ঢাকা ১১:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় বাংলাদেশ এ বছর শীত কম হবে, নাকি বেশি হবে? শেখ হাসিনার বক্তব্য সমর্থন করে না ভারত: বিক্রম মিশ্রি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ডিএমপির ট্রাফিক নির্দেশনা নিষিদ্ধ হচ্ছে ই-সিগারেট ভারতে বসে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যক্রম, যা জানাল মোদি সরকার আসিফ নজরুলকে ‘র’ এজেন্ট বলার প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন আসিফ মাহমুদ সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মি, কী প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে? শেখ পরিবারের কে কোথায় আছেন? শেখ পরিবারের সিনেমায় ৩৭৮ কোটি রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে: নাহিদ ইসলাম স্বেচ্ছায় সরে গেলে সাধারণ ক্ষমা পাবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা: উপদেষ্টা শেখ হাসিনার সরব হওয়াকে যেভাবে দেখছে সরকার, বিএনপি ও জামায়াত জুলাই বিপ্লবের কন্যাদের কীর্তিগাঁথা শুনলেন প্রধান উপদেষ্টা ইজতেমায় ১৪ দেশের নাগরিকদের ভিসা দিতে সতর্কতা ‘শেখ হাসিনা উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন’ দিল্লিকে ঢাকা লন্ডনে দেখা মিলল পালিয়ে যাওয়া মন্ত্রী-এমপিদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের মন্তব্য ‘সমীচীন’ নয়: দিল্লিকে ঢাকা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘দৃঢ় ও ঘনিষ্ঠ’: ড. ইউনূস ইইউ’র ২৭ দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক আজ

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থী: স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা?

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৫:৪০:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
  • / 95
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

“ট্রাফিক পুলিশরা মানুষ, স্টুডেন্টরা কি মানুষ না? ট্রাফিক পুলিশের সমস্যা হলে স্টুডেন্টদেরও সমস্যা হতে পারে,” বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থী: স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা?
ঢাকায় ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় সীমিত পরিসরে কাজ করছেন শিক্ষার্থীরাও। অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে দৈনিক সম্মানীর বিনিময়ে নামানো হয়েছে তাদের। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন।
প্রশান্ত মিত্র

রাজধানীর আসাদগেট এলাকা থেকে সংসদ ভবনের সামনের দিকের সড়কে যেতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ক্রসিংয়ের বাঁ দিকে যানবাহন মোড় নিতে তুলনামূলক ছোট একটি লেইন। অথচ একেবারে মোড়েই রাস্তা দখল করে রিকশা ও ‘রাইড শেয়ারিং’ মোটরসাইকেল রাখার হিড়িক সামলাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য।

সড়কে ট্রাফিক সামলাতে ‘নব্য নিয়োজিত’ শিক্ষার্থীরা যতক্ষণ থাকছেন, ততক্ষণ তাদের তৎপরতায় সড়কটির মোড়ে রিকশা বা মোটরসাইকেলের জটলা থাকছে না। কিন্তু ‘নির্ধারিত কর্মঘণ্টা’ শেষ করে তারা সড়ক থেকে সরে যেতেই আবার রাস্তা দখল হয়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার দুপুরে সড়কটির এমন চিত্রের পাশাপাশি ট্রাফিকে শিক্ষার্থীদের হাত পড়ায় এমন অনেক ‘ভালো প্রভাব’ দেখতে পাওয়া গেছে রাজধানী ঢাকার অনেক সড়কে। বিষয়গুলোকে নিজেদের জন্য স্বস্তির বলে জানাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। তবে ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষার্থীদের ‘অযাচিত’ তৎপরতায় ‘ঝুঁকি’ তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন তারা।

সড়ক ব্যবহারকারীরাও বলছেন, শিক্ষার্থীরা ভালো কাজ করছে, আবার কখনও ‘ভুল সিগন্যাল’ বা ‘বাড়াবাড়িও’ করছে। এমন পরিস্থিতিতে একজন সড়ক বিশেষজ্ঞের চাওয়া, সড়কে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি যেন সাময়িকই হয়।

প্রথম ধাপে গত ৫ নভেম্বর ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে সড়কে নামানো হয়। এরপর কয়েক ধাপে নামে বাকিরা। তবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় ছিল কি না, সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।

এ নিয়ে পুলিশেও উদ্বেগ আছে, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিষয়টিতে পাত্তা না দিয়ে বলেছেন, ‘পুলিশের সমস্যা হলে ছাত্রদেরও হবে।’

‘ভালো-মন্দের’ এমন মিশ্র মতামতের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম দফায় ২৯১ জন শিক্ষার্থীকে যুক্ত করার তথ্য দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের-ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান।

“আমরা মোট ৬০০ শিক্ষার্থীকে সড়কে যুক্ত করব। বাকি ৩০৯ জনকে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেওয়া হবে।”

সরকার পতনের পর পুলিশ উধাও হয়ে যাওয়ার মধ্যে সড়কে শৃঙ্খলায় কাজ করেছিল শিক্ষার্থীরা। যানজটের প্রকোপের মধ্যে সেই স্মৃতিই শিক্ষার্থীদেরকে এই কাজে নিয়োগ করতে প্ররোচিত করেছে।
সরকার পতনের পর পুলিশ উধাও হয়ে যাওয়ার মধ্যে সড়কে শৃঙ্খলায় কাজ করেছিল শিক্ষার্থীরা। যানজটের প্রকোপের মধ্যে সেই স্মৃতিই শিক্ষার্থীদেরকে এই কাজে নিয়োগ করতে প্ররোচিত করেছে।

