ঢাকা ০৪:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
দুর্গাপূজার ছুটি বাড়ছে একদিন চতুর্থ প্রজন্মের ৬ ব্যাংকে ৬ হাজার কোটি টাকা উদ্ধৃত্ত তারল্য কে এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিল্টন’, আঘাত হানবে যেখানে সচিবদের ২৫টি নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার প্রত্যাশা পূরণে আশাবাদী রাজনৈতিক নেতারা পাঁচ সদস্য নিয়ে পুঁজিবাজার সংস্কারের জন্য টাস্কফোর্স গঠন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে বিশেষ টাস্কফোর্স শেয়ারবাজার সংস্কারে ৫ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিমের তালিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট ‘একটি তাজা টাইম বোমা’ শেয়ারবাজারে এক সপ্তাহে নেই ১৩ হাজার কোটি টাকা ‘কাউন্টডাউন শুরু’ স্ট্যাটাস দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওএসডি নিহত আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ বললেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মি নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই, পূজা নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চার দেয়ালের মধ্যে কেমন আছেন ভিআইপিরা? দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ৭ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নয়টি রাজনৈতিক ব্যাংকের অবস্থা নাজুক নতুন কাগুজে নোটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি বাদ বিজয় সরণিতে এআই সিগন্যাল সিস্টেম স্থাপন

ধনী থেকে হতদরিদ্র দেশ নাউরু

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৯:৩০:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪৮ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অর্থ পাচার যে কত বড় অভিশাপ নাউরু দিকে ফিরে তাকালেই বোঝা যায়। মাত্র দুই দশকের মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী রাষ্ট্র থেকে ভাড়াটে রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে নাউরু। এই দেশটিকে এক সময় প্রশান্ত মহাসাগরের কুয়েত বলা হতো। এখন দেশটি অন্য রাষ্ট্রের সহায়তায় চলে। প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে ভেসে থাকা খুবই ছোট্ট একটি দেশ নাউরু। বর্তমানে দেশটি মাত্র ২১ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত। এটি ভাটিকান সিটি এবং মোনাকোর পর বিশ্বের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ।

কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন রকম সামুদ্রিক পাখির অভয়ারণ্য ছিল প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে এই নাউরু অঞ্চলটি। পাখিদের ফেলে যাওয়া বর্জ্য জমে জমে ফসফেটিক টিলায় পরিণত হয়। ফসফেট কৃষি কাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান। এটি বিষ্ফোরক তৈরির কাজের ব্যবহার করা হয়। ১৯০৬ সালে জার্মানরা নাউরুর এই ফসফেট খনির সন্ধান পায়। এবং ফসফেট উত্তলন করা শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকে। জার্মানরা পরাজিত হলে ব্রিটিশ কাউন্সিল এর উদ্যোগে ফসফেট উত্তলোন চলতে থাকে। এর সুবিধা পায় ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড।

১৯৬৮ সালে নাউরু স্বাধীনতা লাভের পর দৃশ্য আরও পাল্টে যায়। ব্রিটিশ ফসফেট কমিশন পুরোদমে ফসফেট উত্তোলন করতে থাকে। এর মূলক্রেতা হয়ে ওঠে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো। জাহাজে পণ্য তোলার জন্য প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে গড়ে ওঠে বিশাল আকৃতির ক্রেন। চলতে থাকে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি। নাউরু সরকারের হাতে বিপুল অর্থ আসতে থাকে। ১৯৭৫ সালে নাউরু সরকারি ব্যাংকে জমা হয় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্বাধীনতার পর একযুগের অর্ধেক সময়ের মধ্যে কোনো রাষ্ট্র এতো বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হওয়া বিরল ঘটনা। সে সময় নাউরুর জনসংখ্যা ছিল সাত হাজারের কাছাকাছি। নাউরুর মাথাপিছু আয় এতো বেশি ছিল যে তাদের সামনে একমাত্র ধনী রাষ্ট্র ছিল কুয়েত।

এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে দেশটির পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম চলতে পারতো। কিন্তু নাউরুর এই অর্থ দেশের উন্নয়নের জন্য খরচ করা ছিল অত্যন্ত জরুরি। খাদ্য উৎপাদনেও তারা মনোযোগ দেয়নি। এমনকি শিক্ষা, চিকিৎসাক্ষেত্রে উন্নয়নের বদলে তারা বিলাশবহুল বাড়ি, হোটেল এবং বিমানবন্দর বানায়। দেশটির উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিমা দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা। দেশটি একসঙ্গে সাতটি বিমান কেনে। যা একসঙ্গে দেশটির ১০ শতাংশ জনগণ বহন করতে সক্ষম।

