ঢাকা ০২:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব শেখ হাসিনার বিচার করা: শফিকুল আলম পুতুলকে ডব্লিউএইচও থেকে অপসারণে অনলাইনে স্বাক্ষর জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে জনসাধারণের অভিমত চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শাপলা চত্বরে হেফাজত দমন : অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট বেগম জিয়াকে হিংসা করতেন হাসিনা ভারতের নাগরিকত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনা? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাত্রদের ঘোষণাপত্র দিতে বারণের কারণ জানালেন ড. ইউনূস  ঐক্যবদ্ধভাবে দিতে না পারলে জুলাই ঘোষণাপত্রের দরকারই নাই রেস্তোরাঁ, ওষুধ ও মোবাইল রিচার্জে বাড়ছে না ভ্যাট ধর্মনিরপেক্ষতাসহ রাষ্ট্র পরিচালনার ৩ মূলনীতি বাদ পদত্যাগপত্রে যা বললেন টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক আমার মেয়ের খুনি কে, আমি কি বিচার পাব না: প্রশ্ন তিন্নির বাবার জয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ৩ বছর আগে, জানালেন নিজেই গণহত্যায় জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড হাতে পেয়েছে প্রসিকিউশন ৫ আগস্ট: বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাপ্রধানের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল ক্রসফায়ারে নিহতদের ৪ জন ছিলেন ডিবি হেফাজতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক ছিলেন শেখ রেহানা শনিবার স্কুল খোলা নাকি বন্ধ? ‘জমজমের’ নামে ট্যাপের পানি বিক্রি, আয় ৩০ কোটি টাকা!

কেন শেখ মুজিব বেঁচে ফিরে এসেছিলেন, ১০ই জানুয়ারী ১৯৭২!

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৯:৫২:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 21
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

ভুট্টো না বাঁচালে মুজিব হত্যা ও জেল হত্যা দুটোই ৭১এ হত ৭৫এ নয়!!
———————
রাজনীতি বুঝতে গেলে আপনাকে একই ঘটনা বা একই মানুষকে নানা প্রেক্ষাপট থেকে বিচার করতে হবে। কোন একটি দিক থেকে একটি মাত্র প্রেক্ষাপটে কাউকে বিচার করে যদি তাকে আপনি ভক্তির আসনে বা ঘৃণার আসনে বসিয়ে ফেলেন তাহলে আপনি ভক্তিবাদী, রাজনৈতিক বোদ্ধা নন। ভক্তিবাদীর রাজনৈতিক আচরণ শুরুতে বিপ্লবী মনে হলেও পরিশেষে সবসময়ই সাম্প্রদায়িক। আমেরিকানরাও সেই সাম্প্রদায়িক আচরণই করে যখন তারা ভাবে যে ওসামা বিন লাদেন সন্ত্রাস করেছে, সে যেহেতু মুসলিম ছিল তাই সব মুসলিম সন্ত্রাসী, তাদের খতম কর।
আমাদের নিজেদের বোঝার জন্য এবং গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য ৭১ এর আগে পরে পাকিস্তানে কি হয়েছিল সেটা বোঝা খুব জরুরী। সেটা না বুঝে শুধু ঘৃণা করা সেই একই ভক্তিবাদ বা ঘৃণাবাদ। ৭১ এর কারণে পাকিস্তানের সব কিছু ঘৃণা কর, সেটাও তেমন। ব্যক্তি মানুষকে সুক্ষ্ম বিচার না করে তাকে মন্দ কিছুর সাথে ট্যাগ করা এবং হেয় করা একপ্রকার দলগত বুলি, যেটা ফৌজদারি অপরাধ।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ভারত থেকে ভাগ হবার দশ বছর যেতে না যেতেই ১৯৫৮ সালের ২৭শে অক্টোবর একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তখনকার সামরিক প্রধান জেনারেল আইয়ুব খান সদ্য প্রসূত শিশু গণতন্ত্রকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে নেয়। এখানে উল্লেখ্য যে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও সেটা ২৩শে মার্চ ১৯৫৬ পর্যন্ত বৃটিশ শাসনের অধীনে নিয়োগ কৃত মুহম্মদ আলী জিন্নাহ, খাজা নাজিমুদ্দিন, গোলাম মোহাম্মদ ও ইসকান্দার মির্জা এই চারজন গভর্নর জেনারেলের শাসনে ছিল। এই সময় পাকিস্তানের নাম ছিল ডোমিনিয়ন অব পাকিস্তান যা ছিল একটি বৃটিশ কমনওয়েলথ রাজ্য। ২৩শে মার্চ ১৯৫৬তে সংবিধান রচনার মাধ্যমে সেটা ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান নামে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে জন্মগ্রহণ করে।