 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক এম শামসুল হক শিক্ষার্থীদেরকে এই কাজে জড়ানোর তীব্র বিরোধিতা করেছেন।তিনি বলেন, “ট্রাফিক পুলিশের কাজে ছাত্রদের ব্যবহার করা ঠিক নয়, এটা বিজ্ঞানসম্মতও না। সড়ক ব্যবহারকারীদের সাথে অযাচিত অনেক ঝামেলা লেগে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।”

তিনি চাইছেন, এ ব্যবস্থাপনা যেন স্থায়ী না হয়।

ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিনই হামলা চালানো হয় থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায়; লুটপাট-ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। সারাদেশ পুলিশশূন্য হয়ে পড়ায় সড়কের শৃঙ্খলার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।

পরে ট্রাফিক পুলিশ ফিরলেও তারা আগের মত তৎপর নয়, যানজট পরিস্থিতির অবনতিতে তীব্র ভোগান্তির মধ্যে গত ২১ অক্টোবর পুলিশের সঙ্গে কাজ করতে ৩০০ শিক্ষার্থীকে দৈনিক ‘সম্মানীসহ’ যুক্ত করার কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

অম্লমধুর অভিজ্ঞতা

মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে কথা প্রসঙ্গে রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরসাইকেল চালানো শামীম আহমেদ বলেন, “স্টুডেন্টরা অনেক ভালো কাজ করছেন। তারা থাকলে উল্টাপথের বা এলোমেলো চলাচল করা যানবাহন বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাসগুলো যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করে না।”

পরক্ষণেই তিনি বলেন, “কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে হুটহাট রাস্তা দিয়ে দৌড়ে সামনে চলে আসা, অতি উৎসাহী হয়ে একসঙ্গে একাধিক সিগন্যাল দেওয়ার বিষয়টি ঘটছে। তবে হয়ত আরও কিছুদিন কাজ করলে বিষয়গুলো ঠিক হয়ে যাবে।”

একই সিগন্যালে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক কনস্টেবল বলেন, “স্টুডেন্টরা মাঝে-মধ্যে ভুলভাল সিগন্যাল দিয়ে বসতেছে। এতে উল্টো জটলা তৈরি হয়ে যাচ্ছে, আমরা আবার গিয়ে ঠিক করে দিচ্ছি।”

ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় শিক্ষার্থীদের তৎপরতা নিয়ে ভালো-মন্দ দুই ধরনের অভিজ্ঞতার কথাই জানা যাচ্ছে।
ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় শিক্ষার্থীদের তৎপরতা নিয়ে ভালো-মন্দ দুই ধরনের অভিজ্ঞতার কথাই জানা যাচ্ছে।

আজিমপুর থেকে উত্তরা রুটে চলাচলকারী বিকাশ পরিবহনের একটি বাসের চালক সোহাগ মিয়া বলেন, “মাঝে-মধ্যে পেছন থেকে এসে ছাত্ররা বাসে পেটানো শুরু করে থামাইছি কেন? কিন্তু সামনে যে অন্য গাড়ি দাঁড়াইয়া আছে, আমার যে যাওনের জাগা নাই সেইটা বুঝে না।”

এমনিতে শিক্ষার্থীরা সড়কে থাকলে যান চলাচলে আগের চেয়ে ভালো শৃঙ্খলা থাকার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের কারণে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ‘ভালো হচ্ছে’ মন্তব্য একই বাসের যাত্রী মাসুদ আলম বলেন, “অনেক জায়গায় নতুন নতুন পুলিশ আসছে, তাদের কথা কেউ শুনে না। স্টুডেন্টরা থাকলে কথা শুনতেছে। তারা অনেক পরিশ্রম করতেছে।”

তাদের অভিজ্ঞতা কেমন?

ঢাকার মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশেই উল্টাপথে রিকশা-মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার কাজ করছিলেন ট্রাফিকে নিয়োগ পাওয়া আলহাজ মকবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে স্নাতক পাস করা মাহবুবুল আলম। দাঁড়িয়ে থেকে একটি রিকশাকে যেতে বাধা দিলেও, পেছন থেকেই অন্য রিকশা যাওয়ার চেষ্টায় বিরক্ত হচ্ছিলেন তিনি।

কথা প্রসঙ্গে বললেন, “প্রবলেম হচ্ছে আমরা কেউ আইন মানতে চাই না। এতদিন পুলিশকে গালি দিয়েছে, এখন হয়ত আমাদের গালি দেবে। তারপরেও আমরা মানুষকে ‘রং সাইড’ থেকে ‘রাইট সাইডে’ আনার চেষ্টা করছি।”

সড়কে এখনও পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ না থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “একটা সিগন্যালে যেখানে ৭-৮ জন পুলিশ কাজ করত, এখন সেখানে আছেন ২-১ জন করে। বিষয়গুলো আমরা উপরের মহলকে জানাচ্ছি। আমাদের লোকবল আরও বাড়বে। লোকবল বাড়লে আমরা উনাদের (ট্রাফিক পুলিশের) রেকমেন্ডেশনে কাজ করব না। আমরা আমাদের মত করে কাজ করব, উনারা শুধু তদারকি করবেন।”

গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী কায়সার আহমেদ বলেন, “মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সোমবার রাতের শিফটে কাজ করছিলাম। সাড়ে ৮টায় আমরা চলে যাওয়ার সময় হতেই একবারে মোড়টাতে আবার রিকশা আর মোটরসাইকেলগুলো যে যেভাবে পারে রেখে দিচ্ছে।

“আবার অনেকে যেখানে বাস থেকে নামছে, সেখানেই রাস্তা পার হতে চায়। একটু সামনে এগিয়ে সিগন্যাল পড়লে পার হবে, সেজন্য অপেক্ষা কেউ করতে রাজি না। সবাইকে আইন মানানোটাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা চেষ্টা করছি, সচেতনতার কাজ করছি। হয়ত বলতে বলতে একসময় ঠিক হয়ে যাবে।”

