ঢাকা ১১:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা আজ ডিসির দায়িত্বে শেখ হাসিনা চাইলে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারেন হাসিনাকে যেভাবে ভারত থেকে ফেরত আনা সম্ভব জ্বালানির অভাব, সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটলে তাৎক্ষণিক বিকল্প নেই বিপিডিবির ভারতের সঙ্গে চলমান কোনো প্রকল্প স্থগিত হয়নি:অর্থ উপদেষ্টা এত বিদ্যুৎকেন্দ্র, তবু কেন লোডশেডিং পোশাক কারখানার শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে কী ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ টাকা পাচারের স্বর্গ বাংলাদেশ রাজাকার খুঁজে বার করার ভার পেলেন তাঁদেরই আইনজীবী পুলিশ সংস্কারে শিগগিরই প্রাথমিক কমিটি গঠন : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শেখ হাসিনার বিচার সরাসরি সম্প্রচার করা হবে মেট্রোরেলের ছিদ্দিকের চুক্তি বাতিল, চলতি দায়িত্বে রউফ বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় ১৭ স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটরের নিয়োগ বাতিল রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনে জোর প্রধান উপদেষ্টার সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড! গণঅভ্যুত্থানে নিহত ৬৩১, আহত ১৯২০০ শাহজালাল বিমানবন্দরে পরিবর্তনের হাওয়া ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এডিবি: অর্থ উপদেষ্টা নিম্ন আদালতের ১৬৮ বিচারককে একযোগে বদলি

চাকরি ছেড়ে খামারি, হাটে গরু বেচতে এসেছেন সালমা

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০১:২৫:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জুলাই ২০২২
  • / ৫০১৬ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গতকাল বুধবার বিকেলে সরেজমিনে বিবিরহাটে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় কাটছে সালমার। পরম মমতায় গরুর পরিচর্যা করছেন। নিজেই তৈরি করছেন প্রাণীগুলোর খাবার। খাবারের মিশ্রণে সব উপাদান ঠিক আছে কি না, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন তিনি। এসব করতে গিয়ে দম ফেলার ফুসরত নেই তাঁর। এরপরও গরুর যত্নে যাতে কোনো ত্রুটি না রয়ে যায়, সেজন্য সঙ্গে থাকা কর্মীদের দিচ্ছিলেন বিভিন্ন নির্দেশনা।

নারী উদ্যোক্তা সালমার বাড়ি উত্তরবঙ্গে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সেখানেই তাঁর খামার। গত দুই বছর ধরে নিজের খামারে গরু পালছেন। তবে এর আগে কোরবানির পশুর হাটে গরু আনেনি তিনি। এবারই প্রথম গরু নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সোজা চট্টগ্রামের পশুর হাটে এসেছেন সালমা। বিক্রির জন্য সঙ্গে এনেছেন ১০টি গরু।

কোরবানির জন্য হাটে আনা গরুর যত্নে যাতে কোনো ত্রুটি না রয়ে যায়, সেজন্য বিবিরহাটে ব্যস্ত সময় পার করছেন সালমা খাতুন

কোরবানির জন্য হাটে আনা গরুর যত্নে যাতে কোনো ত্রুটি না রয়ে যায়, সেজন্য বিবিরহাটে ব্যস্ত সময় পার করছেন সালমা খাতুন

নিজ এলাকায় বিক্রি না করে এতদূরে গরু নিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে সালমা বললেন, তাঁদের এলাকার আরও অনেকে গরু নিয়ে বিবিরহাটে আসেন। এখানে নাকি বেশ ভালো দামে গরু বিক্রি হয়। তাই অন্যদের সঙ্গে তিনিও গরু নিয়ে এই হাটে এসেছেন। আশা করছেন, ১০টি গরুই বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে পারবেন।

তবে নারী উদ্যোক্তা হওয়ার, বিশেষত খামারি হওয়ার পথটা সহজ ছিল না সালমার। জানালেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানার ফতেপুর গ্রামের মেয়ে তিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক করেছেন। এরপর ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। সেখান থেকে লাভ করেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ২০১৬ সালে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নেন তিনি। খুব একটা খারাপ চলছিল না। তবে চাকরিজীবনে বড় ধাক্কা খান করোনা মহামারির সময়। ছাড়তে হয় চাকরি।

ওই সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে সালমা বলেন, ‘চাকরি ছাড়লেও ঘরে বসে থাকার মানুষ আমি নই। প্রতিনিয়ত ভাবতাম, কী করা যায়। এভাবেই গরুর খামার দেওয়ার চিন্তা মাথায় আসে।’ সেই ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন সালমা। জমানো টাকা দিয়ে একটি গাভী কিনেন। শুরুর দিকে দুধ বিক্রি করতেন। দ্রুত বড় হতে থাকে তাঁর খামার। এক পর্যায়ে ছয় কাঠা জমির ওপর খামার গড়ে তোলেন। দুধের পাশাপাশি বিক্রি করতে শুরু করেন গরুও। আয় বাড়লে নতুন গরু কিনেন। দুই বছরের মধ্যে এখন তাঁর খামারে রয়েছে ২০টি গরু।

লালনপালন করতে করতে গরুগুলোর প্রতি ভীষণ মায়া জন্মে গিয়েছে বলে জানালেন সালমা। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় এই খামার ছেড়ে অন্য কিছু করি। কিন্তু ছাড়তে পারি না। অবলা পশুগুলোর প্রতি ভালোবাসা জন্মে গিয়েছে। তাদের মায়ায় জড়িয়ে গেছি। আসলে আমার পক্ষে এখন আর অন্য কিছু করা সম্ভব নয়। এখন এদের নিয়েই থাকব।’

