ঐ সিস্ট গুলিকে সিম্পল সিস্ট বলা হয়। অন্যদিকে রক্ত থাকলে সে ধরণের সিস্টকে হেমারেজিক সিস্ট বলে।

সহজ ভাবে বলতে গেলে, সিস্ট হলো ক্যাপসুল বা থলির মতো অস্থায়ী অঙ্গানু। সেবেসিয়াস গ্রন্থির বাঁধার কারণেই মূলত সিস্টের জন্ম। তাছাড়া শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে গেলেও সিস্ট হয়। সিস্ট বিভিন্ন স্থানে ও বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। কিডনি, লিভার, অগ্নাশয় সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিস্ট হয়ে থাকে।

বর্তমান সময়ে সিস্ট জাতীয় রোগের মধ্যে ওভারিয়ান সিস্ট তথা ডিম্বাশয়ের সিস্টে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। ডিম্বাশয় সিস্ট বলায় বোঝাই যাচ্ছে এটা মূলত নারীদের হয়ে থাকে। আসুন ওভারিয়ান সিস্ট থেকে মুক্তির উপায় জানার সাগে আমরা ওভারিয়ান সিস্ট নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নেই।

ওভারিয়ান সিস্ট কি?

ওভারিয়ান সিস্ট হলো ওভারিতে থাকা পানি পূর্ণ থলে যা ওভারিতে সৃষ্টি হয়। ওভারিয়ান সিস্টকে অনেকে ক্যানসারের কারণ হিসেবে মনে করেন। ওভ্যুলেশনে তৈরী হওয়া এ সকল সিস্ট কোনো ক্রমেই ক্যান্সার নয়। এই সিস্ট গুলোকে ফাংশনাল সিস্ট বলা হয়ে থাকে।

নারীর ওভারি কিংবা ডিম্বাশয় সিস্ট সাধারণত জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি যে কোনো সময় হতে পারে। সাধারণত ৫০ বছরের মধ্যেই বেশি হয়ে থাকে ওভারিয়ান সিস্ট। ওভারিয়ান সিস্ট সৃষ্টি হওয়ার তিন থেকে দশ মাসের মধ্যেই নিজ থেকে ছোট হয়ে যায়।

ওভারিয়ান সিস্ট কেন হয়?

ওভারি বা ডিম্বাশয়ের প্রধাণ কাজ হলো ডিম্বাণু তৈরী করা। প্রতিমাসেই ওভারিতে ডিম্বানু তৈরী হয়। ওভ্যুলেশনের সময় ওভারির ভেতর সিস্টের মতো দেখতে ফলিকলের সৃষ্টি হয়। ডিম্বাণু নিঃসরণের পর পরিণত ফলিকল গুলো নষ্ট হয়ে যায়। ওভারিতে এই প্রক্রিয়াটি ঠিকঠাক ভাবে না চললে ওভারিয়ান সিস্ট দেখা দেয়।

যদিও এ ধরণের সিস্ট নন ফাংশনাল তবে সন্তান ধারণে সক্ষম এমন চার থেকে দশ শতাংশ মহিলা একটু জটিল প্রকৃতির সমস্যা “পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিস্ট” এ ভোগেন।

ওভারিয়ান সিস্টের প্রকারভেদ

ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ে বিভিন্ন ধরণের সিস্ট হয়ে থাকে। সেগুলো হলো-

১) পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম 

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম বা পিসিওস হলো ওভারিতে একাধিক সিস্ট থাকাকে বোঝায়। ওভারিতে যে ছোট ফলিকল থাকে সেগুলো পূর্ণাঙ্গ না হলে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিস্ট হতে পারে।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম এর প্রথম সমস্যা হলো মাসিক অনিয়মিত হওয়া। বিশেষ করে অবিবাহিত মেয়েদের এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অনিয়মিত বলতে তিন-চার মাস পর পর হওয়াকে বোঝায়। কিংবা মাসিক অনেক কম হয় কিংবা কয়েক মাস পর অনেক বেশি পরিমাণে হয়।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিস্ট হলে শরীরে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন-