এর দুই বছরের মধ্যেই আইয়ুব খান অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক শাসন জারি করে। এর পর থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সামরিক শাসন চলে যার শেষ দুই বছর ছিল জুলফিকার আলী ভুট্টোর অধীনে (বেসামরিক হওয়া স্বত্বেও)। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকলে এবং ১৯৭৭ এর নির্বাচনে তার দল জিতলেও ১৯৭৭ সালে সামরিক প্রধান জিয়াউল হক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আবার ক্ষমতা দখল করে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে শুরু থেকেই পাকিস্তানের জনগন পাকিস্তানের ক্ষমতালোভী সামরিক জান্তাদের গুতোগুতিতে ছিল নিষ্পেষিত। সামরিক নেতৃত্বের ইসলামিক সামরিক আদর্শের বাঙালি ঘৃণার কারণেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন দানা বেঁধেছিল এবং ঘটেছে ৭১ এর নৃশংসতা। তারা বাঙালি সংস্কৃতিকে হিন্দু আচার বলে মনে করে ঘৃণা করত। এই ঘৃণা বিভাজন তৈরির জন্য তাদের মনে পদ্ধতিগতভাবে উৎপাদন করা হয়েছিল। যদিও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা ঢাকায় মার্চের সামরিক হামলার পক্ষে ছিল না। ১৯৭১ সালের শুরুতে পদত্যাগ করেন তিন জন মোস্ট সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা। তারা চাননি সামরিক অপারেশন হোক।
পাকিস্তানে ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমনের জন্য সামরিক অভিযান চালানোর আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি মনে করতেন যে সামরিক শক্তি ব্যবহারের পরিবর্তে একটি রাজনৈতিক সমাধানের পথ খোঁজা প্রয়োজন। তার এই অবস্থান মূলত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল। তার অস্বীকৃতির পর তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে প্রত্যাহার করা হয় এবং তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে, যিনি পরবর্তীতে নতুন সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের মার্চে, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস-এডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ আহসান ও ঢাকায় পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রধান, এয়ার কমোডর মুহাম্মদ জাফর মাসুদ জনগণের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা উভয়েই মার্চের শুরুতে পদত্যাগ করেন।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেমন তখনকার অপশাসনে নিষ্পেষিত ছিল পাকিস্তানের সিভিল সোসাইটি এবং মুক্ত মনের মানুষরাও তাই ছিল এবং তারা এখনও আছে। যারা এখনও পাকিস্তানে নানা কায়দায় সামরিক ও খুন খারাবির রাজনীতির শিকার। অবশ্যই ৭১ নৃশংসতার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে পাকিস্তান দায়ী কিন্তু পাকিস্তানের অভ্যন্তরের শাসন যন্ত্রকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি তার আগে থেকেই সামরিক অলিগার্ক বা ছোট দলের অপশক্তির দখলে। সেই কারণে পাকিস্তানের অপকর্মের জন্য পাকিস্তানের সকল জনগনকে ৭১ এর জন্য দায়ী করা যায় না।