স্বাস্থ্যঝুঁকির কী হবে

২০২১ সালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা ৩৮৪ জন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৪ শতাংশ পুলিশই শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন।

‘ট্রাফিক এয়ার পলিউশন অ্যান্ড রেসপিরেটরি হেলথ: অ্যা ক্রস-সেকশনাল স্টাডি অ্যামং ট্রাফিক পুলিশ ইন ঢাকা সিটি (বাংলাদেশ)’ শীর্ষক গবেষণাটি জার্নাল অব মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল রিসার্চে প্রকাশ হয়।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে ছিলেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) রিসার্চ ফিজিশিয়ান সাকিলা ইয়াসমিন।

বায়ুদূষণের কারণে তৈরি হওয়া শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ধূমপায়ী ও অধূমপায়ী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রায় একই।

পরের বছর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের ডিপার্টমেন্ট অব অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইকা নিজামের নেতৃত্বে পরিচালিত আরেক গবেষণায় দেখা গেছে শব্দ দূষণের কারণে ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ রিকশাচালক ও ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ সদন্য কানের সমস্যায় ভুগছেন।

নানা গবেষণায় দেখা গেছে শব্দ ও বায়ু দূষণের কারণে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যাপক।
নানা গবেষণায় দেখা গেছে শব্দ ও বায়ু দূষণের কারণে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যাপক।

 

রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক উপমহাপরিদর্শক সরদার নুরুল আমিন বলেন, “ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সাধারণত ধুলার কারণে বেশি শ্বাসকষ্টে ভোগেন। এছাড়া দুর্ঘটনাজনিত চোটও থাকে তাদের।

“শিক্ষার্থীদেরও একই ঝুঁকি রয়েছে। যখন কাজ করবে তারা যেন অবশ্যই মাস্ক পরে নেন। একটু সতর্ক থাকলে এটা কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব। যানবাহনের মধ্যে এলোমেলো রিকশার কারণে একটু দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে, তারা যাতে এ বিষয়েও একটু সতর্ক থাকে।”

শিক্ষার্থীদেরকে সড়কে দায়িত্ব পালনের জন্য তৈরি করতে দুই দিনের একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর।

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) এম এ আখের বলেন, “আমরা একটা তালিকা পেয়েছি, সে অনুযায়ী তাদেরকে শুধু দুই দিনের একটা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। পরে তারা কী করবে, কোথায় করবে এটা আমরা জানি না। বাকিটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে।”

একই প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব (পুলিশ-২ অধিশাখা) এস এম হুমায়ুন কবির সরকার বলেন, “ট্রাফিক পুলিশরা মানুষ, স্টুডেন্টরা কি মানুষ না? ট্রাফিক পুলিশের সমস্যা হলে স্টুডেন্টদেরও সমস্যা হতে পারে।”

পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটবে কি?

শিক্ষার্থী মো. রুবেল বলেন, “পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে না। কাজ করতে হলে আমাদের একটু মানিয়ে নিতেই হবে। তবে নিজের সুবিধামত শিফট চয়েজ করার সুযোগ থাকছে। সকালে ক্লাস থাকলে বিকেলে ডিউটি করতে পারব। পরীক্ষা বা যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে ছুটি চাইলে ঊর্ধ্বতনকে জানিয়ে বা আবেদন করে ছুটিও নেওয়া যাবে।”

মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ১০ নভেম্বর থেকে কাজ করা শিক্ষার্থী মাহবুবুল আলম বলেন, “ছাত্রদের অনেকটা সময় অবসরই থাকে। সেজন্যই আমাদেরকে অফিসিয়ালি পার্টটাইম কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”

আছে আঘাতের ঝুঁকিও

ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রথম শর্তই ছিল পরিবারের অনুমতি।

কায়সার আহমেদ নামে একজন বললেন, “বাবা-মা বলেছে রোদের মধ্যে যাওয়ার দরকার নাই। এমন বলাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। আমরা আগেও কাজ করেছি, তাই এখন এতটা চ্যালেঞ্জ মনে হয় না। স্যাররাও (ট্রাফিক পুলিশ) আমাদের রেস্ট নিতে বা পানি খেতে বলেন।”

শিক্ষার্থীরা সড়কে কাজ করতে গিয়ে আঘাত পান কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলছেন, তাদের সঙ্গে থাকা পুলিশের সদস্যরাও।
শিক্ষার্থীরা সড়কে কাজ করতে গিয়ে আঘাত পান কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলছেন, তাদের সঙ্গে থাকা পুলিশের সদস্যরাও।

আসাদগেটে কাজ করা শিক্ষার্থী রুবেল বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই বাবা-মা দিতে চায়নি, যে রোদের মধ্যে কাজ করব। কিন্তু তাদের বুঝিয়ে বলেছি, আমার জন্য যদি একটা মানুষ সঠিক সময়ে হাসপাতালে যেতে পারেন বা আমার জন্য যদি একটা মানুষ সঠিক সময়ে অফিসে যেতে পারেন এটাই আমার সার্থকতা।”

শিক্ষার্থীরা কাজ করায় ‘হেল্প হচ্ছে, রিলাক্স পাচ্ছি’ মন্তব্য করে আসাদগেট সিগন্যালে কাজ করা ট্রাফিক পুলিশের এসআই আতাবুল হোসেন বলেন, “কিছু কিছু সময় ছাত্ররা থাকলে মানুষ বেশি কথা শুনছে।”

