প্রিয় মালতী রিভিউ পোস্ট
- আপডেট সময় : ০৬:০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 61
#রিভিউ_পোস্ট
🎬প্রিয় মালতী
পরিচালকঃ শঙ্খ দাসগুপ্ত
জনরাঃ সামাজিক ট্রাজেডি
✪গত ২০ই ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্ত পেয়েছে মেহজাবীন চৌধুরী অভিনীত, শঙ্খ দাশগুপ্ত পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘প্রিয় মালতী।’ সকলের রিভিউ দেখে অবশেষে সিনেমা হলে গিয়ে দেখেই নিলাম সিনেমাটি। সিনেমাটি এখন দেখে মনে হচ্ছে, যদি সিনেমাটি না দেখতাম তাহলে খুব সুন্দর একটা কাজ মিস হয়ে যেতো। সিনেমার গল্প, নির্মাণ, অভিনয় ছিল অসাধারণ, অনবদ্য।
✪ সিনেমার গল্প শুরু হয় এক নিম্ন মধ্যবিত্ত হিন্দু দম্পতি, ‘মালতী’ এবং ‘পলাশ’ এর বিবাহবার্ষিকী উৎযাপনের মধ্য দিয়ে। তাদের সংসারে টানাপোড়েন থাকলেও, ভালোবাসায় টানাপোড়েন ছিল না। তারা অপেক্ষা করছিল সংসারে নতুন একজন অতিথি আসার। কিন্তু সেই অপেক্ষার মধ্যে দিয়েই ঘটে যায় মালতীর জীবনে এক দূর্বিষহ ঘটনা। সেই ঘটনায় উলটপালট হয়ে যায় সব। মালতীর জীবন এই শহরে হয়ে ওঠে বিষাক্ত। কীভাবে কাটাবে মালতী এই শহুরে বিষাক্ত জীবন?
‘লাখ টাকার চাকরী না হইলে কী, কাগজপত্র লাগে না?
‘
মানুষ টাকার দাস। টাকা আছে তো সব আছে, টাকা নেই তো কিছু নেই। একজন মানুষের মৃত্যুও মানুষ টাকার কারণে ভুলে যায়। সকলে শোকতাপ ভুলে ছুটে চলে টাকার পিছনে। পরিশেষে মানুষের কোনো দাম থাকে না, যা দাম থাকে শুধু টাকার।
✪ ‘এই শহর স্বার্থপর’, আসলেই এই শহর বড্ড স্বার্থপর। এই শহর সূর্যের আলোয় আলোকিত হলেও, প্রকৃতপক্ষে এই শহর অন্ধকার ট্রাফিক জ্যামে, দূর্নীতিতে, ধর্ম বিভেদে। এই শহরে সত্যিকে সত্য প্রমাণ করতেও মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। ন্যায্য অধিকার পেতেও করতে হয় অন্যায্য কাজ। আসলে এই শহর রংধনুর রঙের মতো রঙিন দেখালেও তার ভিতরটা তেমন নয়। এ শহর আসলে কালো মেঘে ঢাকা অন্ধকার। আর এই শহরের মানুষের মনের অন্ধকারে শহরটি হয়ে উঠছে আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন। এই অন্ধকারাচ্ছন্ন শহর ছেড়ে আমরা আলোর পথে ফিরতে চাই। বুক ভরে শ্বাস নিতে চাই, প্রাণ ভরে বাঁচতে চাই। আদৌও কী তা সম্ভব?
✪ ‘আপনি আসলেই একটা সলিড ড্রামা কুঈন’
কোনো সিনেমাই পরিপূর্ণ সুন্দর হয় না, যদি না শিল্পীদের অভিনয় সুন্দর হয়। অভিনয়ের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসবে মেহজাবীন চৌধুরীর কথা। এক লড়াকু স্ত্রীকে তিনি যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন অনবদ্য, অসাধারণ, অতুলনীয়। বিশেষ বিশেষ কিছু মুহূর্তে তার অভিনয় মনকাড়া ছিল। নাটক, ওটিটিতে যেমন ওনি ওনার বেস্ট টা দিয়েছেন, সিনেমাতেও তারচেয়ে বেশীর থেকে কম দেয়নি। একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী চরিত্রকে তিনি সুন্দরভাবে স্ক্রিনে ফুটিয়ে তুলেছেন। পাঁচালী পড়া থেকে পূজো পর্যন্ত সবকিছু ছিল সাবলীল। মেহজাবীন চৌধুরীর পরে যদি আমি কারো নাম নিতে চাই সে হচ্ছে রাজ্জাক। তার অভিনয়ও বেশ সুন্দর ছিল। এক্সপ্রেশন ছিল পারফেক্ট। ডায়লগ ডেলিভারিও সুন্দর ছিল। এছাড়াও বাকি সবার অভিনয়ও ভালো লেগেছে। সবাই খুব নিখুঁতভাবে সবকিছু ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করেছে।
✪ কোনো একটি ভালো কাজের প্রসংশার প্রধান দাবিদার হচ্ছে সেই কাজের নির্মাতা। কারণ নির্মাতা ঠিক না থাকলে কাজ কখনই ঠিক হয় না। তাই অবশ্যই আমি বলবো ‘প্রিয় মালতী’র এই সৌন্দর্যের পিছনে শঙ্খ দাশগুপ্তের অবদান সবচেয়ে বেশি। গল্পটাতো এমনিতেই সুন্দর শঙ্খ দাশগুপ্ত গল্পটিকে প্রাণ দিয়ে আরও সুন্দর করে তুলেছেন। কী নেই এই গল্পতে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা ট্রাফিক জ্যাম থেকে শুরু করে দূর্নীতি পর্যন্ত সব আছে এই এক সিনেমায়। সিনেমার কালার গ্রেডিং, মিউজিক, কাস্টিং, লোকেশন সবকিছু ছিল একদম পারফেক্ট। আমি স্পেশালি মেক-আপের কথা বলবো। মেক-আপ আর্টিস্টকে আমার স্যালুট। সব মিলিয়ে শঙ্খ দাশগুপ্তকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা সিনেমা উপহার দেওয়ার জন্য। ভবিষ্যতে আরও এমন সিনেমা চাই আপনাদের কাছ থেকে।
যারা সিনেমাটি দেখেন নি দেখতে পারেন আপনার নিকটস্থ প্রেক্ষাগৃহে। সিনেমার মাধ্যমে সুন্দর একটি মেসেজ দেওয়া হয়েছে আমাদের। আশা করছি আমার মতো আপনাদেরও ভালো লাগবে।
পারসোনাল রেটিং: ৯/১০❤️
ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।