ঢাকা ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড় ড. ইউনূসকে ঈদগাহের মুসল্লিরাঃ আপনি ৫ বছর দায়িত্বে থাকুন, এটাই দেশের মানুষের চাওয়া বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লবের সূচনা! খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঈদের দাওয়াত দিলেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান পররাষ্ট্র নীতিতে ড. ইউনূসের কাছে হেরে গেছেন নরেন্দ্র মোদী! ৩ এপ্রিলও ছুটির প্রস্তাব, মিলতে পারে ৯ দিনের ছুটি বউয়ের টিকটকেই ধরা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ, ‘ক্লু’ ছিল গাড়িতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিনের পরিচয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের পরিচয় শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব প্রমাণ সরকারের কাছে আছে জেলায় জেলায় সরকারি অর্থে ‘আওয়ামী পল্লি’

পাকিস্তান-বাংলাদেশ সরাসরি নৌ বাণিজ্য শুরু হওয়ায় উদ্বিগ্ন ভারত

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৬:০৪:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
  • / 166
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই প্রথম কোনো পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়েছে। গতকাল বুধবার পাকিস্তানের করাচি থেকে ছেড়ে আসা জাহাজটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে। নানা কারণেই পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজটির বাংলাদেশের বন্দরে ভেড়ার বিষয়টিকে ঐতিহাসিক বলা হচ্ছে। আর এই ঐতিহাসিক বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলীয় দুই প্রতিবেশীদের মধ্যে এ ধরনের সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের কাছাকাছি থাকার কারণে ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ সরাসরি এই শিপিং রুটকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যও ব্যবসায়িক সম্পর্কের উন্নয়নে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই উদ্যোগটি কেবল বিদ্যমান বাণিজ্যের গতি বাড়াবে না, বরং উভয় দেশের ব্যবসা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।’

গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য স্থাপনের মাধ্যমে বাণিজ্য বৃদ্ধির আশা প্রকাশ করেছে। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সরকারি মহলে এই বিষয়টি নিয়ে আশাবাদ থাকলেও ভারতীয় এক কৌশলগত বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন যে, এই সম্পর্ক ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। মাত্র তিন মাস আগেও দুই দেশের (বাংলাদেশ-পাকিস্তান) সম্পর্ক তিক্ত ছিল। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা- এ দুটি প্রধান বন্দর গত পাঁচ দশক ধরে পাকিস্তানের জন্য নিষিদ্ধ ছিল…দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সিঙ্গাপুর বা কলম্বোয় ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে হতো।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘এখন পাকিস্তানি জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রামে আসবে, ফলে অবৈধ পণ্য বাংলাদেশের মাধ্যমে ভারতে পৌঁছে যেতে পারে- এমন আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’ এ সময় তিনি ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের বিশাল চালান আটক হওয়ার ঘটনাটি উল্লেখ করেন। এই ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অস্ত্র আটকের ঘটনা।

টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালের সেই অভিযানে আটক অস্ত্রগুলো পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই- এর অর্থায়নে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বিদ্রোহী গোষ্ঠী উলফার কাছে পৌঁছানোর কথা ছিল। প্রায় দেড় হাজার চীনা অস্ত্র চালান ট্রলার যোগে চট্টগ্রামে পৌঁছায়। যার আনুমানিক মূল্য ছিল ৪ দশমিক ৫ থেকে ৭ মিলিয়ন ডলার। এ চালানটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আলফার কাছে যাওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ অস্ত্র পৌঁছানোর আগেই আটক করা হয়।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেই সময় থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সমুদ্রপথে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে এবং চীনের প্রভাব এড়াতে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। গত বছর মোংলা বন্দরের একটি টার্মিনালের পরিচালনার বিষয়ে চীনের ওপর কৌশলগত বিজয় লাভ করেছিল ভারত। কিন্তু এখন পাকিস্তান চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশাধিকার পেয়ে গেছে। এই দুই বন্দরের সমুদ্রপথ এখন পাকিস্তানি জাহাজের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। মিয়ানমারও চট্টগ্রামের খুব কাছাকাছি অবস্থানে থাকায়, এ বিষয়টি আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন ভারতের নিরাপত্তা বিভাগের একটি সূত্র।