তবে কিছু ঝুঁকির কথাও উঠে এল তার বক্তব্যে।

ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখলেই দায়িত্বরত শিক্ষার্থীরা দৌড়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা যে দৌড় দিচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটলে দায় কে নেবে? আমাদের অগোচরে ঘটনা ঘটে গেলে কী হবে? আমরা বারবার বলি, অত রিস্ক নেওয়ার দরকার নাই।

“বেপরোয়া রিকশাচালকরা অনেক সময় রিকশায় উঠে পড়লেও চালিয়ে অনেকদূর পর্যন্ত নিয়ে যায়। নিয়ে যদি আবার মারধর করে, সেই ঝুঁকিও থাকে। আমরা যতটা সম্ভব এসব বিষয়গুলো তাদের বোঝাই।”

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, “সাধারণত কেউ উল্টা পথে গাড়ি চালালে তাকে ‘না’ করা, কেউ হেলমেট না পরলে মনে করিয়ে দেওয়া, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার করতে নিষেধ করার কাজগুলোই সাধারণত শিক্ষার্থীরা করছেন। মূল ট্রাফিক কন্ট্রোলিংয়ের জন্য ট্রাফিক পুলিশ তো রয়েছেই।”

‘ঘোর বিরোধী’ এম শামসুল হক

পরিবহন বিশেষজ্ঞ এম শামসুল হক শিক্ষার্থীদের এভাবে সড়কে নামিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি নন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের রাস্তার পরিবেশটা টক্সিক। এখানে শিক্ষার্থীদের এত বেশি এক্সপোজার দেওয়া ঠিক না, পরিবেশগতভাবেও ঠিক না।”

পরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক শিক্ষার্থীদের এভাবে সড়কে নামিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি না। তিনি চান যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে তুলে নেওয়া হোক।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক শিক্ষার্থীদের এভাবে সড়কে নামিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি না। তিনি চান যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে তুলে নেওয়া হোক।

সরকার পতনের পর নৈরাজ্যের সময় ছাত্ররা অনেক বেশি সংখ্যায় নেমে ‘ঠেকাটা’ সামলানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “সাময়িক হলে ঠিক আছে।

“এখন আমি বিশ্বাস করতে চাই যেহেতু পুলিশ এখনও ফুল ফর্মে নেই, সেহেতু স্বল্পমেয়াদে তাদেরকে নিযুক্ত করা হয়েছে। কোনোভাবেই এটা যেন দীর্ঘমেয়াদি না হয়ে যায়। তখন এটা পুলিশ বা ছাত্র কারও জন্যই ভালো হবে না। সড়ক ব্যবহারকারীরাও বিরক্ত হবে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হবে। দ্রুতই তাদেরকে সরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।”

দীর্ঘমেয়াদে স্বয়ংক্রিয় সংকেত বাতির মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, “সে কাজে নজর দিলে মানুষ স্বস্তি পাবে।”

যে প্রক্রিয়ায় বাছাই

সরকার পতনের পর সড়কে যেসব শিক্ষার্থী কাজ করেছিলেন, তাদের মাধ্যমেই তালিকা চাওয়া হয়। এরপর তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় দুই দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

সেখান থেকে বাছাই করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে হয় আরও দুই দিনের প্রশিক্ষণ। শারীরিক দক্ষতাসহ যাচাই-বাছাই শেষে মনোনীতদের আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যুক্ত করতে নিয়োগপত্র দেয় ডিএমপি।

আসাদগেট সিগন্যালে কাজ করা দ্যা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের বিবিএর শিক্ষার্থী মো. রুবেল বলেন, “রাজারবাগের ট্রেনিংয়ের মূল বিষয় ছিল ফিটনেস। উচ্চতা, ওজন, শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে কি না। সেখানেও ট্রাফিকের নানান খুঁটিনাটি বিষয় জানানো হয়েছে। যারা ফিট হয়েছে তাদেরকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়।”

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় গত ২১ ও ২২ অক্টোবর। রাজারবাগে প্রশিক্ষণ হয় ৩০ ও ৩১ অক্টোবর।

এখন পর্যন্ত সড়কে কাজ করছেন ২৯১ জন শিক্ষার্থী। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর তাদেরকে দুই দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠায় রাজারবাগে। সেখানে তারা আরেক দফা প্রশিক্ষণ নেন।
এখন পর্যন্ত সড়কে কাজ করছেন ২৯১ জন শিক্ষার্থী। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর তাদেরকে দুই দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠায় রাজারবাগে। সেখানে তারা আরেক দফা প্রশিক্ষণ নেন।

রুবেল বলেন, “আমরা প্রতিদিন দুইটা শিফটে কাজ করছি। সকাল আটটা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। যে পয়েন্টে আমাদের দায়িত্ব থাকে সেখানে সময়মত এসে আমরা তখন ট্রাফিকের ইনচার্জ যিনি থাকে তাকে রিপোর্ট করছি। তারপর তারা দেখিয়ে দিচ্ছেন কোথায় কাজ করতে হবে, সেখানেই কাজ করছি।”

ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা খোন্দকার নজমুল বলেন, “সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ শারীরিক পরিশ্রমের বিষয়। কেউ আগ্রহ প্রকাশ করলেই তাদেরকে নেওয়া যায় না। এই প্রথম স্লটে ৪৫০ জন শিক্ষার্থী কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। এরমধ্যে তাদের শারীরিক দক্ষতা ও বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করে ২৯১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”

দিনে চার ঘণ্টা কাজ করে ৫০০ টাকা করে সম্মানী দেওয়া হবে সড়কে কাজ করা শিক্ষার্থীদের।
দিনে চার ঘণ্টা কাজ করে ৫০০ টাকা করে সম্মানী দেওয়া হবে সড়কে কাজ করা শিক্ষার্থীদের।

সম্মানী কীভাবে

প্রতিদিন চার ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে দিনপ্রতি একেকজনকে দেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা করে।

আসাদগেটে কাজ করা রুবেল বলেন, “তারা বলেছে আমরা চাইলে দিনপ্রতি বা সপ্তাহে নিতে পারি। কিন্তু আমাদের চাওয়া ছিল ১৫ দিন বা এক মাসে পাওয়া। প্রাথমিকভাবে হাতে হাতেই দেওয়া হবে, পরে হয়ত ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হতে পারে।”

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, “তাদেরকে পেমেন্ট করবে মন্ত্রণালয়। এখনও যেহেতু বাজেটের বিষয়টি পাস হয়নি তাই তারা এখনও কেউ টাকা পাননি। তবে তাদেরকে ১৫ দিনে একবার বা মাসে একবার করে পেমেন্ট করা হবে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থী: স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা?

