ফার্মেসী ব্যবসা বর্তমান সময়ে একটি লাভজনক ব্যবসা। স্বল্পশিক্ষিতরাই শুধু নয়, অনেক উচ্চশিক্ষিত যুবকেরাও আজকাল এই ব্যবসায়ের দিকে ঝুঁকছে। চাকরির বাজারের সোনার হরিণ খুঁজতে গিয়ে হয়রান হবার চেয়ে এমন একটি ব্যবসায় শুরু করে নিজেকে স্বাবলম্বী করা ভালো। তবে এই ব্যবসায় শুরু করার আগে যেমন কিছু বিষয় জানতে হবে, তেমনই এই ব্যবসায়ে লাভ করতে চাইলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে ও কৌশল অনুসরণ করে এই ব্যবসায়ে ভালো লাভ করা সম্ভব।
কিভাবে শুরু করবেন?
ফার্মেসী ব্যবসা আর দশটা সাধারণ ব্যবসার মতো না কারন এই ব্যবসা করা হয় জীবন বাঁচানোর উপাদান ওষুধ নিয়ে। তাই এই ব্যবসা শুরু করার প্রস্তুতিতে আছে কিছু ভিন্নতা, কিছু প্রয়োজনীয় কাজ। নিম্নে এই ব্যবসা শুরু করার কিছু ধাপ ও কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
৩ মাসের স্বল্পমেয়াদী ফার্মেসী কোর্স
ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করার জন্য একটি তিন মাসের সি ক্যাটাগরির ফার্মেসী কোর্স করতে হয়। এই কোর্সের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল। দেশের নানা কেমিস্ট এবং ড্রাগিস্টস সমিতির সদস্যরা মিলে এই কোর্সগুলো পরিচালনা করে থাকেন।
ফার্মেসী কোর্সটি করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা প্রয়োজন। প্রথমেই এসএসসি বা সমমানের একটি সার্টিফিকেট অর্জন করতে হবে। আর বয়স হতে হবে ১৭ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। ফার্মেসী কোর্স যে খুব ব্যয়বহুল তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশে মোটামুটিসাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যেই এই কোর্স সম্পন্ন করা সম্ভব।
ট্রেড লাইসেন্স এবং ড্রাগ লাইসেন্স সংগ্রহ
ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স এবং ড্রাগ লাইসেন্স সংগ্রহ করার কোনো বিকল্প নেই। যে কোন ব্যবসা শুরু করতেই ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেয়া যায়। মূলত ব্যবসায়ের জায়গা এবং ধরণের উপর নির্ভর করে কয়েক শত থেকে কয়েক হাজার টাকার মধ্যে লাইসেন্স করা সম্ভব।
দোকান ভাড়া করা
ঔষধের ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমেই একটি দোকান ভাড়া নিতে হবে। মালিকের নিজের জায়গায় দোকান থাকলে বিশাল এক খরচ বেঁচে যাবে। তবে দোকান দেবার আগে অবশ্যই সঠিক স্থান নির্বাচন করতে হবে। লোক সমাগম বেশি হয়, বাজারের ভিতর, মেডিকেলের পাশে কিংবা জনবহুল আবাসিক এলাকার মাঝামাঝি স্থানে ফার্মেসী ব্যবসা বেশি চলে।
ঔষধ সংগ্রহ করা
ফার্মেসী ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে অবশ্যই ঔষধ কোথায় থেকে সংগ্রহ করতে হয় তা ভালোমতো জানতে হবে। যদিও বর্তমানে ঔষধ কোম্পানিগুলো তাদের লোকের মাধ্যমে এমনভাবে পোঁছে যায় যে, ঔষধ সংগ্রহ করা এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরাই দোকানে ঔষধ পৌঁছে দিয়ে যায় এবং ঔষধ বিক্রি করে টাকা পরিশোধের সুযোগ আছে। তবে কিছু নামকরা কোম্পানির ঔষধ অগ্রিম টাকা দিয়ে কিনতে হয়।
বাংলাদেশে ঔষধের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার হচ্ছে ঢাকার মিটফোর্ডে। চট্টগ্রাম এর হাজারী লেইন ও ওষুধের একটা বড় পাইকারি বাজার। এখানে বিভিন্ন ধরণের ঔষধ পাইকারি দামে পাওয়া যায়। এই ব্যবসায়ে এলে নকল ঔষধ চিনতে পারার মত দক্ষতা থাকতে হবে। বাজারে যেহেতু নকল ওষুধের ছড়াছড়ি রয়েছে, তাই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার।
এই ব্যবসা কেমন লাভজনক?
ফার্মেসী ব্যবসা একটি অন্যতম লাভজনক ব্যবসা। ঔষধ এমন জিনিস যা অতি প্রয়োজনীয় এবং এই প্রয়োজন ফুরানোর উপায় নেই। জন্ম থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নানা কারণে নানা সময়ে মানুষ প্রয়োজনমত নানা ধরনের ঔষধ সেবন করে। এই ব্যবসায়ে ঔষধ প্রতি ১০-১২ শতাংশ লাভ করা সম্ভব। আবার কিছু ঔষধ আছে যেগুলোতে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্তও লাভ করা যায়।
এই ব্যবসায়ে লাভ করতে কি কি কৌশল অনুসরণ করবেন?
