ঢাকা ০২:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ পালনের ঘোষণা আনিসুল হকের মুক্তি চেয়ে পোস্টার দিল্লিতে গৃহবন্দী শেখ হাসিনা? গ্যাস-বিদ্যুতে ভয়াবহ ভোগান্তির আশঙ্কা ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ মোদি-হাসিনা মাইনাস: ট্রাম্পের আস্থায় এখন ড. ইউনূস! মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ডের বাংলাদেশ নিয়ে ভাইরাল ভিডিওর আসল ঘটনা আমি ফিরব, আমাদের শহিদদের প্রতিশোধ নেব’: শেখ হাসিনা অপরাধী হাসিনাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপে ভারত ইন্টারপোলের জালে বেনজীর হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জোরদার হচ্ছে ভারতে! এটুআই ছিল মিলেমিশে লুটপাটের প্রকল্প আওয়ামী লুটপাটে পঙ্গু ইডিসিএল বিদেশেও বিচার সম্ভব শেখ হাসিনার ‘দুঃখিত, আপা! এটাই শেষ!!’ : হাসিনার উদ্দেশ্য প্রেস সচিব জাতীয় সংসদ ভোটের পর পুলিশে পদকের মচ্ছব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন প্রফেসর ইউনূস ও তার দাবার চাল। পদত্যাগ করছেন উপদেষ্টা নাহিদ, আসছে নতুন দল

ধারের ৩০ হাজার টাকায় শুরু ব্যবসায় কোটিপতি!

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর ২০২২
  • / 180
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ময়মনসিংহ জেলায় বার্ষিক মাছ উৎপাদন ৩ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। জেলায় বার্ষিক মাছের চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন। এখানকার চাহিদা পূরণ করে বার্ষিক মাছ উদ্বৃত্ত থাকছে ২ লাখ ৬৯ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ এই পরিমাণ মাছ যাচ্ছে অন্য জেলায়। এ জন্য মাছ উৎপাদনে সফল জেলা হিসেবে প্রথম নাম উচ্চারিত হয় ময়মনসিংহের।

জেলায় বর্তমানে ১ লাখ ৭৬ হাজার পুকুরের বিপরীতে এক লাখ খামারি মাছ চাষে জড়িত রয়েছেন। অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় এ পেশার মাধ্যমে অসংখ্য চাষি তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন, হয়েছেন বিত্তশালী। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অন্যদেরও করছেন স্বাবলম্বী। ময়মনসিংহে একজন সফল ব্যক্তি এ কে এম নুরুল হক। ১৯৮৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

টিভিতে মাছ চাষবিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে মনস্থির করেন, তিনিও শুরু করবেন মাছ চাষ। মহাজনি সুদে ধার করা ৩০ হাজার টাকা আর ভাড়া করা কয়েকটি পুকুর দিয়ে যাত্রা শুরু করা সেই নুরুল হক আজ কোটিপতি। শহরতলি শম্ভুগঞ্জের চরপুলিয়ামারী এলাকায় গড়ে তুলেছেন ব্রহ্মপুত্র ফিশ ফিড কমপ্লেক্স। কিনেছেন ২০ একর জমিও। নগরের জিলা স্কুল মোড় এলাকায় পাঁচতলা বাড়ি ও বিলাসবহুল গাড়ির মালিক এখন তিনি। একাধিকবার পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।

পরিশ্রম, অদম্য ইচ্ছা আর দৃঢ় মনোবলই এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে নুরুল হককে। মাছ চাষে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৭ সালে জাতীয় যুব পুরস্কার, ১৯৯৮ সালে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পদক (রৌপ্য), ২০০৯ সালে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পদক (স্বর্ণ) ও ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক (ব্রোঞ্চ) পেয়েছেন।

নুরুল হক বলেন, শুরুতে এ কাজে পারিবারের বাধা ছিল। গণিতে অনার্স পাস করে অন্য চাকরি না করায় বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তিন বছর থেকেছি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার বারান্দায়। পরে শুরু করি মাছ চাষ। অনেক কষ্টের পর সফলতা আসতে শুরু করল। তখন অবশ্য সবাই মেনে নিয়েছিলেন এবং উৎসাহ জুগিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, প্রথম দিকে পুকুরে রেণু থেকে পোনা উৎপাদনের কাজে হাত দিলেও চাহিদা বাড়ায় ১৯৯৩ সালে ব্রহ্মপুত্র ফিশ ফিড কমপ্লেক্স নামে একটি হ্যাচারি গড়ে তোলেন। এখানে কার্প জাতীয় রেণু উৎপাদন করা হতো। ১৯৯৮ সালে দেশি মাগুর ও ১৯৯৯ সালে শিং মাছের পোনা উৎপাদন শুরু করেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত চলে এটি।

