একটা সময়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ঈদ কার্ডের প্রচলন থাকলেও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন এ প্রথা বিলীন প্রায়। আধুনিক সমাজে ঈদ কার্ড আছে ঠিকই কিন্তু তা সরাসরি একজন আরেকজনকে সেভাবে বিনিময় করা যায় না। পুরোনো দিনের বাহারি ডিজাইনের ঈদ কার্ডের জায়গা দখল করে নিয়েছে ই-ঈদ কার্ড। বর্তমানকালে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে মোবাইল ফোনের খুদে বার্তা— এসএমএস।
আর কিছুদিন বাদেই ঈদুল আজহা। ঈদ উত্সবকে সামনে রেখে বাহারি রকমের জিনিসপত্র উঠেছে দোকান-পসারিতে। কিন্তু খারাপ লাগার বিষয় এই যে, কয়েকটা দোকানে খোঁজ করেও একটা ঈদ কার্ড পাওয়া যায় না আজ! দোকানদারদের ভাষ্যমতে, এখন সবাই স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে। যার ফলে খুব সহজে ফোন দিয়েই ঈদের শুভেচ্ছা জানানো যায়। মাঝেমধ্যে হাতেগোনা দু-একজন ঈদ কার্ডের খোঁজ করে বটে, কিন্তু তার সংখ্যা হাতেগোনা। মূলত, অলাভজনক হওয়ায় দোকানিরা
এখন আর ঈদ কার্ড রাখেন না। বড় বড় মার্কেটগুলোতে খোঁজাখুঁজির পর দু-এক জায়গায় কাঙ্ক্ষিত ঈদ কার্ডের দেখা মেলে। অথচ আজ থেকে কয়েক বছর আগেও বন্ধুবান্ধবদের জন্য ঈদ কার্ড কিনতাম আমরা। ঈদের আগে দোকানগুলোতে থাকত বাহারি ডিজাইনের কার্ড। কার্ডে কী লেখা হবে, হাতের লেখার ডিজাইন কেমন হবে—এসব নিয়ে থাকত কত জল্পনা-কল্পনা। আজকের সভ্য যুগের আলোঝলমলে দুনিয়ায় এসএমএস, ইমো, ম্যাসেঞ্জার, ফেসবুক বা ই-মেইলের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর ফলে কাঙ্ক্ষিত ঈদ কার্ডের ব্যবহার কমে এসেছে। যেন সহজতর হয়ে গেছে শুভেচ্ছা বিনিময়। কমে গেছে আবেগ-অনুভূতির জায়গাগুলো।
শৈশবে বন্ধু-বান্ধবকে একটা ঈদ কার্ড দেওয়ার পেছনে অনেক গল্প থাকত। কার্ড কেনার জন্য বাসা থেকে আলাদা টাকা নেওয়া হতো। বিভিন্নভাবে জমানো টাকা দিয়েই কেনা হতো কার্ড। কেনার পর বন্ধুবান্ধব কাউকেই দেখানো হতো না। যার উদ্দেশ্যে কেনা তাকে যদি আগেই বলে দেওয়া হয় তাহলে তো মজাটাই থাকে না! কত সব বিচিত্র অনুভূতি জমে থাকত একেকটি ঈদ কার্ডতে ঘিরে।
এভাবেই অপর পক্ষ থেকেও করা হতো অনুরূপ বিভিন্ন পরিকল্পনা। কিন্তু কেউ কারোটা জানতো না আগে থেকে। কার্ড হাতে পাওয়ার পর এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করত উভয় পক্ষের মাঝে। বাসায় এসে বারবার দেখেও মন ভরতো না। কার্ডের লেখাগুলো নতুন করে বারবার পড়তে ইচ্ছে হতো। অথচ সেই সুখানুভূতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। এখনো বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা মেলে। কিন্তু সেটা ই-কার্ড বা মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে। ভার্চুয়াল জগতের ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা! এতে পুরোনো দিনের ঈদ কার্ডের অনুভূতিগুলো খুঁজে পাওয়া যায় না। কোথায় জানি একটা অপূর্ণতা কাজ করে এই ই-ঈদ কার্ড আদান-প্রদানে।