আপডেট সময় : ০৫:৪০:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

 

“ট্রাফিক পুলিশরা মানুষ, স্টুডেন্টরা কি মানুষ না? ট্রাফিক পুলিশের সমস্যা হলে স্টুডেন্টদেরও সমস্যা হতে পারে,” বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থী: স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা?
ঢাকায় ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় সীমিত পরিসরে কাজ করছেন শিক্ষার্থীরাও। অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে দৈনিক সম্মানীর বিনিময়ে নামানো হয়েছে তাদের। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন।
প্রশান্ত মিত্র

রাজধানীর আসাদগেট এলাকা থেকে সংসদ ভবনের সামনের দিকের সড়কে যেতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ক্রসিংয়ের বাঁ দিকে যানবাহন মোড় নিতে তুলনামূলক ছোট একটি লেইন। অথচ একেবারে মোড়েই রাস্তা দখল করে রিকশা ও ‘রাইড শেয়ারিং’ মোটরসাইকেল রাখার হিড়িক সামলাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য।

সড়কে ট্রাফিক সামলাতে ‘নব্য নিয়োজিত’ শিক্ষার্থীরা যতক্ষণ থাকছেন, ততক্ষণ তাদের তৎপরতায় সড়কটির মোড়ে রিকশা বা মোটরসাইকেলের জটলা থাকছে না। কিন্তু ‘নির্ধারিত কর্মঘণ্টা’ শেষ করে তারা সড়ক থেকে সরে যেতেই আবার রাস্তা দখল হয়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার দুপুরে সড়কটির এমন চিত্রের পাশাপাশি ট্রাফিকে শিক্ষার্থীদের হাত পড়ায় এমন অনেক ‘ভালো প্রভাব’ দেখতে পাওয়া গেছে রাজধানী ঢাকার অনেক সড়কে। বিষয়গুলোকে নিজেদের জন্য স্বস্তির বলে জানাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। তবে ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষার্থীদের ‘অযাচিত’ তৎপরতায় ‘ঝুঁকি’ তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন তারা।

সড়ক ব্যবহারকারীরাও বলছেন, শিক্ষার্থীরা ভালো কাজ করছে, আবার কখনও ‘ভুল সিগন্যাল’ বা ‘বাড়াবাড়িও’ করছে। এমন পরিস্থিতিতে একজন সড়ক বিশেষজ্ঞের চাওয়া, সড়কে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি যেন সাময়িকই হয়।

প্রথম ধাপে গত ৫ নভেম্বর ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে সড়কে নামানো হয়। এরপর কয়েক ধাপে নামে বাকিরা। তবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় ছিল কি না, সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।

এ নিয়ে পুলিশেও উদ্বেগ আছে, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিষয়টিতে পাত্তা না দিয়ে বলেছেন, ‘পুলিশের সমস্যা হলে ছাত্রদেরও হবে।’

‘ভালো-মন্দের’ এমন মিশ্র মতামতের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম দফায় ২৯১ জন শিক্ষার্থীকে যুক্ত করার তথ্য দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের-ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান।

“আমরা মোট ৬০০ শিক্ষার্থীকে সড়কে যুক্ত করব। বাকি ৩০৯ জনকে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেওয়া হবে।”

সরকার পতনের পর পুলিশ উধাও হয়ে যাওয়ার মধ্যে সড়কে শৃঙ্খলায় কাজ করেছিল শিক্ষার্থীরা। যানজটের প্রকোপের মধ্যে সেই স্মৃতিই শিক্ষার্থীদেরকে এই কাজে নিয়োগ করতে প্ররোচিত করেছে।
সরকার পতনের পর পুলিশ উধাও হয়ে যাওয়ার মধ্যে সড়কে শৃঙ্খলায় কাজ করেছিল শিক্ষার্থীরা। যানজটের প্রকোপের মধ্যে সেই স্মৃতিই শিক্ষার্থীদেরকে এই কাজে নিয়োগ করতে প্ররোচিত করেছে।

 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক এম শামসুল হক শিক্ষার্থীদেরকে এই কাজে জড়ানোর তীব্র বিরোধিতা করেছেন।তিনি বলেন, “ট্রাফিক পুলিশের কাজে ছাত্রদের ব্যবহার করা ঠিক নয়, এটা বিজ্ঞানসম্মতও না। সড়ক ব্যবহারকারীদের সাথে অযাচিত অনেক ঝামেলা লেগে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।”

তিনি চাইছেন, এ ব্যবস্থাপনা যেন স্থায়ী না হয়।

ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিনই হামলা চালানো হয় থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায়; লুটপাট-ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। সারাদেশ পুলিশশূন্য হয়ে পড়ায় সড়কের শৃঙ্খলার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।

