দেশে দেশে দুর্বল কূটনীতির কবলে বাংলাদেশ
- আপডেট সময় : ০৫:৩৪:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪
- / 59
দেশে নতুন পট পরিবর্তনের পর বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে কিছুটা স্থবিরতা বিরাজ করছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করছে বিশেষ করে দল-অনুগত কর্মকর্তাদের মধ্যে “আছি কি নেই, আছি কি নেই”- এই অবস্থা বিরাজমান। অনিশ্চয়তার মধ্যে মানুষ চাইলেও পুরোদমে কাজ করতে পারছে না। সুতরাং এই অবস্থার আশু সমাধান প্রয়োজন।
বিশ্বায়নের কারণে প্রতিটি দেশ একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত। এই সংযুক্তির মূল চালক কূটনীতি। যে দেশের কূটনীতিবিদরা কূটনীতিতে দক্ষ সে দেশ তত বেশি লাভবান। তবে শুধু দক্ষ কূটনীতিবিদ নয়, দেশের সৎ, দেশপ্রেমিক ও সুদক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা বহু অংশে সফল কূটনীতির জন্য অপরিহার্য।
বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর গতিশীলতার কারণে ধীরগতির কূটনীতি আজ অচল। পৃথিবীর সকল অগ্রবর্তী দেশ ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ অবিক্রয়যোগ্য দেশপ্রেমিক জনবল দিয়ে দেশের কূটনীতি সাজায়। এই শ্রেণির মানবসম্পদ দেশের অন্য অংশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত চৌকস ও কর্মক্ষম হয়ে থাকে। তারা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিভাজনের চেয়ে দেশের সামগ্রিক স্বার্থ সর্বাগ্রে রাখে।
এজন্য কূটনীতি-সফল দেশগুলো ঘন ঘন জনবল পরিবর্তন করে না। এক্ষেত্রে আমরা একটু ভিন্ন, আমরা দলের অনুগত লোকদের দিয়ে কূটনীতি পরিচালনা করি। ফলে সরকারি দলের পরিবর্তন হলে গোটা কূটনীতিবিদদের পরিবর্তন ঘটে যায়। প্রতিযোগিতা-সক্ষম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ও দক্ষ জনবলকে পরিবর্তনের ফলে কূটনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে মূলত দর্শনগত যে পরিবর্তন হয় সেটুকু অর্জনের জন্য পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও কূটনীতিক পরিবর্তনের রেওয়াজ আছে, কিন্তু পুরো প্রক্রিয়া অচল করে দেয়ার বিধান কোথাও নেই। তবে কূটনীতিকদের দলবাজি অন্যান্য দেশে এত প্রকট নয় যা আমাদের মিশনগুলোতে আছে।
শুধু দলীয় অনুগত লোক দিয়ে কূটনীতি চলে না, এখানে ব্যক্তির পেশাগত দক্ষতা ও যোগ্যতা অগ্রগণ্য হওয়া উচিত। সামপ্রতিক ছাত্র-জনতা ও সর্বস্তরের জনগণের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমাদের কূটনীতি খুব নাজুক অবস্থায় আছে।
জনবলের মনোবলের অভাবে দেশে দেশে দুর্বল কূটনীতির কবলে বাংলাদেশ আজ নিপতিত। এই অবস্থা খুবই ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আমাদের প্রতিযোগী ও প্রতিবেশী দেশগুলো এই দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারে। এমনিতেই পেছন থেকে ঘাড়ের উপর স্বার্থান্বেষী বাংলাদেশ-বিরোধীদের নিঃশ্বাসের শব্দ অনুমান করা যাচ্ছে।
বিশ্বায়নের বর্তমান যুগে সর্বত্রই আজ “যোগ্যতমের বেঁচে থাকা’’ নীতি চলে, কেউ কাউকে ছাড় দেয় না। অনেক দক্ষ কূটনীতিক গত কয়েক বছরে “দলবাজ কূটনীতিক”-এ পরিণত হয়েছেন, কেউ কেউ নিজের বাড়তি সুবিধা আদায়ের জন্য, আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়ে এই অবস্থায় গেছেন। এরা বিদেশে দেশের কাজ ও সাধারণ মানুষের সেবা প্রদানের পরিবর্তে রাজনৈতিক দল, দলের নেতা ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সেবা প্রদানে ব্যস্ত থেকেছেন তাতে দেশের কূটনীতি ও সাধারণ প্রবাসীদের সেবাপ্রাপ্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দক্ষ পেশাজীবী কূটনীতিবিদরা দলবাজ ও তদবিরবাজদের দাপটে পেছনে পড়ে গেছেন।
দল-অনুসারী কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিকভাবে নির্মূল করা বেশ কঠিন কাজ। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অন্তত সামনের দিকের দল-অনুগত কূটনীতিবিদদের কাজের স্থান পরিবর্তন করে দেশের কূটনীতি গতিশীল করা আজ খুবই জরুরি।
বেশ কিছু পরিবর্তন ও জরুরি সংস্কার আজ আলোচনায় আছে এগুলো সম্পন্ন করে আন্তর্জাতিক মতামত পক্ষে নেয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী সফল কূটনীতি আজ অত্যাবশ্যকীয়। এই বিবেচনা মাথায় রেখে সমাজের অভিজ্ঞ ও নানা জ্ঞানে সুদক্ষ জনবলকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে যুক্ত করা অতি জরুরি। আমাদের অত্যাবশ্যকীয় সকল উদ্যোগ ও ইতিবাচক সংস্কারের নতুন চিন্তাগুলোকে কার্যকর করার স্বার্থে দেশে ও প্রবাসে আধুনিক জ্ঞান-সম্পন্ন তরুণ ও কিছু সংখ্যক প্রবীণ মানুষকে কূটনীতিতে যুক্ত করা দরকার, এমনকি প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায়ও যুক্ত করা প্রয়োজন।
কালবিলম্ব না করে বাজপাখির ছোবল থেকে দেশকে রক্ষা করে আরও এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য সহায়ক কার্যক্রম গ্রহণ করে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া প্রয়োজন।
অর্থনীতি, সমাজনীতি ও বাণিজ্য নীতি সবই দেশে-বিদেশে কূটনীতির মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। কেউ যেচে কিছু দেয় না। সুতরাং “যাহা চাই যেন জয় করে পাই” এই নীতিকে পুঁজি করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।