পাড়া মহল্লায় বর্তমানে প্রচুর ফার্মেসীর দোকান হচ্ছে। তাই প্রতিযোগিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে্। কিছু কৌশল অনুসরণ করে প্রতিযোগিতার মাঝেও লাভজনক ফার্মেসী ব্যবসা করা সম্ভব।
- কাষ্টমারের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। প্রেসক্রিপশনটি নিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো দিয়ে খাওয়ার নিয়ম ও সময় সম্পর্কে একবার নিজ থেকে বলা ভালো। যাবার সময় ধন্যবাদ দেবার অভ্যাস করা উচিৎ।
- বয়স্ক কাষ্টমারদের বসার ব্যবস্থা রাখা ভালো।
- দোকানে কখনো কোনো বিতর্কিত বিষয় বা ধর্ম ও রাজনীতির মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আলোচনা করা ঠিক না।
- এলাকার বয়স্ক এবং অসচ্ছল রোগীদের বিনামূল্যে ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেয়া যায়। এই যত্নের বিনিময়ে তাদের কাছে নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করা সহজ হয়।
- বাজেটে সম্ভব হলে প্রতি মাসে একদিন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করলে তা দোকানে জন্য সুনাম বয়ে আনে।
- প্রতি ২ মাসে একবার বিনা মূল্যে ২০/২৫ জনের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে দিতে পারেন। তাতে দোকানের প্রতি লোকের আগ্রহ বাড়ে। দোকানে আনাগোনা বাড়লে, তাদের কাছেই ব্যবসায়ও করা যায়।
- কোনো অবস্থাতেই মেয়াদবিহীন ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। একবার এই বদনাম দোকানের নামে লাগলে তা বিপদজনক।
- কোনো ওষুধ দিতে না পারলে তা লিখে রাখতে হবে ও পরবর্তীতে এনে রাখতে হবে। তাতে করে কাস্টমার অন্য দোকানে যাবে না।
- ওষুধের নাম জলদি মনে রাখা ও তাকগুলো সঠিকভাবে সাজিয়ে রাখার কারণে অল্প সময়ে বেশি বিক্রি করা সম্ভব হয়।
এই ব্যবসা শুরু করার জন্য কেমন পুঁজি লাগবে?
পজিশন বুঝে ছোট আকারে ফার্মেসী ব্যবসা করার জন্য ও কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হতে পারে। যদিও দোকান ভাড়া না নিয়ে নিজের মালিকানাধীন যায়গায় ব্যবসা শুরু করলে খরচ কম হয়। মোটামুটি ভাবে এই ব্যবসা শুরু করতে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার প্রাথমিক পুঁজি দরকার হয়। লাইসেন্স সংগ্রহ, দোকান এর এডভান্স, দোকান ডেকোরেশন এবং বিভিন্ন ধরণের ঔষধ কেনার জন্য এই পুঁজি দরকার হবে। তবে প্রথম দিকে কিনে বিক্রি করতে হলেও পরবর্তীতে কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছ থেকে বাকিতে ঔষধ নিয়ে, বিক্রি করে পরিশোধ করা যায়। আপনার দোকানে যত বেশী ক্রেতা আসবে, তত বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আপনাকে বাকিতে পণ্য কিনার সুযোগ দিবে। এই সুবিধা আপনার ব্যবসায়ে প্রয়োজনীয় চলতি মূলধন বাড়াতে সহায়তা করবে।
পরিশেষ
ফার্মেসী ব্যবসা এমন একটি ব্যবসা যাতে স্বল্প বিনিয়োগে লাভবান হওয়া কঠিন। এছাড়া এই ব্যবসায়ে সফল হতে চাইলে ফার্মেসী কোর্স করে ভালোভাবে জেনে বুঝে নামা উচিত। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক জায়গা নির্বাচন করে ব্যবসাটি করতে পারলে এই ব্যবসা একটি নিরাপদ ও লাভজনক ব্যবসা।
ফার্মেসী ব্যবসা করতে কি কি লাগে?
ফার্মেসী ব্যবসা করতে ট্রেড লাইসেন্স এবং ড্রাগ লাইসেন্স অবশ্যই লাগবে। এই লাইসেন্স পেতে অবশ্যই একজন লাইসেন্সধারি ফার্মাসিস্ট লাগবে সেটা আপনি নিজে ও হতে পারেন অথবা একজন ফার্মাসিস্টকে নিয়োগ দেখিয়েও করতে পারেন।
ফার্মেসী ব্যবসা লাভ কেমন?
দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিচালনা করলে ফার্মেসী ব্যবসাতে এভারেজ কমপক্ষে ২০% লাভ করা সম্ভব।
ফার্মেসি ব্যবসা করতে চান?কিভাবে ড্রাগ লাইসেন্স করবেন…?
প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানজনক ব্যবসার মধ্যে ফার্মেসি ব্যবসা অন্যতম। এখানে পুঁজি বিনিয়োগ করে সহজেই লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফার্মেসি ব্যবসা করে সফল হওয়ার স্বপ্ন অনেকেই দেখেন। কিন্তু ইচ্ছা করলেই যে কেউ ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে পারবে না। একটা দোকানে কিছু ওষুধ নিয়ে বসে পড়া বেশ সহজ, কিন্তু প্রক্রিয়াটা অবৈধ। এ জন্য আপনাকে অবশ্যই ব্যবসার অন্যান্য আনুসাঙ্গিক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে আরো অতিরিক্ত করতে হবে ফার্মাসিস্টের ট্রেনিং এবং ড্রাগ লাইসেন্স। ওষুধ তিনিই বিক্রি করতে পারবে যার ফার্মাসিস্ট ট্রেনিং আছে এবং যিনি ড্রাগ লাইসেন্স পেয়েছেন।
ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া ওষুধের ব্যবসা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং আইনগতভাবে এটি একটি দন্ডনীয় অপরাধ।আর ওষুধ ব্যবসার জন্যে অতি প্রয়োজনীয় এই ড্রাগ লাইসেন্সটি ইস্যু করে বাংলাদেশ সরকারের ‘ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর’।
ড্রাগ লাইসেন্সটি অর্জন করতে হলে ফার্মাসিস্টের সনদের জন্য ফার্মেসী কাউন্সিল থেকে আপনাকে ছয় মাস মেয়াদী একটি কোর্স করতে হবে।
ড্রাগ লাইসেন্সের জন্যে ঔষধ প্রশাসনের নির্ধারিত ফরম-৭ যথাযথ পূরণ করে এর মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। সাথে জমা দিতে হয় নিম্নবর্ণিত কাগজপত্রঃ-
১। ট্রেড লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি।
২। টি.আই.এন সনদপত্রের ফটোকপি।
৩। পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৪। ব্যাংক একাউন্ট এবং ব্যাংক সচ্ছলতার সনদপত্র।
৫। দোকান ভাড়ার রসিদ/চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
(নিজস্ব দোকানের ক্ষেত্রে দলিলের সত্যায়িত ফটোকপি)
৬। ফার্মাসিস্ট ট্রেনিয়ের সনদপত্রের ফটোকপি/ফার্মাসিস্টের অঙ্গীকারপত্র।
৭। নাগরিকত্বের সনদপত্র/ভোটার আই.ডি কার্ডের ফটোকপি
৮।লাইসেন্স ফি জমা দেয়ার ট্রেজারী চালান।
প্রতি তিন মাস পর পর ঔষধ প্রশাসনের সভা হয়, যেখানে তথ্যগুলো যাচাই বাছাই সাপেক্ষে লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
লাইসেন্স ফি ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হয়। পৌর এলাকার জন্য এই ফি ৩,০০০ টাকা এবং পৌর এলাকার বাইরে ১,৫০০ টাকা।
দুই বছর পর পর লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। পৌর এলাকার জন্য নবায়ন ফি ২,০০০ টাকা এবং পৌর এলাকার বাইরে এটি ১,০০০ টাকা।
নতুন লাইসেন্স নিতে হলে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে যাচাই বাছাইয়ের জন্য। আর লাইসেন্স নবায়নের জন্য পাঁচ থেকে সাত কর্ম দিবস অপেক্ষা করতে হয়।
এ সম্পর্কিত তথ্যের জন্য যোগাযোগের ঠিকানাঃ
বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, ১০৫-১০৬, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০।
টেলিফোন: ৮৮০-২-৯৫৫৬১২৬, ৯৫৫৩৪৫৬ ফ্যাক্স: ৮৮০-২-৯৫৬৮১৬৬
http://www.dgda.gov.bd
ই-মেইল:[email protected]
ঔষধের ব্যবসাটা নির্ভর করে প্লেইসমেন্টের উপর। আপনি যদি খুচরা বিক্রয়ের জন্য ফার্মেসি খুলতে চান তাইলে সবচেয়ে লাভজনক হল যেকোন মেডিক্যালের আশেপাশে দোকান নিয়ে বসা। তবে এক্ষেত্রে আশেপাশের ব্যবসায়ীদের সাথে পাল্লা দিতে হলে খুব উঁচু মানের ক্যাপিট্যাল লাগবে। শুধুমাত্র মেডিসিনের জন্য আপনার হয়তঃ লাখ পনেরোর মত লাগতে পারে।(যদি সাচ্ছ্যন্দে টিকে থাকতে চান)। আর যদি মেডিক্যালগুলোর আশেপাশে না হয়ে আপনার সুবিধামত স্থানে ফার্মেসি নিয়ে বসতে চান তাহলে আপনার হয়তঃ পুঁজি খুব বেশি লাগবে না। তবে ঔষধের ফার্মেসিতে কাস্টোমার তার চাহিদামত ঔষধ না পেলে আপনার ব্যবসা লাটে উঠতে পারে। ধরেন কেউ চাইল নাপা। আপনি বললেন নাপা নেই। তবে এইচ স্কয়ারের। এইচ নিয়ে যেতে পারেন। এইসব করে কাস্টোমার ধরে রাখা যাবে না।