সালমার বিষয়ে কথা হলো বিবিরহাট পশু বাজারের ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক রেজাউল করিমের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিবিরহাটে আগে কখনো কোনো নারী পশু বিক্রি করতে এসেছেন বলে জানা যায়নি। এবারের হাটে তিনিই (সালমা) একমাত্র নারী বিক্রেতা। এমনকি চট্টগ্রামের অন্যান্য পশুর হাটে কোন নারী গরু বিক্রি করতে এসেছেন বলেও জানা যায়নি। তাই ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সালমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

চাকরি ছেড়ে খামারি, হাটে গরু বেচতে এসেছেন সালমা

আপডেট সময় : ০১:২৫:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জুলাই ২০২২

গতকাল বুধবার বিকেলে সরেজমিনে বিবিরহাটে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় কাটছে সালমার। পরম মমতায় গরুর পরিচর্যা করছেন। নিজেই তৈরি করছেন প্রাণীগুলোর খাবার। খাবারের মিশ্রণে সব উপাদান ঠিক আছে কি না, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন তিনি। এসব করতে গিয়ে দম ফেলার ফুসরত নেই তাঁর। এরপরও গরুর যত্নে যাতে কোনো ত্রুটি না রয়ে যায়, সেজন্য সঙ্গে থাকা কর্মীদের দিচ্ছিলেন বিভিন্ন নির্দেশনা।

নারী উদ্যোক্তা সালমার বাড়ি উত্তরবঙ্গে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সেখানেই তাঁর খামার। গত দুই বছর ধরে নিজের খামারে গরু পালছেন। তবে এর আগে কোরবানির পশুর হাটে গরু আনেনি তিনি। এবারই প্রথম গরু নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সোজা চট্টগ্রামের পশুর হাটে এসেছেন সালমা। বিক্রির জন্য সঙ্গে এনেছেন ১০টি গরু।

কোরবানির জন্য হাটে আনা গরুর যত্নে যাতে কোনো ত্রুটি না রয়ে যায়, সেজন্য বিবিরহাটে ব্যস্ত সময় পার করছেন সালমা খাতুন

কোরবানির জন্য হাটে আনা গরুর যত্নে যাতে কোনো ত্রুটি না রয়ে যায়, সেজন্য বিবিরহাটে ব্যস্ত সময় পার করছেন সালমা খাতুন

নিজ এলাকায় বিক্রি না করে এতদূরে গরু নিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে সালমা বললেন, তাঁদের এলাকার আরও অনেকে গরু নিয়ে বিবিরহাটে আসেন। এখানে নাকি বেশ ভালো দামে গরু বিক্রি হয়। তাই অন্যদের সঙ্গে তিনিও গরু নিয়ে এই হাটে এসেছেন। আশা করছেন, ১০টি গরুই বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে পারবেন।

তবে নারী উদ্যোক্তা হওয়ার, বিশেষত খামারি হওয়ার পথটা সহজ ছিল না সালমার। জানালেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানার ফতেপুর গ্রামের মেয়ে তিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক করেছেন। এরপর ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। সেখান থেকে লাভ করেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ২০১৬ সালে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নেন তিনি। খুব একটা খারাপ চলছিল না। তবে চাকরিজীবনে বড় ধাক্কা খান করোনা মহামারির সময়। ছাড়তে হয় চাকরি।

ওই সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে সালমা বলেন, ‘চাকরি ছাড়লেও ঘরে বসে থাকার মানুষ আমি নই। প্রতিনিয়ত ভাবতাম, কী করা যায়। এভাবেই গরুর খামার দেওয়ার চিন্তা মাথায় আসে।’ সেই ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন সালমা। জমানো টাকা দিয়ে একটি গাভী কিনেন। শুরুর দিকে দুধ বিক্রি করতেন। দ্রুত বড় হতে থাকে তাঁর খামার। এক পর্যায়ে ছয় কাঠা জমির ওপর খামার গড়ে তোলেন। দুধের পাশাপাশি বিক্রি করতে শুরু করেন গরুও। আয় বাড়লে নতুন গরু কিনেন। দুই বছরের মধ্যে এখন তাঁর খামারে রয়েছে ২০টি গরু।

লালনপালন করতে করতে গরুগুলোর প্রতি ভীষণ মায়া জন্মে গিয়েছে বলে জানালেন সালমা। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় এই খামার ছেড়ে অন্য কিছু করি। কিন্তু ছাড়তে পারি না। অবলা পশুগুলোর প্রতি ভালোবাসা জন্মে গিয়েছে। তাদের মায়ায় জড়িয়ে গেছি। আসলে আমার পক্ষে এখন আর অন্য কিছু করা সম্ভব নয়। এখন এদের নিয়েই থাকব।’

সালমার বিষয়ে কথা হলো বিবিরহাট পশু বাজারের ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক রেজাউল করিমের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিবিরহাটে আগে কখনো কোনো নারী পশু বিক্রি করতে এসেছেন বলে জানা যায়নি। এবারের হাটে তিনিই (সালমা) একমাত্র নারী বিক্রেতা। এমনকি চট্টগ্রামের অন্যান্য পশুর হাটে কোন নারী গরু বিক্রি করতে এসেছেন বলেও জানা যায়নি। তাই ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সালমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।