ঢাকা ০৮:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
অপরাধী হাসিনাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপে ভারত ইন্টারপোলের জালে বেনজীর হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জোরদার হচ্ছে ভারতে! এটুআই ছিল মিলেমিশে লুটপাটের প্রকল্প আওয়ামী লুটপাটে পঙ্গু ইডিসিএল বিদেশেও বিচার সম্ভব শেখ হাসিনার ‘দুঃখিত, আপা! এটাই শেষ!!’ : হাসিনার উদ্দেশ্য প্রেস সচিব জাতীয় সংসদ ভোটের পর পুলিশে পদকের মচ্ছব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন প্রফেসর ইউনূস ও তার দাবার চাল। পদত্যাগ করছেন উপদেষ্টা নাহিদ, আসছে নতুন দল ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতাবান ইলন মাস্কের সঙ্গে যে আলোচনা হলো ড. ইউনূসের শ্যামল দত্তের অ্যাকাউন্টে ১০৪২ কোটি টাকার লেনদেন কিভাবে পারে এত পাষণ্ড হতে, হাসিনাকে বললেন আসিফ নজরুল জাতিসংঘের রিপোর্ট ‘শেখ হাসিনার নির্দেশেই গুলি’! তসলিমার ‘চুম্বন’ প্রকাশকের জয় বাংলা স্লোগান, মব জাস্টিস উস্কে দেয়ার ভারতীয় প্ল্যান? জরুরি ওষুধেও ব্যবসার ফাঁদ:ওষুধের বাজারে অরাজকতা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ড. ইউনূস-মোদি বৈঠকের সম্ভাবনা ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ৬ ডিসেম্বর ধানমন্ডি ৩২: প্রতিশোধের ক্রোধে উন্মাদ প্রায় শেখ হাসিনা

পোশাক কারখানাগুলোতে টানা অস্থিরতার কারণ কী?

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৯:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪
  • / 96
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সরকারের নানামুখী উদ্যোগ সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ঘাটতি, ঝুটসহ কারখানা সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, কিছু কারখানার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তৎপরতা, বেতন ভাতা সংক্রান্ত সমস্যা এবং বাইরের ইন্ধনসহ বিভিন্ন কারণে পোশাক কারখানাগুলোতে অস্থিরতা বন্ধ হচ্ছে না।

বিজেএমইএ ও পোশাক খাতের নেতারা বলছেন গত কিছুদিনে অন্তত ২৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে এর মধ্যে কয়েকটি খোলার প্রক্রিয়া চলছে। যদিও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী দু মাসে আরও কিছু কারখানা বন্ধ হওয়ারও আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

এর আগে গত মাসেও বিভিন্ন দাবিতে আশুলিয়া অঞ্চলের পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভের জের ধরে শেষ পর্যন্ত তাদের ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে সম্মত হয় মালিকপক্ষ। ২৪শে সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার মালিক ও শ্রমিকেরা একটি যৌথ ঘোষণাও দিয়েছেন।

গাজীপুর আশুলিয়ার অনেক কারখানাতেই অস্থিরতা চলছে

অস্থিরতা কেন হচ্ছে?

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও পোশাক খাতের একজন উদ্যোক্তা এ কে আজাদ বলছেন অস্থিরতা কেন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না সেটা তারা নিজেরাও বুঝতে পারছেন না।

তিনি বলেন, ‘কিছু কারখানায় বেতন ভাতা সংক্রান্ত সমস্যা আছে, সেটা বিজিএমইএ দেখছে। এর বাইরে নানা কারণ দেখিয়ে হুটহাট সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে। এর সাথে শ্রমিকদের চেয়ে বাইরের লোকজন বেশি সম্পৃক্ত মনে হচ্ছে।’

মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন পক্ষ জানিয়েছেন, যারা বিভিন্ন কারখানায় পাঁচই অগাস্টের আগে চাকরি হারিয়েছিলো, নতুন পরিস্থিতিতে তাদের চাকরি ফেরত পাওয়ার দাবি থেকেই এবারের অস্থিরতার সূত্রপাত।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের মজুরি বৃদ্ধির পর অনেক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটে, যাদের অধিকাংশ ছিলেন অভিজ্ঞ শ্রমিক। এসব শ্রমিকরা বেশিরভাগই আর কোথাও চাকরি পাননি। সরকার পরিবর্তনের পর তারাই কারখানাগুলোতে জড়ো হয়েছে চাকরি ফিরে পেতে।

আবার কিছু কারখানায় জুলাই অগাস্টের বেতন এখনো হয়নি, ফলে সেগুলোতেও শ্রমিকদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিলো, যার জেরে পুরো সেপ্টেম্বর জুড়েই বিক্ষোভ হয়েছে শিল্পাঞ্চলগুলোতে।

অন্যদিকে, স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর বিএনপির পরিচয়ধারী ব্যক্তিরা পোশাক কারখানার বড় বড় জোনগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে।

তবে এর মধ্যে আশুলিয়া জোনে এখন দুই পক্ষই নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। মূলত ঝুট ব্যবসাসহ পোশাক কারখানা সংশ্লিষ্ট আরও কিছু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেই স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নানাভাবে চেষ্টা করেন সবসময়।

শ্রমিকদের আন্দোলন প্রায়ই সহিংস আকার ধারণ করে
শ্রমিকদের আন্দোলন প্রায়ই সহিংস আকার ধারণ করে
এতদিন যারা কোটি কোটি টাকার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলো তাদের অনেকেই এখন পলাতক। এছাড়া শ্রমিকদের মধ্যেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থিত ব্যক্তিরা আছেন।

কারখানাগুলোতে গত দুই দশক ধরেই মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে শ্রমিকদের দূরত্ব ছিল। দাবি দাওয়া উত্থাপনে শ্রমিকদের মধ্যে একটি ভয়ের সংস্কৃতি কাজ করতো। এখন সরকার পরিবর্তনের পর শ্রমিকরা কথা বলতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা মমিনুর রহমান।

মমিনুর রহমান বলেন, ‘অনেক কারখানায় সাবেক সরকারের সংশ্লিষ্ট লোকজন মালিক। সেখানে এখন উৎপাদন সমস্যা তৈরি হয়েছে। ফলে গত মাসের বেতন পরিশোধ হয়নি। আবার কিছু কারখানায় ব্যবসায় ভালো যাচ্ছিলো না গত এক বছর ধরেই। ২/৩ মাস বকেয়া পড়ে গেছে। এখান থেকেই মূলত এবারের আন্দোলনের সূত্রপাত। পরে তা ছড়িয়ে গেছে। ফলে ভালো কারখানায়ও কিছু ঘটনা ঘটেছে।’

অন্যদিকে এতদিন গাজীপুর আশুলিয়া এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ বা এ ধরনের পরিস্থিতিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ মূল ভূমিকা রাখতো। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর পুলিশের পুরো কাঠামোই ভেঙে পড়ায় গত এক মাস ধরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।

বিজিএমইএ সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, ‘তাদেরও সব নতুন। তারা বুঝে কাজ শুরু করতে সময় লাগবে। তবে আশা করছি দ্রুতই তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে শুরু করবে।’

মমিনুর রহমান রহমান বলছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে আগে সব বকেয়া বেতন ভাতা ঠিক মতো পরিশোধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব মালিক বা কর্তৃপক্ষ পালিয়ে গেছে তাদের বন্ধ কারখানা সচল করতে হবে। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের সাথে শ্রমিকদের সম্পর্ক উন্নয়ন করে কারখানার ভেতরের পরিবেশ ভালো করতে পারলে বাইরের সুযোগসন্ধানীরা কোনো সুযোগ নিতে পারবে না।’

শ্রমিকদের ১৮টি দাবির সবগুলোই মেনে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়েছে
শ্রমিকদের ১৮টি দাবির সবগুলোই মেনে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়েছে
ওদিকে সোমবার পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে এক জনের মৃত্যুর পর সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল এবং তারা দেখেছে যে এই ঘটনাগুলোয় সুনির্দিষ্ট কিছু মানুষ উস্কানি দিয়েছে।

