পিনাকী ভট্টাচার্যের অবদান কি?
- আপডেট সময় : ০৮:৩৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৬৪ বার পড়া হয়েছে
পিনাকী ভট্টাচার্যের অবদান কি?
খুনি হাসিনা পালিয়ে যাবার পরে আমরা ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত অনলাইন এক্টিভিস্টদের এবং তাদের কৃতিত্বের ব্যপারে অনেক সুন্দর সুন্দর পোষ্ট বা ভিডিও দেখেছি। পিনাকি ভট্টাচার্যও বাদ যান নি, অনেকেই লিখেছেন তার কৃতিত্ব সম্পর্কে। তবে আমি পিনাকীকে নিয়ে যতগুলো লেখা পড়েছি এবং যতগুলো ভিডিও দেখেছি (হয়ত সবগুলো দেখা হয়নি) কোনটিই যেন আমাদের আকাঙ্খা পূরণ করতে পারেনি এবং মনে হয়েছে তাদের অনেকেই মনে হয় পিনাকী ভট্টাচার্যের কাজগুলি বেশিদিন ধরে ফলো করেন না, যে কারনে তার সম্পর্কে মূল্যায়ন ছিলো একেবারেই খন্ডিত। আমার কাছে মনে হয় পিনাকী ভট্টাচার্যের কাজের মূল্যায়ন সবচেয়ে বেশি করতে পারবেন কাডাল-রানী খ্যাত ফ্যাসিস্ট হা/সিনা। কয়েক মাস আগেও যখন সে প্রচন্ড ক্ষমতার দাপটে টগবগ করছে, তখন যদি তাকে জিজ্ঞেস করা হতো আপনার চক্ষুশূল দুজন ব্যক্তির নাম বলুন, যাদেরকে আপনি দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চান কিন্তু পারছেন না। তাহলে হয়ত এক নম্বরে সে তারেক রহমান এবং দুই নম্বরে সে পিনাকী ভট্টাচার্যকে সরিয়ে দিতে চাইত। একই উত্তর হয়ত তার ভা/রতীয় প্রভুরাও দিত, বরং পিনাকী তাদের কাছে ১ নম্বরেও থাকতে পারে। কারণ পিনাকী নিছক ফ্যাসিস্ট হাসিনার সমালোচনাই করেনি, বরং ভারতের প্রযোজনায় এবং খুনি হাসিনার পরিচালনায় মুজিববাদী ও ইসলামোফোবিক যে নেরেটিভ তারা তৈরি করেছিলো এবং যার উপর ফ্যাসিবাদকে কায়েম করে বাংলাদেশকে সিকিম বানানোর পথে এগিয়ে যাচ্ছিলো, সেই ন্যারেটিভের একদম গোড়ায় একের পর এক কুঠারাঘাত করেছেন বাংলাদেশের দেশপ্রেমিকদের হিরো পিনাকী ভট্টাচার্য। যদি বলা হয় সেই ন্যারেটিভকে একদম উলঙ্গ করে দিয়েছেন, তা হলেও মনে হয় ভুল বলা হবে না। যে চেতনার স্লোগান তাদেরকে হত্যা, নির্যাতন, গুম, খুন ও দূর্নীতি করার লাইসেন্স দিয়েছিলো, সেই “জয় বাংলা” স্লোগানকেই একদম জয় বাংলা করে দিয়েছেন পিনাকী ভট্টাচার্য। তবে তাদের চেতনায় একটু বাতাস লাগলেই তারা যে জঙ্গী ট্যাগ, স্বাধীনতা বিরোধী ট্যাগ, শিবির ট্যাগ ইত্যাদী ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার করতো জনগনের সাথে, তা একেবারেই মুখ থুবরে পড়ে পিনাকির কাছে, কারণ তিনি এসেছেন একটি সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবার থেকে। তাই তিনি ছিলেন হাসিনার চেতনার কমান্ডো শাহরিয়ার কবির, মাহফুজ আনাম গংদের ক্ষেপনাস্ত্রের নাগালের বাইরে।