পরে ট্রাফিক পুলিশ ফিরলেও তারা আগের মত তৎপর নয়, যানজট পরিস্থিতির অবনতিতে তীব্র ভোগান্তির মধ্যে গত ২১ অক্টোবর পুলিশের সঙ্গে কাজ করতে ৩০০ শিক্ষার্থীকে দৈনিক ‘সম্মানীসহ’ যুক্ত করার কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

অম্লমধুর অভিজ্ঞতা

মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে কথা প্রসঙ্গে রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরসাইকেল চালানো শামীম আহমেদ বলেন, “স্টুডেন্টরা অনেক ভালো কাজ করছেন। তারা থাকলে উল্টাপথের বা এলোমেলো চলাচল করা যানবাহন বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাসগুলো যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করে না।”

পরক্ষণেই তিনি বলেন, “কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে হুটহাট রাস্তা দিয়ে দৌড়ে সামনে চলে আসা, অতি উৎসাহী হয়ে একসঙ্গে একাধিক সিগন্যাল দেওয়ার বিষয়টি ঘটছে। তবে হয়ত আরও কিছুদিন কাজ করলে বিষয়গুলো ঠিক হয়ে যাবে।”

একই সিগন্যালে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক কনস্টেবল বলেন, “স্টুডেন্টরা মাঝে-মধ্যে ভুলভাল সিগন্যাল দিয়ে বসতেছে। এতে উল্টো জটলা তৈরি হয়ে যাচ্ছে, আমরা আবার গিয়ে ঠিক করে দিচ্ছি।”

ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় শিক্ষার্থীদের তৎপরতা নিয়ে ভালো-মন্দ দুই ধরনের অভিজ্ঞতার কথাই জানা যাচ্ছে।
ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় শিক্ষার্থীদের তৎপরতা নিয়ে ভালো-মন্দ দুই ধরনের অভিজ্ঞতার কথাই জানা যাচ্ছে।

আজিমপুর থেকে উত্তরা রুটে চলাচলকারী বিকাশ পরিবহনের একটি বাসের চালক সোহাগ মিয়া বলেন, “মাঝে-মধ্যে পেছন থেকে এসে ছাত্ররা বাসে পেটানো শুরু করে থামাইছি কেন? কিন্তু সামনে যে অন্য গাড়ি দাঁড়াইয়া আছে, আমার যে যাওনের জাগা নাই সেইটা বুঝে না।”

এমনিতে শিক্ষার্থীরা সড়কে থাকলে যান চলাচলে আগের চেয়ে ভালো শৃঙ্খলা থাকার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের কারণে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ‘ভালো হচ্ছে’ মন্তব্য একই বাসের যাত্রী মাসুদ আলম বলেন, “অনেক জায়গায় নতুন নতুন পুলিশ আসছে, তাদের কথা কেউ শুনে না। স্টুডেন্টরা থাকলে কথা শুনতেছে। তারা অনেক পরিশ্রম করতেছে।”

তাদের অভিজ্ঞতা কেমন?

ঢাকার মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশেই উল্টাপথে রিকশা-মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার কাজ করছিলেন ট্রাফিকে নিয়োগ পাওয়া আলহাজ মকবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে স্নাতক পাস করা মাহবুবুল আলম। দাঁড়িয়ে থেকে একটি রিকশাকে যেতে বাধা দিলেও, পেছন থেকেই অন্য রিকশা যাওয়ার চেষ্টায় বিরক্ত হচ্ছিলেন তিনি।

কথা প্রসঙ্গে বললেন, “প্রবলেম হচ্ছে আমরা কেউ আইন মানতে চাই না। এতদিন পুলিশকে গালি দিয়েছে, এখন হয়ত আমাদের গালি দেবে। তারপরেও আমরা মানুষকে ‘রং সাইড’ থেকে ‘রাইট সাইডে’ আনার চেষ্টা করছি।”

সড়কে এখনও পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ না থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “একটা সিগন্যালে যেখানে ৭-৮ জন পুলিশ কাজ করত, এখন সেখানে আছেন ২-১ জন করে। বিষয়গুলো আমরা উপরের মহলকে জানাচ্ছি। আমাদের লোকবল আরও বাড়বে। লোকবল বাড়লে আমরা উনাদের (ট্রাফিক পুলিশের) রেকমেন্ডেশনে কাজ করব না। আমরা আমাদের মত করে কাজ করব, উনারা শুধু তদারকি করবেন।”

গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী কায়সার আহমেদ বলেন, “মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সোমবার রাতের শিফটে কাজ করছিলাম। সাড়ে ৮টায় আমরা চলে যাওয়ার সময় হতেই একবারে মোড়টাতে আবার রিকশা আর মোটরসাইকেলগুলো যে যেভাবে পারে রেখে দিচ্ছে।

“আবার অনেকে যেখানে বাস থেকে নামছে, সেখানেই রাস্তা পার হতে চায়। একটু সামনে এগিয়ে সিগন্যাল পড়লে পার হবে, সেজন্য অপেক্ষা কেউ করতে রাজি না। সবাইকে আইন মানানোটাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা চেষ্টা করছি, সচেতনতার কাজ করছি। হয়ত বলতে বলতে একসময় ঠিক হয়ে যাবে।”

স্বাস্থ্যঝুঁকির কী হবে

২০২১ সালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা ৩৮৪ জন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৪ শতাংশ পুলিশই শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন।

‘ট্রাফিক এয়ার পলিউশন অ্যান্ড রেসপিরেটরি হেলথ: অ্যা ক্রস-সেকশনাল স্টাডি অ্যামং ট্রাফিক পুলিশ ইন ঢাকা সিটি (বাংলাদেশ)’ শীর্ষক গবেষণাটি জার্নাল অব মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল রিসার্চে প্রকাশ হয়।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে ছিলেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) রিসার্চ ফিজিশিয়ান সাকিলা ইয়াসমিন।