দেশটির সবকিছু দেখভালের জন্য গঠন করা হয় নাউরু ট্রাস্ট। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি দেশটিকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। সরকারি টাকায় বিদেশে বিলাসী জীবন যাপন করতে শুরু করে ট্রাস্টের কর্মকর্তারা। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, লন্ডন এবং ফিজির মতো দেশগুলোতে তৈরি করে বিলাশবহুল হোটেল। ফলে তারা প্রচুর পরিমাণ অর্থ পাচার করতে থাকে। দেশের অর্থ কমতে থাকে।

ফসফেট ছাড়া নাউরুর আয়ের আর তেমন কোনো উপায় নেই। এদিকে ফসফেট প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তাই নাউরু সরকার এখন অন্যান্য রাষ্ট্রের কাছে হাত পাততে বাধ্য হচ্ছে। ধার করে চলছে দেশটি। কিন্তু ধার করা অর্থ ফেরত দেবে কীভাবে? নাউরুর একজন অর্থনীতিবিদ পরামর্শ দিলেন, লন্ডনভিত্তিক ব্যান্ড ‘ইউনিক ফোর প্লাস টু’কে দিয়ে সংগীত অনুষ্ঠান আয়োজন করতে। লন্ডনে তাদের বিভিন্ন সংগীত অনুষ্ঠান থেকে উঠে আসবে নাউরু দেশ চালানোর অর্থ। মাত্র দুই সপ্তাহ সংগীত অনুষ্ঠান চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। নাউরু সরকার ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ে। এই সংগীত অনুষ্ঠানে যারা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছিল তারা নাউরুর অনেক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেয়। দেশটির হাতে এখন আছে ২১ বর্গ কিলোমিটার জমি। যার ৭০ ভাগে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব না।

এদিকে দেশটি ভাড়ার রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। কঠিন অপরাধে অস্ট্রেলিয়া সরকার যাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার নির্দেশ দিতো তাদের ঠিকানা হতো নাউরুর উদ্বাস্তু কেন্দ্রে। এজন্য নাউরুকে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া দিতো অস্ট্রেলিয়া সরকার। কিন্তু নাউরুতে খাবার পানি পেতেও মারামারি করা লাগে। নানা আন্দোলনের মুখে সেই উদ্বাস্তু কেন্দ্রও ২০০৮ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে আবারও খোলা হয়। কিন্তু উদ্বাস্তু কেন্দ্রের অবস্থা সেই আগের মতোই আছে।

দেশটির নাগরিকদের কোনো নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। এখানকার প্রায় ৯০ শতাংশ নাগরিক বেকার।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ধনী থেকে হতদরিদ্র দেশ নাউরু

আপডেট সময় : ০৯:৩০:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অর্থ পাচার যে কত বড় অভিশাপ নাউরু দিকে ফিরে তাকালেই বোঝা যায়। মাত্র দুই দশকের মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী রাষ্ট্র থেকে ভাড়াটে রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে নাউরু। এই দেশটিকে এক সময় প্রশান্ত মহাসাগরের কুয়েত বলা হতো। এখন দেশটি অন্য রাষ্ট্রের সহায়তায় চলে। প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে ভেসে থাকা খুবই ছোট্ট একটি দেশ নাউরু। বর্তমানে দেশটি মাত্র ২১ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত। এটি ভাটিকান সিটি এবং মোনাকোর পর বিশ্বের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ।

কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন রকম সামুদ্রিক পাখির অভয়ারণ্য ছিল প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে এই নাউরু অঞ্চলটি। পাখিদের ফেলে যাওয়া বর্জ্য জমে জমে ফসফেটিক টিলায় পরিণত হয়। ফসফেট কৃষি কাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান। এটি বিষ্ফোরক তৈরির কাজের ব্যবহার করা হয়। ১৯০৬ সালে জার্মানরা নাউরুর এই ফসফেট খনির সন্ধান পায়। এবং ফসফেট উত্তলন করা শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকে। জার্মানরা পরাজিত হলে ব্রিটিশ কাউন্সিল এর উদ্যোগে ফসফেট উত্তলোন চলতে থাকে। এর সুবিধা পায় ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড।