পাইকারি দোকান দিতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ১টা নির্দিষ্ট স্থানে(যেখানে ঔষধের পাইকারি মার্কেট) দোকান দিতে হবে। পাইকারি ব্যবসাটা চালানোর জন্য অভিজ্ঞ লোকেরও দরকার। শুধু পুঁজি দিয়ে যেহেতু এই ব্যবসা ধরে রাখা যাবে না তাই আপনাকে অভিজ্ঞ লোকের সাহায্য নিতেই হবে।
জায়গার অবস্থান, দোকানের আকার, ডেকোরেশনের খরচ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে এই ব্যবসায় বিনিয়োগের পরিমাণ। এলাকার মধ্যে দোকান করতে গেলে প্রাথমিক ভাবে ৫-৭ লক্ষ টাকা নিয়ে শুরু করতে পারেন এবং আরো ৩ লক্ষ টাকা রিজার্ভ ফান্ডে রেখে দিবেন। চাহিদা এবং পরিস্থতি অনুয়ায়ী ধীরে ধীরে এই ৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করবেন। আর বড় রাস্তার ধারে বা কোনো হাসপাতালের আশেপাশে দোকান করতে চাইলে ১৫-৩০ লক্ষ এমনকি ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ লাগতে পারে।
নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় ফার্মেসি দিলে শুরুতে সেই এলাকায় বসবাসরত লোকজন যখন আপনার কাছে প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধ নিতে আসবে তখন আপনার কাছে যে সব ওষুধ নাই সেগুলো একটি খাতায় নোট করে রাখুন এবং কাষ্টোমারকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানিয়ে দিন যে, ওষুধটি বর্তমানে আপনার কাছে নাই কিন্তু আপনি নোট করে রেখেছেন এবং খুব শীঘ্রই ওষুধটি আপনি তাঁর জন্যে এনে রাখবেন।
কাষ্টোমারকে আপনার দোকানের উপর নির্ভরশীল করে ফেলুন যেন তিনি আপনাকে বা আপনার দোকান ছাড়া অন্য কিছু না বুঝেন।
কিভাবে করবেন তার কিছু পলিসিঃ
১। কাষ্টোমারকে সালাম দিন এবং হাসিমুখে কুশল জিজ্ঞেস করুন। তারপর প্রেসক্রিপশনটি নিয়ে তাঁর কি কি ওষুধ লাগবে জেনে নিন। প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো বের করে তার সামনে রাখুন এবং তাঁকে ওষুধগুলো খাওয়ার নিয়ম ও সময় সম্পর্কে ভালোমত বুঝিয়ে দিন। এরপর ওষুধগুলো যথাযথ ভাবে প্যাকেট করে তাঁর হাতে তুলে দিন। এবং বলে দিন যে, কোনো সমস্যা হলে তিনি যেনো কষ্ট করে আবার আসেন।
২। বয়স্ক কাষ্টোমারদের জন্যে বসার ব্যবস্থা রাখুন। তবে খেয়াল রাখবেন দোকানে যেন আড্ডা না জমে যায় !
৩। আপনি, দোকানে অবস্থান করা অবস্থায় কোনো কাষ্টোমারের সাথে রাজনীতি, ধর্ম বা দেশের সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো কথা বলবেন না। কাষ্টোমার এ সকল বিষয়ে কথা তুললেও আপনি হাসিমুখে তাকে সমর্থন করে যাবেন মাত্র।
৪। সকালে এবং সন্ধ্যায় এলাকার বয়স্ক এবং একটু অসচ্ছল রোগীদের বিনামূল্যে ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।
৫। প্রতি মাসে একদিন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।
৬। প্রতি ২ মাসে একবার বিনা মূল্যে ২০/২৫ জনের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে দিতে পারেন।
৭। এলাকায় ব্যবসা করতে গেলে কিছু কিছু জায়গায় হয়তো বাকিতে বিক্রি করতে হবে। এক্ষেত্রে যিনি বাকিতে ক্রয় করবেন তিনি যদি পরপর তিন বার পাওনা পরিশোধে তার কমিটমেন্ট ঠিক না রাখে তবে তাকে প্রথমে আপনার অপারগতা বুঝিয়ে বলবেন এবং তাতে কাজ না হলে তার কাছে বিক্রি বন্ধ করে দিবেন। মেইন রোডে বা কোনো হাসপাতালের সাথে দোকান হলে অবশ্য বাকি বিক্রির ঝামেলা নাই।
৮। যত মুনাফাই থাকুক না কেন; কোনো অবস্থাতেই মেয়াদবিহীন এবং আজে বাজে কোম্পানির ওষুধ বিক্রি করবেন না।
৪, ৫ এবং ৬ নং কাজগুলো করতে গেলে আপনার অতিরিক্ত কিছু অর্থ এবং সময় হয়তো ব্যয় হবে কিন্তু এর বিনিময়ে আপনি একটি নিয়মিত কাষ্টোমার সার্কেল পাবেন। দ্রুত আপনার ব্যবসার প্রচার, প্রসার এবং সুনামও বাড়বে বলে আমি মনে করি। সর্বোপরি একজন ব্যবসায়ীর হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গায়ও আপনি পাবেন পরিপূর্ণ মানসিক প্রশান্তি !
