ঢাকা ০৭:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
বেগম জিয়াকে হিংসা করতেন হাসিনা ভারতের নাগরিকত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনা? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাত্রদের ঘোষণাপত্র দিতে বারণের কারণ জানালেন ড. ইউনূস  ঐক্যবদ্ধভাবে দিতে না পারলে জুলাই ঘোষণাপত্রের দরকারই নাই রেস্তোরাঁ, ওষুধ ও মোবাইল রিচার্জে বাড়ছে না ভ্যাট ধর্মনিরপেক্ষতাসহ রাষ্ট্র পরিচালনার ৩ মূলনীতি বাদ পদত্যাগপত্রে যা বললেন টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক আমার মেয়ের খুনি কে, আমি কি বিচার পাব না: প্রশ্ন তিন্নির বাবার জয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ৩ বছর আগে, জানালেন নিজেই গণহত্যায় জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড হাতে পেয়েছে প্রসিকিউশন ৫ আগস্ট: বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাপ্রধানের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল ক্রসফায়ারে নিহতদের ৪ জন ছিলেন ডিবি হেফাজতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক ছিলেন শেখ রেহানা শনিবার স্কুল খোলা নাকি বন্ধ? ‘জমজমের’ নামে ট্যাপের পানি বিক্রি, আয় ৩০ কোটি টাকা! শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ঘোষণা আসছে? টিউলিপকে দেশে ফেরত চান ড. ইউনূস? যুক্তরাজ্যে টিউলিপের পর আলোচনায় সালমানপুত্র হাসিনা যেভাবে সৌদিকে দমিয়ে রাখতো