  • চিকন থেকে মোটা কিংবা হঠাৎ মোটা থেকে শুকিয়ে যাওয়া
  • কিংবা হঠাৎ দেহের রং পরিবর্তন হওয়া এই সিন্ড্রোমের উল্লেখযোগ্য সমস্যা
  • তাছাড়া পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম হলে শরীরে অবাঞ্ছিত লোমের দেখা মেলে

২) ফাংশনাল সিস্ট

সাধারণত বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রে ফাংশনাল সিস্ট হয়ে থাকে। ওভারি থেকে ডিম না ফুটলে অথবা ডিম ফোটার পরও ফলিকল গুলো চুপসে না গেলে ফাংশনাল সিস্ট সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরণের সিস্টে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।

৩) এন্ডিওমেট্রিওটিক বা চকলেট সিস্ট

ওভারিতে থাকা টিস্যুগুলো যদি জরায়ু ছাড়া পেটের অন্য কোথাও হয়ে থাকে তখন এন্ডিওমেট্রিওটিক সিস্ট সৃস্টি হয়। এ ধরণের ওভারিয়ান সিস্ট হলে মাসিক অনিয়মিত হয় এবং বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। এই সিস্টকে চকলেট সিস্টও বলা হয়ে থাকে।

৪) ডার্ময়েট সিস্ট কি?

ওভারির ডার্ময়েট সিস্টের ভেতর চামড়া, চুল, দাঁত থাকতে পারে। এই সিস্ট ভয়ের জন্ম দেয়। কারণ এই ধরণের সিস্ট হলে ক্যান্সার হতে পারে।

ডার্ময়েট সিস্ট হলে ওভারিতে তীব্র ব্যথা হয়। ওভারি পেচিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। এ ধরণের সিস্ট হলে বিনাইন ক্যন্সার হতে পারে।

৫) সিস্ট এডোনোমা

ওভারিতে  এক ধরণের তরল জাতীয় পদার্থ জমাা বেঁধে এ ধরণের ওভারিয়ান সিস্ট সৃষ্টি হয়। এই সিস্টে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।

ওভারিয়ান সিস্টের চিকিৎসা

ওভারিয়ান সিস্ট শনাক্ত করতে ডাক্তাররা সাধারণত আল্ট্রাস্নোগ্রাফি করিয়ে থাকেন। ওভারিয়ান সিস্টের প্রকারভেদের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পদ্ধতিতেও ভিন্নতা রয়েছে ।

কিছু কিছু ওভারিয়ান সিস্ট ওষুধের মাধ্যমেই নিরাময় করা যায়। তবে কিছু কিছু সিস্টের ক্ষেত্রে টিউমার মার্কার দেখে ফেলে দিতে হয় কিংবা ওভারি সহ ফেলে দিতে হয়।

বর্তমান ল্যাপ্রোসকপির মাধ্যমে খুব সহজে পেট ফুটো করে সিস্ট ফেলে দেয়া যায় এবং মাত্র সাত দিনের মধ্যেই সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আসা যায়।

কখন অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?

যে সমস্ত মহিলারা সন্দেহ করেন যে তাদের ডিম্বাশয়ের সিস্ট রয়েছে তাদের কোনও ঘরোয়া চিকিৎসা চেষ্টা করার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত, কারণ সিস্টের কারণ নির্ণয় করা অপরিহার্য।

একটি ডিম্বাশয়ের সিস্ট দ্বারা সৃষ্ট গুরুতর ব্যথা নির্দেশ করতে পারে যে এটি ফেটে গেছে অথবা ডিম্বাশয় বা ফ্যালোপিয়ান টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি ফেটে যাওয়া সিস্ট একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সির মোট অবস্থা হতে পারে।