কেন দায়ী করা যায় না তার উদাহরণ বঙ্গবন্ধু নিজেই রেখে গেছেন। জুলফিকার আলী ভুট্টোর ঘাড়ে হাত দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হাস্যরসের ছবিটি খুব সম্ভবত ১৯৭৪ সালে ওআইসি সম্মেলনের সময় তোলা। যদি পাকিস্তানের সকলেই দায়ী হবে তাহলে ৭১ এর গণহত্যার তিন বছরের মধ্যেই কেন প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে বঙ্গবন্ধু এমন আচরণ করলেন ভুট্টোর সাথে যে ভুট্টো ৭১ সালে হানাদার রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন? রাজনীতি ধর্ম নয়। ধর্মে যেমন ধর্মগুরু বা প্রফেটকে অতিমানবীয় শুদ্ধ চরিত্রের আশা করা হয় রাজনীতি তেমন নয়।
রাজনীতিতে ব্যক্তি চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ তার কৃত কর্ম বা বিশ্বাসযোগ্যতার বর্তমান অবস্থান। একজন মুক্তিযোদ্ধা পরে মৌলবাদী বা রাষ্ট্রবিরোধী হয়ে যেতে পারে (যেমন মেজর জিয়া এবং আরও অনেক সমারিক কর্মকর্তা)। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে অনেক ব্যক্তি বেশিরভাগ উচ্চ শিক্ষিত প্রফেশনাল পিএইচডি প্রফেসরেরা পাকিস্তানপন্থী ছিল কিন্তু কিছুদিন পর তারা যখন নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তখন তাদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এসেছে।
১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর যখন পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে তখন ইয়াহিয়া ও তার নিকট জেনারেলরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। সেই হতাশা থেকেই ক্ষোভে এবং বাংলাদেশ যাতে কোনদিন মাথা তুলে না দাড়াতে পারে সেই কারণে তারা বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের নীল নকশা বাস্তবায়ন করে। সেই নকশার প্রথমে কার নাম থাকার কথা? শেখ মুজিব নয় কি? হ্যাঁ বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের পর পর পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পনের সময় শেখ মুজিবকে হত্যা চুড়ান্ত করে ফেলে খুনি ইয়াহিয়া। কিন্তু এতে বাধা দেয় স্বয়ং ভুট্টো। সে প্রথমে ইয়াহিয়াকে বোঝানের চেষ্টা করে যে এটা করা ঠিক হবে না। কিন্তু ইয়াহায়া সেটা মানে না। অর্ডার হয়ে যায় মুজিবকে জেলখানায় হত্যা করার জন্য বিজয়ের দিন ভোরেই। সেই সময় সলিটারি সেলে বন্দি জেলখানায় রাত তিনটায় মুজিবকে ডেকে তোলে তখনকার পুলিশ সুপার। রাত তিনটায় মুজিবকে জেলখানা থেকে বের করে সেই পুলিশ সুপার গোপনে তার বাসায় লুকিয়ে রাখে দুই দিন। মুজিবকে হত্যা করতে আসা সামরিক নির্দেশ পাওয়া লোকেরা তাকে খুঁজে পায় না। মুজিবের প্রাণ রক্ষার এই ব্যবস্থাটা করেছিল ভুট্টো নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে। ২০শে ডিসেম্বর ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সমারিক আইন প্রশাসক হলে ৮ই জানুয়ারী ১৯৭২ সালে সে শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়। [সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস জানুয়ারী ১৭, ১৯৭২ ]
একটা গল্প দিয়ে শেষ করি:
চীনের এক গ্রামে বাস করতেন একজন সৎ কৃষক। খুবই নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। এক কথায় গ্রামের সবাই তাকে ভাল বলেই জানত। সহজ সরল এ কৃষকের সম্পদের মধ্যে ছিল একখন্ড চাষের জমি আর একটা ঘোড়া। ঘোড়াটা কৃষিকাজে সে ব্যবহার করত। সেই কৃষকের ছিল একটা মাত্র ছেলে। ছেলেটাও বেশ ভদ্র। গ্রামের সবাই ছেলেটাকে অনেক ভালবাসে। কৃষক বাবার সে ছিল একমাত্র সহযোগী। হঠাৎ একদিন কৃষকের ঘোড়াটা হারিয়ে গেল। সকলে ভাবল কী সর্বনাশ? এত ভাল একটা মানুষের এত বড় বিপদ? গ্রামের প্রায় সব মানুষ সহমর্মিতা জানানোর জন্য ছুটে এলো কৃষকের কাছে।
