ঢাকা ১২:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠন আমি স্যামসাং ব্যবহার করি, স্ক্রিনশট গেছে আইফোনের : জনপ্রশাসন সচিব উন্নয়নের ভ্রান্ত ধারণা: ঋণে ডুবে থাকা দেশ টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় নাহিদ ইসলাম আমার টাকা-পয়সার প্রতি লোভ নেই, ৫ কোটি হলেই চলবে এক দিনেই হাওয়া ৮ হাজার কোটি টাকার বাজার মূলধন অবশেষে দেখা মিলল আসাদুজ্জামান কামালের ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ কারাগারে কেমন আছেন ‘ভিআইপি’ বন্দীরা একটি ফোনকল যেভাবে বদলে দিয়েছে ড. ইউনূসের জীবনের গতিপথ ড. ইউনুসের Three Zeros থিয়োরি বর্তমান উপদেষ্টাদের সঙ্গে নতুন চার-পাঁচজন মুখ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকটি জাতীয় দিবস বাতিল করতে পারে সরকার সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ গায়েব: উপদেষ্টা “প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস: বাংলার গর্ব, বৈশ্বিক সম্প্রীতির প্রতীক” খেলোয়াড় সাকিবের নিরাপত্তা আছে, ফ্যাসিস্ট সাকিবের ক্ষেত্রে অবান্তর: ক্রীড়া উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সম্মেলন থেকে কী অর্জন করলেন? জাতিসংঘে তিন-শুন্যের ধারণা দিলেন ড. ইউনুস যন্ত্রণার নাম ব্যাটারি রিকশা তরুণ সমাজের অফুরান শক্তি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে— ড. ইউনূস

নিঃসন্তান হওয়ার যন্ত্রণাও সালমান শাহর আত্মহত্যার কারণ

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৮:১১:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩৪ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইমন (সালমান শাহর ডাকনাম) শাবনূরকে নিয়ে গোপনে ভারতে গেছেন। খবরটা চট্টগ্রামে বসেই পান সালমানের স্ত্রী সামিরা। সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সামিরা জানিয়েছেন, ভারত থেকে ফেরার দুই সপ্তাহের মধ্যে আবারও শাবনূরের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে যান সালমান। এ সফরে তাঁদের সঙ্গে ছিলেন শাবনূরের বাবা ও ভাই। ফিরে এসে সালমান স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, শাবনূর তাঁকে বিয়ের জন্য পীড়াপীড়ি করছেন।

সালমান হত্যা মামলা তদন্তে পিবিআইয়ের চোখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন তাঁরা, যাঁরা নায়কের মৃত্যুর দিন তাঁর বাসায় ছিলেন। গৃহকর্মী মনোয়ারা তাঁদের একজন। জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, সালমানকে সামিরা বলেছিলেন তাঁকে তালাক দিয়ে দিতে। কিন্তু রাজি ছিলেন না সালমান। বলেছিলেন, সামিরাকে ভালোবাসেন, তালাক দিতে পারবেন না। সামিরাও পাল্টা জানিয়ে দেন, সতিনের সংসার তিনি করতে পারবেন না। এসব টানাপোড়েন চলছিল নায়কের মৃত্যুর কয়েক মাস আগে থেকে।

স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব মেটাতে শেষ দিকে উদ্যোগী হয়েছিলেন সালমান। শাবনূরের সঙ্গে কাজ কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সালমান শাহর মৃত্যুর পর রমনা থানার পুলিশ, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), পুলিশের তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং র‍্যাবের হাত ঘুরে আদালতের নির্দেশে ২০১৬ সালের শেষ দিকে তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। এর আগে দুই দফায় বিচার বিভাগীয় তদন্তও হয়। ৪৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে পিবিআই। নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজারও ছিলেন এ তালিকায়। পিবিআইকে দেওয়া গুলজারের বয়ানে সালমানের এমন সিদ্ধান্তের আঁচ পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, সালমান ও শাবনূরকে নিয়ে সিনেমা করার জন্য তিনি সালমানের বাসায় গিয়েছিলেন। তখন সালমান জানান, নায়িকা নিয়ে তাঁর আপত্তি আছে। বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ার পর শাবনূরকে নিয়ে আর কাজ করতে চাচ্ছিলেন না সালমান। অনেক পরিচালককে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