এরপর ২০০১ সালে পাবদা, ২০০৩ সালে থাই কই মাছের পোনা উৎপাদনে সফল হন। ২০১০ সাল থেকে তেলাপিয়ার সুপার পুরুষ থেকে শুধু পুরুষ পোনা উৎপাদন, ২০১৫ সালে গাং মাগুর ও ২০১৮ সালে মলা মাছের কৃত্রিম প্রজনন শুরু করেন। সর্বশেষ ২০২০ সাল থেকে রানি মাছ নিয়ে কাজ করছেন নুরুল হক।

মাছ চাষে দিনবদলের এমন গল্প এ জেলায় নেহাত কম নয়। ১৯৯৭ সালে ত্রিশাল উপজেলার একটি প্রকল্প দেখে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন জয়নাল আবেদিন। উপজেলার কোনাবাড়ি এলাকায় ধানি জমিতে চারটি ও ভাড়ায় দুটি পুকুর দিয়ে যাত্রা শুরু। এরপর লাভের টাকা দিয়ে বাড়াতে থাকেন পুকুরের সংখ্যা। বর্তমানে ৬০ একর জমির ওপর তার প্রায় চার কোটি টাকার মাছের খামার।

পোনা উৎপাদন। যা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ২০১৬ সালে গুণগত মাছের পোনা উৎপাদনের স্বীকৃতিও পেয়ে যান ৩০ বছরের এ যুবক। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পান স্বর্ণপদক।

সফল এসব মাছচাষি যেমন নিজেরা সমৃদ্ধ হচ্ছেন, তেমনি অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করছেন। সৃষ্টি করছেন কর্মসংস্থানও। রাখছেন অবদান দেশের অর্থনীতিতে। মাছের পুকুর ও হ্যাচারিতে কাজ করা শ্রমিকরা জানান, কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন তারা। যা দিয়ে চলে তাদের সংসার। ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা বলেন, বাংলাদেশে যতগুলো জেলায় মাছ চাষ হয়, তার মধ্যে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় এবং বিভিন্ন জেলায় আমরা পাঠাই।

জেলায় যারা মাছ চাষ করছেন এবং যারা নতুন আগ্রহী, তাদের জেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ অর্থবছরে ইতোমধ্যে আমরা তিন হাজার চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আরও দেড় হাজার চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে আমাদের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্রঋণের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তারা যাতে বড় ঋণ নিতে পারেন, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্রঃ ঢাকা পোস্ট ডটকম।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ধারের ৩০ হাজার টাকায় শুরু ব্যবসায় কোটিপতি!

আপডেট সময় : ০৬:৩৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর ২০২২

ময়মনসিংহ জেলায় বার্ষিক মাছ উৎপাদন ৩ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। জেলায় বার্ষিক মাছের চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন। এখানকার চাহিদা পূরণ করে বার্ষিক মাছ উদ্বৃত্ত থাকছে ২ লাখ ৬৯ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ এই পরিমাণ মাছ যাচ্ছে অন্য জেলায়। এ জন্য মাছ উৎপাদনে সফল জেলা হিসেবে প্রথম নাম উচ্চারিত হয় ময়মনসিংহের।

জেলায় বর্তমানে ১ লাখ ৭৬ হাজার পুকুরের বিপরীতে এক লাখ খামারি মাছ চাষে জড়িত রয়েছেন। অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় এ পেশার মাধ্যমে অসংখ্য চাষি তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন, হয়েছেন বিত্তশালী। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অন্যদেরও করছেন স্বাবলম্বী। ময়মনসিংহে একজন সফল ব্যক্তি এ কে এম নুরুল হক। ১৯৮৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