তারা বলতে লাগল “আহারে, এত ভাল একজন মানুষের এত বড় বিপদ? কত ক্ষতিই না হয়ে গেল?“ এমনই আরও অনেক কিছু বলাবলি করতে লাগল তারা। এসব শুনে কৃষক একটু বিরক্ত হয়েই বলল, “আচ্ছা তোমরা যেটাকে আমার জন্য অকল্যাণ মনে করছ, সেটা যে কল্যাণ না তা তোমরা কীভাবে জান? ” উপস্থিত লোকজন তো অবাক! কতই না সরল আর বোকা এই লোক? একটা মাত্র ঘোড়া, সেটাই হারিয়ে গেল আর সে কিনা ভাবছে এটার মধ্যে কল্যাণও থাকতে পারে? বেকুব লোক একটা। তিরস্কার করতে করতে তারা চলে গেল।
এর কয়েকদিন পরে কৃষকের ঘোড়াটা একটা ঘুঁড়িসহ (মাদী ঘোড়া) ফিরে এলো। খবরটা জেনে গেল গ্রামবাসীরা। সবাইতো খুবই খুশি। সৎ কৃষকের কীভাবেই না পুরস্কৃত করলেন তার সৃষ্টিকর্তা। আনন্দের সংবাদ ভাগাভাগি করতে আবারও গ্রামবাসীরা ছুটে এলো কৃষকের বাড়ি। কত কথাই না বলল তারা। সবাইকে থামিয়ে কৃষক বললেন, আচ্ছা তোমরা যাকে কল্যাণ মনে করছো, সেটা তো আমার জন্য কল্যাণ নাও হতে পারে। সবাইতো চুপ। বলে কী বোকা লোক? একটা ঘোড়া পেল আর কী না বলে যে এটা তার জন্য কল্যাণ না? তিরস্কার করতে করতে চলে গেল সবাই।
পরদিন সকালে কৃষকের একমাত্র ছেলেটা গেল ঘোড়ার খাবার দিতে। ঘোড়াটা যেহেতু ছেলেটাকে চেনে তাই কিছুই বলল না। কিন্তু যেই না ঘুঁড়িটাকে খাবার দিতে গেল অমনি অপরিচিত লোক ভেবে দিল এক লাথি। ভেঙ্গে গেল ছেলেটির পা। আহত হয়ে সে পড়ে রইল বিছানায়। ”আহারে! এমন বিপদ এই ভাল লোকটার। সত্যিই তো এই ঘোড়াটা কৃষকের জন্য কোনো কল্যাণ নিয়ে আসেনি। কৃষক তো ঠিকই বলেছিল। কত বিপদই না হচ্ছে ভাল মানুষটার। আবারো ছুটে আসলো তারা কৃষকের বাড়ীতে। কতভাবেই না তারা দূঃখ প্রকাশ করার চেষ্টা করল। সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করল কৃষককে।
কৃষক আবার একটু বিরক্তই হলেন। বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বললেন, আচ্ছা আমার ছেলের পা ভেঙ্গে গেছে এটা তো অকল্যাণ না হয়ে কোনো কল্যাণও বয়ে নিয়ে আসতে পারে। গ্রামের লোকেরা আবারো তিরস্কার করতে করতে চলে গেল। এত বোকা লোক তো তারা কখনই দেখেনি! আহারে বেকুব লোকটা। কয়েকদিন পরে শুরু হলো যুদ্ধ। দেশের প্রত্যেক যুবককে বাধ্যতামূলক যুদ্ধে যেতে হবে। পা ভাঙ্গা ছেলেকে তো আর যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া যায় না তাই তাকে তারা রেখে গেল।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যে, ঐ গ্রামের সবাই যুদ্ধে নিহত হলো। এভাবে কৃষকের ছেলেটা বেঁচে গেল। কয়েকদিন পরে তার পা টাও ভাল হয়ে গেল। কত আশ্চর্যই না হলো সবাই। সবাই দেখল পা ভাঙ্গার কারণেই যুদ্ধে যাওয়া লাগল না। আর এভাবেই কৃষককে তার একমাত্র ছেলেটাকে হারাতে হলো না। অথচ গ্রামের সব ছেলেরা আজ মৃত। রাজনীতি শুধু নয় মানুষের জীবনে ভাল মন্দ বিচার কখনই পরম নয়। সেই কারণেই মনোবিজ্ঞানী কার্ল ইয়ুং বলেছেন “মানুষের মনে দ্বিধার যে দোলকটা দোলে সেটা কোন কিছু ভাল বা মন্দ সেটা নিয়ে নয়, কোন কিছু অর্থহীন না কি অর্থপূর্ণ সেটা নির্ণয়ে”।
আসুন ভাল মন্দ বিচার নয়, আমরা প্রতিটি কাজ অর্থপূর্ণ না কি অর্থহীন এটা দিয়ে মানুষকে বিচার করি। এটাই রাজনীতিতে ক্রিটিক্যাল থিংকিং।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কেন শেখ মুজিব বেঁচে ফিরে এসেছিলেন, ১০ই জানুয়ারী ১৯৭২!