মিয়ানমার বর্তমানে একটি অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে এবং ভারতে মাদক চোরাচালান ও অনুপ্রবেশের কারণে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসা কার্গো জাহাজের পণ্যের বিস্তারিত জানা না গেলেও, একাধিক সূত্র জানিয়েছে যে বড় কন্টেইনারগুলো প্রথমে জাহাজ থেকে নামানো হয়। তারপর বাকি পণ্যগুলো খালাস করা হয়।

এক সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রথমে কিছু ৪০ ফুটের কন্টেইনার নামানো হয় এবং সেগুলোর চারপাশে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এটি সাধারণত করা হয় না। ফলে, অবৈধ পণ্য প্রবেশের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’

পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ চালুর উদ্যোগকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে বাংলাদেশে পাকিস্তান প্রায় একঘরে অবস্থানে ছিল। শেখ হাসিনা চলতি বছরের ৫ আগস্ট দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষোভের মুখে দেশ ত্যাগ করেন।

১৯৭১ সালে নয় মাসব্যাপী স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম নেয় বাংলাদেশ, যা আগে পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল। শেখ হাসিনার শাসনামলে, বিশেষ করে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং পুনরায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়।

ভারতের একজন বিশ্লেষক বলেন, ‘ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস করছে…এবং তাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে পাকিস্তানের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান মূলত বিভিন্ন ধরনের তুলা বাংলাদেশে রপ্তানি করে, আর বাংলাদেশ জুটপণ্য রপ্তানি করে…তবে ভারতের প্রধান রপ্তানি বাজার হিসেবে বাংলাদেশের স্থান পরিবর্তন করা অসম্ভব। আমাদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তান-বাংলাদেশের এই নতুন ঘনিষ্ঠতার কারণে আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।’

এদিকে, এরই মধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আগামী ২০২৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক নৌমহড়া আমান-২০২৫-এ অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশি এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এটি হবে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ নৌ মহড়ায় অংশগ্রহণ…গত মাসে একটি ফ্রিগেট পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। এসব পদক্ষেপ ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।’ অনুবাদ: আজকের পত্রিকা

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পাকিস্তান-বাংলাদেশ সরাসরি নৌ বাণিজ্য শুরু হওয়ায় উদ্বিগ্ন ভারত

আপডেট সময় : ০৬:০৪:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

 

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই প্রথম কোনো পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়েছে। গতকাল বুধবার পাকিস্তানের করাচি থেকে ছেড়ে আসা জাহাজটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে। নানা কারণেই পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজটির বাংলাদেশের বন্দরে ভেড়ার বিষয়টিকে ঐতিহাসিক বলা হচ্ছে। আর এই ঐতিহাসিক বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলীয় দুই প্রতিবেশীদের মধ্যে এ ধরনের সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের কাছাকাছি থাকার কারণে ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ সরাসরি এই শিপিং রুটকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যও ব্যবসায়িক সম্পর্কের উন্নয়নে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই উদ্যোগটি কেবল বিদ্যমান বাণিজ্যের গতি বাড়াবে না, বরং উভয় দেশের ব্যবসা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।’

গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য স্থাপনের মাধ্যমে বাণিজ্য বৃদ্ধির আশা প্রকাশ করেছে। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সরকারি মহলে এই বিষয়টি নিয়ে আশাবাদ থাকলেও ভারতীয় এক কৌশলগত বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন যে, এই সম্পর্ক ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। মাত্র তিন মাস আগেও দুই দেশের (বাংলাদেশ-পাকিস্তান) সম্পর্ক তিক্ত ছিল। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা- এ দুটি প্রধান বন্দর গত পাঁচ দশক ধরে পাকিস্তানের জন্য নিষিদ্ধ ছিল…দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সিঙ্গাপুর বা কলম্বোয় ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে হতো।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘এখন পাকিস্তানি জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রামে আসবে, ফলে অবৈধ পণ্য বাংলাদেশের মাধ্যমে ভারতে পৌঁছে যেতে পারে- এমন আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’ এ সময় তিনি ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের বিশাল চালান আটক হওয়ার ঘটনাটি উল্লেখ করেন। এই ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অস্ত্র আটকের ঘটনা।

টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালের সেই অভিযানে আটক অস্ত্রগুলো পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই- এর অর্থায়নে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বিদ্রোহী গোষ্ঠী উলফার কাছে পৌঁছানোর কথা ছিল। প্রায় দেড় হাজার চীনা অস্ত্র চালান ট্রলার যোগে চট্টগ্রামে পৌঁছায়। যার আনুমানিক মূল্য ছিল ৪ দশমিক ৫ থেকে ৭ মিলিয়ন ডলার। এ চালানটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আলফার কাছে যাওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ অস্ত্র পৌঁছানোর আগেই আটক করা হয়।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেই সময় থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সমুদ্রপথে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে এবং চীনের প্রভাব এড়াতে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। গত বছর মোংলা বন্দরের একটি টার্মিনালের পরিচালনার বিষয়ে চীনের ওপর কৌশলগত বিজয় লাভ করেছিল ভারত। কিন্তু এখন পাকিস্তান চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশাধিকার পেয়ে গেছে। এই দুই বন্দরের সমুদ্রপথ এখন পাকিস্তানি জাহাজের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। মিয়ানমারও চট্টগ্রামের খুব কাছাকাছি অবস্থানে থাকায়, এ বিষয়টি আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন ভারতের নিরাপত্তা বিভাগের একটি সূত্র।

মিয়ানমার বর্তমানে একটি অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে এবং ভারতে মাদক চোরাচালান ও অনুপ্রবেশের কারণে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসা কার্গো জাহাজের পণ্যের বিস্তারিত জানা না গেলেও, একাধিক সূত্র জানিয়েছে যে বড় কন্টেইনারগুলো প্রথমে জাহাজ থেকে নামানো হয়। তারপর বাকি পণ্যগুলো খালাস করা হয়।

এক সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রথমে কিছু ৪০ ফুটের কন্টেইনার নামানো হয় এবং সেগুলোর চারপাশে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এটি সাধারণত করা হয় না। ফলে, অবৈধ পণ্য প্রবেশের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’

পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ চালুর উদ্যোগকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে বাংলাদেশে পাকিস্তান প্রায় একঘরে অবস্থানে ছিল। শেখ হাসিনা চলতি বছরের ৫ আগস্ট দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষোভের মুখে দেশ ত্যাগ করেন।

১৯৭১ সালে নয় মাসব্যাপী স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম নেয় বাংলাদেশ, যা আগে পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল। শেখ হাসিনার শাসনামলে, বিশেষ করে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং পুনরায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়।

ভারতের একজন বিশ্লেষক বলেন, ‘ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস করছে…এবং তাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে পাকিস্তানের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান মূলত বিভিন্ন ধরনের তুলা বাংলাদেশে রপ্তানি করে, আর বাংলাদেশ জুটপণ্য রপ্তানি করে…তবে ভারতের প্রধান রপ্তানি বাজার হিসেবে বাংলাদেশের স্থান পরিবর্তন করা অসম্ভব। আমাদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তান-বাংলাদেশের এই নতুন ঘনিষ্ঠতার কারণে আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।’

এদিকে, এরই মধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আগামী ২০২৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক নৌমহড়া আমান-২০২৫-এ অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশি এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এটি হবে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ নৌ মহড়ায় অংশগ্রহণ…গত মাসে একটি ফ্রিগেট পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। এসব পদক্ষেপ ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।’ অনুবাদ: আজকের পত্রিকা