গণঅভ্যুত্থানের এপিঠে বিনোদনে যত ঘটন-অঘটন ২০২৪
- আপডেট সময় : ১২:৩০:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 45
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর নানা খাতে পরিবর্তন এসেছে। সংস্কৃতি অঙ্গনও তার বাইরে নয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, চলচ্চিত্রের আঁতুড় ঘরখ্যাত এফডিসিসহ নানা জায়গাতেই হয়েছে রদবদল। দেখে নেওয়া যাক সেসব ঘটনাপ্রবাহ—
শুভর জমি বাতিল
৫ সেপ্টেম্বর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিকে অভিনয়, তারপর সরকারি প্লট পাওয়া—এসব ঘিরে আগে থেকেই আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। গণঅভ্যুত্থানের পর তাই হয়তো বাতিলের খাতায় প্রথম নামটিই তাঁর! গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত এক বোর্ড সভায় এই তারকার নামে বরাদ্দ ১০ কাঠার প্লট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
নতুন মহাপরিচালক
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গণঅভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদের নিয়োগের বিষয়টি। তাঁর যোগদানে কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন, তবে বেশির ভাগই তাঁকে শুভেচ্ছায় ভাসিয়েছেন। গত সেপ্টেম্বরে সৈয়দ জামিল আহমেদের নিয়োগের ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব নেন তিনি। এর আগে শিল্পকলার মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন লিয়াকত আলী লাকি। টানা ১৩ বছরের বেশি সময় এ পদে বহাল ছিলেন তিনি।
‘সিনেমাটিক’ বছরে তুমুল আলোচনায় যেসব সিনেমা‘সিনেমাটিক’ বছরে তুমুল আলোচনায় যেসব সিনেমা
সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
চলচ্চিত্রকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ‘সার্টিফিকেশন বোর্ড’ গঠন করার সিদ্ধান্ত জানান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এর আগে অবশ্য প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৫ সদস্যের সেন্সর বোর্ড ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে তা সার্টিফিকেশন বোর্ডে রূপ দেওয়া হয়। ১৫ সদস্যের এই বোর্ডে রয়েছেন কাজী হায়াত, কাজী নওশাবা আহমেদ, ড. জাকির হোসেন রাজু, রফিকুল আনোয়ার রাসেল, জাহিদ হোসেন, ইকবাল এহসানুল কবির, তাসমিয়া আফরিন মৌ প্রমুখ। ইতিমধ্যে এই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন নির্মাতা খিজির হায়াত খান।
মাঝপথে বন্ধ ‘নিত্যপুরাণ’
৩ নভেম্বর ২০২৪
নাট্যদল দেশ নাটকের দলনেতা এহসানুল এজাজ বাবুর একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে গত ৩ নভেম্বর ‘নিত্যপুরাণ’ প্রদর্শনীর সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে একদল তরুণ-যুবক বিক্ষোভ করেন। এ পরিস্থিতিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে মাঝপথে নাটকটির প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। পরে অবশ্য ২৭ নভেম্বর আবারও বন্ধ হয়ে যাওয়া নাটকটি মঞ্চস্থ হয়।
মামুনুর রশীদকে ‘না’
২৯ নভেম্বর ২০২৪
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় শিল্পকলার মঞ্চে মামুনুর রশীদকে ‘কিছুদিন অভিনয় না করার’ পরামর্শ দিয়েছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর নাট্যকর্মীরা এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। মূলত নাট্যদল আরণ্যক প্রযোজিত ‘রাঢ়াঙ’ নাটকে মামুনুর রশীদের অভিনয় করা নিয়ে নাকি কিছু লোকের ‘ক্ষোভ’ রয়েছে! যে কারণে ‘ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা থেকে’ মামুনুর রশীদকে এ কথা বলেছিলেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। গণমাধ্যমে এমনটা জানিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন শিল্পকলার মহাপরিচালক। তবে এ বিষয়ে মামুনুর রশীদের ভাষ্য, ‘সৈয়দ জামিল আহমেদ একইসঙ্গে যেমন ব্যক্তি, আবার তিনি শিল্পকলার মহাপরিচালকও। ফলে তিনি যখন শিল্পকলাকেন্দ্রিক কোনো বিষয়ে আমাকে ফোন করেন, তখন সেটি তো মহাপরিচালকের জায়গা থেকেই বলেছেন বলে ধরে নেব।’
এফডিসি’র এমডি বদল
১০ ডিসেম্বর ২০২৪