এছাড়া যদি দেখেন, আপনার কাস্টোমারের যে ঔষধটা এখন দরকার সেটা আপনার নেই। কিন্তু তার অন্যান্য অনেক ঔষধ আপনি তাকে দিতে পারবেন।সেক্ষেত্রে যেসব ঔষধ আপনার নেই সেগুলো আপনি আপনার কর্মচারীকে দিয়ে পাশের দোকান থেকে এনে দিতে পারেন। এ ব্যাপারে সৎ থাকা খুবই জরুরী। কারণ কাস্টোমার বাইরে যাচাই করে দেখলেন তার কাছ থেকেবেশি নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আপনি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবেন।
আরেকটা কথা না বললেই নয়। ঔষধ আপনার নিজের বানানো নয়। তাই আপনি যাচ্ছেতাই দাম নিতে পারবেন না। হ্যাঁ, আপনি হয়ত ঔষধের গায়ে যে দাম আছে ওই দামেই বিক্রি করছেন। কিন্তু আপনার পাশের দোকানে ওই ঔষধ আরো ২টাকা/বক্স কমে বিক্রি করা হচ্ছে। আপনি কিন্তু হেরে গেলেন। আপনি যদি আপনার ক্রয়মূল্যেও বিক্রি করতে না পারেন সেক্ষত্রে ঔষধটা তখন বিক্রি করবেন না। প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে বুদ্ধি খাটাতে হয়।
পাইকারি ব্যবসায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোম্প্যানি যে দামে ঔষধ বিক্রি করে তার চেয়ে বাজারে অনেক কম দামে ওই ঔষধ পাওয়া যায়। আপনার উচিত তখন কোম্প্যানির কাছ থেকে না কিনে বাজার থেকে ওই ঔষধ কিনে মজুদ করে রাখা। তাতে দুটা লাভ। আপনার কাস্টোমারকে কম দামে বিক্রি করতে পারবেন। যেহেতু কোম্প্যানিতে ঔষধটার দাম বেশি, কিছুদিনের মধ্যেই বাজারেও দাম বাড়বে। সেক্ষত্রে আপনার লাভও বেড়ে যাবে।
এখানে জানতে চাওয়া হয়েছে ব্যবসার উদ্দেশ্যে,তাই যা যা জরুরি তাই বলার চেষ্টা করব।
- ফার্মেসি ব্যবসা কি? উঃ এক কথায় যে দোকানগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ঔষধগুলো পাওয়া যায়,সে দোকানগুলোই ফার্মেসি নামে পরিচিত।
- ফার্মেসি ব্যবসার জন্য যা যা জরুরী -ঃ
- ড্রাগ লাইসেন্সঃ প্রথমেই আপনাকে ড্রাগ লাইসেন্স করতে হবে।কারণ ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা সম্পুর্ণ অবৈধ।আপনাকে ড্রাগ লাইসেন্স করার জন্য হাইকোর্ট থেকে অনুমতি নিতে হবে।ড্রাগ লাইসেন্স হলো ফার্মেসি ব্যবসার এক নাম্বার ফাউন্ডেশন।
- ১। আপনার ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে।
- ২। লাইসেন্সের ফি জমা দেয়ার ট্রেজারি চালানের মুলকপি জমা দিতে হবে।
- ৩। দোকানের চুক্তিপত্রের ফটোকপি লাগবে।
- ৪। একজন ফার্মাসিস্টের সনদপত্র লাগবে,যিনি আগে থেকে এই ব্যবসার সাথে যুক্ত।
- ৫।এসব ম্যানেজ করার পর,একটা ড্রাগ লাইসেন্সের ফটোকপি জোগাড় করতে হবে।
- **এসব কিছু আপনাকে হাইকোর্টে জমা দিতে হবে লাইসেন্সের জন্য। এটা হলো প্রথম ধাপ-
- দ্বিতীয় ধাপে আসা যাক-
- বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাঃ যেমন- আপনি যদি গ্রামে বা ছোট শহরের মতো জায়গাগুলোতে এই ব্যবসা দিতে চান তো সেক্ষেত্রে ছোট-খাটো চিকিৎসা আপনাকে বিনামূল্যে দিতে হবে।আর সেই চিকিৎসা দেয়ার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট কোর্স এবং অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্টের সাথে কমপক্ষে ৬ মাসের অনুশীলন করতে হবে।যাতে আপনি প্রাথমিক চিকিৎসা গুলো নিজে নিজেই দিতে পারেন।
- সব ধরনের মেডিসিনঃ চেষ্টা থাকতে হবে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ওষুধ রাখার।
- খুচরা বিক্রয়ের জন্য যে কোনো মেডিকেলের আসেপাশে দোকান নির্বাচন করা।