আপডেট সময় : ০৯:৫২:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫

 

ভুট্টো না বাঁচালে মুজিব হত্যা ও জেল হত্যা দুটোই ৭১এ হত ৭৫এ নয়!!
———————
রাজনীতি বুঝতে গেলে আপনাকে একই ঘটনা বা একই মানুষকে নানা প্রেক্ষাপট থেকে বিচার করতে হবে। কোন একটি দিক থেকে একটি মাত্র প্রেক্ষাপটে কাউকে বিচার করে যদি তাকে আপনি ভক্তির আসনে বা ঘৃণার আসনে বসিয়ে ফেলেন তাহলে আপনি ভক্তিবাদী, রাজনৈতিক বোদ্ধা নন। ভক্তিবাদীর রাজনৈতিক আচরণ শুরুতে বিপ্লবী মনে হলেও পরিশেষে সবসময়ই সাম্প্রদায়িক। আমেরিকানরাও সেই সাম্প্রদায়িক আচরণই করে যখন তারা ভাবে যে ওসামা বিন লাদেন সন্ত্রাস করেছে, সে যেহেতু মুসলিম ছিল তাই সব মুসলিম সন্ত্রাসী, তাদের খতম কর।
আমাদের নিজেদের বোঝার জন্য এবং গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য ৭১ এর আগে পরে পাকিস্তানে কি হয়েছিল সেটা বোঝা খুব জরুরী। সেটা না বুঝে শুধু ঘৃণা করা সেই একই ভক্তিবাদ বা ঘৃণাবাদ। ৭১ এর কারণে পাকিস্তানের সব কিছু ঘৃণা কর, সেটাও তেমন। ব্যক্তি মানুষকে সুক্ষ্ম বিচার না করে তাকে মন্দ কিছুর সাথে ট্যাগ করা এবং হেয় করা একপ্রকার দলগত বুলি, যেটা ফৌজদারি অপরাধ।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ভারত থেকে ভাগ হবার দশ বছর যেতে না যেতেই ১৯৫৮ সালের ২৭শে অক্টোবর একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তখনকার সামরিক প্রধান জেনারেল আইয়ুব খান সদ্য প্রসূত শিশু গণতন্ত্রকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে নেয়। এখানে উল্লেখ্য যে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও সেটা ২৩শে মার্চ ১৯৫৬ পর্যন্ত বৃটিশ শাসনের অধীনে নিয়োগ কৃত মুহম্মদ আলী জিন্নাহ, খাজা নাজিমুদ্দিন, গোলাম মোহাম্মদ ও ইসকান্দার মির্জা এই চারজন গভর্নর জেনারেলের শাসনে ছিল। এই সময় পাকিস্তানের নাম ছিল ডোমিনিয়ন অব পাকিস্তান যা ছিল একটি বৃটিশ কমনওয়েলথ রাজ্য। ২৩শে মার্চ ১৯৫৬তে সংবিধান রচনার মাধ্যমে সেটা ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান নামে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে জন্মগ্রহণ করে।
এর দুই বছরের মধ্যেই আইয়ুব খান অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক শাসন জারি করে। এর পর থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সামরিক শাসন চলে যার শেষ দুই বছর ছিল জুলফিকার আলী ভুট্টোর অধীনে (বেসামরিক হওয়া স্বত্বেও)। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকলে এবং ১৯৭৭ এর নির্বাচনে তার দল জিতলেও ১৯৭৭ সালে সামরিক প্রধান জিয়াউল হক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আবার ক্ষমতা দখল করে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে শুরু থেকেই পাকিস্তানের জনগন পাকিস্তানের ক্ষমতালোভী সামরিক জান্তাদের গুতোগুতিতে ছিল নিষ্পেষিত। সামরিক নেতৃত্বের ইসলামিক সামরিক আদর্শের বাঙালি ঘৃণার কারণেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন দানা বেঁধেছিল এবং ঘটেছে ৭১ এর নৃশংসতা। তারা বাঙালি সংস্কৃতিকে হিন্দু আচার বলে মনে করে ঘৃণা করত। এই ঘৃণা বিভাজন তৈরির জন্য তাদের মনে পদ্ধতিগতভাবে উৎপাদন করা হয়েছিল। যদিও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা ঢাকায় মার্চের সামরিক হামলার পক্ষে ছিল না। ১৯৭১ সালের শুরুতে পদত্যাগ করেন তিন জন মোস্ট সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা। তারা চাননি সামরিক অপারেশন হোক।
পাকিস্তানে ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমনের জন্য সামরিক অভিযান চালানোর আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি মনে করতেন যে সামরিক শক্তি ব্যবহারের পরিবর্তে একটি রাজনৈতিক সমাধানের পথ খোঁজা প্রয়োজন। তার এই অবস্থান মূলত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল। তার অস্বীকৃতির পর তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে প্রত্যাহার করা হয় এবং তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে, যিনি পরবর্তীতে নতুন সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের মার্চে, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস-এডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ আহসান ও ঢাকায় পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রধান, এয়ার কমোডর মুহাম্মদ জাফর মাসুদ জনগণের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা উভয়েই মার্চের শুরুতে পদত্যাগ করেন।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেমন তখনকার অপশাসনে নিষ্পেষিত ছিল পাকিস্তানের সিভিল সোসাইটি এবং মুক্ত মনের মানুষরাও তাই ছিল এবং তারা এখনও আছে। যারা এখনও পাকিস্তানে নানা কায়দায় সামরিক ও খুন খারাবির রাজনীতির শিকার। অবশ্যই ৭১ নৃশংসতার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে পাকিস্তান দায়ী কিন্তু পাকিস্তানের অভ্যন্তরের শাসন যন্ত্রকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি তার আগে থেকেই সামরিক অলিগার্ক বা ছোট দলের অপশক্তির দখলে। সেই কারণে পাকিস্তানের অপকর্মের জন্য পাকিস্তানের সকল জনগনকে ৭১ এর জন্য দায়ী করা যায় না।
কেন দায়ী করা যায় না তার উদাহরণ বঙ্গবন্ধু নিজেই রেখে গেছেন। জুলফিকার আলী ভুট্টোর ঘাড়ে হাত দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হাস্যরসের ছবিটি খুব সম্ভবত ১৯৭৪ সালে ওআইসি সম্মেলনের সময় তোলা। যদি পাকিস্তানের সকলেই দায়ী হবে তাহলে ৭১ এর গণহত্যার তিন বছরের মধ্যেই কেন প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে বঙ্গবন্ধু এমন আচরণ করলেন ভুট্টোর সাথে যে ভুট্টো ৭১ সালে হানাদার রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন? রাজনীতি ধর্ম নয়। ধর্মে যেমন ধর্মগুরু বা প্রফেটকে অতিমানবীয় শুদ্ধ চরিত্রের আশা করা হয় রাজনীতি তেমন নয়।
