ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এর ইতিকথা!!!
- আপডেট সময় : ০৯:০৯:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জুন ২০২২
- / ৫০১৭ বার পড়া হয়েছে
জেলখানায় গিয়েছিলাম। যে জেলখানায় এখন কোনও কয়েদি থাকেনা। পরিত্যক্ত জেলখানা- একসময় যার নাম ছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার।
২০১৬ সালে ৬৫১১ জন কয়েদিকে এখান থেকে কেরানিগন্জের নতুন কারাগারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তার আগে ভি আই পি, মহিলা ও জঙ্গী কয়েদিদের নিয়ে যাওয়া হয় কাশিমপুর কারাগারে।
ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। চারদিকে এখন শূন্যতা, তবু দেখার মতো বহু কিছু আছে।
প্রথম যে ছবিতে দাঁড়িয়ে রয়েছি, পিছনে দেখা যাচ্ছে বন্দীদের কম্বল কারখানা। জেল খাটার সাথে সেখানে কাজও করতে হতো তাদের। কারখানার ভিতরে দাঁড়িয়েও ছবি তুলেছি একটা।
পরের ছবিটার অনেক পিছনে দেখা যাচ্ছে একটা দরজা। ঐখানটায় জাতীয় চার নেতাকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল এবং সেখানেই তাঁদেরকে হত্যা করা হয়।
ঢাকার চকবাজারে মোঘল সুবেদার ইব্রাহীম খান একটা দুর্গ নির্মান করেন। সেই দুর্গের মধ্যে অপরাধীদের জন্য একটা ছোটখাটো কয়েদখানা বানানো হয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আমলে সেই কয়েদখানার আয়তন বাড়িয়ে জেলখানায় রূপান্তর করা হয়। তারপর ক্রমে সেই রূপান্তরিত জেলখানা হয়ে ওঠে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার।
১৭৮৮ সালে নির্মিত ইতিহাসে মূল্যবান স্থাপনা এখন পতিত। দেখভালহীন, করুণ দশায়। ভাঙচুর শুরু হয়ে গেছে- শোনা গেলো শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, বেড়াতে যাওয়ার আকর্ষণীয় জায়গা বানানো হবে। তার মানে ঝকমকে বহুকিছু হবে- পুরাতন অনেককিছুই থাকবেনা।
নামে জেলখানা কিন্তু ভবনগুলোর নাম বেশ বাহারী। বন্দীদের চিকিৎসাসেবা দিত যে হাসপাতাল- সেই সেই জীর্ণ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম।
জেলখানার লোহার তৈরি গ্রিলগুলো এতো বছর পরেও জং পড়ে যাওয়া ছাড়া তেমন ক্ষতির মুখে পড়েনি। ছোট ছোট কুঠুরীগুলোর দরজা বিরাট আকারের- তালা মেরে রাখার কায়দা খুবই অদ্ভুত। বোধহয় পাকাপোক্ত নিরাপত্তার কারণেই এমনটা করা।
এখানে ওখানে দেয়ালে দেয়ালে অসংখ্য উপদেশবানী লেখা- ওগুলো বন্দী, অপরাধীদের উদ্দেশ্যে লিখে রাখা।
নতুন এক জ্ঞানলাভ হলো- জেলখানায় যারা স্বল্পমেয়াদী সাজাভোগ করতে আসে তাদেরকে বলা হয় হাজতি আর দীর্ঘমেয়াদের সাজা যাদের হয়- তাদেরকে বলা হয়ে থাকে কয়েদী।
এই জেলখানা বহু পুরাতন, সেই অর্থে ঐতিহাসিক। ১৭৮৮ সনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনামলে এটা প্রতিষ্ঠিত- জেনে অবাক হওয়ার কথা। এই কারাগারে সে সময়ে ৫০০ থেকে ৫৫০ জন বন্দী থাকবার বন্দোবস্ত ছিল। প্রতি বন্দীর খাওয়া খরচ বাবদ তখন দুই পয়সা করে ব্যায় ধরা হয়েছিল। ১৭৯০ সনে তা বাড়িয়ে মাথাপিছু খরচ ধরা হয়, এক আনা।
এমন ধরণের বহু তথ্য জানবার পরমুহূর্তে যখন ভাঙচুরের শব্দ কানে ঢোকে- মনখারাপ হয়ে যায়। মনখারাপ হয়, পুরানো আর পুরানো থাকবেনা। হয়ে যাবে খানিকটা নতুন, খানিকটা পুরাতন।
ভ্রমনের জন্য আকর্ষণীয় স্থান করে তোলার চেষ্টা হিসাবে সেদিন জানলাম, সুইমিং পুলের জন্য জায়গা খালি করা হয়েছে। সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য বিচিত্র চেষ্টার ত্রুটি থাকবেনা কিন্তু ঝলমলে নতুন দিয়ে কিস্তিমাতের চেষ্টাতে পুরানোর সৌন্দর্য, আকর্ষণ ও আবেগ অনেকটাই ফিঁকে হয়ে যাবে।
এখানে বিভিন্ন ভবনের নামগুলো সুন্দর। যমুনা ভবন নামের অনেক বড়ো আকৃতির টিনের চালা দেয়া একটা ঘরের ছবি তুলছিলাম। একজন জানায়, এইটা ইলিশ ফালি ঘর। তারপর জানলাম ইলিশ ফালি ঘর কি?
জেলে ঢুকলে প্রথমে এই ঘরে কয়েদিদের রাখা হতো। সেখানে শোয়ার বেলায় ঢালাওভাবে শুতে হতো বাজারে বিক্রির জন্য ইলিশ মাছ যেমন করে পাশাপাশি শুইয়ে রাখা হয়- ঠিক সেরকম ভাবে।
কত গল্প। দীর্ঘ ইতিহাস। সবকিছুকে ছাপিয়ে সেখানে এখন শুধুই নতুন করে গড়ার শব্দ। ফিতে দিয়ে মানুষেরা মাপামাপি করছে কি যোগ হবে আর কোনটা হয়ে যাবে বিয়োগ।