ঘরে ঘরে জ্বর-কাশি পরীক্ষায় অনীহা
- আপডেট সময় : ০৪:৪৩:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জুলাই ২০২২
- / ৫০০৭ বার পড়া হয়েছে
সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন রাজধানীতে একটি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত শাম্মি আখতার ও তার ছেলে। জ্বরের মাত্রা তীব্র না হলেও শরীর প্রচ- দুর্বল হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, তার কাশি স্বল্পমাত্রায় হলেও ছেলের কাশি কিছুটা তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি হয়েছে। একই অবস্থা রাজধানীর একটি স্কুলের শিক্ষিকা শারমিনের। তিনি এবং তার দুই ছেলে সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হন। তার ও তার ছোট শিশুর জ্বর দুদিনে নেমে গেলেও বড় ছেলের জ্বর চার-পাঁচ দিন স্থায়ী হয়। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই তাকে নাপা ট্যাবলেট খাওয়ান তিনি। শুধু শাম্মি আখতার বা শারমিন নন সারাদেশেই এখন ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশির প্রকোপ চলছে। প্রতিটি ঘরেই কেউ না কেউ জ্বর বা সর্দি কাশিতে আক্রান্ত। এ পরিস্থিতি এমন একসময়ে সৃষ্টি হয়েছে, যখন দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী। বেড়েছে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপও। অথচ জ্বরে আক্রান্ত হলেও অনেকেই করোনা বা ডেঙ্গু পরীক্ষায় আগ্রহী নন। ফলে বোঝা যাচ্ছে না করোনা বা ডেঙ্গু, কিসে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্তদের মধ্যে ৫০ শতাংশেরই সম্ভবত কোভিড-১৯। বাকিরা মৌসুমি জ্বরে ও সামান্য কিছু মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। জ্বর, সর্দি, কাশি, শরীর ব্যথা, রুচি নেই, গলাব্যথা, ঘ্রাণশক্তি নেই- যাদেরই এ ধরনের লক্ষণ থাকছে, তাদের অবশ্যই কোভিড পরীক্ষা করতে হবে।
কোভিড পজিটিভ হলে থাকতে হবে আইসোলেশনে, যেন তার মাধ্যমে পরিবারের আর কেউ আক্রান্ত না হয়। বিশেষ করে ক্যানসার, কিডনি, লিভার, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের রোগীদের জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যেহেতু এখন ডেঙ্গু ও কোভিডের সংক্রমণ ঊধ্বমুর্খী। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।
রাজধানীর ওষুধের দোকানগুলোতে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জ্বর, সর্দির ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন এমনকি অনেকে বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কিনে সেবন করছেন। এসব ওষুধ সেবনের কারণে তারা দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে দাবি করেন। এমনকি জ্বর, সর্দি থাকলেও আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে তাদের মাধ্যমে পরিবার ও কর্মস্থলের অন্যরাও আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে যারা জ্বরে আক্রান্ত তাদের ৫০ শতাংশই কোভিড সংক্রমণের শিকার। দেশে কোভিডের সংক্রমণ বিরাজমান থাকা, টিকার দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ গ্রহণ না করা, শিশুদের টিকার আওতায় না আনা ইত্যাদি কারণে মানুষের মধ্যে এখনো প্রয়োজনীয় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে মাস্ক ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলেই পরীক্ষা করাতে হবে। যারা করোনা টিকার পূর্ণাঙ্গ কোর্স সম্পন্ন করেননি, তাদের দ্রুত সব ডোজ নিতে হবে। টিকার বিষয়ে কোনোভাবেই উদাসীন থাকা যাবে না। আর যে জ্বরই হয়ে থাকুক না কেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। এসব রোগীদের বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। তবে ঝুঁকি এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পাশাপাশি সংক্রমণ রোধে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও রেসপারেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে ঘরে ঘরে ভাইরাসজনিত মৌসুমি জ্বরের প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে এই জ্বর অনেক বেশি সংক্রামক। তাই কোন পরিবারে একজন জ্বরে আক্রান্ত হলে তাকে আইস্যুলেশনে থাকতে হবে। তাহলে পরিবারের অন্য সদস্যরা সুরক্ষিত থাকবে। যাদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে মৌসুমি জ্বর হলেও কোভিড-১৯ পরীক্ষা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। একই সঙ্গে যাদের করোনা টিকার পূর্ণ ডোজ নেওয়া হয়নি, তাদেরও অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হবে। কারণ বর্তমানে যাদের মৃত্যু হচ্ছে, তাদের প্রত্যেকেরই কো-মর্বিডিটি ছিল। তবে সবচেয়ে ভালো হয় জ্বর হলেও কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া।