তবে শেষ পর্যন্ত এ জটিল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি নায়ক। সমাধান খোঁজেন নিজেকে শেষ করে দিয়ে। পিবিআইয়ের তদন্তে শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়াও সালমানের আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সালমান-সামিরার কোনো সন্তান না হওয়া। এ নিয়ে পুত্রবধূর প্রতি ব্যাপক অসন্তোষ ছিল সালমানের মায়ের। হতাশ ছিলেন সালমানও। সামিরা কয়েকবার চিকিৎসকের কাছে যান। তবে ডাক্তারি পরীক্ষায় সন্তান না হওয়ার ক্ষেত্রে সামিরার কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি।

সালমানের সঙ্গে শাবনূরের গোপন ভারত সফরসালমানের সঙ্গে শাবনূরের গোপন ভারত সফর
মৌলভীবাজার থেকে ডলি নামের এক নারীকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। একবার ডলিকে মারপিট করলে তিনি পালিয়ে যান। ওমর নামে তিন বছর বয়সী এক ছেলে ছিল ডলির। সালমান ভীষণ ভালোবাসতেন ওমরকে। মায়ের বাসা থেকে তাকে নিয়ে আসেন নিজের কাছে। তাকে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসতেন সালমান। ওমরও তাঁকে বাবা বলে ডাকত। সালমানের বাসায় এসে ডলি তার ছেলেকে নিয়ে যেতে চাইলে সালমান বলেছিলেন, তোমার ছেলেকে মানুষ করে দেব। ওমরকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে ডলির আপত্তির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর যেদিন সালমান মারা যান, সেদিন ডলিও তাঁর বাসায় ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছেলেকে গোসল করিয়ে ড্রেসিংরুমে যান তার পোশাক আনতে। দরজা বন্ধ পেয়ে কয়েকবার ডাকাডাকি করেন। তবে ভেতর থেকে সালমানের সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। সামিরাকে তখন জানানো হয়। সালমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবুলও আসে। সবাই মিলে ডাকাডাকি করেও যখন কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন চাবি এনে বাইরে থেকে ড্রেসিংরুমের দরজা খোলেন সামিরা। এরপর যে দৃশ্য দেখা যায়, তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই—সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছে সালমানের দেহ!

চিৎকার করে দৌড়ে গিয়ে সামিরা ও গৃহকর্মী মনোয়ারা সালমানের পায়ের দিক থেকে উঁচিয়ে ধরেন। মই নিয়ে আসেন আবুল, রান্নাঘর থেকে বঁটি আনেন ডলি। সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস লাগানো রশি কেটে দেওয়া হয়। নিচে নামিয়ে আনা হয় অচেতন সালমানকে। সরিষার তেল গরম করে তাঁর সারা শরীরে মালিশ করতে থাকেন সবাই। কিন্তু কিছুতেই সাড়া মিলছিল না। প্রস্রাব ও মল নির্গত হতে দেখে আবুল ও ডলি সালমানের প্যান্ট বদলে দেন। প্যান্টের পকেটে পাওয়া যায় সালমানের লেখা একটি চিরকুট, ‘আমি চৌঃ মোঃ শাহরিয়ার।…এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে, আজ অথবা আজকের পরে যে কোনো দিন আমার মৃত্যু হলে তার জন্য কেউ দায়ী থাকবে না। স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আত্মহত্যা করছি।’

সারা রাত সালমানের বাসায় ছিলেন শাবনূর
খবর পেয়ে চলে আসেন প্রতিবেশীরা। কিছুক্ষণ পর আসেন সালমানের মা, বাবা ও ভাই। সালমানের মা এসেই সামিরার চুলের মুঠি ধরে বলতে থাকেন, সামিরাই সালমানকে মেরে ফেলেছে। সামিরার প্রতি চড়াও হন সালমানের ভাই বিল্টুও। তখন সেখানে ছিলেন ইস্কাটন প্লাজা ফ্ল্যাট ওনার অ্যান্ড রেসিডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমিন। নীলা চৌধুরী ও বিল্টুর কবল থেকে সামিরাকে রক্ষা করেন ফরিদা।