রাজনীতিতে ব্যক্তি চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ তার কৃত কর্ম বা বিশ্বাসযোগ্যতার বর্তমান অবস্থান। একজন মুক্তিযোদ্ধা পরে মৌলবাদী বা রাষ্ট্রবিরোধী হয়ে যেতে পারে (যেমন মেজর জিয়া এবং আরও অনেক সমারিক কর্মকর্তা)। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে অনেক ব্যক্তি বেশিরভাগ উচ্চ শিক্ষিত প্রফেশনাল পিএইচডি প্রফেসরেরা পাকিস্তানপন্থী ছিল কিন্তু কিছুদিন পর তারা যখন নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তখন তাদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এসেছে।
১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর যখন পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে তখন ইয়াহিয়া ও তার নিকট জেনারেলরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। সেই হতাশা থেকেই ক্ষোভে এবং বাংলাদেশ যাতে কোনদিন মাথা তুলে না দাড়াতে পারে সেই কারণে তারা বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের নীল নকশা বাস্তবায়ন করে। সেই নকশার প্রথমে কার নাম থাকার কথা? শেখ মুজিব নয় কি? হ্যাঁ বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের পর পর পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পনের সময় শেখ মুজিবকে হত্যা চুড়ান্ত করে ফেলে খুনি ইয়াহিয়া। কিন্তু এতে বাধা দেয় স্বয়ং ভুট্টো। সে প্রথমে ইয়াহিয়াকে বোঝানের চেষ্টা করে যে এটা করা ঠিক হবে না। কিন্তু ইয়াহায়া সেটা মানে না। অর্ডার হয়ে যায় মুজিবকে জেলখানায় হত্যা করার জন্য বিজয়ের দিন ভোরেই। সেই সময় সলিটারি সেলে বন্দি জেলখানায় রাত তিনটায় মুজিবকে ডেকে তোলে তখনকার পুলিশ সুপার। রাত তিনটায় মুজিবকে জেলখানা থেকে বের করে সেই পুলিশ সুপার গোপনে তার বাসায় লুকিয়ে রাখে দুই দিন। মুজিবকে হত্যা করতে আসা সামরিক নির্দেশ পাওয়া লোকেরা তাকে খুঁজে পায় না। মুজিবের প্রাণ রক্ষার এই ব্যবস্থাটা করেছিল ভুট্টো নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে। ২০শে ডিসেম্বর ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সমারিক আইন প্রশাসক হলে ৮ই জানুয়ারী ১৯৭২ সালে সে শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়। [সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস জানুয়ারী ১৭, ১৯৭২ ]
একটা গল্প দিয়ে শেষ করি:
চীনের এক গ্রামে বাস করতেন একজন সৎ কৃষক। খুবই নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। এক কথায় গ্রামের সবাই তাকে ভাল বলেই জানত। সহজ সরল এ কৃষকের সম্পদের মধ্যে ছিল একখন্ড চাষের জমি আর একটা ঘোড়া। ঘোড়াটা কৃষিকাজে সে ব্যবহার করত। সেই কৃষকের ছিল একটা মাত্র ছেলে। ছেলেটাও বেশ ভদ্র। গ্রামের সবাই ছেলেটাকে অনেক ভালবাসে। কৃষক বাবার সে ছিল একমাত্র সহযোগী। হঠাৎ একদিন কৃষকের ঘোড়াটা হারিয়ে গেল। সকলে ভাবল কী সর্বনাশ? এত ভাল একটা মানুষের এত বড় বিপদ? গ্রামের প্রায় সব মানুষ সহমর্মিতা জানানোর জন্য ছুটে এলো কৃষকের কাছে।