ডিম্বাশয়ের সিস্ট আছে কিনা তা অনেকেই নিশ্চিত হতে পারে না। কারণ সিস্টগুলির অনেকেই কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করে না এবং চিকিৎসা ছাড়াই সেরে যেতে পারে। যাইহোক, বড় সিস্টের কারণে পেলভিক অংশে ব্যথা, পেট ভারী বা ফোলাভাব হতে পারে।

যদি নিম্নোক্ত লক্ষণগুলি অনুভত হয় তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত-

  • গুরুতর পেলভিক বা তলপেটে ব্যথা
  • পেটে হঠাৎ ব্যথা করা
  • জ্বর সহ ব্যথা
  • বমি সহকারে ব্যথা
  • যদি হঠাত করে শক বা আঘাতের লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন আঁটসাঁট ত্বক, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, হালকা মাথা ব্যথা বা দুর্বলতা

ওভারিয়ান সিস্ট মোকাবেলায় ঘরোয়া উপায়

ঘরোয়া চিকিৎসা ওভারিয়ান সিস্টকে সম্পূর্ণ অদৃশ্য করে দিতে পারে না। কিন্তু ঘরোয়া চিকিৎসার লক্ষ্য হল কোনো লক্ষণ বা উপসর্গের প্রাথমিক চিকিৎসা করা এবং ব্যথা উপশম করা। আসুন জেনে নেই সে পদ্ধতিগুলি-

১) তাপ বা সেক দিতে হবে

তাপ রক্ত প্রবাহ বাড়ায়, ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। একটি হিটিং প্যাড বা গরম পানির বোতল তোয়ালে জড়িয়ে পেটে বা পিঠের নিচের দিকে প্রায় ২০ মিনিটের জন্য লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। এটি দিনে কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করা নিরাপদ, যতক্ষণ না প্যাডটি ত্বক পোড়াতে যথেষ্ট গরম না হয়। হিটিং প্যাড নিয়ে ঘুমানো যাবে না।

২) ম্যাসেজ বা মালিশ করা

ডিম্বাশয়ের সিস্টের ব্যথা আশেপাশের পেশীগুলিকে টান দিতে পারে। পিরিয়ডের সময় এই টান বিশেষ করে অস্বস্তিকর হতে পারে। নীচের পিঠ, উরু, নিতম্ব এবং পেট ম্যাসাজ করা টানটান পেশী আলগা করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৩) ব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং

ব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং ওভারিয়ান সিস্টের সাথে যুক্ত ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। এটি পেশী টান নিরাময়েও সাহায্য করতে পারে। কিছু মহিলা দৌড়ানোর মতো তীব্র ব্যায়াম থেকে স্বস্তি পান, অন্যরা মৃদু স্ট্রেচিং এবং যোগব্যায়াম পছন্দ করেন।

৪) রিলাক্সেশন বা চিত্তবিনোদন

স্ট্রেস এবং উদ্বেগ ব্যথা আরও খারাপ করতে পারে। রিলাক্সেশন কৌশল, যেমন ধ্যান, যোগব্যায়াম, এবং গভীর শ্বাস উদ্বেগ উপশম করতে এবং ব্যথার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই কৌশলগুলি একজন ব্যক্তিকে দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা পরিচালনা করতে এবং সাধারণ স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করতে পারে।

৫) ওজন কমানো

যদি একজন মহিলার ওজন বেশি হয়, তবে ওজন হ্রাস করা তার জন্য খুবই উপকারী একটি পদ্ধতি হতে পারে। কেননা এতে তার শরীরের হরমোনগুলিকে আরও ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ হয়, সিস্টের বিকাশকে রোধ করে এবং ব্যথা ও ক্লান্তির লক্ষণগুলিকে ভালোভাবে উপশম করতে পারে।। কিন্তু পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমে ওজন কমানো কঠিন। তবে হতাশ না হওয়ার চেষ্টা করতে হবে, কারণ এতে সময় লাগতে পারে।

৬) খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমে আক্রান্ত অনেক মহিলা ইনসুলিন প্রতিরোধী। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে, গর্ভাবস্থাকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।