সোমবারের ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্য থেকেই অনুপ্রবেশকারী বা এ রকম কেউ গুলি ছুড়েছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে, গত ২৪শে সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের আঠারোটি দাবির সব মেনে নিয়ে মন্ত্রণালয়ের একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়েছিলো। ওই চুক্তির পর শিল্পাঞ্চলগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করেছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বলছেন, এ চুক্তির তথ্য যথাযথভাবে কারখানাগুলোতে পৌঁছেনি বলে শ্রমিকদের মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ আছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। কোনো কারখানায় সমস্যা দেখা দিলে প্রশাসনের কার্যকর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। শুধু সেনাবাহিনী দিয়ে তো এসব নিয়ন্ত্রণ কঠিন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পোশাক কারখানাগুলোতে টানা অস্থিরতার কারণ কী?

আপডেট সময় : ০৮:৪৯:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪

 

সরকারের নানামুখী উদ্যোগ সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ঘাটতি, ঝুটসহ কারখানা সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, কিছু কারখানার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তৎপরতা, বেতন ভাতা সংক্রান্ত সমস্যা এবং বাইরের ইন্ধনসহ বিভিন্ন কারণে পোশাক কারখানাগুলোতে অস্থিরতা বন্ধ হচ্ছে না।

বিজেএমইএ ও পোশাক খাতের নেতারা বলছেন গত কিছুদিনে অন্তত ২৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে এর মধ্যে কয়েকটি খোলার প্রক্রিয়া চলছে। যদিও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী দু মাসে আরও কিছু কারখানা বন্ধ হওয়ারও আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

এর আগে গত মাসেও বিভিন্ন দাবিতে আশুলিয়া অঞ্চলের পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভের জের ধরে শেষ পর্যন্ত তাদের ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে সম্মত হয় মালিকপক্ষ। ২৪শে সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার মালিক ও শ্রমিকেরা একটি যৌথ ঘোষণাও দিয়েছেন।

গাজীপুর আশুলিয়ার অনেক কারখানাতেই অস্থিরতা চলছে

অস্থিরতা কেন হচ্ছে?

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও পোশাক খাতের একজন উদ্যোক্তা এ কে আজাদ বলছেন অস্থিরতা কেন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না সেটা তারা নিজেরাও বুঝতে পারছেন না।

তিনি বলেন, ‘কিছু কারখানায় বেতন ভাতা সংক্রান্ত সমস্যা আছে, সেটা বিজিএমইএ দেখছে। এর বাইরে নানা কারণ দেখিয়ে হুটহাট সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে। এর সাথে শ্রমিকদের চেয়ে বাইরের লোকজন বেশি সম্পৃক্ত মনে হচ্ছে।’

মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন পক্ষ জানিয়েছেন, যারা বিভিন্ন কারখানায় পাঁচই অগাস্টের আগে চাকরি হারিয়েছিলো, নতুন পরিস্থিতিতে তাদের চাকরি ফেরত পাওয়ার দাবি থেকেই এবারের অস্থিরতার সূত্রপাত।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের মজুরি বৃদ্ধির পর অনেক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটে, যাদের অধিকাংশ ছিলেন অভিজ্ঞ শ্রমিক। এসব শ্রমিকরা বেশিরভাগই আর কোথাও চাকরি পাননি। সরকার পরিবর্তনের পর তারাই কারখানাগুলোতে জড়ো হয়েছে চাকরি ফিরে পেতে।

আবার কিছু কারখানায় জুলাই অগাস্টের বেতন এখনো হয়নি, ফলে সেগুলোতেও শ্রমিকদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিলো, যার জেরে পুরো সেপ্টেম্বর জুড়েই বিক্ষোভ হয়েছে শিল্পাঞ্চলগুলোতে।

অন্যদিকে, স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর বিএনপির পরিচয়ধারী ব্যক্তিরা পোশাক কারখানার বড় বড় জোনগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে।