১৯৬৮ সালে নাউরু স্বাধীনতা লাভের পর দৃশ্য আরও পাল্টে যায়। ব্রিটিশ ফসফেট কমিশন পুরোদমে ফসফেট উত্তোলন করতে থাকে। এর মূলক্রেতা হয়ে ওঠে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো। জাহাজে পণ্য তোলার জন্য প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে গড়ে ওঠে বিশাল আকৃতির ক্রেন। চলতে থাকে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি। নাউরু সরকারের হাতে বিপুল অর্থ আসতে থাকে। ১৯৭৫ সালে নাউরু সরকারি ব্যাংকে জমা হয় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্বাধীনতার পর একযুগের অর্ধেক সময়ের মধ্যে কোনো রাষ্ট্র এতো বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হওয়া বিরল ঘটনা। সে সময় নাউরুর জনসংখ্যা ছিল সাত হাজারের কাছাকাছি। নাউরুর মাথাপিছু আয় এতো বেশি ছিল যে তাদের সামনে একমাত্র ধনী রাষ্ট্র ছিল কুয়েত।

এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে দেশটির পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম চলতে পারতো। কিন্তু নাউরুর এই অর্থ দেশের উন্নয়নের জন্য খরচ করা ছিল অত্যন্ত জরুরি। খাদ্য উৎপাদনেও তারা মনোযোগ দেয়নি। এমনকি শিক্ষা, চিকিৎসাক্ষেত্রে উন্নয়নের বদলে তারা বিলাশবহুল বাড়ি, হোটেল এবং বিমানবন্দর বানায়। দেশটির উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিমা দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা। দেশটি একসঙ্গে সাতটি বিমান কেনে। যা একসঙ্গে দেশটির ১০ শতাংশ জনগণ বহন করতে সক্ষম।

দেশটির সবকিছু দেখভালের জন্য গঠন করা হয় নাউরু ট্রাস্ট। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি দেশটিকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। সরকারি টাকায় বিদেশে বিলাসী জীবন যাপন করতে শুরু করে ট্রাস্টের কর্মকর্তারা। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, লন্ডন এবং ফিজির মতো দেশগুলোতে তৈরি করে বিলাশবহুল হোটেল। ফলে তারা প্রচুর পরিমাণ অর্থ পাচার করতে থাকে। দেশের অর্থ কমতে থাকে।

ফসফেট ছাড়া নাউরুর আয়ের আর তেমন কোনো উপায় নেই। এদিকে ফসফেট প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তাই নাউরু সরকার এখন অন্যান্য রাষ্ট্রের কাছে হাত পাততে বাধ্য হচ্ছে। ধার করে চলছে দেশটি। কিন্তু ধার করা অর্থ ফেরত দেবে কীভাবে? নাউরুর একজন অর্থনীতিবিদ পরামর্শ দিলেন, লন্ডনভিত্তিক ব্যান্ড ‘ইউনিক ফোর প্লাস টু’কে দিয়ে সংগীত অনুষ্ঠান আয়োজন করতে। লন্ডনে তাদের বিভিন্ন সংগীত অনুষ্ঠান থেকে উঠে আসবে নাউরু দেশ চালানোর অর্থ। মাত্র দুই সপ্তাহ সংগীত অনুষ্ঠান চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। নাউরু সরকার ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ে। এই সংগীত অনুষ্ঠানে যারা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছিল তারা নাউরুর অনেক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেয়। দেশটির হাতে এখন আছে ২১ বর্গ কিলোমিটার জমি। যার ৭০ ভাগে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব না।

এদিকে দেশটি ভাড়ার রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। কঠিন অপরাধে অস্ট্রেলিয়া সরকার যাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার নির্দেশ দিতো তাদের ঠিকানা হতো নাউরুর উদ্বাস্তু কেন্দ্রে। এজন্য নাউরুকে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া দিতো অস্ট্রেলিয়া সরকার। কিন্তু নাউরুতে খাবার পানি পেতেও মারামারি করা লাগে। নানা আন্দোলনের মুখে সেই উদ্বাস্তু কেন্দ্রও ২০০৮ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে আবারও খোলা হয়। কিন্তু উদ্বাস্তু কেন্দ্রের অবস্থা সেই আগের মতোই আছে।

দেশটির নাগরিকদের কোনো নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। এখানকার প্রায় ৯০ শতাংশ নাগরিক বেকার।