ঢাকা ১২:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠন আমি স্যামসাং ব্যবহার করি, স্ক্রিনশট গেছে আইফোনের : জনপ্রশাসন সচিব উন্নয়নের ভ্রান্ত ধারণা: ঋণে ডুবে থাকা দেশ টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় নাহিদ ইসলাম আমার টাকা-পয়সার প্রতি লোভ নেই, ৫ কোটি হলেই চলবে এক দিনেই হাওয়া ৮ হাজার কোটি টাকার বাজার মূলধন অবশেষে দেখা মিলল আসাদুজ্জামান কামালের ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ কারাগারে কেমন আছেন ‘ভিআইপি’ বন্দীরা একটি ফোনকল যেভাবে বদলে দিয়েছে ড. ইউনূসের জীবনের গতিপথ ড. ইউনুসের Three Zeros থিয়োরি বর্তমান উপদেষ্টাদের সঙ্গে নতুন চার-পাঁচজন মুখ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকটি জাতীয় দিবস বাতিল করতে পারে সরকার সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ গায়েব: উপদেষ্টা “প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস: বাংলার গর্ব, বৈশ্বিক সম্প্রীতির প্রতীক” খেলোয়াড় সাকিবের নিরাপত্তা আছে, ফ্যাসিস্ট সাকিবের ক্ষেত্রে অবান্তর: ক্রীড়া উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সম্মেলন থেকে কী অর্জন করলেন? জাতিসংঘে তিন-শুন্যের ধারণা দিলেন ড. ইউনুস যন্ত্রণার নাম ব্যাটারি রিকশা তরুণ সমাজের অফুরান শক্তি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে— ড. ইউনূস

ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সম্মেলন থেকে কী অর্জন করলেন?

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৯:০৬:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৭ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বিদেশি বন্ধুদের সমর্থন, দেশ সংস্কার, ভোটার তালিকা তৈরি হয়ে গেলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের মাধ্যমে। সংস্কারমূলক কাজের জন্য অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দেয় বিশ্ব ব্যাংক। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। খবর বিবিসির

এ সফরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। অধ্যাপক ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সাইডলাইনে ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নেন।

নানা কারণে প্রধান উপদেষ্টার এই সফরটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের একপ্রকার সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। এ সফরে সেই সংকট অনেকটাই কেটেছে।

বিশেষ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সংকট ছিল, এ সফরে সেটা কাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, এ সফরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেশের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা গেছে এবং তাদের কাছে আস্থার জায়গাটা তৈরি করা গেছে।

এছাড়াও অর্থনৈতিক সংস্কারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুতিসহ নানা কারণে এ সফরটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন তারা।

তবে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন সরকারের এক ধরনের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল।

যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বৈঠকের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়নি সফরসূচিতে মিল না থাকায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবেশী দুটি দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে এ মূহুর্তে একটি বৈঠক হলে তাতে সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতো।

যে সব কারণে গুরুত্বপূর্ণ সফর

গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে এবারে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেয় বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে মাত্র চার দিনের এ সফরে বাংলাদেশের সরকার প্রধান অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ ১২টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সাথে।

এছাড়াও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, আইএমএফের প্রেসিডেন্টসহ অধ্যাপক ইউনূস অংশ নিয়েছেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদসহ ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অধ্যাপক ইউনূস এই সফরে বিভিন্ন ইস্যুতে যে সব মিটিং করেছেন তা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে বাংলাদেশ যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে অংশ নিয়েছে তার সবগুলোই এখনকার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ও প্রয়োজনের আলোকে হয়েছে বলেই আমি মনে করি।

এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও মনে করছেন এই কূটনীতিক।

অর্থনৈতিক সংস্কারে সহায়তা

যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে গত বুধবার অধ্যাপক ইউনূসের সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া সংস্কারমূলক কাজের জন্য বিশ্ব ব্যাংক অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে উন্নয়ন হলেও বাংলাদেশে দুর্নীতি ও মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে তার সুফল সাধারণ মানুষ পায় নি। যে কারণে বিশ্ব সম্প্রদায় এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত সংস্কারে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংস্কারের জন্য বাংলাদেশকে সব ধরনের সাপোর্ট দিচ্ছে। কিন্তু তারা চাইছে এই সংস্কার যেন হয় গণতান্ত্রিকভাবে, যেটাকে টিকিয়ে রাখা যায়। এর সুফল যেন সাধারণ মানুষের কাছে পৌছায়।

এই বিশ্লেষক বলছেন, আর্থিক ক্ষেত্রে সুশাসন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের দায়িত্ব শুধুমাত্র অন্তর্বর্তী সরকারের না, রাজনৈতিক দলগুলোরও রয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত কবির বলেন, অর্থনীতির বাইরেও আরও যে সব খাত সংস্কারে সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে সে সব সহযোগিতাও বাংলাদেশ পাবে বলে আমি মনে করি।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আসবে?

