ধূমপান শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এটি বিভিন্ন গুরুতর রোগের প্রধান কারণ। ধূমপানের ক্ষতি শরীরের প্রায় সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে প্রভাবিত করে। নিচে ধূমপানের প্রধান ক্ষতিগুলো উল্লেখ করা হলো-
১. ফুসফুসের ক্ষতি
ধূমপানে থাকা টক্সিন ফুসফুসের কোষ ধ্বংস করে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘমেয়াদি ধূমপান ক্রনিক ব্রংকাইটিস, অ্যামফিসিমা এবং কপিডি (COPD) রোগ সৃষ্টি করে। অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্ট রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ ধূমপান।
২. হার্ট ও রক্তনালির ওপর প্রভাব
নিয়মিত ধূমপান করলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং রক্তনালি সংকুচিত করে, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান করলে কোলেস্টেরল বেড়ে যায় এবং রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা সৃষ্টি হয়।
৩. ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি
ধূমপানের ফলে ফুসফুস, মুখগহ্বর, গলা, খাদ্যনালি, প্যানক্রিয়াস, মূত্রাশয় এবং কিডনিতে ক্যানসার হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ফুসফুসের ক্যানসারের ৮০-৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ধূমপান দায়ী।
৪. ত্বক ও চুলের ক্ষতি
ধূমপান ত্বকের স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন কমায়। ফলে ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যায় এবং রঙ নষ্ট হয়। এ থেকে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায়, চুল ঝরে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে।
৫. প্রজনন স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়
পুরুষদের ক্ষেত্রে ধূমপান যৌনশক্তি হ্রাস এবং স্পার্মের গুণমান নষ্ট করে। নারীদের ক্ষেত্রে এটি গর্ভধারণে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. দাঁত ও মুখের সমস্যা
ধূমপানে দাঁতের রঙ নষ্ট হয় এবং ক্যাভিটি ও মাড়ির রোগের আশঙ্কা বাড়ে। অন্যদিকে এ থেকে মুখে দুর্গন্ধ হয় এবং মুখগহ্বরের ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৭. হাড়ের ক্ষতি
ধূমপান হাড় দুর্বল করে এবং অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়। হাড় দ্রুত ভাঙার আশঙ্কা তৈরি হয়।
৮. মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব
ধূমপান মানসিক চাপ সাময়িকভাবে কমালেও এটি ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটির ঝুঁকি বাড়ায়। নিকোটিনের আসক্তি মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে।
৯. গর্ভাবস্থায় ধূমপানের ক্ষতি
গর্ভাবস্থায় ধূমপান করলে গর্ভের শিশুর ওজন কম হতে পারে। শিশুর জন্মগত ত্রুটি এবং হঠাৎ মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।
১০. পরোক্ষ ধূমপান
ধূমপান না করলেও সিগারেটের ধোঁয়া শ্বাসের মাধ্যমে অন্যদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। এটি শিশু এবং পরিবারের সদস্যদের ফুসফুস ও হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা
ধূমপান ছাড়ার পর রক্তচাপ, হার্টরেট এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা দ্রুত উন্নতি হয়। দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসার এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। সুস্থ থাকার জন্য ধূমপান সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা উচিত। যদি কেউ ধূমপান ছাড়তে চায়, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং উপযুক্ত সমর্থন বা নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ব্যবহার করতে হবে।