ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি: নবাবদের হেঁশেলে যার পথচলা শুরু
- আপডেট সময় : ০৯:০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ জুলাই ২০২২ ৬৫ বার পড়া হয়েছে
মুর্শিদাবাদের নবাবদের হেঁশেলেই তরুণ ফখরুদ্দিন মুন্সী রান্নায় তার অকৃত্রিম নৈপুণ্য দেখান এবং দমে রান্নায় ব্যবহৃত সনাতন প্রণালীগুলো দ্রুত আয়ত্ত করেছিলেন
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অধ্যক্ষ হামিদা আলীর সামান্য সহযোগিতায় কিছু বাড়তি উপার্জনের জন্য স্কুলের ২০০ বর্গফুটের রান্নাঘর থেকে একটি পরিপূর্ণ ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফখরুদ্দিন বিরিয়ানির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ফখরুদ্দিন মুন্সী অন্যদের জন্য অনুসরণীয় একটি সাফল্যের গল্প রচনা করেন।
আজকাল ঢাকা শহরের প্রসিদ্ধ বিরিয়ানির কেন্দ্রস্থলগুলোর একটি হলো ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি। বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানা ছাড়িয়ে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই এবং আরও অনেক দেশে এটি ব্যবসায়ের কার্যক্রম বিস্তৃত করেছে।
কিন্ত ফখরুদ্দিনের এই নিরহংকার পথচলা শুরু হয় মুর্শিদাবাদের নবাবদের হেঁশেলেই। নবাবদের বাবুর্চি ফখরুদ্দিন মুন্সীকে, একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাবুর্চিকে মুসলিম মিয়ার অধীনে শিক্ষানবিশ হিসেবে বেছে নেয়া হয়। নবাবদের হেঁশেলেই তরুণ ফখরুদ্দিন মুন্সী রান্নায় তার অকৃত্রিম নৈপুণ্য দেখান এবং দমে রান্নায় ব্যবহৃত সনাতন প্রণালীগুলো দ্রুত আয়ত্ত করেছিলেন।
তিনি তার গুরুর কৌশলগুলো কাজে লাগিয়ে নিত্য নতুন খাবারের পদ রাঁধতে থাকেন এবং ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যান্টিনে তিনি তার নতুন যাত্রা শুরু করেন। তার নিজস্ব সৃষ্টি “কাচ্চি বিরিয়ানি” তে পরিপূর্ণতা আনতে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে মাংসের সাথে আলু ব্যবহার করে এবং জ্বলন্ত কয়লার নিয়ন্ত্রিত আঁচে মশলা মাখানো মাংস আর আলু সুগন্ধী চালের সাথে ঢিমেতালে রান্না করা হয়। এমনটাই তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে।
মশলার নিজস্ব সংমিশ্রণ ও মুখের কিছু শব্দ দিয়েই ষাটের দশক থেকেই এই ছোট কোম্পানি বড় হতে শুরু করে। বাংলাদেশের কোনও বিবাহই ফখরুদ্দিন ক্যাটারিংয়ের বিরিয়ানি ছাড়া সম্পন্ন হতো না।
একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ হামিদা আলী ১০-১৫ জন লোকের জন্য রান্না করার জন্য ফখরুদ্দিনকে অনুরোধ করেছিলেন এবং এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তার অনন্য রন্ধনশৈলী ও অনন্য সিগনেচার ডিশ “কাচ্চি বিরিয়ানি” দিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন এবং সবার প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন। সেদিন থেকে যখনই হামিদা আলীর ঘনিষ্ঠ কারোর ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো, তখন তারা ফখরুদ্দিনকেই তার সুস্বাদু মশলাদার মোগলাই খাবার দিয়ে অনুষ্ঠানকে অলঙ্কৃত করতে অনুরোধ করতেন।
যেহেতু কথা ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং একই সাথে চাহিদা বাড়তে থাকে, তার এক শ্রদ্ধাভাজন ভোক্তার পরামর্শে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অর্ডার নিতে এবং সেটি ডেলিভারের জন্য ফখরুদ্দিন ক্ষুদ্র পরিসরে একটি বেসরকারি ক্যাটারিং সার্ভিস চালু করেন। এই অর্ডারগুলো তৈরির জন্য হামিদা আলী তার বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে ২০০ বর্গফুটের একটি জায়গা রান্নাঘর হিসেবে বিনামূল্যে দেবার প্রস্তাব দেন।
ফখরুদ্দিন বিরিয়ানির জন্য এটি একটি বিরাট অনুগ্রহ ও লঞ্চিং প্যাড ছিল, কেননা নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য উপযুক্ত স্থান ও জায়গার সন্ধান করা অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এখন অবধি, বেইলি রোডে ভিকারুননিসার চত্বরে ক্যাটারিংয়ের জন্য তাদের প্রধান রান্নাটি হয়।
ফখরুদ্দিনের আর্থিক ব্যবস্থাপক ও অ্যাডমিন টিপু বলেন, “আমরা তা-ই যা আমাদের ক্রেতারা বলে এবং দাবি করে, আমাদের ক্রেতারা আমাদের জন্য কথা বলে এবং এই কৃতিত্ব তাদের এবং আমাদের সরবরাহকৃত ভাল ও খাঁটি খাবার সম্পর্কে তাদের বোঝার জন্য। তারা বুঝতে পারেন আমরা আলাদা এবং আমরা এর মূল্য দিই। ফখরুদ্দিন রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠেননি, এর জন্য কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য, দৃঢ়তা এবং গ্রাহকের আগ্রহ যা ব্র্যান্ডের ইক্যুইটিতে যুক্ত হয়ে আমাদের ব্র্যান্ডের মান বাড়িয়েছে।”
ফখরুদ্দিনের জ্যেষ্ঠ নাতি রফিক ব্যবসায়ের সম্প্রসারণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ফখরুদ্দিনকে বাংলাদেশে ও এর বাইরেও আইকনিক ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং সাহসী ব্যবসায়িক ধারণা নিয়ে সংগঠনের হাল ধরে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান।
এমনকি রফিকের কাচ্চি বিরিয়ানি যুক্তরাজ্যের একটি ভোজনালয়ে নিলামে উঠেছিল এবং সর্বোচ্চ দরদাতার দ্বারা ৫,১০০ পাউন্ড দামে জিতেছিল! ১৯৯৭ সালে তিনি মারা যান কিন্তু তার ছেলেরা এখনও ঢাকার ধানমন্ডি, গুলশান ও উত্তরায় তিনটি স্বতন্ত্র আউটলেটে তার এই রেসিপি পরিবেশন করে যাচ্ছে।