পিনাকী যদি এই বিপ্লব বা গনঅভ্যুত্থানে তেমন কোন ভুমিকা নাও রাখতেন তবু তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকতেন এবং আমার কাছে আজীবন হিরো হয়ে থাকতেন শুধুমাত্র একটি বই লেখার কারণে, যার নাম “মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম”। কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্মগ্রহন করায়, ছোটবেলায় মুক্তিযুদ্ধকে own করতে পারলেও, সময়ের পরিক্রমায় কোন রাজনৈতিক দলের অনুগত না থেকেও শুধুমাত্র জীবনে ইসলাম অনুশীলন করার কারনে মনে হতো মুক্তিযুদ্ধ মনে হয় আমার নয়, ‘মুক্তিযুদ্ধ’ আর ‘মুসলিম’ মনে হয় পরস্পর বিরোধী শব্দ। কারণ ছোটবেলা থেকে দেখে আসা সকল নাটক, ছবি, মঙ্গল-শোভাযাত্রা বা গানের উপজীব্য তো ছিলো এটাই যে, রাজাকারটা দাড়িওয়ালা টুপিওয়ালা মুসলিম থাকবেনই এবং মুক্তিযোদ্ধাটা একদম ক্লিন সেভড একজন ব্যক্তি হবেন। এবং এই দাড়ি ওয়ালারা শুধু ধর্ষনই করতে জানেন আর কিছু জানেন না। আর মুক্তিযুদ্ধটা ইসলাম বিদ্বেষীদের একচ্ছত্র সম্পত্তি। কাজেই মুক্তিযুদ্ধ টপিকটাই যেন জীবনে ইসলাম অনুশীলনকারী বাংলাদেশীদের কাছে একটা অস্বস্তির বিষয় হয়ে থাকলো। কিন্তু আল্লাহর কি মর্জি, একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে বেড়ে ওঠা এবং ভট্টাচার্য নামধারী একজন দেশপ্রেমিক ব্যক্তির মাধ্যমে আমরা ‘মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম বইটি’ পেলাম, যা তাদের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলা মুক্তিযুদ্ধের ইসলাম বিদ্বেষী বয়ানকে দালিলিক প্রমান সহ ধুলোয় মিশিয়ে দিলো। প্রায় ৫-৬ বছর আগে আমি ইসলামের একজন বহুল পরিচিত দাঈকে বলতে শুনেছি (যিনি একসময় ছাত্রলীগ বা ছাত্র ইউনিয়ন করতেন এবং এখন কোন রাজনীতি পছন্দ করেন না), “আমি যদি ইসলামিক বইয়ের বাইরে ৩টি বই কাওকে পড়তে পরামর্শ দেই, তাহলে এই বইটি পড়তে বলি, যা প্রতিটি বাংলাদেশির পড়া উচিৎ।” এটাই শেষ নয়, পিনাকী ভট্টাচার্য ইতিহাসের দূর্লভ দালিলিক প্রমান সহ এমন সব ভিডিও একের পর এক চালিয়ে গেছেন যা শুধু ফ্যাসিবাদী প্রোপাগান্ডাকে কুপকাতই করেনি, তাদের ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার, চেতনার পেছনে সিকিম বানানোর প্রচেষ্টা এবং দু:শাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের ইস্পাত কঠিন জনমত তৈরিতে সাহায্য করেছে।
একটি ভিডিও হয়ত আমরা অনেকেই দেখেছি টুপিওয়ালা মাদ্রাসার ছাত্ররা পিনাকী ভট্টাচার্যকে দেশে নিয়ে আসার জন্য পোষ্টারিং করছে, একই দাবীতে অন্য দ্বীনদার মুসলিমরা মিছিল করেছে। আমরা কি একবার চিন্তা করে দেখেছি যে, কি অসাধারণ অসাম্প্রদায়িক ও সম্প্রীতির বন্ধন এখানে সৃষ্টি হয়েছে? একজন সনাতন ধর্মীয় পরিবার থেকে উঠে আসা বাংলাদেশীকে দেশে সম্মানের সাথে ফিরিয়ে