সবাই মিলে ধরাধরি করে বাসার নিচে নামিয়ে আনা হয় সালমানকে। নিয়ে যাওয়া হয় নিকটস্থ হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকেরা দ্রুত তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা সালমান শাহকে মৃত ঘোষণা করেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে এভাবেই শেষ হয় স্বপ্নের নায়কের পথচলা। শেষ হয় বাংলা চলচ্চিত্রের একটি সোনালি অধ্যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নিঃসন্তান হওয়ার যন্ত্রণাও সালমান শাহর আত্মহত্যার কারণ

আপডেট সময় : ০৮:১১:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইমন (সালমান শাহর ডাকনাম) শাবনূরকে নিয়ে গোপনে ভারতে গেছেন। খবরটা চট্টগ্রামে বসেই পান সালমানের স্ত্রী সামিরা। সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সামিরা জানিয়েছেন, ভারত থেকে ফেরার দুই সপ্তাহের মধ্যে আবারও শাবনূরের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে যান সালমান। এ সফরে তাঁদের সঙ্গে ছিলেন শাবনূরের বাবা ও ভাই। ফিরে এসে সালমান স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, শাবনূর তাঁকে বিয়ের জন্য পীড়াপীড়ি করছেন।

সালমান হত্যা মামলা তদন্তে পিবিআইয়ের চোখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন তাঁরা, যাঁরা নায়কের মৃত্যুর দিন তাঁর বাসায় ছিলেন। গৃহকর্মী মনোয়ারা তাঁদের একজন। জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, সালমানকে সামিরা বলেছিলেন তাঁকে তালাক দিয়ে দিতে। কিন্তু রাজি ছিলেন না সালমান। বলেছিলেন, সামিরাকে ভালোবাসেন, তালাক দিতে পারবেন না। সামিরাও পাল্টা জানিয়ে দেন, সতিনের সংসার তিনি করতে পারবেন না। এসব টানাপোড়েন চলছিল নায়কের মৃত্যুর কয়েক মাস আগে থেকে।

স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব মেটাতে শেষ দিকে উদ্যোগী হয়েছিলেন সালমান। শাবনূরের সঙ্গে কাজ কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সালমান শাহর মৃত্যুর পর রমনা থানার পুলিশ, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), পুলিশের তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং র‍্যাবের হাত ঘুরে আদালতের নির্দেশে ২০১৬ সালের শেষ দিকে তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। এর আগে দুই দফায় বিচার বিভাগীয় তদন্তও হয়। ৪৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে পিবিআই। নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজারও ছিলেন এ তালিকায়। পিবিআইকে দেওয়া গুলজারের বয়ানে সালমানের এমন সিদ্ধান্তের আঁচ পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, সালমান ও শাবনূরকে নিয়ে সিনেমা করার জন্য তিনি সালমানের বাসায় গিয়েছিলেন। তখন সালমান জানান, নায়িকা নিয়ে তাঁর আপত্তি আছে। বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ার পর শাবনূরকে নিয়ে আর কাজ করতে চাচ্ছিলেন না সালমান। অনেক পরিচালককে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

তবে শেষ পর্যন্ত এ জটিল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি নায়ক। সমাধান খোঁজেন নিজেকে শেষ করে দিয়ে। পিবিআইয়ের তদন্তে শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়াও সালমানের আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সালমান-সামিরার কোনো সন্তান না হওয়া। এ নিয়ে পুত্রবধূর প্রতি ব্যাপক অসন্তোষ ছিল সালমানের মায়ের। হতাশ ছিলেন সালমানও। সামিরা কয়েকবার চিকিৎসকের কাছে যান। তবে ডাক্তারি পরীক্ষায় সন্তান না হওয়ার ক্ষেত্রে সামিরার কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি।

