কিডনী প্রতিস্থাপন পরবর্তী হজ্ব বা ওমরাহ
- আপডেট সময় : ০৭:০৬:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০২২
- / ৫০১৪ বার পড়া হয়েছে
কিডনী প্রতিস্থাপন পরবর্তী হজ্ব বা ওমরাহ-
কিডনী প্রতিস্থাপন পরবর্তী সময়ে যারা মূল হজ্ব (যা সামৰ্থবান ব্যাক্তির জন্য জীবনে একবার ফরজ) বা ওমরাহ হজ্ব (যা ফরজ নয়) করতে যাবেন তাদের জন্য নিচের দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলা উচিত, মনে রাখতে হবে কিডনী প্রতিস্থাপনের পরে কিডনী ফাংশন স্ট্যাবল বা স্থিতিশীল হলে আপনি অনেকটাই সুস্থ মানুষের মতো জীবনযাপন করতে পারবেন তবে বেশকিছু দিকনির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে এবং বাকি পুরোজীবন আপনার ট্রান্সপ্লান্ট নেফ্রোলজিস্টের তত্ত্বাবধায়নে থাকতে হবে বা সতর্ক থাকা জরুরি যেহেতু আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কম যার জন্য বিভিন্ন সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
🍀 মনে রাখবেন ফরজ হজ্ব বেশ স্ট্রেন্থফুল বা পরিশ্রমী ইবাদাত যদিও ওমরাহ হজ্ব তুলনামূলক অনেকটা কম কষ্টকর এবং নির্দিষ্ট সময়ের কার্যবিধির বাধ্যবাধকতা নেই, ওমরাহ হজ্ব আপনি চাইলে একদিনেও শেষ করতে পারেন কিন্তু মূল হজ্ব যেটা ফরজ সেটার বেশ কিছু একটিভিটিস থাকে এবং প্রচুর লোক একসাথে একইদিনে জমায়েত হয় যেমন:- মিনার ময়দানে রাত্রি যাপন, আরাফার ময়দানে নির্দিষ্ট দিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা বা মাগরিব পর্যন্ত অবস্থান, বিদায়ী তাওয়াফ ইত্যাদি এবং কনজেস্টেড বা চাপাচাপি হয় যার কারণ নির্দিষ্ট সময় এই কাজগুলা না করলে হজ্ব আদায় হয় না তাই পোস্ট ট্রান্সপ্লান্ট এ সতর্ক থাকা জরুরি তার ওপর আবার করোনা সময়, যদিও করোনার কারনে এখন কম এন্ট্রি দিবে তাও খুব সতর্কতা মানা উচিত,নিচের নির্দেশিকা গুলো যারা হজ্ব বা ওমরাহ্তে যাবেন তাদের জন্য মানা গুরুত্বপূর্ণ-
১. নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শে Covid ভ্যাকসিনের পূর্ণ ডোজ দেওয়া সহো বুস্টার ডোজ দিয়ে থাকা উচিত,ইনফুলেন্জা বা নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন ও দেওয়া থাকা উচিত।
২. নফল তাওয়াফ/ওমরাহ করার জন্য রাতের সময় বেছে নেওয়া উচিত বা ফজর সালাতের পরপর কারণ সে সময় ঠান্ডা থাকে এবং রোদ থাকে না এবং মনে রাখতে হবে কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যাক্তির দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা উচিত নয় যা পানিশূন্যতা তৈরী করতে পারে এবং ইম্মুনোসাপ্রেসিভ ওষুধের কারণে স্কিন ক্যান্সার রিস্ক বেড়ে যেতে পারে, পাঞ্জাবি বা বুরখা ব্যবহার করলে শরীর অনেকটাই ঢেকে থাকে যা সরাসরি রোদ থেকে বাঁচাতে পারে। পাঁচওয়াক্ত নামাজের জন্য মাসজিদুল হারামের যে জায়গাতে ছাঁদ থাকে সে জায়গাগুলো ব্যবহার করা উচিত, যা শীতাতপনিয়ন্ত্রিতও বটে।
৩. ফেস মাস্ক,হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং ফার্স্ট এইডের কিছু সামগ্রী সাথে রাখবেন( সুগন্ধমুক্ত হওয়া উচিত যা হজ্বের বিধি বিধানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত) এবং আপনি যেখানে থাকবেন তার নিকটবর্তী মেডিকেল সেন্টারে ঠিকানা নিয়ে রাখবেন, মূল হজ্বে ইমার্জেন্সি মেডিকেল সেন্টার মক্কা মদিনার কয়েকজায়গায় খোলা থাকে…আপনার মেডিকেল বা ট্রান্সপ্লান্ট সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সাথে নিয়ে যাবেন।
৪. ইম্মুনোসাপ্রেসিভ খাওয়ার ব্যাপারে কঠোর টাইম মেইনটেইন করবেন এবং সময় গ্যাপ সঠিকভাবে এডজাস্ট করে নিবেন। একজনের সত্য কাহিনী শুনেছি তিনি হজ্বে গিয়ে ইমোশনাল হয়ে ইম্মুনোসাপ্রেসিভ মেডিসিন ১৫ দিনের মতো অফ রেখেছিলো তিনি ভেবেছিলো তার কিছুই হবে না পরে কিডনি রিজেকশন হয়ে গিয়েছে, তাকে কেও বুঝাতে পারে নাই চিকিৎসা নেওয়া সুন্নাত এবং এই চিকিৎসাপদ্ধতি আল্লাহই মানুষকে বুদ্ধি দিয়ে শিখিয়ে দিয়েছে.
৫. হজ্ব বা ওমরার জন্য কিডনি প্রতিস্থাপনের পর কমপক্ষে একবছর দেরি করা উচিত যদি সমস্ত ব্লাড টেস্ট নরমাল রেঞ্জে থাকে এবং নেফ্রোলজিস্ট ক্লিয়ারেন্স দেয়,তার একটা ফরওয়ার্ডিং লেটার সাথে রাখা উচিত যাতে ইমার্জেন্সি অবস্থায় ইহা ওখানকার ডাক্তারকে দেখালে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে পারে..এর সাথে নেফ্রোলজিস্ট এর পরামর্শে কিছু ওটিসি ড্র্যাগ এর ব্যাপারে নির্দেশনা নিতে পারেন যাতে এলার্জি, বমি বা ব্যাথা ইত্যাদি হলে সঠিক মাত্রায় ওষুধ খেতে পারেন।
৬. অনেকে অতিরিক্ত গরম এবং পানিশূন্যতায় হিটস্ট্রোক হতে পারে তাই সমসময় পানি পান করা, ছাতা ব্যবহার এবং সাথে পানির বোতল রাখা উচিত এবং কাছে যেখানে ছায়া আছে সেখানে কিছুক্ষন সময় থেকে আবার চলা উচিত।
৭. বিদায়ী তাওয়াফে প্রচুর ধাক্কাধাক্কি হয় তাই প্রয়োজনে দ্বিতীয় তলা বা তৃতীয় তলা তাওয়াফের জন্য বেছে নিতে পারেন( তাওয়াফ মানে হচ্ছে কাবার চারপাশ ঘোরা)।
৮. আরাফাহ বা মিনাতে অবস্থানের সময় একই বাথরুম অনেকে ব্যবহার করে যা অনেকসময় নোংরা থাকে তাই সুগন্ধমুক্ত স্যানিটাইজ স্প্রে করে নিতে পারেন সংক্রমণ সম্ভাবনা কমাতে।