এনে দেশের কাজে লাগানোর জন্য ক্যাম্পেইন করছে ইসলামকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পালণ করা মানুষগুলো। এই সম্প্রীতির বাংলাদেশের স্বপ্নই তো সবাই দেখছিলাম! কিন্তু সুদূর ফ্রান্সে থাকা পিনাকী ভট্টাচার্যের জন্য কেন এত ভালবাসা এই সাধারণ মুসলিমদের, যাকে তারা কোনদিন সামনা সামনি দেখেও নি। কারণ হাসিনার আমলে আসলে সংখ্যালঘু ছিলো এই ইসলাম অনুশীলনকারী মুসলিমগন। এই ফ্যাসিস্ট আমলে তারা আসলে ২য় বা ৩য় শ্রেণীর নাগরিকের মত জীবনধারণ করেছে, ইচ্ছা হলেই তাদেরকে জঙ্গী ট্যাগ দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া যায় এবং নাটক সাজিয়ে মেরে ফেলা যায়, আয়নাঘরে বন্দি রাখা যায়, শিবির ট্যাগ দিয়ে পেটানো যায়, রিমান্ডে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন করা যায়, ফ্যাসিবাদ সহযোগী মিডিয়া দিয়ে এদেরকে প্রতিনিয়ত subhuman প্রমান করা যায়, শাপলা চত্বরে গুলি করে লাশ গুম করে ফেললেও কাওকে জবাবদিহী করতে হয় না বরং মিডিয়া প্রশংসা করে বলে “আপা আপনার কাছে কি ম্যাজিক আছে?” কারণ এই দ্বীন পালনকারী মুসলিমরা তো আর সেকুলারদের সমমানের মানুষ নয়, পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেলেও তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়েরও সব সাবজেক্টে পড়তে পারবে না, চাকুরী/পদ/পদবীতে তো তারা অপ্রাসঙ্গিক আর মিডিয়াতে তাদের কষ্টের কথা উঠে আসা যেন অষ্টম আশ্চর্য কারণ তাহলে তো সেকুলার মিডিয়ার চেতনা নষ্ট হয়ে যাবে। তাদের এই কঠিন সময়ে যে কয়েকটি নির্ভিক কন্ঠস্বর এই অসহায়দের পাশে দাড়িয়েছেন, তাদেরকে হত্যা গুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাদের উপর চাপানো হলুদ মিডিয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছেন, পিনাকী ভট্টাচার্য তাদের মধ্যে অন্যতম। আসলে এক নম্বর বললেও ভুল হবে না, কারণ ব্রাহ্মণ পরিবার থেকে উঠে আসা একজন ব্যক্তি যখন দলিল প্রমান সহ এই অসহায় মুসলিমদের পক্ষে কথা বলেন, তখন তার প্রভাব হয় অত্যন্ত জোরালো এবং তা বন্দুকের গুলির মত আঘাত করতো হাসিনা ও তার প্রভুদের অন্তরে। এজন্যই অনেক অসহায় নিপীড়িত এবং ‘Unheard’ মানুষদের লাইক শেয়ারে ভরে যেত পিনাকীর চ্যানেল। পিনাকীর আড়াই মিলিয়নের চ্যানেলের লক্ষ লক্ষ লাইক শেয়ারে কত শত বঞ্চিতদের আর্তনাদ লুকিয়ে আছে তা হয়ত আল্লাহই ভালো জানেন।