বায়ুদূষণের কারণে তৈরি হওয়া শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ধূমপায়ী ও অধূমপায়ী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রায় একই।

পরের বছর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের ডিপার্টমেন্ট অব অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইকা নিজামের নেতৃত্বে পরিচালিত আরেক গবেষণায় দেখা গেছে শব্দ দূষণের কারণে ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ রিকশাচালক ও ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ সদন্য কানের সমস্যায় ভুগছেন।

নানা গবেষণায় দেখা গেছে শব্দ ও বায়ু দূষণের কারণে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যাপক।
নানা গবেষণায় দেখা গেছে শব্দ ও বায়ু দূষণের কারণে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যাপক।

 

রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক উপমহাপরিদর্শক সরদার নুরুল আমিন বলেন, “ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সাধারণত ধুলার কারণে বেশি শ্বাসকষ্টে ভোগেন। এছাড়া দুর্ঘটনাজনিত চোটও থাকে তাদের।

“শিক্ষার্থীদেরও একই ঝুঁকি রয়েছে। যখন কাজ করবে তারা যেন অবশ্যই মাস্ক পরে নেন। একটু সতর্ক থাকলে এটা কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব। যানবাহনের মধ্যে এলোমেলো রিকশার কারণে একটু দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে, তারা যাতে এ বিষয়েও একটু সতর্ক থাকে।”

শিক্ষার্থীদেরকে সড়কে দায়িত্ব পালনের জন্য তৈরি করতে দুই দিনের একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর।

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) এম এ আখের বলেন, “আমরা একটা তালিকা পেয়েছি, সে অনুযায়ী তাদেরকে শুধু দুই দিনের একটা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। পরে তারা কী করবে, কোথায় করবে এটা আমরা জানি না। বাকিটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে।”

একই প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব (পুলিশ-২ অধিশাখা) এস এম হুমায়ুন কবির সরকার বলেন, “ট্রাফিক পুলিশরা মানুষ, স্টুডেন্টরা কি মানুষ না? ট্রাফিক পুলিশের সমস্যা হলে স্টুডেন্টদেরও সমস্যা হতে পারে।”

পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটবে কি?

শিক্ষার্থী মো. রুবেল বলেন, “পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে না। কাজ করতে হলে আমাদের একটু মানিয়ে নিতেই হবে। তবে নিজের সুবিধামত শিফট চয়েজ করার সুযোগ থাকছে। সকালে ক্লাস থাকলে বিকেলে ডিউটি করতে পারব। পরীক্ষা বা যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে ছুটি চাইলে ঊর্ধ্বতনকে জানিয়ে বা আবেদন করে ছুটিও নেওয়া যাবে।”

মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ১০ নভেম্বর থেকে কাজ করা শিক্ষার্থী মাহবুবুল আলম বলেন, “ছাত্রদের অনেকটা সময় অবসরই থাকে। সেজন্যই আমাদেরকে অফিসিয়ালি পার্টটাইম কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”

আছে আঘাতের ঝুঁকিও

ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রথম শর্তই ছিল পরিবারের অনুমতি।

কায়সার আহমেদ নামে একজন বললেন, “বাবা-মা বলেছে রোদের মধ্যে যাওয়ার দরকার নাই। এমন বলাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। আমরা আগেও কাজ করেছি, তাই এখন এতটা চ্যালেঞ্জ মনে হয় না। স্যাররাও (ট্রাফিক পুলিশ) আমাদের রেস্ট নিতে বা পানি খেতে বলেন।”

শিক্ষার্থীরা সড়কে কাজ করতে গিয়ে আঘাত পান কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলছেন, তাদের সঙ্গে থাকা পুলিশের সদস্যরাও।
শিক্ষার্থীরা সড়কে কাজ করতে গিয়ে আঘাত পান কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলছেন, তাদের সঙ্গে থাকা পুলিশের সদস্যরাও।

আসাদগেটে কাজ করা শিক্ষার্থী রুবেল বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই বাবা-মা দিতে চায়নি, যে রোদের মধ্যে কাজ করব। কিন্তু তাদের বুঝিয়ে বলেছি, আমার জন্য যদি একটা মানুষ সঠিক সময়ে হাসপাতালে যেতে পারেন বা আমার জন্য যদি একটা মানুষ সঠিক সময়ে অফিসে যেতে পারেন এটাই আমার সার্থকতা।”

শিক্ষার্থীরা কাজ করায় ‘হেল্প হচ্ছে, রিলাক্স পাচ্ছি’ মন্তব্য করে আসাদগেট সিগন্যালে কাজ করা ট্রাফিক পুলিশের এসআই আতাবুল হোসেন বলেন, “কিছু কিছু সময় ছাত্ররা থাকলে মানুষ বেশি কথা শুনছে।”

তবে কিছু ঝুঁকির কথাও উঠে এল তার বক্তব্যে।

ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখলেই দায়িত্বরত শিক্ষার্থীরা দৌড়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা যে দৌড় দিচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটলে দায় কে নেবে? আমাদের অগোচরে ঘটনা ঘটে গেলে কী হবে? আমরা বারবার বলি, অত রিস্ক নেওয়ার দরকার নাই।

“বেপরোয়া রিকশাচালকরা অনেক সময় রিকশায় উঠে পড়লেও চালিয়ে অনেকদূর পর্যন্ত নিয়ে যায়। নিয়ে যদি আবার মারধর করে, সেই ঝুঁকিও থাকে। আমরা যতটা সম্ভব এসব বিষয়গুলো তাদের বোঝাই।”