তারা বলতে লাগল “আহারে, এত ভাল একজন মানুষের এত বড় বিপদ? কত ক্ষতিই না হয়ে গেল?“ এমনই আরও অনেক কিছু বলাবলি করতে লাগল তারা। এসব শুনে কৃষক একটু বিরক্ত হয়েই বলল, “আচ্ছা তোমরা যেটাকে আমার জন্য অকল্যাণ মনে করছ, সেটা যে কল্যাণ না তা তোমরা কীভাবে জান? ” উপস্থিত লোকজন তো অবাক! কতই না সরল আর বোকা এই লোক? একটা মাত্র ঘোড়া, সেটাই হারিয়ে গেল আর সে কিনা ভাবছে এটার মধ্যে কল্যাণও থাকতে পারে? বেকুব লোক একটা। তিরস্কার করতে করতে তারা চলে গেল।
এর কয়েকদিন পরে কৃষকের ঘোড়াটা একটা ঘুঁড়িসহ (মাদী ঘোড়া) ফিরে এলো। খবরটা জেনে গেল গ্রামবাসীরা। সবাইতো খুবই খুশি। সৎ কৃষকের কীভাবেই না পুরস্কৃত করলেন তার সৃষ্টিকর্তা। আনন্দের সংবাদ ভাগাভাগি করতে আবারও গ্রামবাসীরা ছুটে এলো কৃষকের বাড়ি। কত কথাই না বলল তারা। সবাইকে থামিয়ে কৃষক বললেন, আচ্ছা তোমরা যাকে কল্যাণ মনে করছো, সেটা তো আমার জন্য কল্যাণ নাও হতে পারে। সবাইতো চুপ। বলে কী বোকা লোক? একটা ঘোড়া পেল আর কী না বলে যে এটা তার জন্য কল্যাণ না? তিরস্কার করতে করতে চলে গেল সবাই।
পরদিন সকালে কৃষকের একমাত্র ছেলেটা গেল ঘোড়ার খাবার দিতে। ঘোড়াটা যেহেতু ছেলেটাকে চেনে তাই কিছুই বলল না। কিন্তু যেই না ঘুঁড়িটাকে খাবার দিতে গেল অমনি অপরিচিত লোক ভেবে দিল এক লাথি। ভেঙ্গে গেল ছেলেটির পা। আহত হয়ে সে পড়ে রইল বিছানায়। ”আহারে! এমন বিপদ এই ভাল লোকটার। সত্যিই তো এই ঘোড়াটা কৃষকের জন্য কোনো কল্যাণ নিয়ে আসেনি। কৃষক তো ঠিকই বলেছিল। কত বিপদই না হচ্ছে ভাল মানুষটার। আবারো ছুটে আসলো তারা কৃষকের বাড়ীতে। কতভাবেই না তারা দূঃখ প্রকাশ করার চেষ্টা করল। সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করল কৃষককে।
কৃষক আবার একটু বিরক্তই হলেন। বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বললেন, আচ্ছা আমার ছেলের পা ভেঙ্গে গেছে এটা তো অকল্যাণ না হয়ে কোনো কল্যাণও বয়ে নিয়ে আসতে পারে। গ্রামের লোকেরা আবারো তিরস্কার করতে করতে চলে গেল। এত বোকা লোক তো তারা কখনই দেখেনি! আহারে বেকুব লোকটা। কয়েকদিন পরে শুরু হলো যুদ্ধ। দেশের প্রত্যেক যুবককে বাধ্যতামূলক যুদ্ধে যেতে হবে। পা ভাঙ্গা ছেলেকে তো আর যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া যায় না তাই তাকে তারা রেখে গেল।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যে, ঐ গ্রামের সবাই যুদ্ধে নিহত হলো। এভাবে কৃষকের ছেলেটা বেঁচে গেল। কয়েকদিন পরে তার পা টাও ভাল হয়ে গেল। কত আশ্চর্যই না হলো সবাই। সবাই দেখল পা ভাঙ্গার কারণেই যুদ্ধে যাওয়া লাগল না। আর এভাবেই কৃষককে তার একমাত্র ছেলেটাকে হারাতে হলো না। অথচ গ্রামের সব ছেলেরা আজ মৃত। রাজনীতি শুধু নয় মানুষের জীবনে ভাল মন্দ বিচার কখনই পরম নয়। সেই কারণেই মনোবিজ্ঞানী কার্ল ইয়ুং বলেছেন “মানুষের মনে দ্বিধার যে দোলকটা দোলে সেটা কোন কিছু ভাল বা মন্দ সেটা নিয়ে নয়, কোন কিছু অর্থহীন না কি অর্থপূর্ণ সেটা নির্ণয়ে”।
আসুন ভাল মন্দ বিচার নয়, আমরা প্রতিটি কাজ অর্থপূর্ণ না কি অর্থহীন এটা দিয়ে মানুষকে বিচার করি। এটাই রাজনীতিতে ক্রিটিক্যাল থিংকিং।