ঢাকা ১১:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা আজ ডিসির দায়িত্বে শেখ হাসিনা চাইলে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারেন হাসিনাকে যেভাবে ভারত থেকে ফেরত আনা সম্ভব জ্বালানির অভাব, সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটলে তাৎক্ষণিক বিকল্প নেই বিপিডিবির ভারতের সঙ্গে চলমান কোনো প্রকল্প স্থগিত হয়নি:অর্থ উপদেষ্টা এত বিদ্যুৎকেন্দ্র, তবু কেন লোডশেডিং পোশাক কারখানার শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে কী ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ টাকা পাচারের স্বর্গ বাংলাদেশ রাজাকার খুঁজে বার করার ভার পেলেন তাঁদেরই আইনজীবী পুলিশ সংস্কারে শিগগিরই প্রাথমিক কমিটি গঠন : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শেখ হাসিনার বিচার সরাসরি সম্প্রচার করা হবে মেট্রোরেলের ছিদ্দিকের চুক্তি বাতিল, চলতি দায়িত্বে রউফ বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় ১৭ স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটরের নিয়োগ বাতিল রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনে জোর প্রধান উপদেষ্টার সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড! গণঅভ্যুত্থানে নিহত ৬৩১, আহত ১৯২০০ শাহজালাল বিমানবন্দরে পরিবর্তনের হাওয়া ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এডিবি: অর্থ উপদেষ্টা নিম্ন আদালতের ১৬৮ বিচারককে একযোগে বদলি

‘দিন দ্য ডে’ দেখে কনফিউজড

রোদেলা নীলা
  • আপডেট সময় : ০৫:০৪:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২
  • / ৫০০৭ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যে সিনেমাটার ভেতর গল্পের কোন কারিশমা নেই, অভিনয়ের ছিটেফোটা নেই সেটা নিয়ে মুভি সমালোচনা আসলেও ভীষণ কঠিন ব্যাপারে। তাই আজ কোন রিভিউ নয়, একেবারেই ব্যক্তিগত মতামিত দেব ‘দিন দ্য ডে’ সিনেমাটি নিয়ে।

দুই ঘন্টা তেইশ মিনিট নয় সেকেন্ড ধরে চোখের সামনে তিনটা দেশ সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াচ্ছে— একবার ইরান, একবার আফগানিস্তান, একবার বাংলাদেশ। এর মধ্যে তুরস্ক কখন ইন করেছে, আর কখন আউট করেছে সেটা আমি ধরতে পারিনি।

গল্পের সেতু গাঁথতে চাইছিলাম, ছটকু আহমেদ যেহেতু চিত্রনাট্য করেছেন তিনি অভিজ্ঞ মানুষ; নিশ্চয় জানেন, সিনেমায় গল্প বুনতে হয় অনেকটা ফুলের মালা গাঁথার মতো একটার পর আর একটা (প্রচলিত বাংলা সিনেমায়)। অবশ্য কেউ এই সাধারণ নিয়ম মানবেন আবার কেউ ভাঙতেই পারেন; কিন্তু ইরানি পরিচালক মোর্তেজা অতাশ জমজম, আমাদের অনন্ত জলিল এবং ছটকু আহমেদ মিলে যে ককটেল বানিয়েছেন তা দেখে এটাকে সিনেমা বলতে পারি নাকি অ্যাকশান ডকিউমেন্ট বলতে পারি তা নিয়ে বিরাট কনফিউজড আমি।

সিনেমাতে ১০০ কোটি খরচ হয়েছে নাকি হয়নি তা নিয়ে পুরনো বিতর্কে আর যাব না, তবে এটা নিয়ে দূর্দান্ত মার্কেটিং হয়েছে; দফায় দফায় নিজেদের নিয়ে জাহির করার যে প্রবণতা জলিল আর বর্ষার দেখছি সেটা সত্যি বিস্ময়কর! একটি সিনেমার সাথে আর একটি সিনেমার কোনভাবেই তুলনা চলে না, কারণ সমস্ত সৃষ্টি আলাদা আলাদা। কেউ যদি সত্যি সত্যি হাসতে বা বিনোদন পেতে টিকিট কেটে হলে যাওয়া পছন্দ করেন তার মধ্যে কোন রকম নেতিবাচক কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। আমি হলে যাবার আগ থেকেই বুঝে গেছি আমার ৩৫০ টাকা, সাথে যাতায়াত ভাড়া আর খাবারের টাকাটা অপচয় হবে, সেটা আমি জেনেই হলে গেছি। অতএব, ‘দিন দ্য ডে’ ব্যবসাসফল ছবি, এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, দ্বিতীয় সপ্তাহেও পুরো হাউজফুল চলছে।