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, “সাধারণত কেউ উল্টা পথে গাড়ি চালালে তাকে ‘না’ করা, কেউ হেলমেট না পরলে মনে করিয়ে দেওয়া, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার করতে নিষেধ করার কাজগুলোই সাধারণত শিক্ষার্থীরা করছেন। মূল ট্রাফিক কন্ট্রোলিংয়ের জন্য ট্রাফিক পুলিশ তো রয়েছেই।”

‘ঘোর বিরোধী’ এম শামসুল হক

পরিবহন বিশেষজ্ঞ এম শামসুল হক শিক্ষার্থীদের এভাবে সড়কে নামিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি নন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের রাস্তার পরিবেশটা টক্সিক। এখানে শিক্ষার্থীদের এত বেশি এক্সপোজার দেওয়া ঠিক না, পরিবেশগতভাবেও ঠিক না।”

পরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক শিক্ষার্থীদের এভাবে সড়কে নামিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি না। তিনি চান যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে তুলে নেওয়া হোক।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক শিক্ষার্থীদের এভাবে সড়কে নামিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি না। তিনি চান যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে তুলে নেওয়া হোক।

সরকার পতনের পর নৈরাজ্যের সময় ছাত্ররা অনেক বেশি সংখ্যায় নেমে ‘ঠেকাটা’ সামলানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “সাময়িক হলে ঠিক আছে।

“এখন আমি বিশ্বাস করতে চাই যেহেতু পুলিশ এখনও ফুল ফর্মে নেই, সেহেতু স্বল্পমেয়াদে তাদেরকে নিযুক্ত করা হয়েছে। কোনোভাবেই এটা যেন দীর্ঘমেয়াদি না হয়ে যায়। তখন এটা পুলিশ বা ছাত্র কারও জন্যই ভালো হবে না। সড়ক ব্যবহারকারীরাও বিরক্ত হবে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হবে। দ্রুতই তাদেরকে সরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।”

দীর্ঘমেয়াদে স্বয়ংক্রিয় সংকেত বাতির মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, “সে কাজে নজর দিলে মানুষ স্বস্তি পাবে।”

যে প্রক্রিয়ায় বাছাই

সরকার পতনের পর সড়কে যেসব শিক্ষার্থী কাজ করেছিলেন, তাদের মাধ্যমেই তালিকা চাওয়া হয়। এরপর তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় দুই দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

সেখান থেকে বাছাই করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে হয় আরও দুই দিনের প্রশিক্ষণ। শারীরিক দক্ষতাসহ যাচাই-বাছাই শেষে মনোনীতদের আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যুক্ত করতে নিয়োগপত্র দেয় ডিএমপি।

আসাদগেট সিগন্যালে কাজ করা দ্যা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের বিবিএর শিক্ষার্থী মো. রুবেল বলেন, “রাজারবাগের ট্রেনিংয়ের মূল বিষয় ছিল ফিটনেস। উচ্চতা, ওজন, শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে কি না। সেখানেও ট্রাফিকের নানান খুঁটিনাটি বিষয় জানানো হয়েছে। যারা ফিট হয়েছে তাদেরকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়।”

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় গত ২১ ও ২২ অক্টোবর। রাজারবাগে প্রশিক্ষণ হয় ৩০ ও ৩১ অক্টোবর।

এখন পর্যন্ত সড়কে কাজ করছেন ২৯১ জন শিক্ষার্থী। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর তাদেরকে দুই দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠায় রাজারবাগে। সেখানে তারা আরেক দফা প্রশিক্ষণ নেন।
এখন পর্যন্ত সড়কে কাজ করছেন ২৯১ জন শিক্ষার্থী। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর তাদেরকে দুই দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠায় রাজারবাগে। সেখানে তারা আরেক দফা প্রশিক্ষণ নেন।

রুবেল বলেন, “আমরা প্রতিদিন দুইটা শিফটে কাজ করছি। সকাল আটটা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। যে পয়েন্টে আমাদের দায়িত্ব থাকে সেখানে সময়মত এসে আমরা তখন ট্রাফিকের ইনচার্জ যিনি থাকে তাকে রিপোর্ট করছি। তারপর তারা দেখিয়ে দিচ্ছেন কোথায় কাজ করতে হবে, সেখানেই কাজ করছি।”

ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা খোন্দকার নজমুল বলেন, “সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ শারীরিক পরিশ্রমের বিষয়। কেউ আগ্রহ প্রকাশ করলেই তাদেরকে নেওয়া যায় না। এই প্রথম স্লটে ৪৫০ জন শিক্ষার্থী কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। এরমধ্যে তাদের শারীরিক দক্ষতা ও বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করে ২৯১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”

দিনে চার ঘণ্টা কাজ করে ৫০০ টাকা করে সম্মানী দেওয়া হবে সড়কে কাজ করা শিক্ষার্থীদের।
দিনে চার ঘণ্টা কাজ করে ৫০০ টাকা করে সম্মানী দেওয়া হবে সড়কে কাজ করা শিক্ষার্থীদের।

সম্মানী কীভাবে

প্রতিদিন চার ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে দিনপ্রতি একেকজনকে দেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা করে।

আসাদগেটে কাজ করা রুবেল বলেন, “তারা বলেছে আমরা চাইলে দিনপ্রতি বা সপ্তাহে নিতে পারি। কিন্তু আমাদের চাওয়া ছিল ১৫ দিন বা এক মাসে পাওয়া। প্রাথমিকভাবে হাতে হাতেই দেওয়া হবে, পরে হয়ত ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হতে পারে।”

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, “তাদেরকে পেমেন্ট করবে মন্ত্রণালয়। এখনও যেহেতু বাজেটের বিষয়টি পাস হয়নি তাই তারা এখনও কেউ টাকা পাননি। তবে তাদেরকে ১৫ দিনে একবার বা মাসে একবার করে পেমেন্ট করা হবে।”