বাংলাদেশের সবচেয়ে দর্শনীয় ও ভ্রমনপিপাষুদের সর্বাধিক পছন্দের দারুচিনি দ্বীপ আজ যেনো এক বিরান, জনবিচ্ছিন্ন, শ্মশানের অন্ধকারে নিমজ্জিত নিষিদ্ধ লোকালয়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের অধিবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক মাস ধরে সেখানে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। পর্যটক আসা সম্পুর্ন বন্ধ। টেকনাফ থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বোঝাই ট্রলার যেখানে প্রতিদিন আসতো, সেটা এখন মাঝে মাঝে আসে। কারন সেন্ট মার্টিনে পর্যটক আর ব্যাবসায়ীদের আনোগোনা শূন্যের কোঠায় পৌছে যাওয়ায় পণ্যের চাহিদা নেই।
সেন্টমার্টিনের বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পুর্ন শাট ডাউন অবস্থায় আছে। এমনিতে বেশীরভাগ লজ আর হোটেল পর্যটন মৌশুমে সন্ধ্যার পরে সার্বক্ষনিক জেনারেটর এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতেন। কিন্তু এখন আয় কমে যাওয়ায় জেনারেটর সার্ভিস পুরো পুরি বন্ধ। তার উপরে পল্লী বিদ্যুতের বিদ্যুৎ সরবরাহ শূন্যের কোটায়। রীতিমতো অন্ধারাকাচ্ছন্ন শ্মশানের অবস্থা বিরাজ করছে, একসময়ের ঝলমলে প্রবাল দ্বীপটিতে।
কোন বিকল্প ব্যাবস্থা না করে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থনকে হুমকির মুখে ফেলে দিলো পরিবেশ উপদেষ্টা রেজওয়ানা হাসান এর এই সিন্ধান্ত। একরকম জোর করে, কারো রুটি রোজগার, জীবন যাপন, কোটী কোটি টাকা বিনিয়োগের পরোয়া না করে চাপিয়ে দেয়া একটা সিন্ধান্ত যেন। যেভাবে হঠাত করেই কোন চিন্তা ভাবনা না করেই পলিথিন নিষিদ্ধের ঘোষনা দিয়েছিলেন, সেই একই রকমভাবে সেন্ট মার্টিন এ পর্যটক নিষিদ্ধের এই হঠকারী সিন্ধান্ত। যদিও তিনি পরবর্তিতে পলিথিন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলেন।
গত ২৭ শে অক্টোবর সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণমিছিল ও সমাবেশ করেছে। তারা দেশটির একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাখার দাবি জানান। অন্যথায়, দ্বীপে অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বুধবার কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন বাজারে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে স্থানীয়দের উদ্যোগে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। শেষে একটি গণমিছিল বের করা হয়, যাতে বিপুলসংখ্যক সাধারণ জনগণ ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
সমাবেশে স্থানীয় ইউপি সদস্য সৈয়দ আলম, আবদুর রহমান, ব্যবসায়ী মাহবুব আলম, নাসির উদ্দীন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, দ্বীপের মানুষের আয়-রোজগার পর্যটকনির্ভর। ফলে, দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত না রাখলে সকল প্রকার নৌযান বন্ধসহ দ্বীপে অবরোধ পালন করা হবে।
এর আগে মঙ্গলবার রাজধানীতে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় দ্বীপে পর্যটক সীমিত করার কথা জানান। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দৈনিক দুই হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে পারবেন। এছাড়া, নভেম্বর মাসে পর্যটক যেতে পারলেও, কেউ রাত যাপন করতে পারবেন না। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পরিচ্ছন্নতা অভিযান থাকে, ফলে সে সময় কোনো পর্যটক যেতে পারবেন না।