একবার দেখে যে বিষয়গুলো চোখে লাগল

এক. বাংলাদেশ পুলিশকে দেশের বাইরে মিশনে পাঠানোর যে প্রক্রিয়া সেটা পরিচালক-চিত্রনাট্যকার দেখে নিতে পারতেন। পুলিশের চুল + ড্রেস + প্রেজেন্টেশন + রুলস, এমন বিষয়ে অনেক সচেতন হতে হবে, যা মন চায় তাই দেখানো উচিৎ নয়, দেশের পুলিশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

দুই. বাংলা সাবটাইটেল দেওয়া থাকলেও বিদেশি অভিনেতারা কেন বাংলায় কথা বলেছেন বুঝিনি।

তিন. একজন লেডি অফিসারকে আরো দক্ষ এবং বিচক্ষণভাবে উপস্থাপন করা যেত; কিন্তু পুরুষকে বেশি চৌকষ দেখাতে গিয়ে নারী চরিত্র ম্লান লেগেছে।

চার. বারবার ফ্লাশব্যাক দেখানোতে গল্পের মূল বিষয়টা ধরতে ব্যর্থ হয়েছে আমার মতো অনেক দর্শক।

পাঁচ. ভিএফএক্স দেখে অনেক সময় আমার মনে হয়েছে টিভিতে কার্টূন দেখছি, কোটি টাকার প্রজেক্টের কাছে আরো অনেক চাওয়া ছিল বিশেষ করে গানের দৃশ্যগুলোতে।

অনন্ত জলিল প্রতি সিনেমায় বাংলাদেশ নিয়ে বেশ পজেটিভ ভাইভ দেন, বিষয়টা ব্যক্তিগতভাবে আমি পছন্দ করি। এটা তিনি চিত্রনাট্যের সংলাপের মাধ্যমে দেন, কিন্তু চিত্রনাট্যকার অনেক বলিষ্ঠ হলে সেটা গল্পে বের করে আনতে পারেন। সিনেমা মানেই তো গল্পের মধ্য দিয়ে সবটা বলে দেওয়া, সেজন্য আলাদা করে দর্শককে পড়া বোঝানোর মতো বাড়তি উপকরণ দেওয়ার দরকার হয় না।

পরিশেষে, এতো এতো কষ্টের টাকায় বানানো একটি সিনেমায় যদি তেমন দক্ষ একজন অভিনেতা-অভিনেত্রীকে কাস্ট করা হতো তাহলে ‘দিন দ্য ডে’ অন্যরকম একটা ফ্লেভার পেতো। অনন্ত জলিল ও বর্ষার প্রতি অনুরোধ— পর্দায় নায়ক-নায়িকা না হয়ে, পর্দার পেছনে কাজ করলে খুব কী ক্ষতি হয়ে যাবে আপনাদের, দর্শকের মনোযোগ যে আপনারা এই জীবনে পেয়ে গেছেন সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

ভুল ইংরেজি উচ্চারণ, অদ্ভুত ভঙ্গি দেখতে দেখতে এখন একঘেয়ে হয়ে গেছে সব। আসুন, নতুনদের কাজ করবার জায়গাটা ছেড়ে দেই এবার, অনেক তো হলো! বাংলা সিনেমা যুগ যুগ বেঁচে থাকুক নতুন শিল্পীদের হাত ধরে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

‘দিন দ্য ডে’ দেখে কনফিউজড

আপডেট সময় : ০৫:০৪:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২

যে সিনেমাটার ভেতর গল্পের কোন কারিশমা নেই, অভিনয়ের ছিটেফোটা নেই সেটা নিয়ে মুভি সমালোচনা আসলেও ভীষণ কঠিন ব্যাপারে। তাই আজ কোন রিভিউ নয়, একেবারেই ব্যক্তিগত মতামিত দেব ‘দিন দ্য ডে’ সিনেমাটি নিয়ে।

দুই ঘন্টা তেইশ মিনিট নয় সেকেন্ড ধরে চোখের সামনে তিনটা দেশ সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াচ্ছে— একবার ইরান, একবার আফগানিস্তান, একবার বাংলাদেশ। এর মধ্যে তুরস্ক কখন ইন করেছে, আর কখন আউট করেছে সেটা আমি ধরতে পারিনি।

গল্পের সেতু গাঁথতে চাইছিলাম, ছটকু আহমেদ যেহেতু চিত্রনাট্য করেছেন তিনি অভিজ্ঞ মানুষ; নিশ্চয় জানেন, সিনেমায় গল্প বুনতে হয় অনেকটা ফুলের মালা গাঁথার মতো একটার পর আর একটা (প্রচলিত বাংলা সিনেমায়)। অবশ্য কেউ এই সাধারণ নিয়ম মানবেন আবার কেউ ভাঙতেই পারেন; কিন্তু ইরানি পরিচালক মোর্তেজা অতাশ জমজম, আমাদের অনন্ত জলিল এবং ছটকু আহমেদ মিলে যে ককটেল বানিয়েছেন তা দেখে এটাকে সিনেমা বলতে পারি নাকি অ্যাকশান ডকিউমেন্ট বলতে পারি তা নিয়ে বিরাট কনফিউজড আমি।

সিনেমাতে ১০০ কোটি খরচ হয়েছে নাকি হয়নি তা নিয়ে পুরনো বিতর্কে আর যাব না, তবে এটা নিয়ে দূর্দান্ত মার্কেটিং হয়েছে; দফায় দফায় নিজেদের নিয়ে জাহির করার যে প্রবণতা জলিল আর বর্ষার দেখছি সেটা সত্যি বিস্ময়কর! একটি সিনেমার সাথে আর একটি সিনেমার কোনভাবেই তুলনা চলে না, কারণ সমস্ত সৃষ্টি আলাদা আলাদা। কেউ যদি সত্যি সত্যি হাসতে বা বিনোদন পেতে টিকিট কেটে হলে যাওয়া পছন্দ করেন তার মধ্যে কোন রকম নেতিবাচক কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। আমি হলে যাবার আগ থেকেই বুঝে গেছি আমার ৩৫০ টাকা, সাথে যাতায়াত ভাড়া আর খাবারের টাকাটা অপচয় হবে, সেটা আমি জেনেই হলে গেছি। অতএব, ‘দিন দ্য ডে’ ব্যবসাসফল ছবি, এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, দ্বিতীয় সপ্তাহেও পুরো হাউজফুল চলছে।

একবার দেখে যে বিষয়গুলো চোখে লাগল

এক. বাংলাদেশ পুলিশকে দেশের বাইরে মিশনে পাঠানোর যে প্রক্রিয়া সেটা পরিচালক-চিত্রনাট্যকার দেখে নিতে পারতেন। পুলিশের চুল + ড্রেস + প্রেজেন্টেশন + রুলস, এমন বিষয়ে অনেক সচেতন হতে হবে, যা মন চায় তাই দেখানো উচিৎ নয়, দেশের পুলিশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

দুই. বাংলা সাবটাইটেল দেওয়া থাকলেও বিদেশি অভিনেতারা কেন বাংলায় কথা বলেছেন বুঝিনি।

তিন. একজন লেডি অফিসারকে আরো দক্ষ এবং বিচক্ষণভাবে উপস্থাপন করা যেত; কিন্তু পুরুষকে বেশি চৌকষ দেখাতে গিয়ে নারী চরিত্র ম্লান লেগেছে।

চার. বারবার ফ্লাশব্যাক দেখানোতে গল্পের মূল বিষয়টা ধরতে ব্যর্থ হয়েছে আমার মতো অনেক দর্শক।

পাঁচ. ভিএফএক্স দেখে অনেক সময় আমার মনে হয়েছে টিভিতে কার্টূন দেখছি, কোটি টাকার প্রজেক্টের কাছে আরো অনেক চাওয়া ছিল বিশেষ করে গানের দৃশ্যগুলোতে।

অনন্ত জলিল প্রতি সিনেমায় বাংলাদেশ নিয়ে বেশ পজেটিভ ভাইভ দেন, বিষয়টা ব্যক্তিগতভাবে আমি পছন্দ করি। এটা তিনি চিত্রনাট্যের সংলাপের মাধ্যমে দেন, কিন্তু চিত্রনাট্যকার অনেক বলিষ্ঠ হলে সেটা গল্পে বের করে আনতে পারেন। সিনেমা মানেই তো গল্পের মধ্য দিয়ে সবটা বলে দেওয়া, সেজন্য আলাদা করে দর্শককে পড়া বোঝানোর মতো বাড়তি উপকরণ দেওয়ার দরকার হয় না।

পরিশেষে, এতো এতো কষ্টের টাকায় বানানো একটি সিনেমায় যদি তেমন দক্ষ একজন অভিনেতা-অভিনেত্রীকে কাস্ট করা হতো তাহলে ‘দিন দ্য ডে’ অন্যরকম একটা ফ্লেভার পেতো। অনন্ত জলিল ও বর্ষার প্রতি অনুরোধ— পর্দায় নায়ক-নায়িকা না হয়ে, পর্দার পেছনে কাজ করলে খুব কী ক্ষতি হয়ে যাবে আপনাদের, দর্শকের মনোযোগ যে আপনারা এই জীবনে পেয়ে গেছেন সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

ভুল ইংরেজি উচ্চারণ, অদ্ভুত ভঙ্গি দেখতে দেখতে এখন একঘেয়ে হয়ে গেছে সব। আসুন, নতুনদের কাজ করবার জায়গাটা ছেড়ে দেই এবার, অনেক তো হলো! বাংলা সিনেমা যুগ যুগ বেঁচে থাকুক নতুন শিল্পীদের হাত ধরে।