এবার আসি ২৪ এর বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানে পিনাকির অবদান প্রসঙ্গে। যারা মনে করছে এই আন্দোলনটা শূন্য থেকে শুরু হয়ে ৩৫ দিনেই সরকারকে ফেলে দিয়েছে তারা হয় অজ্ঞ অথবা তাদের মতলব খারাপ আছে। বিপ্লব আগে মগজে ঘটাতে হয়, তারপরে ঘটে রাজপথে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী বিপ্লব মগজে ঘটালো কে? কোটার ধারে কাছে না থাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানসিকভাবে অনেক দূরে অবস্থান করা মাদ্রাসার ছাত্ররা কেন যুক্ত হলো এই আন্দোলনে, কেন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেনীর ছাত্ররাও যুক্ত হলো কারণ তারা তো বিদেশগামী, কেন শ্রমিক জনতা যুক্ত হলো? কারণ খুব সহজ, সকলের ভিতরেই বারুদের মত দানা বেধেঁ ছিলো ফ্যাসিবাদ বিরোধী চেতনা যা একটি যোগ্য উপলক্ষের অপেক্ষায় ছিলো এবং নিছক কোটা নিয়ে শুরু হওয়া এই ছাত্র আন্দোলন বিভিন্ন অনুঘটকের প্রভাবে আস্তে আস্তে সেই যোগ্য উপলক্ষ্যে পরিনত হয়েছিলো। এখন প্রশ্ন হলো এই বারুদ তৈরি হলো কিভাবে এবং কিভাবে তা সক্রিয় থাকলো বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের মধ্যে? কে এই মগজের বিপ্লব তৈরি করলো? এই বারুদ ফ্যাসিবাদের অত্যাচারের কারনে তৈরি হয় বটে, কিন্তু উজ্জীবিত না রাখলে সময়ের সাথে সাথে এগুলোর তীব্রতা কমে যায়, মানুষ কিছু কিছু ভুলেও যায় অথবা গোয়েন্দা সংস্থা ব্যবহার করে এগুলোকে ডাইভার্ট করে দেয়া হয় এবং সক্রিয়তা বেশিদিন থাকে না। তাই ফ্যাসিবাদ কে পরাজিত করতে এই ফ্যাসিবাদ বিরোধী চেতনাগুলি সময়ের সাথে সাথে উজ্জীবিত এবং লক্ষ্যে স্থির রাখতে হয়, ফ্যাসিবাদের বয়ানের বিপরিতে বিভিন্ন কাউন্টার বয়ান তৈরি করতে হয়। এখানে পিনাকি ভট্টাচার্যের ভুমিকা ছিলো আসাধারণ, এমনকি এই কাজে তাকে বাংলাদেশের মেসি বললেও ভুল হবে না। যেমন সর্বশেষ ডামি নির্বাচনের পর যখন সব দেশ হাসিনাকে মেনে নিলো এবং প্রচন্ড সরব থাকা আমেরিকাও নরম হয়ে গেলো, তখন যেন হাসিনা বিরোধী শিবিরে হতাশা নেমে এসেছিলো। এমনকি বিএনপির নেতারাও অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছিলো, কেউ যেন সামনে আর কোন আশার আলো দেখতে পারছিলো না। এই বয়ানও চালু ছিলো মৃত্যুর আগে হাসিনা সরবে না, আমাকে অনেক ফ্যাসিবাদ বিরোধী বন্ধুও বলেছিলো এই কথা। তখনও পিনাকী হাল ছাড়েন নি, এই বারুদ উজ্জীবিত রাখতে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্য হিসাবে ডামি নির্বাচনে সহায়তা করে হাসিনাকে টিকিয়ে রাখায় ভারতের পণ্য বয়োকটের ডাক দিয়েছিলেন, যা বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বের ভালই সাড়া ফেলেছিলো। অনেকে ইমপ্যাক্ট হবে, কি হবে না সে আলোচনায় মগ্ন ছিলো, কিন্তু মাস্টার মাইন্ড পিনাকি তার ষ্ট্রাটিজিতে ছিলো অনড়, কারণ ফ্যাসিবাদ বিরোধী শিবিরে হতাশা আসতে দেয়া যাবে না, ফ্যাসিবাদ বিরোধী চেতনা স্তিমিত হতে দেয়া যাবে না, বরং ছোট ছোট অন্তর্বর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেই বারুদকে