খাদ্যতালিকায় ব্যাপক পরিবর্তন এতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু গবেষণা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমে এর জন্য একটি নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা নির্দেশ করে না। বরং একজন মহিলাকে তার জন্য সবচেয়ে ভাল খাদ্যতালিকাটি খুঁজে বের করার জন্য ট্রায়াল এবং এরর (Trial & Error) প্রক্রিয়া  ব্যবহার করতে হতে পারে।

  • পিসিওসএসে আক্রান্ত মহিলাদের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকতে পারে। ফলস্বরূপ, ইনসুলিন প্রতিরোধে অবদান রাখে এমন খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট এবং অত্যন্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন:
    • সাদা রুটি
    • সাদা আলু
    • সাদা ময়দা দিয়ে তৈরি কিছু
    • পেস্ট্রি, ডেজার্ট, মাফিন এবং অন্যান্য চিনিযুক্ত খাবার
  • বেশি সিদ্ধ সবজি এড়িয়ে চলা ভালো।
  • ওভারিয়ান সিস্ট দূর করতে প্রচুর পানি পরিমাণের বিকল্প নেই।
  • আদা খেলেও ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যা অনেকটা কমে যায়।
  • শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি দূর করার মধ্য দিয়ে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার সিস্ট কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত পান করলে সিস্ট কমে যেতে পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া শ্রেয়।
  • কাজুবাদাম খেলে ওভারিয়ান সিস্টের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কারণ কাজুবাদাম হরমনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ভালো ফল দেয়। কাজুবাদামে থাকা ফ্যাটি এসিড সিস্টের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
  • ওভারিয়ান সিস্টের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করতে কিছু কিছু খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের মধ্যে রয়েছে অ্যালোভেরা জুস, হারবাল টি এবং আমলা জুস।
  • ডাব বা নারকেলের পানিও ওভারিয়ান সিস্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী।
  • প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেটগুলি পূরণ করার পরিবর্তে, এমন খাবার খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে যা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের সাথে লড়াই করতে সহায়তা করে। এমন স্বাস্থ্যকর খাদ্যগুলির মধ্যে রয়েছে:
  • ব্রকলি
  • সবুজ শাক, বাদাম, বেরি এবং স্কোয়াশ সহ উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার
  • মাছ এবং মুরগি সহ চর্বিহীন প্রোটিন
  • টমেটো, হলুদ, কেল, জলপাই তেল এবং বাদাম সহ প্রদাহ বিরোধী খাবার এবং মশলা

৭) জীবনযাপনে পরিবর্তন

ওভারিয়ান সিস্ট থেকে পরিত্রাণ পেতে জীবনযাপনে পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরী। জীবনযাপনে পরিবর্তন রাখতে ওজন কম রাখাকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। কিছু কিছু সিস্ট নিরব ঘাতকের মতো কাজ করে তাই নিজ উদ্যোগে নিয়মিত চেক-আপের জুরি নেই।

ওভারিয়ান সিস্ট যদি বংশীয় হয়ে থাকে তবে এর ঝুঁকি অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে সন্তান গ্রহণের পর ডিম্বাশয় কেটে ফেলে দেয়া নিরাপদ। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামরশে।

পরিশেষে

বাড়িতে বিভিন্ন ধরণের ব্যবস্থা ওভারিয়ান সিস্টের যে কোনো অস্বস্তি কমাতে কিংবা হরমোন নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদে সাহায্য করতে পারে। তবে, ভবিষ্যতে আবার সিস্ট গঠন থেকে প্রতিরোধ করার মত প্রমাণিত কোন উপায় নেই। তাই ওভারিয়ান সিস্ট নিয়ে দুশ্চিন্তায় না থেকে বরং এটি নিয়ে সচেতনতা জরুরী। নিয়মিত চেক আপ ও সচেতনতাই পারে ওভারিয়ান সিস্টের মতো সমস্যা থেকে একজন নারীকে দূরে রাখতে।