নজরুল পুত্র বুলবুলকে নিয়ে একটি বেদনাময় কাহিনি

সংগ্রহ,পরিমার্জন এবং বিশ্লেষণ:- মোহাম্মাদ বেলাল
  • আপডেট সময় : ০৫:২৫:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২
  • / 1444
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ২য় পুত্র ছিলেন বুলবুল। তিনিও ছিলেন অসামান্য মেধাবী। সবাই তাকে কবি নজরুলের যোগ্য উত্তরসূরি ভাবতেন। কবি তাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। ছোটকালে কবি নজরুল তার পুত্রকে একটি গজল শিখিয়ে দিয়েছিলেন। বুলবুল সেই গজলটি কচি কণ্ঠে অত্যন্ত সুমধুর সুরে বলতেন। পুত্রের কণ্ঠে মুগ্ধ হয়ে যেতেন তিনি।
কিন্তু কবির এই পরম প্রিয় পুত্র মাত্র সাড়ে চার বছর বয়সে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
এরপর থেকেই কবি শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হতে শুরু করেন।
যে মানুষটি বন্ধুদের আড্ডা মাতিয়ে রাখতো, সদা চঞ্চল সেই মানুষটি একদম বিমর্ষ হয়ে পরেন। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত তার বিমর্ষতা কাটে নি। এতটাই পুত্রশোকে বিহ্বল ছিলেন তিনি।
কবির পরম প্রিয় সেই পুত্র বুলবুল কে নিয়ে নজরুলের দুইটি খুবই বেদনাময় কাহিনি আছে তা হল-
চার বছরের শিশু বুলবুল যে রাতে মারা গিয়ে ছিল, সে রাতে তার পকেটে একটা কানাকড়িও ছিল না। অথচ কাফন,দাফন,গাড়িতে করে দেহ নেওয়া ও গোরস্থানে জমি কেনার জন্য দরকার ১৫০ টাকা, সে সময়ের ১৫০ টাকা মানে অনেক টাকা। এত টাকা কোথায় পাবে। বিভিন্ন লাইব্রেরীতে লোক পাঠানো হল। না, টাকার তেমন ব্যবস্থা হয়নি। শুধুমাত্র ডি. এম লাইব্রেরি দিয়েছিল ৩৫ টাকা। আরো অনেক টাকা বাকি। টাকা আবশ্যক। ঘরে দেহ রেখে কবি গেলেন এক প্রকাশকের কাছে। প্রকাশক শর্ত দিল। এই মুহূর্তে কবিতা লিখে দিতে হবে। তারপর টাকা।
কবি মনের নীরব কান্না,যতনা লিখে দিলেন কবিতায়…
“ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে
আমার গানের বুলবুলি
করুন চোখে চেয়ে আছে
সাঁঝের ঝরা ফুলগুলি”
কবি এভাবে পুত্র শোকে তার কষ্টের দিন গুলো পার করতে লাগলেন, একদিন “পঞ্চানন ঘোষাল তখন কলকাতার তরুণ পুলিশ অফিসার। কাজী নজরুলকে তিনি ভালোবাসেন এবং মাঝে মাঝে তার সাথে গল্প করেন। একবার কবির বাসায় তল্লাশীর হুকুম এল উপর থেকে। এ বেচারাকে দায়িত্ব দেয়া হল সে দলে থাকার। গোয়েন্দারা তাকে নিয়ে দরজায় কড়া নাড়ল কবির ঘরের। কাজী নজরুল দরজা খুলে দিলেন এবং সঙ্গত কারণে এই তরুণ অফিসার এবং কবি দুজনই পরস্পরকে না চেনার ভান করে রইলেন। গোয়েন্দা পুলিশের দল কবির ঘরে সবকিছু তছনছ করে তল্লাশী চালাচ্ছে, কবিও তাদেরকে যথাসম্ভব বাক্স খুলে খূলে দেখাচ্ছেন।
হঠাৎ ঘরের কোনে পরম যত্ন উঠিয়ে রাখা একটি বাক্সে নজর পড়ল তাদের। তারা সেটি খুলে দেখতে চাইল। কবি অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলেন, না না, ওটাতে হাত দিবেন না যেন।
কবির বিচলিত মুখভঙ্গি দেখে পুলিশদের সন্দেহ তীব্র হল। তাদের একজন সজোরে সেটি খুলতেই সেই বাক্সটি থেকে ঝরে পড়ল কিছূ খেলনা আর ছোট ছোট জামা কাপড়সহ বাচ্চাদের অন্যান্য সামগ্রী।
এভাবে সেগুলো আছড়ে মাটিতে পড়তে দেখে কবির দু চোখ পানিতে ভরে গেল। ঝরঝর করে তিনি কেঁদে দিলেন সবার সামনে। এমন সুকঠিন মুখখানা তার ব্যাথায় ও দুঃখে কালো হয়ে এল।
এ খেলনা ও ব্যবহার্য সামগ্রীগুলো ছিল কবির আদরের সন্তান এই ছোট বুলবুলের। তার মৃত্যুর পর এসব বুকে জড়িয়ে কবি স্বান্ত্বণা খুঁজে পেতেন, আদর আর চুমো পৌঁছে দিতেন বুলবুলের গালে।
এ অফিসার তার এক লেখায় নিজেকে অত্যন্ত
ব্যর্থ ও লজ্জিত উল্লেখ করে লিখেছেন, এরপর কত মানুষের কত ঘর সার্চ করেছি,
কিন্তু সেদিনের মতো এমন কষ্ট আর কোথাও পাইনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নজরুল পুত্র বুলবুলকে নিয়ে একটি বেদনাময় কাহিনি

আপডেট সময় : ০৫:২৫:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২

 

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ২য় পুত্র ছিলেন বুলবুল। তিনিও ছিলেন অসামান্য মেধাবী। সবাই তাকে কবি নজরুলের যোগ্য উত্তরসূরি ভাবতেন। কবি তাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। ছোটকালে কবি নজরুল তার পুত্রকে একটি গজল শিখিয়ে দিয়েছিলেন। বুলবুল সেই গজলটি কচি কণ্ঠে অত্যন্ত সুমধুর সুরে বলতেন। পুত্রের কণ্ঠে মুগ্ধ হয়ে যেতেন তিনি।
কিন্তু কবির এই পরম প্রিয় পুত্র মাত্র সাড়ে চার বছর বয়সে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
এরপর থেকেই কবি শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হতে শুরু করেন।
যে মানুষটি বন্ধুদের আড্ডা মাতিয়ে রাখতো, সদা চঞ্চল সেই মানুষটি একদম বিমর্ষ হয়ে পরেন। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত তার বিমর্ষতা কাটে নি। এতটাই পুত্রশোকে বিহ্বল ছিলেন তিনি।
কবির পরম প্রিয় সেই পুত্র বুলবুল কে নিয়ে নজরুলের দুইটি খুবই বেদনাময় কাহিনি আছে তা হল-
চার বছরের শিশু বুলবুল যে রাতে মারা গিয়ে ছিল, সে রাতে তার পকেটে একটা কানাকড়িও ছিল না। অথচ কাফন,দাফন,গাড়িতে করে দেহ নেওয়া ও গোরস্থানে জমি কেনার জন্য দরকার ১৫০ টাকা, সে সময়ের ১৫০ টাকা মানে অনেক টাকা। এত টাকা কোথায় পাবে। বিভিন্ন লাইব্রেরীতে লোক পাঠানো হল। না, টাকার তেমন ব্যবস্থা হয়নি। শুধুমাত্র ডি. এম লাইব্রেরি দিয়েছিল ৩৫ টাকা। আরো অনেক টাকা বাকি। টাকা আবশ্যক। ঘরে দেহ রেখে কবি গেলেন এক প্রকাশকের কাছে। প্রকাশক শর্ত দিল। এই মুহূর্তে কবিতা লিখে দিতে হবে। তারপর টাকা।
কবি মনের নীরব কান্না,যতনা লিখে দিলেন কবিতায়…
“ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে
আমার গানের বুলবুলি
করুন চোখে চেয়ে আছে
সাঁঝের ঝরা ফুলগুলি”
কবি এভাবে পুত্র শোকে তার কষ্টের দিন গুলো পার করতে লাগলেন, একদিন “পঞ্চানন ঘোষাল তখন কলকাতার তরুণ পুলিশ অফিসার। কাজী নজরুলকে তিনি ভালোবাসেন এবং মাঝে মাঝে তার সাথে গল্প করেন। একবার কবির বাসায় তল্লাশীর হুকুম এল উপর থেকে। এ বেচারাকে দায়িত্ব দেয়া হল সে দলে থাকার। গোয়েন্দারা তাকে নিয়ে দরজায় কড়া নাড়ল কবির ঘরের। কাজী নজরুল দরজা খুলে দিলেন এবং সঙ্গত কারণে এই তরুণ অফিসার এবং কবি দুজনই পরস্পরকে না চেনার ভান করে রইলেন। গোয়েন্দা পুলিশের দল কবির ঘরে সবকিছু তছনছ করে তল্লাশী চালাচ্ছে, কবিও তাদেরকে যথাসম্ভব বাক্স খুলে খূলে দেখাচ্ছেন।
হঠাৎ ঘরের কোনে পরম যত্ন উঠিয়ে রাখা একটি বাক্সে নজর পড়ল তাদের। তারা সেটি খুলে দেখতে চাইল। কবি অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলেন, না না, ওটাতে হাত দিবেন না যেন।
কবির বিচলিত মুখভঙ্গি দেখে পুলিশদের সন্দেহ তীব্র হল। তাদের একজন সজোরে সেটি খুলতেই সেই বাক্সটি থেকে ঝরে পড়ল কিছূ খেলনা আর ছোট ছোট জামা কাপড়সহ বাচ্চাদের অন্যান্য সামগ্রী।
এভাবে সেগুলো আছড়ে মাটিতে পড়তে দেখে কবির দু চোখ পানিতে ভরে গেল। ঝরঝর করে তিনি কেঁদে দিলেন সবার সামনে। এমন সুকঠিন মুখখানা তার ব্যাথায় ও দুঃখে কালো হয়ে এল।
এ খেলনা ও ব্যবহার্য সামগ্রীগুলো ছিল কবির আদরের সন্তান এই ছোট বুলবুলের। তার মৃত্যুর পর এসব বুকে জড়িয়ে কবি স্বান্ত্বণা খুঁজে পেতেন, আদর আর চুমো পৌঁছে দিতেন বুলবুলের গালে।
এ অফিসার তার এক লেখায় নিজেকে অত্যন্ত
ব্যর্থ ও লজ্জিত উল্লেখ করে লিখেছেন, এরপর কত মানুষের কত ঘর সার্চ করেছি,
কিন্তু সেদিনের মতো এমন কষ্ট আর কোথাও পাইনি।