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে।

অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তা ফেরত আনতে টেকনিক্যাল, ফাইন্যান্সিয়ালসহ বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

কবির বলেন, প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল হলেও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে টাকাগুলো ফেরত আনা যায় সরকার সেই চেষ্টা করছে।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অবৈধ অর্থের প্রবাহ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদের পাচার বন্ধ করার বিষয়ে জোর দেন।

এসময় তিনি বিশ্বব্যাপী পাচার হওয়া অর্থ নিজ নিজ দেশের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও কামনা করেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে কিংবা সুসম অর্থনীতি চালু করতে হলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতেই হবে।

অধ্যাপক খান বলেন, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ রয়েছে যেখানে বাংলাদেশে থেকে টাকা পয়সা পাচার হয়ে গেছে। সে সব দেশগুলোকেও চাপ দিতে হবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সাথেও যোগাযোগ রাখতে হবে।

সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই শিক্ষক।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সম্মেলন থেকে কী অর্জন করলেন?

আপডেট সময় : ০৯:০৬:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বিদেশি বন্ধুদের সমর্থন, দেশ সংস্কার, ভোটার তালিকা তৈরি হয়ে গেলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের মাধ্যমে। সংস্কারমূলক কাজের জন্য অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দেয় বিশ্ব ব্যাংক। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। খবর বিবিসির

এ সফরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। অধ্যাপক ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সাইডলাইনে ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নেন।

নানা কারণে প্রধান উপদেষ্টার এই সফরটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের একপ্রকার সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। এ সফরে সেই সংকট অনেকটাই কেটেছে।

বিশেষ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সংকট ছিল, এ সফরে সেটা কাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, এ সফরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেশের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা গেছে এবং তাদের কাছে আস্থার জায়গাটা তৈরি করা গেছে।

এছাড়াও অর্থনৈতিক সংস্কারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুতিসহ নানা কারণে এ সফরটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন তারা।

তবে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন সরকারের এক ধরনের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল।

যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বৈঠকের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়নি সফরসূচিতে মিল না থাকায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবেশী দুটি দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে এ মূহুর্তে একটি বৈঠক হলে তাতে সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতো।

যে সব কারণে গুরুত্বপূর্ণ সফর

গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে এবারে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেয় বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে মাত্র চার দিনের এ সফরে বাংলাদেশের সরকার প্রধান অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ ১২টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সাথে।

এছাড়াও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, আইএমএফের প্রেসিডেন্টসহ অধ্যাপক ইউনূস অংশ নিয়েছেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদসহ ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অধ্যাপক ইউনূস এই সফরে বিভিন্ন ইস্যুতে যে সব মিটিং করেছেন তা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে বাংলাদেশ যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে অংশ নিয়েছে তার সবগুলোই এখনকার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ও প্রয়োজনের আলোকে হয়েছে বলেই আমি মনে করি।

এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও মনে করছেন এই কূটনীতিক।

অর্থনৈতিক সংস্কারে সহায়তা

যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে গত বুধবার অধ্যাপক ইউনূসের সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া সংস্কারমূলক কাজের জন্য বিশ্ব ব্যাংক অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে উন্নয়ন হলেও বাংলাদেশে দুর্নীতি ও মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে তার সুফল সাধারণ মানুষ পায় নি। যে কারণে বিশ্ব সম্প্রদায় এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত সংস্কারে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংস্কারের জন্য বাংলাদেশকে সব ধরনের সাপোর্ট দিচ্ছে। কিন্তু তারা চাইছে এই সংস্কার যেন হয় গণতান্ত্রিকভাবে, যেটাকে টিকিয়ে রাখা যায়। এর সুফল যেন সাধারণ মানুষের কাছে পৌছায়।

এই বিশ্লেষক বলছেন, আর্থিক ক্ষেত্রে সুশাসন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের দায়িত্ব শুধুমাত্র অন্তর্বর্তী সরকারের না, রাজনৈতিক দলগুলোরও রয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত কবির বলেন, অর্থনীতির বাইরেও আরও যে সব খাত সংস্কারে সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে সে সব সহযোগিতাও বাংলাদেশ পাবে বলে আমি মনে করি।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আসবে?

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে।

অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তা ফেরত আনতে টেকনিক্যাল, ফাইন্যান্সিয়ালসহ বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

কবির বলেন, প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল হলেও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে টাকাগুলো ফেরত আনা যায় সরকার সেই চেষ্টা করছে।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অবৈধ অর্থের প্রবাহ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদের পাচার বন্ধ করার বিষয়ে জোর দেন।

এসময় তিনি বিশ্বব্যাপী পাচার হওয়া অর্থ নিজ নিজ দেশের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও কামনা করেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে কিংবা সুসম অর্থনীতি চালু করতে হলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতেই হবে।

অধ্যাপক খান বলেন, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ রয়েছে যেখানে বাংলাদেশে থেকে টাকা পয়সা পাচার হয়ে গেছে। সে সব দেশগুলোকেও চাপ দিতে হবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সাথেও যোগাযোগ রাখতে হবে।

সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই শিক্ষক।