উজ্জীবিত রাখতে হবে। এমনকি হাসিনার কি কঠিন রোগ আছে, ডাক্তার হিসাবে সেটা ব্যখ্যা করেও আশার প্রদিপটাকে জ্বালিয়ে রাখার চেষ্টা করেন তিনি। যদিও এখানে বিএনপি-জামাত সহ রাজনৈতিক দলগুলোরও ভুমিকা ছিলো, ভুমিকা ছিলো অন্যান্য অনলাইন এক্টিভিস্ট ও সাংবাদিকদের, এমনকি মানবজমিনের মত পত্রিকারও। তবু পিনাকী ভট্টাচার্যের ভুমিকার কথা আলাদা করে বলার দাবী রাখে কারণ ফ্যাসিবাদের বয়ান ধুলিস্যাত করা এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি করে সবাইকে এক লক্ষ্যে উজ্জীবিত রাখা, এটাতে তিনি ছিলেন অগ্রগামী। এই মগজে বিপ্লবই সাহায্য করেছে ছাত্রদের সকলকে একইভূত করতে। মাদ্রাসা থেকে শুরু করে উচ্চ-বিত্তের ছাত্ররা, জনগণ সবাই যোগ দিয়েছিলো। রাজনৈতিক দলগুলোও খুবই কৌশলী হয়ে আনঅফিসিয়ালি তাদের ছাত্র সংগঠনগুলিকে আন্দোলনের পক্ষে মোবিলাইজ করেছিলো। এমনকি চুড়ান্ত আন্দোলনের সময়ও পিনাকীর ভুমিকা ছিলো চোখে পড়ার মত, নতুন নতুন বিল্পবী ভিডিও ছেড়ে আন্দোলনকে গাইড করার চেষ্টা করেছেন, এবং প্রচন্ড সতর্কতার সাথে ক্যাম্পেইন করে গেছেন যাতে আন্দোলনের ষ্টিয়ারিং হাসিনা হটাও গ্রুপদের হাত থেকে সরে না যায়। প্রবাসিদের সংগঠিত করে রেমিট্যন্স শাটডাউনের ডাক দিয়েছেন। সাথে সকল অনলাইন সাংবাদিক ভায়েরাও ছিলেন। যাদের কথা আসলে আলাদা কলামে বললেই ভালো। এমনকি শেষে গেম চেন্জিং কাজেও তার অবদান ছিলো। কারণ আর্মি যখন গুলি করলো এবং পুলিশ যখন আর্মিকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে মানুষ মারলো, তখন পিনাকী আর্মি নিয়ে একটা জ্বালাময়ী ভিডিও ছাড়েন, যাতে উনি দেখিয়ে দেন কেন আর্মি এখানে জড়ালে তারা নিজেদেরকে সামলাতে পারবে না। সৈনিকদেরকেও আলাদাভাবে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি (বিজয়ের পরে আমরা দেখেছি সৈনিকগণ কতখানি ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছিলো) এবং জাতিসংঘের সেই কড়া বিবৃতি যেখানে তারা বলেছিলো We have credible evidence of human right violation সেখানেও কাজ করেছিলেন পিনাকী ভট্টাচার্য। তাই পিনাকী ভট্টাচার্যকে এই বিপ্লব বা গনঅভ্যুত্থানের অন্যতম একজন মাষ্টার মাইন্ড বললেও হয়ত ভুল হবে না। অন্তত এই আন্দোলনের একজন সহযোদ্ধা হিসাবে আমার কাছে তিনি তাই।
এগুলো ছাড়াও প্রচন্ড দেশপ্রেমিক পিনাকী তার গবেষনামূলক ভিডিওর মাধ্যমে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি, যৌথনদীগুলির প্রকৃত হিস্যা আদায়ের কৌশল, হাসিনার করা দাসত্বের চুক্তির মুখোশ উন্মোচন সহ বিভিন্ন দিক দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেষ্টা করে গেছেন। এমনকি ভারতীয় মিডিয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন বাংলাদেশী সিপাহসালার। এমনকি পাঠ্যপুস্তকে কিভাবে ইসলাম ফোবিয়া ঢুকানো হয়েছে, পর্দা বিদ্বেষ ঢুকানো হয়েছে এবং ইতিহাস বিকৃতি করে মুসলিমদেরকে এই ভুমিতে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে দেখিয়ে হি/ন্দুত্ববাদী মো/দীর বয়ান কঁচিকাঁচাদের অন্তরে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে তা নিয়েও তিনি বিস্তর প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
শুধু ফ্যাসিবাদী হাসিনাই নয়, বরং তার সবচেয়ে বড় দোসর এলিট মিডিয়ার হলুদ চশমার বিরুদ্ধে খুরধার কনটেন্টের মাধ্যমে জাতিকে সচেতন করে গেছেন পিনাকী। ট্রান্সকম গ্রুপের প্রথম আলো, ডেইলি ষ্টার, সাংঘাতিক নইমুল ইসলাম সহ অনেককে হলুদ সাংবাদিকতার জন্য উলঙ্গ করে ছেড়েছিলেন পিনাকী। আওয়ামী আমলে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করে, তাদেরকে আওয়ামীলীগের গুটি হওয়া থেকে বের হয়ে দেশপ্রেমিক ও গর্বিত বাংলাদেশী হয়ে গড়ে উঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের রুপরেখাও প্রদান করেন তিনি। তিনি একচোখা বিশ্ব মিডিয়ার হলুদ সাংবাদিকতার শিকার ফিলিস্তিন ও তালেবানদের নিয়েও চমৎকার তথ্যবহুল আলোচনার মাধ্যমে A Voice for the Unheard এ পরিনত হন।
তার বক্তব্য শুধু সুন্দর সুন্দর কথামালা দিয়েই সাজানো ছিলো না, বরং দূর্লভ দলিল দস্তাবেজ ও ইতিহাসের পাতা থেকে সংগ্রহ করা রেফারেন্স এবং পৃথিবীর বিভিন্ন বিখ্যাত দার্শনিক, বিজ্ঞানী, লেখক, গবেষক বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশ্বস্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের দূর্লভ বই থেকে তাদের দীর্ঘদিনের গবেষনার ফলাফল থেকে সমাধান বের করার চেষ্টা করতেন, যা তার পাঠক বা শ্রোতাদেরকে জ্ঞানের পথে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা যোগাতো। শুধু তাই নয়, তার কন্টেন্টের আর একটি বড় বৈশিষ্ট হলো তিনি অনেক কঠিন কঠিন বিষয়কে এত সহজে বুঝিয়ে দিতে পারেন যে তা মফস্বলের একজন সাধারণ ছাত্রও বুঝতে পারে।
এভাবেই আস্তে আস্তে তিনি শিক্ষিত বাংলাদেশীদের একজন বিপ্লবী গুরু এবং ন্যায় ভিত্তিক চিন্তার অনুপ্রেরণার নায়কে পরিনত হন। বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য এখনও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
পরিশেষে বলবো, পিনাকী ভট্টাচার্য আমাকে চেনেন না এবং আমিও তাকে কোনদিন সামনা সামনি দেখিনি, হয়ত কোনদিন দেখাও হবে না। তবুও তার এই মহৎ কাজ আমাদেরকে নৈতিকতা ও দেশপ্রেমের এক অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। আমি একজন বাংলাদেশী হিসাবে পিনাকী ভট্টাচার্যের কাছে কৃতজ্ঞ, সে কৃতজ্ঞতা জানাতেই আমার এই ছোট্ট প্রয়াস।