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মাত্র কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন অতিরিক্ত সচিব দিলীপ কুমার বণিক। এর আগে তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। তবে তাঁর এই পদ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মাত্র চার মাসের মাথায় নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান ফারাহ শাম্মী। এর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
মিলনায়তনের নাম পরিবর্তন
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংস্কার চলমান। এই ধারাবাহিকতায় নতুন নামকরণ করা হয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ৭টি মিলনায়তনের। গত ২০ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে অবগত করেন মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। জানা যায়, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনের নামকরণ হয়েছে আলাওল নাট্যালয়, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলের নাম সেলিম আল দীন নাট্যালয় এবং স্টুডিও থিয়েটার হলের নাম দেওয়া হয়েছে চন্দ্রাবতী নাট্যালয়। এ ছাড়া সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা ভবনের একটি মিলনায়তন ও নির্মাণাধীন আরেকটি মিলনায়তনের নামকরণ করা হয়েছে সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও মরমী সাধক শাহ আবদুল করিমের নামে। চারুকলা ভবনের মিলনায়তন ও নির্মাণাধীন আরেকটি মিলনায়তনের নামকরণ হয়েছে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ও ভাস্কর নভেরা আহমেদের নামে।
গান বাংলা বন্ধ
১১ ডিসেম্বর
মালিকানা নিয়ে আগে থেকেই বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল গান বংলায় দ্বন্দ্ব ছিল। গণঅভ্যুত্থানের পর তা আরও প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। গত ২৫ নভেম্বর সৈয়দ শামস উদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে তাপসসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে এ মামলায় গ্রেপ্তার হন তাপস।
বিভিন্ন কমিটিতে রদবদল
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ও ৪ নভেম্বর—এই দুই ধাপে পুনর্গঠিত হয়েছে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২৩’র জুরি বোর্ড। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তা জানানো হয়। ১৩ সদস্যের এই কমিটিতে রয়েছেন সুচরিতা, খাজা নাইম মুরাদ, মকসুদ জামিল মিন্টু, সাঈদুর রহমান সাঈদ, বরকত হোসেন পলাশ, ওয়াহিদ সুজন প্রমুখ।
‘লিয়াকত আলী যুগ’ শেষে পরিবর্তন এসেছে নাট্যচর্চার অভিভাবক সংগঠন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনেও। গত ২৫ অক্টোবর সংগঠনটির নির্বাহী পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের সভায় অভিনেতা-নির্দেশক মামুনুর রশীদকে প্রধান করে ফেডারেশন পুনর্গঠন ও সংস্কারের জন্য পাঁচ সদস্যের আহ্ববায়ক কমিটি গঠিত হয়। এতে তিনি ছাড়াও রয়েছেন মলয় ভৌমিক, আহমদ ইকবাল হায়দার, নাদের চৌধুরী ও নাজনীন হাসান চুমকি। এর ক’দিন পরই ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে মনোমালিণ্যের জেরে অব্যাহতি চেয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল
গত ১০ ডিসেম্বর বেসরকারিভাবে নির্মিত অনুষ্ঠান যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) ‘প্যাকেজ প্রিভিউ কমিটি’তে এসেছে নতুন মুখ। ১২ সদস্যের এই কমিটিতে রয়েছেন ইলোরা গহর, রাজীব সালেহীন, শাহেদ শরীফ খান, ফারহানা চৌধুরী বেবী, অপূর্ণ রুবেল, তানজিকা আমিন, শাহেদ আলী, আহমেদ তেপান্তর (মো. রবিউল আউয়াল হোসেন), নিশক তারেক আজিজ, রাশেদ মামুন অপু, মাইদুল ইসলাম রাকিব ও আরশ খান।
শিল্পী সমিতি ‘নীরব’
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গা-ঢাকা দিয়েছেন তৎকালীন সরকারের অন্যতম সমর্থকদের অনেকে। এই অবস্থায় এফডিসিতে পরিচালক, চলচ্চিত্র গ্রাহকসহ অন্যান্য সমিতির কার্যালয় কমবেশি সরব থাকলেও বেকায়দায় পড়েছে চলচ্চিত্র শিল্পীদের সংগঠন। প্রায় মাসতিনেক তাদের সমিতির কার্যালয় ছিল অনেকটাই নীরব। সদস্যদের আনাগোনা নেই বললেই চলে! বিশেষ করে চলচ্চিত্র অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলের নামে একটি মামলা হওয়ার পরই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। চলচ্চিত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, সভাপতি মিশা সওদাগরও আসছেন মাঝেমধ্যে।