তবে এর মধ্যে আশুলিয়া জোনে এখন দুই পক্ষই নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। মূলত ঝুট ব্যবসাসহ পোশাক কারখানা সংশ্লিষ্ট আরও কিছু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেই স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নানাভাবে চেষ্টা করেন সবসময়।

শ্রমিকদের আন্দোলন প্রায়ই সহিংস আকার ধারণ করে
শ্রমিকদের আন্দোলন প্রায়ই সহিংস আকার ধারণ করে
এতদিন যারা কোটি কোটি টাকার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলো তাদের অনেকেই এখন পলাতক। এছাড়া শ্রমিকদের মধ্যেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থিত ব্যক্তিরা আছেন।

কারখানাগুলোতে গত দুই দশক ধরেই মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে শ্রমিকদের দূরত্ব ছিল। দাবি দাওয়া উত্থাপনে শ্রমিকদের মধ্যে একটি ভয়ের সংস্কৃতি কাজ করতো। এখন সরকার পরিবর্তনের পর শ্রমিকরা কথা বলতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা মমিনুর রহমান।

মমিনুর রহমান বলেন, ‘অনেক কারখানায় সাবেক সরকারের সংশ্লিষ্ট লোকজন মালিক। সেখানে এখন উৎপাদন সমস্যা তৈরি হয়েছে। ফলে গত মাসের বেতন পরিশোধ হয়নি। আবার কিছু কারখানায় ব্যবসায় ভালো যাচ্ছিলো না গত এক বছর ধরেই। ২/৩ মাস বকেয়া পড়ে গেছে। এখান থেকেই মূলত এবারের আন্দোলনের সূত্রপাত। পরে তা ছড়িয়ে গেছে। ফলে ভালো কারখানায়ও কিছু ঘটনা ঘটেছে।’

অন্যদিকে এতদিন গাজীপুর আশুলিয়া এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ বা এ ধরনের পরিস্থিতিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ মূল ভূমিকা রাখতো। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর পুলিশের পুরো কাঠামোই ভেঙে পড়ায় গত এক মাস ধরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।

বিজিএমইএ সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, ‘তাদেরও সব নতুন। তারা বুঝে কাজ শুরু করতে সময় লাগবে। তবে আশা করছি দ্রুতই তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে শুরু করবে।’

মমিনুর রহমান রহমান বলছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে আগে সব বকেয়া বেতন ভাতা ঠিক মতো পরিশোধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব মালিক বা কর্তৃপক্ষ পালিয়ে গেছে তাদের বন্ধ কারখানা সচল করতে হবে। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের সাথে শ্রমিকদের সম্পর্ক উন্নয়ন করে কারখানার ভেতরের পরিবেশ ভালো করতে পারলে বাইরের সুযোগসন্ধানীরা কোনো সুযোগ নিতে পারবে না।’

শ্রমিকদের ১৮টি দাবির সবগুলোই মেনে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়েছে
শ্রমিকদের ১৮টি দাবির সবগুলোই মেনে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়েছে
ওদিকে সোমবার পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে এক জনের মৃত্যুর পর সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল এবং তারা দেখেছে যে এই ঘটনাগুলোয় সুনির্দিষ্ট কিছু মানুষ উস্কানি দিয়েছে।

সোমবারের ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্য থেকেই অনুপ্রবেশকারী বা এ রকম কেউ গুলি ছুড়েছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে, গত ২৪শে সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের আঠারোটি দাবির সব মেনে নিয়ে মন্ত্রণালয়ের একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়েছিলো। ওই চুক্তির পর শিল্পাঞ্চলগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করেছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বলছেন, এ চুক্তির তথ্য যথাযথভাবে কারখানাগুলোতে পৌঁছেনি বলে শ্রমিকদের মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ আছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। কোনো কারখানায় সমস্যা দেখা দিলে প্রশাসনের কার্যকর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। শুধু সেনাবাহিনী দিয়ে তো এসব নিয়ন্ত্রণ কঠিন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা