তারল্য বাড়াতে ‘বিশেষ ধার’ আগামী সপ্তাহে
- আপডেট সময় : ১০:১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৬৩ বার পড়া হয়েছে
এতদিন কিছুটা লুকোছাপা থাকলেও হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের ব্যাংক খাতের ‘কঙ্কালসার’ পরিস্থিতি সামনে চলে আসছে। অনেক ব্যাংকেরই ‘মরমর’ অবস্থা। নগদ টাকার সংকটে পড়ে কিছু ব্যাংক আমানতকারীর চাহিদামতো টাকা দিতে পারছে না।
এ দুরবস্থা থেকে টেনে তুলতে ব্যাংক খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে বেআইনিভাবে চলতি হিসাব ঘাটতি রেখে লেনদেনের সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। ধুঁকতে থাকা ব্যাংকগুলোর বিশেষ তারল্য সহায়তার জন্য একটি নীতিমালাও করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে আগামী সপ্তাহ থেকে ‘বিশেষ ধার’ দেওয়া শুরু হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সংকট কাটাতে বিশেষ তারল্য সহায়তা চেয়ে পদ্মা, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ আবেদন করেছে। এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর এক্সিম ব্যাংককে তিন মাসের জন্য এক হাজার কোটি টাকার ‘বিশেষ ধার’ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাড়ে ১০ শতাংশ সুদে ওই টাকা দেওয়া হয়। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপাতত কোনো ব্যাংককে সরাসরি তারল্য সহায়তা দেবে না। ব্যাংকের ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোটের বিপরীতে অন্য ব্যাংক থেকে ধারের ব্যবস্থা করে দেবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে ‘বিশেষ ধার’ দিতে একটি নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত। নীতিমালার আলোকে সংকটে থাকা ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে তিন মাস, ছয় মাস কিংবা এক বছরের জন্য বিশেষ তারল্য সহায়তা পাবে। এ জন্য প্রথমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকটিকে আবেদন করতে হবে। যেখানে আমানত, ঋণ, খেলাপি ঋণসহ বিভিন্ন বিষয় যুক্ত করতে হবে। এর পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চাহিদাসহ বিভিন্ন বিষয় যাচাই করে গ্যারান্টি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্যারান্টির বিপরীতে টাকা নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষুদ্র আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে হবে। একই সঙ্গে ঋণ আদায় জোরদার করতে হবে। এ ছাড়া আয় অব্যাহত রাখতে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া যাবে। কোনো অবস্থায় এখান থেকে তহবিল নিয়ে ব্যাংকগুলো বড় ঋণ দিতে পারবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত ১০ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে। এসব ব্যাংকসহ কয়েকটি থেকে একবারে টাকা তোলার চাপ বেড়েছে। গ্রাহক দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সবল ব্যাংকে রাখছে। যে কারণে দুর্বল কিছু ব্যাংক চরম সংকটে পড়ছে। আবার কিছু ব্যাংকে প্রচুর উদ্বৃত্ত থাকছে। মূলত উদ্বৃত্ত থাকা ব্যাংক থেকেই সংকটে থাকা ব্যাংকের টাকার সংস্থান করা হবে। যেসব ব্যাংক আবেদন করেছে, প্রত্যেকে সাময়িক সংকট থেকে উত্তরণের কথা জানিয়েছে। অনেক আগ থেকে সমস্যায় থাকা পদ্মা ব্যাংক জানিয়েছে, এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে এমওইউ সই করার পর বেড়েছে গ্রাহকের অনাস্থা। এর পর থেকে বেড়েছে টাকা তোলার চাপ।
জানা গেছে, আমানতকারীর চাহিদামতো টাকা ফেরত দিতে না পারা ব্যাংকের তালিকায় আছে– ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। ব্যাংকগুলো এতদিন এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এরই মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এ ছাড়া আইএফআইসি, ইউসিবি ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠিত হলেও এসব ব্যাংকের খুব নাজুক অবস্থার কথা শোনা যায়নি। অনেক আগ থেকে পদ্মা ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক হযবরল পরিস্থিতিতে রয়েছে।
জানতে চাইলে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন সমকালকে বলেন, গ্রাহকের আস্থা ফেরানো এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। সে লক্ষ্যে তাদের পরিচালনা পর্ষদ কাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, গ্যারান্টির মানে হলো, কোনো কারণে একটি ব্যাংক টাকা ফেরত দিতে না পারলে বাংলাদেশ ব্যাংকই তা দেবে। এটা না করে সরাসরি টাকা দিতে গেলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। যে কারণে এ উপায়ে দেওয়া হচ্ছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর আগে অনেক দিন সাধারণ ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ ছিল। আবার নতুন সরকার নিয়েও নানা গুজবের কারণে মানুষের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বাড়ে। এখন আবার সেই টাকা ব্যাংকে জমা রাখছেন আমানতকারীরা। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ‘নোটস ইন সার্কুলেশন’ বা প্রচলনে থাকা টাকার পরিমাণ কমে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৩ কোটিতে নেমেছে। সরকার পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে গত ১৮ আগস্ট তিন লাখ ২২ হাজার ২৭১ কোটি টাকায় উঠেছিল। তার মানে শেষ ১৮ দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফিরেছে ৭ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আমরা মনে করি না, কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হবে। গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। খারাপ পরিস্থিতিতে থাকা ব্যাংকগুলোকে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করছি। বড় ঋণ গ্রহীতার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা ও পাচার করা অর্থ ফেরত এনে আমানতকারীকে দেওয়া হবে। এসব ব্যাংক থেকে কে কত টাকা নিয়েছে, তা বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দৈনিক ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর তথ্য তদারকি করা হচ্ছে।