- সকাল বিকালে এলাকার বয়স্ক এবং অসচ্ছল মানুষদের ব্লাড সুগার,ব্লাড প্রেসার, প্রেসার,ফিবার পরিক্ষা করে দিতে জানতে হবে।তাতে আপনার ব্যবসা করতে সুবিধা হবে এবং পরিচিতি বাড়বে।সেই সাথে নিয়মিত কিছু গ্রাহক পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।
- কোনো অবস্থাতেই আজেবাজে কোম্পানির এবং মেয়াদবিহীন ওষুধ বিক্রি করা যাবে না।
- গ্রামঞ্চলে এই ব্যবসা দিতে হলে আপনাকে অবশ্যই অবশ্যই প্রাথমিক চিকিৎসার উপর ভালোভাবে ট্রেনিং নিতে হবে।
- ওষুধের গায়ের দামে ওষুধ বিক্রি করা যাবে না।যে কোনো ওষুধ ১০℅ ছাড়ে বিক্রি করলেও যথেষ্ট লাভ্যাংশ থাকবে।
- কোম্পানির এমআর এর থেকে ওষুুধ রাখলে আপনি বিভিন্ন অফার পাবেন। যা দিয়ে আপনার যথেষ্ট লাভ উঠে আসবে।
- কোম্পানির এমআর এর সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারলে যে কেউ দুই থেকে তিন মাসের বাকিতে ওষুধ নিতে পারবে।(যেটা আমি করতাম)।
- ওষুধ মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে,কোম্পানির এমআর ফ্রীতেই পরিবর্তন করে দিবে।
- ওষুধের নাম এবং ওষুধের জেনেটিক নামগুলো বেশি করে জানা থাকতে হবে।
- ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকার মুলধনের মাধ্যমে এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
- সর্বপোরি এটা বেকার তরুণদের জন্য একটা সম্মানজনক ব্যবসা।
- আপাতত এইটুকুই। ভুলভ্রান্তি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।অনেক দিন আগে এই ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলাম।যার কারণে অনেক কিছুই ভুলে গিয়েছি।
ফার্মেসি ব্যবসা করতে চাইলে এইখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন
এর উত্তরে অনেকই লিখেছেন হুব হু নিচে তুলে দরলাম
Omar Shehab :- We would appreciate if someone follows up this discussion.
Sajjat Hossain :- প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানজনক ব্যবসার মধ্যে ফার্মেসি ব্যবসা অন্যতম। এখানে পুঁজি বিনিয়োগ করে সহজেই লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফার্মেসি ব্যবসা করে সফল হওয়ার স্বপ্ন অনেকেই দেখেন। কিন্তু ইচ্ছা করলেই যে কেউ ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে পারবে না। একটা দোকানে কিছু ওষুধ নিয়ে বসে পড়া বেশ সহজ, কিন্তু প্রক্রিয়াটা অবৈধ। এ জন্য আপনাকে অবশ্যই ব্যবসার অন্যান্য আনুসাঙ্গিক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে আরো অতিরিক্ত করতে হবে ফার্মাসিস্টের ট্রেনিং এবং ড্রাগ লাইসেন্স। ওষুধ তিনিই বিক্রি করতে পারবে যার ফার্মাসিস্ট ট্রেনিং আছে এবং যিনি ড্রাগ লাইসেন্স পেয়েছেন। ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া ওষুধের ব্যবসা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং আইনগতভাবে এটি একটি দন্ডনীয় অপরাধ।
Anick Chowdhury :- ঔষধের ব্যবসাটা নির্ভর করে প্লেইসমেন্টের উপর। আপনি যদি খুচরা বিক্রয়ের জন্য ফার্মেসি খুলতে চান তাইলে সবচেয়ে লাভজনক হল যেকোন মেডিক্যালের আশেপাশে দোকান নিয়ে বসা।(দোকান খুলতে যা যা প্রয়োজন সব Sajjat ভাই আপনাকে বলেছেন) তবে এক্ষেত্রে আশেপাশের ব্যবসায়ীদের সাথে পাল্লা দিতে হলে খুব উঁচু মানের ক্যাপিট্যাল লাগবে। শুধুমাত্র মেডিসিনের জন্য আপনার হয়তঃ লাখ পনেরোর মত লাগতে পারে।(যদি সাচ্ছ্যন্দে টিকে থাকতে চান)। আর যদি মেডিক্যালগুলোর আশেপাশে না হয়ে আপনার সুবিধামত স্থানে ফার্মেসি নিয়ে বসতে চান তাহলে আপনার হয়তঃ পুঁজি খুব বেশি লাগবে না। তবে ঔষধের ফার্মেসিতে কাস্টোমার তার চাহিদামত ঔষধ না পেলে আপনার ব্যবসা লাটে উঠতে পারে। ধরেন কেউ চাইল নাপা। আপনি বললেন নাপা নেই। তবে এইচ স্কয়ারের। এইচ নিয়ে যেতে পারেন। এইসব করে কাস্টোমার ধরে রাখা যাবে না।
Akm Sayeed :- আমি ইদানিং একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি এখনকার ফার্মাসিগুলো তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে । অনেক ফার্মাসিতে দেখছি POS মেশিন এবং বারকোড সিস্টেম চলছে । দিনশেষে হিসাব নিকাশ সফটওয়্যারেই করা হয়ে থাকে । আমার মতে এটি খুবই ভাল দিক উভয়ের জন্য ফার্মাসি ব্যবসায়ী এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিদ । তবে একটি ব্যাপার এখনও হয়ে উঠেনি যা হল সুপারশপগুলো সেভাবে ঔষধের জন্য কোন বিশেষ সেকশান এখন করতে পারেনি । আর যারা পেরেছে তারা ডেটল স্যাভলন ফিনাইল বিক্রিতেই সীমাবদ্ধ ।
Anick Chowdhury Akm Sayeed:– আপনাকে ১টা ধারণা দেই। পাইকারী ব্যবসার ধারণা। আমাদের ফার্মাসিতে যখন ১জন কাস্টোমার আসেন তখন তিনি প্রথমে তার প্রয়োজনীয় ঔষধগুলো লিখিয়ে নেন। এই কাজটা আমার বাবা খুব সহজে করতে পারতেন যদি সফটওয়্যারে কোন ড্রপডাউন বক্স থেকে সিলেক্ট করে দিতে পারতেন। কিন্তু যে ঔষধটা তিনি সিলেক্ট করবেন তা অবশ্যই ডেটাবেইজে থাকতে হবে এবং তার জন্য অবশ্যই একজন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর দরকার। ব্যবসায়ীরা এটাকে “অযথা” বলে আখ্যায়িত করবেন। তাছাড়া ঔষধের কোম্প্যানিগুলো এখনো তাদের ওয়েবসাইটে ইনফরম্যাশান দেয়ার মত ম্যাচ্যুরিটি লাভ করে নাই। তাই ঔষধের ইনফোর জন্য এম আরের উপর ডিপেন্ড করতে হয়। আমার মনে হয় না ব্যবসায়ীরা এতটা ঝামেলা পোহাতে চান। কারণ কাস্টোমারেরা শুধু ঔষধ চায়। তারপরেও অনেকে দিনশেষের হিসাব-নিকাশ হয়তো সফটওয়্যারেই করছেন। তবে সেটা খুব নগণ্য। এখানে এঞ্জিনিয়ারিং খাটাতে হলে অনেক ভিতর পর্যন্ত যেতে হবে।
Anick Chowdhury :- আর পাইকারি দোকান দিতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ১টা নির্দিষ্ট স্থানে(যেখানে ঔষধের পাইকারি মার্কেট) দোকান দিতে হবে। পাইকারি ব্যবসাটা চালানোর জন্য অভিজ্ঞ লোকেরও দরকার। আমার বাবা ৩০ বছর ধরে পাইকারি ব্যবসার সাথে জড়িত। কক্সবাজারে আমাদের যত কাস্টোমার আছেন তাদের অনেকেরই দোকানের ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে সমস্ত কাগজপত্রের ব্যবস্থা, তাদের ট্রেইনিং এর ব্যবস্থা করে দেন। ঢাকা হলে এক্ষেত্রে আমি নিজেই আপনাকে সাহায্য করতে পারতাম হয়তঃ। কিন্তু শুধু পুঁজি দিয়ে যেহেতু এই ব্যবসা ধরে রাখা যাবে না তাই আপনাকে অভিজ্ঞ লোকের সাহায্য নিতেই হবে।
Sajjat Hossain :- জায়গার অবস্থান, দোকানের আকার, ডেকোরেশনের খরচ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে এই ব্যবসায় বিনিয়োগের পরিমাণ। এলাকার মধ্যে দোকান করতে গেলে প্রাথমিক ভাবে ৫-৭ লক্ষ টাকা নিয়ে শুরু করতে পারেন এবং আরো ৩ লক্ষ টাকা রিজার্ভ ফান্ডে রেখে দিবেন। চাহিদা এবং পরিস্থতি অনুয়ায়ী ধীরে ধীরে এই ৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করবেন। আর বড় রাস্তার ধারে বা কোনো হাসপাতালের আশেপাশে দোকান করতে চাইলে ১৫-৩০ লক্ষ এমনকি ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ লাগতে পারে।
নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় ফার্মেসি দিলে শুরুতে সেই এলাকায় বসবাসরত লোকজন যখন আপনার কাছে প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধ নিতে আসবে তখন আপনার কাছে যে সব ওষুধ নাই সেগুলো একটি খাতায় নোট করে রাখুন এবং কাষ্টোমারকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানিয়ে দিন যে, ওষুধটি বর্তমানে আপনার কাছে নাই কিন্তু আপনি নোট করে রেখেছেন এবং খুব শীঘ্রই ওষুধটি আপনি তাঁর জন্যে এনে রাখবেন।
কাষ্টোমারকে আপনার দোকানের উপর নির্ভরশীল করে ফেলুন যেন তিনি আপনাকে বা আপনার দোকান ছাড়া অন্য কিছু না বুঝেন।
Anick Chowdhury :- আমি যখন বাসায় গিয়ে মাঝে মাঝে বাবার ফার্মেসিতে বসি তখন কিছু জিনিস খেয়াল করি-
১। যারা প্রত্যন্ত অঞ্চল বা মফস্বলে ফার্মেসি খুলে বসেন তারা হয় কোন ডাক্তারের চেম্বার বানিয়ে নেন নতুবা তারা নিজেরাই ছোট-খাট ট্রেইনিং এর মাধ্যমে হাতুড়ে ডাক্তারি শিখে নেন(যদিও আমি এই ব্যাপার সাপোর্ট করিনা।)
২।এইসব খুচরা দোকানদার(আমি ফার্মেসি বলিনি) অধিকাংশ সময়ে তাদের নিজেদের পছন্দমত ঔষধ কিনে থাকেন। ব্যাপারটা উদাহরণ দিয়ে বলি।
আমরা প্রায় সবাই জানি নাপা, এইচ, প্যারাপাইরল এইগুলো সব প্যারাসিটামল। এখন কোন ছোটখাট কোম্প্যানি যদি অল্প দামে তাদের প্যারাসিটামল বাজারে ছাড়ে তাইলে এইসব দোকানদার সেই প্যারাসিটামলগুলো খুঁজে খুঁজে বের করেন। কারণ যেখানে তার দোকান সেখানে তিনি নিজেই ডাক্তার অথবা তার ডাক্তার এমনভাবে প্রেসক্রাইভ করেন যাতে করে সমস্ত ঔষধ ওই দোকানেই পাওয়া যায়। এসব ছোট-খাট কাস্টোমারদের জন্য হলেও আপনাকে অনামী, অল্পদামী কিছু প্রোডাক্ট রাখতে হবে।
৩। একবার কাস্টোমার ধরে ফেললে কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না।
ধরেন আপনার কাস্টোমারের যে ঔষধটা এখন দরকার সেটা আপনার নেই। কিন্তু তার অন্যান্য অনেক ঔষধ আপনি তাকে দিতে পারবেন।সেক্ষেত্রে যেসব ঔষধ আপনার নেই সেগুলো আপনি আপনার কর্মচারীকে দিয়ে পাশের দোকান থেকে এনে দিতে পারেন। এ ব্যাপারে সৎ থাকা খুবই জরুরী। কারণ কাস্টোমার বাইরে যাচাই করে দেখলেন পার বক্স ঔষধ আপনি তার কাছ থেকে বেশ ভালরকমই বেশি নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আপনি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবেন।
৪।আরেকটা কথা না বললেই নয়। ঔষধ আপনার নিজের বানানো নয়। তাই আপনি যাচ্ছেতাই দাম নিতে পারবেন না। হ্যাঁ, আপনি হয়ত ঔষধের গায়ে যে দাম আছে ওই দামেই বিক্রি করছেন। কিন্তু আপনার পাশের দোকানে ওই ঔষধ আরো ২টাকা/বক্স কমে বিক্রি করা হচ্ছে। আপনি কিন্তু হেরে গেলেন। আপনি যদি আপনার ক্রয়মূল্যেও বিক্রি করতে না পারেন সেক্ষত্রে ঔষধটা তখন বিক্রি করবেন না। প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে বুদ্ধি খাটাতে হয়।
৫। পাইকারি ব্যবসায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোম্প্যানি যে দামে ঔষধ বিক্রি করে তার চেয়ে বাজারে অনেক কম দামে ওই ঔষধ পাওয়া যায়। আপনার উচিত তখন কোম্প্যানির কাছ থেকে না কিনে বাজার থেকে ওই ঔষধ কিনে মজুদ করে রাখা। তাতে দুটা লাভ। আপনার কাস্টোমারকে কম দামে বিক্রি করতে পারবেন। যেহেতু কোম্প্যানিতে ঔষধটার দাম বেশি, কিছুদিনের মধ্যেই বাজারেও দাম বাড়বে। সেক্ষত্রে আপনার লাভও বেড়ে যাবে।