টিভিতে মাছ চাষবিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে মনস্থির করেন, তিনিও শুরু করবেন মাছ চাষ। মহাজনি সুদে ধার করা ৩০ হাজার টাকা আর ভাড়া করা কয়েকটি পুকুর দিয়ে যাত্রা শুরু করা সেই নুরুল হক আজ কোটিপতি। শহরতলি শম্ভুগঞ্জের চরপুলিয়ামারী এলাকায় গড়ে তুলেছেন ব্রহ্মপুত্র ফিশ ফিড কমপ্লেক্স। কিনেছেন ২০ একর জমিও। নগরের জিলা স্কুল মোড় এলাকায় পাঁচতলা বাড়ি ও বিলাসবহুল গাড়ির মালিক এখন তিনি। একাধিকবার পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।

পরিশ্রম, অদম্য ইচ্ছা আর দৃঢ় মনোবলই এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে নুরুল হককে। মাছ চাষে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৭ সালে জাতীয় যুব পুরস্কার, ১৯৯৮ সালে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পদক (রৌপ্য), ২০০৯ সালে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পদক (স্বর্ণ) ও ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক (ব্রোঞ্চ) পেয়েছেন।

নুরুল হক বলেন, শুরুতে এ কাজে পারিবারের বাধা ছিল। গণিতে অনার্স পাস করে অন্য চাকরি না করায় বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তিন বছর থেকেছি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার বারান্দায়। পরে শুরু করি মাছ চাষ। অনেক কষ্টের পর সফলতা আসতে শুরু করল। তখন অবশ্য সবাই মেনে নিয়েছিলেন এবং উৎসাহ জুগিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, প্রথম দিকে পুকুরে রেণু থেকে পোনা উৎপাদনের কাজে হাত দিলেও চাহিদা বাড়ায় ১৯৯৩ সালে ব্রহ্মপুত্র ফিশ ফিড কমপ্লেক্স নামে একটি হ্যাচারি গড়ে তোলেন। এখানে কার্প জাতীয় রেণু উৎপাদন করা হতো। ১৯৯৮ সালে দেশি মাগুর ও ১৯৯৯ সালে শিং মাছের পোনা উৎপাদন শুরু করেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত চলে এটি।

এরপর ২০০১ সালে পাবদা, ২০০৩ সালে থাই কই মাছের পোনা উৎপাদনে সফল হন। ২০১০ সাল থেকে তেলাপিয়ার সুপার পুরুষ থেকে শুধু পুরুষ পোনা উৎপাদন, ২০১৫ সালে গাং মাগুর ও ২০১৮ সালে মলা মাছের কৃত্রিম প্রজনন শুরু করেন। সর্বশেষ ২০২০ সাল থেকে রানি মাছ নিয়ে কাজ করছেন নুরুল হক।

মাছ চাষে দিনবদলের এমন গল্প এ জেলায় নেহাত কম নয়। ১৯৯৭ সালে ত্রিশাল উপজেলার একটি প্রকল্প দেখে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন জয়নাল আবেদিন। উপজেলার কোনাবাড়ি এলাকায় ধানি জমিতে চারটি ও ভাড়ায় দুটি পুকুর দিয়ে যাত্রা শুরু। এরপর লাভের টাকা দিয়ে বাড়াতে থাকেন পুকুরের সংখ্যা। বর্তমানে ৬০ একর জমির ওপর তার প্রায় চার কোটি টাকার মাছের খামার।

পোনা উৎপাদন। যা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ২০১৬ সালে গুণগত মাছের পোনা উৎপাদনের স্বীকৃতিও পেয়ে যান ৩০ বছরের এ যুবক। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পান স্বর্ণপদক।

সফল এসব মাছচাষি যেমন নিজেরা সমৃদ্ধ হচ্ছেন, তেমনি অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করছেন। সৃষ্টি করছেন কর্মসংস্থানও। রাখছেন অবদান দেশের অর্থনীতিতে। মাছের পুকুর ও হ্যাচারিতে কাজ করা শ্রমিকরা জানান, কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন তারা। যা দিয়ে চলে তাদের সংসার। ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা বলেন, বাংলাদেশে যতগুলো জেলায় মাছ চাষ হয়, তার মধ্যে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় এবং বিভিন্ন জেলায় আমরা পাঠাই।

জেলায় যারা মাছ চাষ করছেন এবং যারা নতুন আগ্রহী, তাদের জেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ অর্থবছরে ইতোমধ্যে আমরা তিন হাজার চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আরও দেড় হাজার চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে আমাদের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্রঋণের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তারা যাতে বড় ঋণ নিতে পারেন, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্রঃ ঢাকা পোস্ট ডটকম।