সালমানের সঙ্গে শাবনূরের গোপন ভারত সফরসালমানের সঙ্গে শাবনূরের গোপন ভারত সফর
মৌলভীবাজার থেকে ডলি নামের এক নারীকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। একবার ডলিকে মারপিট করলে তিনি পালিয়ে যান। ওমর নামে তিন বছর বয়সী এক ছেলে ছিল ডলির। সালমান ভীষণ ভালোবাসতেন ওমরকে। মায়ের বাসা থেকে তাকে নিয়ে আসেন নিজের কাছে। তাকে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসতেন সালমান। ওমরও তাঁকে বাবা বলে ডাকত। সালমানের বাসায় এসে ডলি তার ছেলেকে নিয়ে যেতে চাইলে সালমান বলেছিলেন, তোমার ছেলেকে মানুষ করে দেব। ওমরকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে ডলির আপত্তির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর যেদিন সালমান মারা যান, সেদিন ডলিও তাঁর বাসায় ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছেলেকে গোসল করিয়ে ড্রেসিংরুমে যান তার পোশাক আনতে। দরজা বন্ধ পেয়ে কয়েকবার ডাকাডাকি করেন। তবে ভেতর থেকে সালমানের সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। সামিরাকে তখন জানানো হয়। সালমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবুলও আসে। সবাই মিলে ডাকাডাকি করেও যখন কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন চাবি এনে বাইরে থেকে ড্রেসিংরুমের দরজা খোলেন সামিরা। এরপর যে দৃশ্য দেখা যায়, তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই—সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছে সালমানের দেহ!

চিৎকার করে দৌড়ে গিয়ে সামিরা ও গৃহকর্মী মনোয়ারা সালমানের পায়ের দিক থেকে উঁচিয়ে ধরেন। মই নিয়ে আসেন আবুল, রান্নাঘর থেকে বঁটি আনেন ডলি। সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস লাগানো রশি কেটে দেওয়া হয়। নিচে নামিয়ে আনা হয় অচেতন সালমানকে। সরিষার তেল গরম করে তাঁর সারা শরীরে মালিশ করতে থাকেন সবাই। কিন্তু কিছুতেই সাড়া মিলছিল না। প্রস্রাব ও মল নির্গত হতে দেখে আবুল ও ডলি সালমানের প্যান্ট বদলে দেন। প্যান্টের পকেটে পাওয়া যায় সালমানের লেখা একটি চিরকুট, ‘আমি চৌঃ মোঃ শাহরিয়ার।…এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে, আজ অথবা আজকের পরে যে কোনো দিন আমার মৃত্যু হলে তার জন্য কেউ দায়ী থাকবে না। স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আত্মহত্যা করছি।’

সারা রাত সালমানের বাসায় ছিলেন শাবনূর
খবর পেয়ে চলে আসেন প্রতিবেশীরা। কিছুক্ষণ পর আসেন সালমানের মা, বাবা ও ভাই। সালমানের মা এসেই সামিরার চুলের মুঠি ধরে বলতে থাকেন, সামিরাই সালমানকে মেরে ফেলেছে। সামিরার প্রতি চড়াও হন সালমানের ভাই বিল্টুও। তখন সেখানে ছিলেন ইস্কাটন প্লাজা ফ্ল্যাট ওনার অ্যান্ড রেসিডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমিন। নীলা চৌধুরী ও বিল্টুর কবল থেকে সামিরাকে রক্ষা করেন ফরিদা।

সবাই মিলে ধরাধরি করে বাসার নিচে নামিয়ে আনা হয় সালমানকে। নিয়ে যাওয়া হয় নিকটস্থ হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকেরা দ্রুত তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা সালমান শাহকে মৃত ঘোষণা করেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে এভাবেই শেষ হয় স্বপ্নের নায়কের পথচলা। শেষ হয় বাংলা চলচ্চিত্রের একটি সোনালি অধ্যায়।